Saturday, March 19, 2022

আমার রঙরঙ খেলা লেখা | Holi Special Blog

 

 

 

বারের দোলে টিভিনাইন বাংলা ডট কম এ বেরোল আমার তিনটি লেখা। কতটা লিখতে পারি বা আদৌ লিখতে পারি কিনা জানিনা। তবে তিনটি আপাত উপেক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখার সুযোগ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়ের কাছে। রইল সেই তিনটি লেখা। সঙ্গে লেখাগুলির লিঙ্ক। তিনটির ক্ষেত্রেই প্রথমে ভিডিও স্ক্রিপ্ট তৈরি হয়েছে ভিডিওর জন্য, তারপর লেখ্যরূপ। তাই হয়ত লেখকরা যেমন লেখেন তার মত হয়নি অনেকটা ভিজুয়ালাইজেশনধর্মী হয়েছে লেখাগুলো।

বরাভূমের ‘বাহা সাঁদেশ’

এই লেখাটির জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা সপ্তর্ষি বৈশ্যকে। লেখা পড়ার আগে দেখে নিন ভিডিওটা। চলুন একটু ঘুরে আসি আমার বেড়ে ওঠার সুন্দরী জেলাটায়। 



প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক

https://tv9bangla.com/entertainment/culture/huge-demand-of-organic-gulal-made-of-beetroot-neem-and-palash-flower-by-birhor-marginal-tribe-of-west-bengal-528955.html

 

বিটের মূল, নিমের পাতা, আর পলাশের ফুল। এইটুকুই সম্বল। সেই বিট, নিম আর পলাশের নির্যাস দিয়ে প্রথমবার ‘বাহা সাঁদেশ’ আবির তৈরি করেছেন পুরুলিয়ার বিরহড় জনগোষ্ঠীর মহিলারা। সাঁওতালি ভাষায় ‘বাহা’ হল ফুলের উৎসব, আর ‘সাঁদেশ’ মানে খবর। এবারের দোলে ওঁদের এই আবিরের ৫০ কিলো নিঃশেষিত হয়েছে প্যাকিং করার মাত্র ১৭ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে! ওঁদের স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে কাজ করেন যাঁরা, তাঁরাও হতবাক আবিরের এহেন জনপ্রিয়তায়। তাই আবার জোরকদমে শুরু হয়েছে আবির তৈরির তোড়জোড়। ২০০ গ্রাম ৭০ টাকা আর ৪০০ গ্রামের প্যাকেট ১৪০ টাকা। পাওয়া যাচ্ছে পুরুলিয়া, বলরামপুর বাগমুণ্ডি, বালি, বেলুড়, উত্তরপাড়া দক্ষিণেশ্বর আর উত্তর কলকাতার সমস্ত মেট্রো স্টেশন চত্বরে। আবির চেয়ে ফোন আসছে কাটোয়া, বর্ধমান আর উত্তরবঙ্গ থেকেও।

পলাশ- পুরুলিয়ার প্রাইড 


পোস্ট অফিস: নেকড়ে, গ্রাম বেড়সা। বন, পাহাড় আর পলাশে ঘেরা ভূগোলে বসবাস ভারতের অন্যতম আদিম জনজাতি, বিরহড়দের। এই মুহুর্তে পশ্চিমবঙ্গে ওঁদের জনসংখ্যা মাত্র ৪১০। আর সারা দেশে মাত্র ১০ হাজার। সাম্প্রতিক অতীতে চরম দারিদ্র আর অনটনই ছিল বিরহড়দের নিত্যসঙ্গী। জঙ্গল থেকে কাঠ কুড়িয়ে বিক্রি করাই ছিল ওঁদের মূল পেশা। আর খাদ্যাভ্যাস? ভাতের সঙ্গে কখনও আলু, কখনও শাক, জংলি পাতা কিংবা পিঁপড়ের ডিম (চলতি ভাষায় কুরকুট) ভাজা। তাঁদের সেই অবহেলার বারোমাস্যা থেকে টেনে তুলে জঙ্গলের ফলমূল আর প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে জ্যাম, জেলি আর আচার বানিয়ে পথ চলা শুরু হয় বিরহড় মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর। পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লক প্রশাসন আর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মৈত্রেয় ফাউন্ডেশন আজ থেকে তিন বছর আগে এই জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের কাজ শুরু করে। তারই একটি পরীক্ষামূলক ধাপ এবারের দোলে ওদের তৈরি এই আবির।

