Wednesday, January 11, 2017


"আপনি চাঁদকে দেখেছেন? " প্রশ্নটা ওঁরা করতেই পারতেন। যদি ওঁরা আসাননগরের খোঁজে বাউল হতেন। একশো সুতোর ঠাস বুনোটে নিটোল নক্সা জ্যাকার্ড তাঁত মেশিনে তুলে আপনার চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দিতেও পারতেন ওঁরা। যদি বয়ন শিল্পী হতেন। আর রসিক হলে খেজুর গাছে হাঁড়ি বেঁধে ভোর রাতে রস নামিয়ে তাতে খড়ের জ্বাল দিয়ে মন কাড়া নলেন গুড় বানিয়ে রসনা সরস করতে পারতেন। কিংবা সুরের নেশায় বেহালার ৬টা তারে ছড়ের টানে সিম্ফনিতে মাতিয়ে রাখতে পারতেন তামাম অপেরা হাউসের শ্রোতাদের। কিন্তু ওঁরা এসব কিছুই করেননি। সবুজ মাঠে সজীব, সুন্দর, আনকোরা কিছু শৈশবকে ওঁরা নিজেদের মত করে গড়ে তুলেছেন। কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা ছাড়াই কর্তব্য পালনের মতন করে, নিজের সন্তান সময় মমত্বে, শাসনে, আদরে, শৃঙ্খলায়, আশকারায়- ওঁরা ফুটবলার তৈরি করেন। বাইট, কোট(quote), ডিঙ্কি লাইট বা ফ্ল্যাশগানের আলো থেকে আদতে কয়েক আলোকবর্ষ দূরে থাকতেই ওঁরা স্বচ্ছন্দ। ওদের মধ্যে কেউ কেউ চাকরি করেন, বাকিরা ফুলটাইম ফুটবলে। যাঁরা চাকরি করেন তাঁরা অফিসের সময়টা বাদে সকাল বিকেল ঘাসের সবুজে প্রতিভার অন্বেষণ আর তার লালন পালনেই নিয়োজিত এবং নিমজ্জিত। অনেকের মাস মাইনের সিংহভাগটাই চলে যায় ছাত্রদের টিফিন, বল, বুট, হোর্স, জার্সি প্যান্টের খরচায়। তবু ওঁদের আক্ষেপ নেই, মনের গভীরে না পাওয়ার বেদনা থাকলেও তা মুখ ফুটে বলার বাসনা নেই। ছাত্রদের সাফল্যেই পরম প্রাপ্তি, আর আছে মন ভারী হয়ে আসা চোখের কনীনিকা জুড়ে গর্বের আনন্দাশ্রু। এঁদের মধ্যে অনেকেই এখন বয়সের ভারে প্রবীণ। অশক্ত হাড়ে অসুখ থাবা বসিয়েছে, তবু মাঠ আর ফুটবলের নাম করলেই পাঁজর ভরে যায় টাটকা বাতাসে। হুগলির চকবাজারে থাকেন ভোলা-দা। ভাল নাম শ্রী অশ্বিনী বরাট। সুরজিৎ সেনগুপ্ত, তন্ময় বোস, স্বরূপ দাস, অনীত ঘোষ, ফাল্গুনী দত্ত থেকে এখনকার বিশ্বজিৎ সাহা ওঁর হাতেই তৈরি। ২০১১ সালে এ হেন গুরুকে গুরুদক্ষিণা দিতে এগিয়ে আসে চন্দননগরের "আমাদের প্রয়াস" নামক একটি সংস্থা। তারা ভোলা-দার সন্মানে একটি বেনিফিট ম্যাচের প্রস্তাব নিয়ে প্রবীণ কোচের বাড়ি যান। কিন্তু শুরুতেই বিপত্তি। বেঁকে বসেন অশ্বিনী বরাট। জীবনে ফুটবল থেকে একটা পয়সাও রোজগার করেন নি। শেষ বয়সে আবার টাকাকড়ি কেন? বিপাকে আয়োজকরা। শেষমেশ উপায়ান্তর না দেখে উপায় বাতলান স্বয়ং ভোলা-দা, "আমার বয়স হয়েছে, ফুটবলকে আমার দেওয়ার কিছু নেই আর, তোমরা বরং টাকাপয়সা যা দেবার, চঞ্চল মজুমদারকে দাও"। চঞ্চল মজুমদার চন্দননগরের নবীন কোচ, সেই সময় তাঁর দুটো কিডনিই বিকল, চিকিৎসার জন্য চাই অর্থ। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। হল অশ্বিনী বরাটের বেনিফিট ম্যাচ। চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা পেলেন চঞ্চল। ক্যান্সার আক্রান্ত ক্রিকেটার অচিন্ত্য মান্নার পাশেও সংগঠকরা দাঁড়ালেন ১০ হাজার টাকা নিয়ে। সারা জীবন শুধু ফুটবলকে ভালবেসে মাঠের নেশায় বুঁদ যিনি তিনিই তো পারেন এমনটা করতে।






Do Share your VIEWS and REVIEWS in the comment box below.

Follow me in facebook https://www.facebook.com/nandan2017/
                       twitter https://twitter.com/Nandanpaul