গতকাল একটা লজ্জার সাক্ষী থেকেছে কলকাতা। কে? কী? কেন? সব সবার জানা। সে প্রসঙ্গে যাব না। সোশ্যাল মিডিয়া ফিড মেসি ম্যাসাকারে বিপর্যস্ত। বিশ্বের তাবড় সংবাদ সংস্থার হেড লাইনে কলকাতার অব্যবস্থা! আজ বরং একটা পুরনো লেখা রইল। লিখেছিলাম ২০১১ এ। একটা EXCLUSIVE খবর করেছিলাম আমরা, আমরা মানে একটা TEAM। এখনকার মতো ক্ষণস্থায়ী, ভঙ্গুর এক্সক্লুসিভ না, রিয়েল EXCLUSIVE। সেই খবরের পিছনের গল্পটা রইল আজকের এই ব্লগে। পড়ে মজা পাবেন। আপনার মতামত কমেন্ট করে জানাবেন।
Mission মেসি ও দুই মা
০৪/০৯/২০১১ বিকেল ৫টা ৩০মিনিট
যন্ত্রটার সাথে লাগানো সিকিউরিটি অ্যালার্মটা তার সর্বোচ্চ তীব্রতার কম্পাঙ্কে বেজে যাচ্ছিল। মেইন পোর্চের সামনে সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা হোটেল ও সরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের সন্দেহ মিশ্রিত দৃষ্টি প্যাকেট টাকে লক্ষ্য করে।
সুবেশা এক নিরাপত্তা কর্মী এসে বললেন- "যদি কিছু না মনে করেন ANTI EXPLOSIVE চেকের জন্য একটু আসতে হবে।"
মনে সংশয় নিয়ে X-Ray বিমের ভেতরে ঠেলে দিলাম ১ ফুট বাই ১ ফুট বাই ৪ ইঞ্চির প্যাকেটটাকে। তিনজন নিরাপত্তা প্রকৌশলী কম্পিউটার স্ক্রিনে মারাত্মক এক বিস্ফোরক উদ্ধারের আশায় অপলকে চেয়ে আছেন! তাকিয়ে রয়েছি আমিও!
মনিটরে কোবাল্ট ব্লু ব্যাকগ্রাউন্ডে ক্রোম ইয়েলো, ফ্লুরোসেন গ্রীন, অরেঞ্জ আর ক্রিমসন কালারের মিশেলে স্পষ্ট দেখা গেল মারাত্মক ঘাতক সব অস্ত্র সম্ভার! অস্ত্র ভান্ডারও বলা যায়! নিরাপত্তা প্রকৌশলীরা কপালে হাত ছোঁয়ালেন প্রণামের ভঙ্গিতে।
একজন এগিয়ে এসে বললেন- একটু দেখব?