বিট বেটে অযোধ্যা পাহাড়ের ঢালে শুকনো হচ্ছে রোদে 


সবজি বাজার থেকে বিট কিনে তা কেটে, তারপর বেটে রোদে শুকিয়ে তৈরি হয়েছে বিটের আবির। জঙ্গলের নিম গাছে পাতা বেটে নিমের বাহা সাঁদেশ। আর পুরুলিয়ার গর্ব পলাশ ফুল দিয়ে তৈরি হয়েছে পলাশের আবির। তবে সেক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশিকা অক্ষরে-অক্ষরে মেনে একটাও পলাশ ফুল গাছ থেকে পাড়েননি বিরহড় মহিলারা। গাছের তলায় ঝরে পড়া রক্তিমাভ পলাশ কুড়িয়ে এনে জলে সেদ্ধ করে মিক্সার গ্রাইন্ডারে পিষে আবির তৈরি করেছেন ওঁরা। এই সব কাজের কারিগরি প্রশিক্ষণ ও খুঁটিনাটি ওঁদের হাতে ধরে মহিলাদের শিখিয়েছেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য। তিনি বলছেন, “পিছিয়ে পড়া, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আবেগের সুড়সুড়িকে মূলধন করে নয়, বরং গুণমানে বাজারের অন্যান্য ভেষজ আবিরের সমকক্ষ হয়েই যাতে নিজের স্থান করে নেয় বাহা সাঁদেশ, সেটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল”।

মৈত্রেয় ফাউন্ডেশনের সপ্তর্ষি বৈশ্য কলকাতার মানুষ হলেও ইদানিং নিত্যযাত্রীর মতই তাঁর আনাগোনা বিরহড় ডেরা বেড়সা গ্রামে। তিনিই বলছিলেন, “বাহা সাঁদেশ বিক্রি করে যে অর্থ উপার্জন হচ্ছে, তা জমা হচ্ছে ওই মহিলাদের স্বনির্ভরগোষ্ঠীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। আর লাভের একটি অংশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ওই মহিলাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ মূলধন। যাতে ওঁরা পরবর্তীকালে এই ধরনের কাজ করতে গিয়ে কারও মুখাপেক্ষী না হন। এমনকী আমাদের সাহায্য ছাড়াও ওঁরা যাতে প্রকৃত পক্ষেই স্বনির্ভর হতে পারেন। এটাই এখন আমাদের মূল উদ্দেশ্য।" 

জলে ফুল সিদ্ধ করার পর ছাঁকা হচ্ছে পলাশ ফুলের নির্যাস


বসন্ত ঋতুরাজ। সে তার সেরা সম্ভার হেলায় পথে ছড়িয়ে বীর সন্ন্যাসীর মতো হেঁটে চলে যায় নীল দিগন্তে। অযোধ্যা পাহাড়ের ঢালে সদ্য নির্মিত নীলরঙের কিছু বাড়িতে এখন প্রান্তিক, আদিম এই বিরহড়দের ডেরা। এবারের বসন্তে ঝরে পড়া অরণ্যের সম্পদ ফুল পাতা দিয়ে বসন্তের রঙ বানিয়ে ওঁরা হাজির আমার আপনার সঙ্গে রঙমিলান্তির খেলাতে। ওঁদের তৈরি এই রঙ যেন আমাদের মর্মে, কর্মে আর যাওয়ার পথে এগিয়ে যেতে লাগে! তাই কি ফুল ফুটিয়েছে পুরুলিয়ার পাহাড়তলির পলাশবন?

