রাজ্য সরকার ৭৫ মাইক্রনের নিচে সমস্ত প্লাস্টিক ক্যারি ব্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার বাস্তবায়নের অনেকটা নির্ভর করছে আমার আপনার ওপরে। পলিথিন ক্যারিব্যাগ ছাড়া একটা বাজার করতে যাওয়ার কল্পনা করুন। ততক্ষণ অন্য একটা বিষয় নিয়ে একটু কথা চলুক যেখানে এই ব্যানের বাইরে ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিক। যথেষ্ট ভাবে, যথেচ্ছ ভাবে। তা পড়েই থাকে আমাদের চোখের সামনে। আপাতভাবে দূষক বলে মনে হয় না তা। ফেস মাস্ক।
যে ডিস্পোসিবেল মাস্কগুলো সাধারণত আমি আপনি পরছি কিংবা মেডিকেল গ্রেড সার্জিকাল মাস্ক- সেগুলো সবই পলিপ্রোপিলিন প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। যখন সেই প্লাস্টিক ছোট ছোট টুকরো হয়ে যায়, তখন এটি পচে যেতে বা ডিকম্পোজে হতে প্রায় ৪৫০ বছর সময় লাগতে পারে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের মুখোশগুলো (reusable cloth face mask) আরও পরিবেশ বান্ধব বা ইকো ফ্রেন্ডলি।
ধরুন আপনি মর্নিং ওয়াক এ গিয়ে মাটিতে একটি মাস্ক দেখতে পেলেন। প্লাষ্টিক হলে হয়ত আপনি হাত দিয়ে সরিয়ে দেবেন কিন্তু খুব কম লোকই মাস্ক তা স্পর্শ করতে চাইবে। সবাই ভাববে যে কোনও সম্ভাব্য ভাইরাস-ভরা শ্বাসকে রক্ষা করেছে ওই মাস্কটি । তাই এটি উড়ে না যাওয়া পর্যন্ত সেখানেই পড়ে থাকে। রাস্তা ঘাট , মুদি দোকান, বাজার থেকে শুরু করে, পার্কিং স্পেস , নদী এবং সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ল্যান্ডস্কেপকে দূষিত করে তুলছে ফেস মাস্ক।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ১.৫ বিলিয়নেরও বেশি ফেস মাস্ক ২০২০তে মহাসাগরে পড়েছে, যার ফলে অতিরিক্ত ৪৬৮০ থেকে ৬২৪০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণ হয়েছে। বিশ্বব্যাপী, প্রতি মাসে প্রায় ৬৫ বিলিয়ন গ্লাভস ব্যবহার করা হয়। ফেস মাস্কের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ - মাসে ১২৯ বিলিয়ন। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে প্রায় ৩ মিলিয়ন ফেস মাস্কের ব্যবহার হচ্ছে। আর একটি সমীক্ষাতে বলছে প্রতিদিন ৩.৪ বিলিয়ন ফেস মাস্ক বা ফেস শিল্ড বাতিল করা হয়। এর মধ্যে এশিয়া প্রতিদিন ১.৮ বিলিয়ন মাস্ক নষ্ট করে। সারা বিশ্বের নিরিখে এই পরিমাণ যেকোনও মহাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যা (১.৪ বিলিয়ন) সহ চীন প্রতিদিন প্রায় ৭০২ মিলিয়ন ফেস মাস্ক বাতিল করে।
আমাদের রাজ্যে ৭৫ মাইক্রনের নিচে সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহারে আপাতত দোকানদারদের ওপর ৫০০ টাকার জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। আর ক্রেতাদের জন্য জরিমানা ৫০টাকা। পিসিবি ১০২৬টি ক্যারিব্যাগ প্রস্তুতকারক সংস্থাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। পিসিবি, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল এবং আইভিএল ধানসেরি পেট্রোকেমিক্যালকে নির্দেশ দিয়েছে যাতে পাতলা ক্যারিব্যাগ প্রস্তুতকারক সংস্থা গুলিকে প্লাস্টিকের দানা তারা বিক্রি না করে।
এবার শুরুর কথায় ফিরি। আপনার একটা সকাল। আপনার একটা বাজার করা প্লাস্টিক ক্যারি ব্যাগ ছাড়া ভাবতে পারেন কি?
আলবাত পারেন।
শাক সবজির জন্য বাড়ি থেকে কাপড়ের ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন।
মুদিখানার জন্যও আলাদা একটা ব্যাগ।
আর সবচেয়ে চিন্তা যেটা ভাবছেন সেই মাছ বা মাংসের জন্য ব্যবহার করতে পারেন টিফিন বক্স ।
কে বলে পলিথিন ক্যারিব্যাগ ছাড়া বাঁচা যায় না!