খড় আর কাগজে আস্তরণ সামান্য ফাঁকা করতেই ঝকঝক করে উঠল অস্ত্রগুলো! বাকি দুজনে রাস্তা করে দিলেন হোটেলে ঢোকার।
পুরো লবিটা লোকে লোকারণ্য! তাতে সংবাদ মাধ্যমের অগ্রজ বন্ধু-বান্ধবরা, বেশকিছু সেলিব্রিটি, সাধারণ ক্রীড়ামোদী মানুষজন, ছাত্র-ছাত্রী, আর বাকিটা পুলিশ ও বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী।
সবার থেকে একটু আলাদা হয়ে হোটেল হায়াতের বাঁদিকে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা অংশটাতে এসে বসলাম।
০৪/০৯/২০১১ বিকেল ৫টা ৫০ হোটেল হায়াত
নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মুড়ে ফেলা হলো গোটা লবিটা। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই কলকাতা ছাড়ার আগে শেষবার মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা তার আগেই সারতে হবে অপারেশন! এমনটাই বসের নির্দেশ ছিল। পুরো টিমটা বাঁদিকে লিফট দিয়ে নেমে হেঁটে আসছে শুধু মেসি ছাড়া নিরাপত্তা কর্মীরা ডান দিকের লিফট থেকে মেন গেট পর্যন্ত সিকিউরিটি কর্ডন করে রেখেছেন। ডান দিকের লিফট টাই এই কদিন সাধারণত ব্যবহার করেছেন লিও মেসি।
ক্যামেরার জুম রিং, ফোকাস রিং-এ হাত সব বন্ধুদের। হঠাৎ কানে একটা দৌড়ে আসার আওয়াজ পেলাম। শব্দটা অনুসরণ করার আগেই একজন নীল-সাদা জার্সি লবির বাঁদিক দিয়ে ছুটে গিয়ে তামাম কলকাতার সংবাদমাধ্যমকে ফাঁকি দিয়ে ততক্ষণে টিম বাসে উঠে পড়েছেন।
০৪/০৯/২০১১ সন্ধে ৬টা ৩০ হোটেল হায়াত
পায়চারি করছি। লবিটা অপেক্ষাকৃত ফাঁকা। একজন সহকর্মী, যে এতদিন এই হোটেলের একটা ঘরেই ঘাঁটি গেড়ে ছিল, সে এগিয়ে এল । — কী গো? বকী বলছে? কখন হবে? – তোদের ঘর ছেড়ে দিয়েছিস্ ? —ধুর্ সে তো দুপুর ১২টায় । —তাহলে? কী অবস্থা ?
হোটেলের সিকিউরিটিকে কেউ একটা বলে দিয়েছে যাতে আমাদের লবিতে থাকতে না দেয়। তুমি আমার থেকে আলাদা আলাদা থাক। আমাকে চিনে ফেলেছে। সিকিউরিটিরা তোমাকে দেখেনি।
শোন্ না, চাপ নিস্ না। চল স্মোকিং জোনটায় বসি। ওখানটা অন্ধকার, কাচ দিয়ে ঘেরা, বাইরে থেকে কেউ দেখতে পারবে না।
০৪/০৯/২০১১ সন্ধে ৬টা ৪৫ হোটেল হায়াত
বস্ স্মোকিং জোনটায় এল। তার আগে আমি আর
সহকর্মী ওখানে বসে রয়েছি। —সব ঠিকঠাক ? - হ্যাঁ।
—প্যাকেটটা? কোথায় ?
আমি আর সহকর্মী চোখের ইশারায় দেখিয়ে দিলাম প্রায় তিন ফুট উঁচু দুটো টবের ফাঁকে ১ফুট ১ ফুট ৪ ইঞ্চি প্যাকেটটা।
—বড্ড খিদে পেয়েছে? হোটেলের খাবারের যা দাম! সহকর্মী বাইরে যাচ্ছিল কাছাকাছি দোকান থেকে কিছু খাবার আনতে বস্ ও আমাদের জন্য। আমি তাকে
বললাম
–তুই তো খাবার আনতে যাচ্ছিস আমার জন্য ৫-৬টা সিগারেট আনিস্।
— খালি সিগারেট আর সিগারেট!