এবার দেখুন ভিডিও যেটা প্রকাশিত হয়েছে টিভি নাইন বাংলা ডিজিট্যালে 


 



 

পোয়াবারো- ঘি পোয়া

ফেসবুকের গ্রুপ কলকাতার নকশি কথা দারুণ। এই গ্রুপের মেম্বারদের অনেকেই কলকাতা ও তার আশেপাশের অনেক বিষয় নিয়ে পোস্ট দিয়ে থাকেন। তাই এই লেখার জন্য তাঁদের জানাই কৃতজ্ঞতা।

প্রকাশিত লেখাটির লিঙ্ক

https://tv9bangla.com/lifestyle/food/this-dessert-is-available-only-during-holi-days-in-kolkata-529431.html

  

 

দোল রঙের উৎসব, মিষ্টিরও। মঠ, বাতাসা, লাড্ডু, সন্দেশ, নাড়ু, খাজা, গজা, জিলিপি, পায়েস, পেঁড়া, ছানা, দই, ঠাণ্ডাইয়ে মাখামাখি হয়ে বসন্ত যখন জাগ্রত হয় প্রতিবার, তখন ভিড় জমে বৌবাজারের এই ছোট্ট দু’টি দোকানে। ‘শ্রীহরি’ আর ‘রাধারানী সুইটস’। যেন রাধামাধব আর বৃন্দাবন বিলাসিনী রাইয়ের যুগলবন্দি। দোল থেকে পঞ্চম দোল—প্রতিবছর মানুষের ঢল নামে দোকান দু’টোয়। হোলির সময়ে এক বিশেষ মিষ্টি পাওয়া যায় এখানে। শতবর্ষ পার হয়ে গিয়েছে, তবুও একই রকম জনপ্রিয়তা এই দোকানের এই বিশেষ মিষ্টির। নাম ‘ঘি পোয়া’। প্রতি পিসের দাম মাত্র ৬টাকা। চেনা শহরের অচেনা এই মিষ্টির খোঁজ দিচ্ছে TV9 বাংলা। চেনা শহর কল্লোলিনী কলকাতার অচেনা এই মিষ্টি দেখতে হুবহু আলুর চপের মতো। ভাজা হয় খাঁটি গব্য ঘিয়ে।

বৌবাজার, নতুনবাজার, বেহালা আর উত্তর কলকাতার তামাম বনেদি বাড়িতে এই মিষ্টি ছাড়া দোল অচল। কলকাতার বনেদি বাড়িগুলিতে দোল গোবিন্দের আরাধনায় ভোগ নিবেদন হয় ঘি পোয়া দিয়ে। দোল থেকে পঞ্চম দোল ঘি পোয়া ছাড়া প্রসাদ নাকি মুখে রোচে না বনেদি বাড়ির ননীচোরার। তাই সারা শহরে উত্তর থেকে দক্ষিণ যত প্রাচীন বাঙালি বাড়ি আছে, তাঁদের কাছে দোলের এক ঐতিহ্যের সমার্থক হয়ে উঠেছে এই ঘি পোয়া। রজত পাইন বৌবাজারে থাকেন। তিনিই বলছিলেন ঘি পোয়ার এই ট্রাডিশানাল ক্রেজের কথা। দেবমাল্য শীল প্রতিবছর এই মিষ্টির টানে ফিরে-ফিরে আসেন এই দোকানে। দোলের চাঁচড়ের পুজোয় সঞ্জীবকুমার মল্লিকের বাড়িতে পুজো হয়। তার জন্য দু’দিন আগেই তিনি এসে বায়না করে গিয়েছেন ১৫০ পিস ঘি পোয়া, জানালেন শ্রীহরি সুইটসের মালিক কৃষ্ণ গুপ্তা। দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি অনবরত গাওয়া ঘিয়ে ভেজে চলেছেন এই ঘি পোয়া। হালুইকরদেরও ফুরসত নেই। জানালেন তিন প্রজন্ম ধরে চলে-আসা এই ঘি পোয়ার রেসিপি। চালের গুঁড়ো, সুজি, গুড় আর ঘি দিয়ে মেখে মণ্ড তৈরি করা হয়। তারপর হাতের তালুর চাপে চ্যাপ্টা করে গরম ঘিয়ে ভাজা হয় সেই মণ্ডের পোয়া।

কলকাতার বাঙালি বনেদি বাড়িতে দোলে গোপাল সেবায় মাস্ট এই মিষ্টি। আর লাগে মালপোয়া। শ্রীহরি সুইটসের পাশের দোকান রাধারানী সুইটসের নরেশ গুপ্তা বলছিলেন ঘি পোয়ার যোগ নাকি ওড়িশায়। শ্রীক্ষেত্র জগন্নাথধামে ছাপান্ন ভোগের এক ভোগ এই ঘি পোয়া। জগন্নাথের উৎকল থেকে এই খাদ্য সংস্কৃতির আগমন এই বাংলায়। তা-ও শতাব্দীকাল আগে।

পূর্ণিমায় দোল গোবিন্দর ভোগের জন্যই এই মিষ্টির চাহিদা এখন তুঙ্গে। আপনিও যদি চান, চেখে দেখতে চলে আসুন বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রীটের বৌবাজার মার্কেটের সামনের এই দোকান দু’টোয়। গরমাগরম ঘি পোয়া প্রতি পিস মাত্র ৬ টাকা। মুখে দিয়েই বৃন্দাবনের বিলাস। তবে সাবধান, এটা খাবার পর ঠাণ্ডা পানীয় খাবেন না। গরম চা কফি চলতে পারে। খাঁটি ঘিয়ে তৈরি তো, তাই ঠাণ্ডা খেলে বিপত্তি ঘটতেই পারে!

এবার দেখুন ভিডিও যেটা প্রকাশিত হয়েছে টিভি নাইন বাংলা ডিজিট্যালে 


 

ঘুম-ON

এই ত্রয়ীর অন্তিম লেখা ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে বা বিশ্ব নিদ্রা দিবস নিয়ে। যাঁদের ঘুম নিয়ে সমস্যা তাঁদের  কাজে লাগতে পারে এই লেখাটা। কৃতজ্ঞতা জানাই সেলিমপুরের সোমনস স্লিপ ক্লিনিকের ডাঃ সৌরভ দাসকে আর অরেঞ্জ স্লিপ অ্যাপনিয়া ক্লিনিকের ডাঃ উত্তম আগরওয়ালকে।  

প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক

https://tv9bangla.com/health/important-facts-about-sleep-you-need-to-know-529981.html

 

আজ বিশ্ব ঘুম দিবস। ঘুম হেলাফেলার বিষয় নয়। সারা দুনিয়া জুড়ে চিকিৎসকরা বলছেন ঘুম সম্বন্ধে সচেতন হতে। আর সেই কারণেই ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটি বলছে ঘুমের গুণগত মান ভাল হলে মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে যা তৈরি করে একটা সুন্দর পৃথিবী। আমাদের প্রতিদিনের কাজে আমরা সম্মুখীন হই বহু ঘটনার। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলি রয়ে যায় স্মৃতিতে। এই স্মৃতিশক্তি তৈরিতে ঘুমের ভূমিকা অপরিহার্য। সুস্থ ভাবে বাঁচার জন্য সুন্দর ভাবে ঘুমনোটা জরুরী। কিন্তু কেমন ভাবে আসবে সুখের সেই সুস্থ ঘুম? কিন্তু কেমন ভাবে আসবে সুখের সেই সুস্থ ঘুম?