শোন ভাই, এটাই শেষ সিগারেট। তাড়াহুড়োয় প্যাকেট কিনতে ভুলে গেছি। স্মোকিং জোনটায় ঘাঁটি গেড়ে থাকতে গেলে ঘণ্টায় দু'একটা করে মুখাগ্নি করতেই হবে। প্লিজ সুমিত, ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। বস্ ততক্ষণে আরও একটা জিনিস আনানোর পরিকল্পনা করছে। অন্য এক সহকর্মী এই ক'দিন লিওকে দেখার সুবাদে একটা ইনপুট দিয়েছে, লিও ফেরাতে পারে না শিশু আর মাদারের কোনও স্মারক বা আশীর্বাদি বস্তু।
০৪/০৯/২০১১ রাত ৭টা হোটেল হায়াত
সহকর্মী তিন প্যাকেট স্লাইস কেক, পটাটো চিপ্স আর এক বোতল জল নিয়ে এল। আমার হাতে সিগারেটের প্যাকেটটা গুঁজে দিয়ে বসল। তিনজন মিলে খাচ্ছি। ভাবছি। কী কী সিলি মিসটেকে অপারেশনটা ফল করতে পারে! বস বলল, কোচ সাবেল্লাকে খবর পাঠিয়েছি। ‘দেখা করব' বলে।
ফোনটা নীরব মোডে কেঁপে উঠল ৷ দেখি মেসেজ এসেছে। পাশের চেয়ারে বসে বস্ এস এম এস করেছে ‘ওদের ফোটা' । আমি উত্তর পাঠালাম, ওকে। উল্টো দিকের চেয়ারে বসা সহকর্মীকে জানালাম, যে কোনও প্রকারে ওই দু'জনকে বাইরে নিয়ে যেতে। বন্ধু দু'জন আমাকে বলল, কী ব্যাপার ? —দেখি যদি একটা অটোগ্রাফ পাওয়া যায়।
০৪/০৯/২০১১ রাত ৮টা হোটেল হায়াত
সিগারেটের গন্ধ একদম নিতে পারে না বস্ । প্রায় ঘণ্টাখানেক সেই গন্ধে মাথা ধরেছিল বলে স্মোকিং রুম থেকে বাইরে বেরিয়েছিল। ফিরে এসে বসল। এর মধ্যে অগুনতি ফোন কল এবং এস এম এস-এ যোগাযোগ রাখা হয়েছে অপর দুই সহকর্মীর সাথে। তারা মাদার হাউস থেকে মাদারের দুটি পোর্সেলিনের মূর্তি নিয়ে তীর বেগে বাইক ছোটাচ্ছে হোটেল হায়াতের দিকে। বস্ বলল, আমি আর্জেন্টিনার লোকাল ম্যানেজার গোপাল ঘোষের সাথে কথা বলে এলাম । ডান ! - মানে?
- সাবেল্লা আমাদের ডিনার রুমে যেতে বলেছে। তুই একটু পরে ডাইনিং রুমের সামনে প্যাকেটটা নিয়ে থাকবি। আমি আলাদা যাব। ঠিক সময়ে তোকে ডেকে নেব । রাত ৮টা ১৫
আমি বললাম, সবার সামনে নয়। বল ১১ হয় ওদের মাদারের মূর্তি দুটো এসে গেছে। বাইক আরোহী রুমে বা অন্য কোথাও । সহকর্মীদের একজন সেই মূর্তিগুলো নিয়ে মেইন রাত ৭৩৫ পোর্চ পার করেছে খবর এল। স্মোকিং জোনে স্বস্তির হাওয়া। সাথে চাপা উত্তেজনা। রাত৮২৫
আর্জেন্টিনা টিম প্র্যাকটিস সেরে লবি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ডান দিকের লিফ্টটার দিকে। একটি সংবাদমাধ্যম কোচের Sound Byte নিচ্ছে। আমার অনুজ সহকর্মীটির চোয়াল শক্ত, চোখে -মুখে উত্তেজনা— সা-বে-ল্-লা, চলো একটা বাইট নিয়েনি। (বলেই সে কপালে হাত ঠুকছে,কারণ আমার কাছে বুম্ মাইক নেই) - তুই ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল দেখিস? - মানে? আমি বলছি সাবেল্লা ! ওই দ্যাখো! -হ্যাঁ। ন্যাট জিও। দেখিস ? তুই ? - তুমি কি পাগল ?