কলকাতার দুজন চিকিৎসক ডাঃ সৌরভ দাস এবং ডাঃ উত্তম আগরওয়াল আমাদের জানালেন কী কী করলে আসবে SOUND SLEEP

শোওয়ার ঘরটিকে করুন যতটা সম্ভব নিঃশব্দ ও অন্ধকার ঘুমোতে যাওয়ার আগে ফোন সাইলেন্ট বা এয়ারপ্লেন মোডে রাখুন বিছানার চাদরটাকে টানটান ও পরিষ্কার করে নিন ঘুমের আগে অল্প উষ্ণ গরম জলে স্নান করলে ভাল ঘুম আসে সন্ধ্যের পর চা, কফি বা নরম পানীয় খাবেন না, ধূমপান একদমই নয়। এই নিয়ম মানতে পারলে ভাল ঘুম আসবেই । পরের দিনের করণীয় কাজের তালিকা কাগজে লিখে রাখুন আর সেই দিন কী করলেন তাও লিখুন ঘুমোতে যাওয়ার আগে। দেখবেন চিন্তা মুক্ত ঘুম আসবে । রাত্রের দিকে কম জল খাওয়া অভ্যাস করুন। দিনে বেশি জল খান। ডিনারের পর অল্প অল্প সিপ করে জল খান ঘুমোতে যাওয়ার আগে টয়লেট করে শুলে রাত্রে অযথা ঘুম ভাঙবে না বেডরুমে ঘড়ি এমন ভাবে রাখুন যাতে বিছানায় শুয়ে ঘড়ি দেখা যাবে না। তাই ঘড়ি দেখে ঘুম না আসার অস্থিরতাও থাকবে না। এতে করে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না।

চিকিৎসকরা বলছেন অনিদ্রা বা অতিনিদ্রা দুটোই শরীর খারাপ হওয়ার কারণ হতে পারে।

তাই জেনে নিন কতটা ঘুমনো উচিত একজন সুস্থ মানুষের। কমপক্ষে কতটা ঘুম দরকার কোন বয়সের মানুষের –

সদ্যজাতদের জন্য- ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা প্রাইমারি ক্লাসে পড়ুয়াদের জন্য – ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সেকেন্ডারি ক্লাসের পড়ুয়াদের জন্য – ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা প্রাপ্ত বয়স্কদের ৭-৯ ঘণ্টা

অনেকে ভোরে ট্রেন বা ফ্লাইট ধবার চিন্তায় সারারাত ঘুমোতে পারেন না। সেক্ষেত্রে কীভাবে অ্যালার্ম দিলে ভাল ঘুম হয় ?

ডাক্তারবাবুরা বলছেন এক্ষেত্রে যদি ভোর ৫ টায় উঠতে হয় তাহলে অ্যালার্ম দিন আগের দিন বিকেল ৫ টায়। আর তারপর সব কাজ রাত ৮টার মধ্যে মিটিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যান ।

যারা রাতের শিফটে কাজ করেন তাঁদের ঘুমোতে হবে সকালে। আর সেই ঘুমটাকেও দিতে সমান গুরুত্ব। ভারি পর্দা ঝুলিয়ে রেখে ঘরটাকে অন্ধকার রাখতে হবে । ঘুমোতে যাবার এক ঘণ্টা আগে থেকে চলবে না সেলফোন বা অন্য কোনও ডিভাইজ ব্যবহার করা।

বাঙালি নাকি ঘুমকাতুরে! তার নাকের ডাকে নাকি কাক চিল বসে না বাড়িতে। সারা বাংলা জুড়ে একটা সমীক্ষা চালিয়ে ডাঃ সৌরভ দাস জানাচ্ছেন সামগ্রিকভাবে বাঙালির ঘুমের মান কেমন? আর সেই সমীক্ষার ফল হতাশ হবার জন্য যথেষ্ট। ডাঃ দাস বলছেন সামগ্রিক ভাবে বাঙালির ঘুমের মান খুবই খারাপ। আর ষাটোর্ধদের ক্ষেত্রে সেটা আরও খারাপ হয়ে সংকটজনক অবস্থায় এখন।