-না। চিতার শিকার ধরা দেখেছিস কখনও ? ধর, একটা বাইসন শিকার করবে বলে ঠিক করেছে কোনও চিতা, তখন ওটাকে দেখ স্থির, শান্ত, সমাহিত। সেই সময় কত ঘটনা ঘটেছে! পাশ দিয়ে দুটো খরগোশ দৌড়ে যাচ্ছে। একটা Wild bore একমনে মাটিতে মুখ লাগিয়ে খাবার খুঁজেছে। হরিণ ছানা আকাশের এক ফালি মেঘ দেখে অকারণে তিড়িং বিড়িং করছে। কিন্তু চিতাটা? একমনে বাইসনটার অপেক্ষা করছে। স্থির হ। বড় শিকার পেতে গেলে ছোটগুলোকে ছাড়তে হয়, ইগনোর করতে হয়। জাস্ট ইগনোর।
০৪/০৯/২০১১ রাত ৭টা ৫০ হোটেল হায়াত
সংবাদমাধ্যমের বন্ধুরা এতক্ষণ ক্লোজ ম্যান মার্কিং-এ ছিল, এবার দুজন এসে বসল স্মোকিং জোনে। সেল
টবের পিছন থেকে প্যাকেটটা বার করে তাতে মাদারের মূর্তিগুলোকেও ঢুকিয়ে দিয়েছি। আয়েশ করে একটা সিগারেট জ্বালালাম। পুরোটা শেষ করে বেরিয়ে গেলাম লবিতে। ওয়াশ রুমে ঢুকে ফ্রেশ হলাম। এবার ধীরে ধীরে এগোতে থাকলাম ডাইনিং রুমের দিকে। স্টুয়ার্ড, শেফরা ট্রলিতে করে ক্রকারি, খাবার-দাবার নিয়ে যাওয়া আসা করছে। ফুল, পারফিউম, খাবার, কফি, পনির – সব মিলেমিশে এমন একটা গন্ধ তৈরি করেছে, যাতে আভিজাত্য আর সম্ভ্রম মিলেমিশে গেছে। চাপা স্বরে নিরাপত্তা কর্মীরা একে অপরের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে। এগোচ্ছি। ঠিক করেছি এই বারান্দাটার শেষে ডাইনিং রুমের যে দ্বিতীয় দরজাটা আছে, ওখানেই অপেক্ষা করব। বন্ধ দরজাটার সামনে এসে দাঁড়াতেই দু'জন সাদা পোশাকের নিরাপত্তা কর্মী এগিয়ে এলেন। এখানে কী প্রয়োজন ?
ভেতরে যাব। কোচ ডেকেছেন।
- প্যাকেটে কী ?
-বলা যাবে না।
—মানে? কে আপনি? কী করতে এসেছেন? দূর থেকে বস আমাকে লক্ষ্য রাখছিল। বিপদ বুঝে বসকে ফোনে ধরলাম। তখনও সিকিউরিটি অফিসাররা বলে চলেছেন,
- বলুন কে আপনি ?
বসকে ফোনে রেখেই বললাম, বলছি, সব বলব, একটু পরেই। বস্ বলছে, কোথাও একটা লুকিয়ে যা। আমি দ্রুত লবির দিকে এগোচ্ছি। লক্ষ্য স্মোকিং জোনের অন্ধকারটা। পিছন পিছন সিকিউরিটি অফিসাররা এ প্যাক অফ হাউন্ডের মতো আসছে। মনে হচ্ছে তীরে এসে তরী নয়, পুরো জাহাজ ডুবি হয়ে গেল! স্মোকিং জোনে ঢুকেই প্যাকেটটাকে টব দুটোর পিছনে চালান করে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে ১০-১২ জন Security official ছুট্টে এল স্মোকিং জোনে।
কাঁহা ছুপায়া প্যাকেট? ক্যা হায় উস্ প্যাকেট মে? Narcotics? Explosives? Arms? কোন
হ্যায় আপ?
আমার সহকর্মী সুমিত কখন ঢুকেছে স্মোকিং জোনে দেখিনি। বেগতিক দেখে ও হাল ধরল। সুমিত- Look, there is a gift for the Argentina soccer players.
Security officer -
Gift? No way?
Go out of the hotel. Are you from the media? Who are you?