এই মুহুতের পৃথিবীতে ৮০ টিরও বেশি স্লিপ ডিজঅর্ডারের খোঁজ দিয়েছে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। যার মধ্যে সংগীত শিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী র অকাল প্রয়াণের কারণে সচেতনতা এসেছে স্লিপ অ্যাপনিয়ার ক্ষেত্রে । বাপ্পির মৃত্যুর পর থেকে ভিড় বাড়ছে শহরের স্লিপ ক্লিনিক গুলোয়। কোথাও হয়ত দেরিতে হলেও হয়ত আসছে সচেতনতা । আর এই সচেতনতাটা সারা বছর জারি রাখতেই আজকের এই বিশ্ব নিদ্রা দিবস । তাই কোনও কারণে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলেই ডাক্তারবাবুর কাছে যান। গুরুত্ব দিন ঘুমকে । শুধু আজ নয় আজীবন।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।


এবার দেখুন ভিডিও যেটা প্রকাশিত হয়েছে টিভি নাইন বাংলা ডিজিট্যালে



 

Thursday, March 10, 2022

এরকম খবর করলে মন শান্তি পায়




ন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবসের সকালে কোয়েল একটা ফেসবুক পোস্ট দেখাল। এক বৃদ্ধা নবান্নের  কাছেই কংক্রিটের ওপরে পথের ধুলোয় পড়ে রয়েছেন। ছবিটা দেখে মনে হল এটা নিউজ মেটিরিয়াল। এক অশক্ত বৃদ্ধা। চোখ গুলো কেমন করুন। অফিসে যাবার জন্য বাইক স্টার্ট দেওয়ার আগে রক্তিমকে জানালাম বিষয়টা।

- এটা করে তবে অফিস এসো। কী বিষয় পুরোটা দেখো। এটাই স্টোরি। 

দেখা শুরু হল আমার। 

তার পরবর্তী গল্প সবার জানা। সে গল্পের অবতারনা এখানে নয়। 

 সে গল্প দেখুন এখানে

আমাদের কাছে সেই খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়। পথ ভোলা পথিক নাকি সন্তান পরিত্যক্তা? প্রশ্ন উঠেছিল হাওড়ার শিবপুর, মন্দিরতলা এবং নবান্ন অঞ্চল জুড়ে মানুষের মধ্যে। মঙ্গলবার রাত্রেই মন্দিরতলার একজন বললেন- পুলিশ নিয়ে গেছেন ওই বৃদ্ধাকে। 

বুধবার সকাল সকাল ফোন করলাম হাওড়া সিটি পুলিশের শিবপুর থানার ওসি অরূপ বাবুকে। তিনি জানালেন সুরক্ষিত আছেন ওই বৃদ্ধা। এখন ভর্তি রয়েছেন হাওড়া জেলা সদর হাসপাতালে।

বুধবার বেলা ১১টা-  হাওড়া জেলা সদর হাসপাতালে নবান্নের ফুটপাথে পড়ে থাকা মাকে। একটা বিছানা জুটেছে তাঁর। আর পথ নয়। ঘুমোচ্ছেন অনেকটা স্বস্তিতে। বৃদ্ধা এখনও নিজের পরিচয় ঠিকঠাক জানাতে পারছেন না চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের। ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডের খাতায় উনি ‘আন নেমড’। আপাতত পরিচয় একটাই - বেড নম্বর এক্স ৬৫। 

চরম ব্যস্ততা ডাক্তার বাবুদের। একজন পেসেন্ট ঢুকেছেন। পয়জনড কেস। তাঁর স্টম্যাক ওয়াশ পর্ব চলছে। তার মধ্যেই একজন চিকিৎসক জানালেন কেউ একজন এসেছিলেন যিনি ওনাকে নিজের মা বলে দাবি করেছেন। ওয়ার্ড থেকে বলা হয়েছে ওই ব্যাক্তিকে নিজের পরিচয় পত্র এবং প্রমাণাদি এনে যোগাযোগ করতে। হাসপাতাল সুপার ডাঃ নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় এর সঙ্গে কথা বললাম। অনুরোধ করলাম যদি কেউ আসেন একবার যেন আমায় জানানো হয়। আর একবার গেলাম বেড নম্বর এক্স ৬৫ র কাছে। তখন তিনি  ডাল, সয়াবিনের তরকারী আর মাছের ঝোল দিয়ে পরম তৃপ্তিতে ভাত মেখে খাচ্ছেন।  

শিবপুর থানায় গেলাম। তারপর ওই নীল সাদা থাম। নবান্নের কাছে। যে স্তম্ভগুলির নীচে হতভম্বের মত বসে ছিলেন ওই বৃদ্ধা। 

বিকেল গড়াতে না গড়াতেই ফোন ঢুকল ডাঃ নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় এর। বেড নম্বর এক্স ৬৫ র বাড়ির লোক এসেছেন। জানালাম আমি আসছি ওঁদের একটু অপেক্ষা করতে বলুন। 

তারপর এল বৃদ্ধার ছেলের ফোন। ওনারা আমি গেলে আমার সঙ্গে কথা বলে তবেই মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। 

সন্ধ্যা নেমেছে হাওড়া সদর হাসপাতাল চত্বরে। জানা গেল পরিচয়। দুই ছেলে এসেছেন মা কে নিয়ে যেতে। ৭ মার্চ থেকে মা নিখোঁজ। বড় ছেলে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করেন। ৭ তারিখ সকালে একটু দেরিতে ফিরেছেন। ছোট ছেলের রঙিন মাছের ছোট্ট ব্যবসা। কাজের জন্য তাঁকেও বেরোতে হয়েছে। বড় ভাই বাড়ি ফেরার আগেই বেরিয়ে যান ছোট ভাই। দুই ভাই আর মায়ের সংসার। তাই ওই সময়ে মা একলাই ছিলেন। মানসিক অবস্থা বয়সের কারণে একটু বিঘ্নিত। কানে কম শোনেন।

বাড়ি খালি দেখে মা বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। নিরুদ্দিষ্টের গন্তব্যে। তারপর হন্যে হয়ে দুই ভাই মা কে খুঁজেছেন। ব্যাটরা থানায় মিসিং ডায়েরিও করেছেন। খুঁজে পান নি মাকে। 

তারপর আমদের ওই প্রতিবেদন। তা দেখে বৃদ্ধার ছোট ছেলেকে জানান তাঁর এক বন্ধু - মা রয়েছেন নবান্নের ফুটপাথে। 

ছেলে আসেন নবান্নের সামনের পুলিশ আউটপোস্টে। সেখান থেকে শিবপুর থানা হয়ে সদর হাসপাতালে।

খুঁজে পান মাকে। পুরো প্রক্রিয়াটায় আমরা রয়ে গেলাম একটা ছোট্ট যোগসূত্র হয়ে। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন ছেলেরা। জানতে চাইলাম বৃদ্ধার পরিচয়। ওঁদের বাবা প্রয়াত সুভাষ চন্দ্র বোস। আর মা?

বেড নম্বর এক্স ৬৫ নয়। অনিলা। অনিলা বোস। 

ওঁরা তিন জন ধীরে ধীরে হেঁটে বেরিয়ে আসছেন। ছোট ছেলে সুশান্তকে জিজ্ঞাসা করলাম

- কিসে নিয়ে যাবেন মাকে? টোটো ডেকে দেব? 

-না দাদা বাসেই যাব। টোটো আশি টাকা চাইছে। অত টাকা কোথায়! বাসে যাব, একটু তো পথ। পৌঁছে যাব। 

তিনজন, অ্যাম্বার রঙের পথে মৃদু হেঁটে যাচ্ছেন, নীল রঙের আলোয় লেখা হাওড়া জেলা হাসপাতালের গ্লোসাইনটা জ্বলজ্বল করছে। বাড়ি ফিরছেন যিনি, উনি অনিলা। 

দেখুন বাড়ি ফেরার ভিডিও