সুমিত ভাল করেই জানে ডাইনিং রুমটিতে মিডিয়ার প্রবেশাধিকার নেই। তাই ও বলল,
Actually look. Coach SABELLA has invited us to the Dinner.
- Let's see what's there in the Packet. মাদারের মূর্তি পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু তারপর ! মনের হাতটা ভাগ্যের কপালে ছোঁয়ালাম। স্মোকিং জোনটায় কোনও ছাদ নেই। খোলা আকাশ। অন্ধকারে শিশির পড়ছে। সেপ্টেম্বর মাস! প্যাকেটটা খুলে দেখালাম।
Metal! No way! No way! You please get out! or you will be in trouble. We will be in PROBLEM.
০৪/০৯/২০১১ রাত ৮টা ৪০
আর্জেন্টিনা টিম নৈশভোজে ঢুকছে। কলকাতা ছাড়ার আগে শেষ সাপার। স্মোকিং জোন থেকে বেরিয়ে বকে প্যাকেটটা দিয়ে বলেছি তুমিই যেও। আমি
পারলাম না।
ক্লাসের পরীক্ষায় স্ট্যান্ড করে মাধ্যমিকে সব বিষয়ে অজানা কোনও কারণে যদি কোন ছাত্র ডাহা ফেল করে তার মতন তখন আমার মনের অবস্থা। 'পারলাম না।
০৪/০৯/২০১১ রাত ৯টা
কোচ সাবেল্লা ডাইনিং রুমে ঢুকে বেরিয়ে এলেন। লোকাল ম্যানেজার গোপাল ঘোষকে ডেকে বললেন, কারা লিওর সাথে দেখা করবে বলেছিলে তুমি ? বস্ আর আমি এগিয়ে গেলাম ডাইনিং রুমের দিকে।
০৪/০৯/২০১১ রাত ৯টা৩০
মাত্র দু'দিন আগে এই ঘরের সব ক'টা মানুষকে যুবভারতীর টানেলে, পলিটার্ফে দেখেছি আমি। কাঁধের ক্যামেরাটা দিয়ে আমার দেখাটা ছড়িয়ে গেছে গোটা রাজ্যে, আমার দেশে, আরও দেড়শোটা দেশে। আজ আমি একা ! সঙ্গে ক্যামেরাটাও নেই। আছে বটে— একটা পুঁচকে হোম ভিডিও ক্যামেরা। ঢুকে ‘থ’। শুধু ‘থ’ ই বা বলি কেন। ডাইনিং রুমটা চোখের সামনে দেখে মন তখন বিচিত্র বর্ণে তাতা থৈ থৈ করে নাচানাচি শুরু করেছে।
বস্ বলেছে- তাড়াতাড়ি রেডি কর জিনিসগুলো।
পলিপ্যাকের ভিতর থেকে মাদারের মূর্তি দুটো বার করেছি সবে। হঠাৎ গোপাল ঘোষ (ম্যানেজার আর্জেন্টিনা)-এর চাপা আর্তনাদ, নন্দন, মেসি এসে গেছে। ফাস্ট! ডান হাতে পুঁচকে ক্যামেরাটাতে লাইট লাগিয়ে Recording Switchটা টিপে দিয়েছি। বাঁ হাতে ১ ফুট ×১ফুট × ৪ ইঞ্চি-র প্যাকেটটা খুলে খড় আর কাগজের প্যাকিং ছাড়াচ্ছি। আর দেখছি নিঃশ্বাস ছোঁয়া দূরত্বে বর্তমান ফুটবল বিশ্বের বড়দা THE BOY NEXT DOOR-এর মতো দাঁড়িয়ে, মেসি। লিওনেল মেসি। তাঁর পাশে কোচ সাবেল্লা ।
কাঁপছে (ইস্ কুড়ি কেজির ক্যামেরাটা কাঁধে থাকলে হয়ত কাঁপতাম না), গোটা শরীর কাঁপছে, মন কাঁপছে, মাথা কাঁপছে, হাত কাঁপছে, সময় কাঁপছে। কাঁপছে Bossও (যদিও তার T-shirt-এ লেখা- I AM NOT BOSSY I JUST HAVE BETTER IDEAS) আবেগতাড়িত – অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়! মেসির হাতে মঞ্জুষার ডোকরা কাজের পিতলের একচালা মূর্তিটা তুলে দেওয়ার সময় ওকে বলা হল-
দুর্গা শক্তির দেবী। আগামী বিশ্বকাপে তোমাদের সাফল্যের রাস্তায় যাতে সব বাধা দূর হয়, তারই প্রত্যাশায় সর্ববিঘ্ন বিনাশিনী মহামায়া তোমাকে দেওয়া হল। আর যে সন্ত কলকাতায় তাঁর সেবাধর্মে দেবত্ব পেয়েছেন মানুষের মনে, সেই মা টেরেসা তোমাদের আশীর্বাদ করুন। দুই মায়ের আশিস নিয়ে তোমরা জয়যাত্রায় যাও । youtube, facebook, twitter-এর কল্যাণে এ গল্প সবার জানা। তাহলে গল্পটা বলার সময় ভ্যান্তাড়া করে রহস্যের প্যাকেজটা দেওয়া হল কেন? যে কোনও সচেতন পাঠকেরই এটা মনে হবে। মনে হতে পারে। সেটাই বলি ।
আসলে আমার মনে হয়, যে আদতে একজন সন্ত্রাসবাদী বা বোমা বিস্ফোরণকারী দল আর একটা রিপোর্টিং টিম যারা একটা Breaking News করার জন্য ছক সাজাচ্ছে তাদের দু'জনের কর্মপন্থা, তৎপরতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের মধ্যে খুব একটা তফাত নেই ।
ওখানেও যেমন হাজার হাজার চোখের সামনে, সবার দৃষ্টি এড়িয়ে জিলোটিন কাঠি, আর ডি এক্স দানা বা মারণ গ্রেনেড বয়ে নিয়ে যায় ‘আত্মঘাতী বাহিনী' এখানেও তেমনি নিরাপত্তা, মিডিয়া সবার সামনে দিয়ে শরৎকালে দুর্গা মূর্তিটাকে মঞ্জুষা থেকে মেসি পর্যন্ত বয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম আমি, আমরা, টিম XTRATIME.
০৪/০৯/২০১১ রাত ৯টা২০ হোটেল হায়াত
এরপর যা হবার তা-ই হল। হায়াত হোটেলের কফি শপে ক্রিসপি, পিৎজা আর উমদা দার্জিলিং চা সহযোগে CELEBRATION.
০৫/০৯/২০১১ রাত ১২টা১০, ইএম বাইপাস
বাই পাস ধরে হু হু ছ ট TATA SUMO.অফিসের দিকে। জানলার হাওয়াতে শরতের গন্ধ। ভাবছি। বেশ কয়েকটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে! বাইপাসের ধারে কোনও শিউলি গাছ আছে? পিচের ওপর শিশির জমে? জমে কি? বুয়েনস এয়ারসে Autumn এলে শিউলি ফোটে? হয়ত এবার থেকে মেঘ পালানো শরৎ এলে প্রতিবার যখন বাংলার গ্রামে, গঞ্জে মফসলে ফিসফিস্ করে শিশির পড়বে, শিউলি ঝরবে,তখন সুদূর আর্জেন্টিনায় কলকাতাকে মনে করাবে দুই মা–মা টেরেসা, মা দুর্গা। মনে রেখো লিও মেসি।
ফোনের রিংটোনে সম্বিত ফিরল। Episode Producer পবিত্রর তাড়া— কী করছ? তাড়াতাড়ি এসো Morning Episode -এ Breaking চালাতে হবে, তার আগে Teaser
বানাতে হবে। অনেক কাজ,
তাড়াতাড়ি এসো।
(পুরনো প্রকাশিত লেখা)



