Monday, October 26, 2015

পাগলের পুজো

পাগলের পুজো
ষষ্ঠী র সকাল বাজার করতে বেরিয়ে মুদির দোকানে ফর্দ জমা দিয়ে মোড়ের
চা দোকানে প্রভাতী সিগারেট সহ এক কাপ চায়ে চুমুক দিচ্ছি, একদল ছেলেমেয়ে
হুহু করে দৌড়ে গিয়ে অপেক্ষমান বাসে উঠল। পুজোর সকাল ঝলমল করে উঠল।
"মরবে মরবে সব মরবে" ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি পাড়ার পরিচিত এক পাগল বিড়বিড় করছে।
"মরবে মরবে সব মরবে "
চা দোকানি গলা ঝাঁঝিয়ে বলল সকাল সকাল বাজে বকা শুরু করলি? চুপচাপ চা খেয়ে
কেটে পড়। সকালের কাগজ অাটখানা হয়ে হাতে হাতে ঘুরছে। পুজোর উপচে পড়া জনস্রোতের
ছবি আর সুদৃশ্য প্রতিমার ছবির মাঝে খচখচ করছে দক্ষিণ কলকাতার এক প্যাণ্ডেলে পুজো বন্ধ
হয়ে যাওয়ার ঘটনা । অত্যুৎসাহী এক চা খোর বলল শুধু হুডোহুড়ি?  দু একজন মারাও  গেছে শুনছি!
পাগল আবার বলল "মরবে মরবে সব মরবে"
আমি মজা পেয়ে গেলাম, পাগলের সাথে আলাপ জমানো শুরু করলাম । জিজ্ঞেস করলাম কে মরবে? কেন মরবে? ও বলা শুরু করল "সব মরবে, আমার গা জ্বালা করে" এর মধ্যে চা এল। দোকানদার কে বললাম পাগলা টা কে বিস্কুট দিতে। চায়ে ডুবিয়ে বিস্কুট খেতে খেতে পাগল বলল Thank you আবার জিজ্ঞেস
করলাম বল কে মরবে, "আগে এই সময় আমার ঠান্ডা ঠান্ডা আরাম লাগত, এখন গা পুড়ে যায় সব সময়, তোরা তো খালি আকাশের দিকে তাক করে বাড়ি বানাচ্ছিস, হৈ হৈ করে। আমার কথা ভাবিস?আমার বড্ড গরম লাগে গা জ্বালা করে ।"
আমি বললাম গরমই যদি লাগে তো কম্বল গায়ে দাও কেন? ও বলল "পাগল কোথাকার কম্বল গায়ে দিলে কত আরাম জানিস মুড়ি দিয়ে নিলেই ঠান্ডা আহ্"
চা শেষ করে পাগল আবার বকবক করা শুরু করল "আমাকে পাগল বলিস , জানিস তোরা কত বড় পাগল? এই যে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে হন্যে হয় ঠাকুর দেখিস আর টপাটপ ছবি তুলিস কি পাস তোরা? জানিস মাইকের গাঁক গাঁক আওয়াজে আমাদের মত সাধারণ পাগলদের কত অসুবিধে হয়? এমনিতেই মাথার ভেতর কত আওয়াজ! প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ উড়ে গেল, কল থেকে  ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ল, ভোর রাতে হাওয়ার ভেতর রোজ একজন কাঁদে । শুনতে পাস? বুঝতে পারিস? বুঝবি না তোরা বুঝবি না। তোদের কান মোটা হয়ে গেছে । এই যে সকাল থেকে রাত ছুটে বেড়াস, কী পাস তোরা এত দৌড়ে?
আস্তে আস্তে ভিড় পাতলা হল চায়ের দোকানে । পাগল ও নিজের কাজে মন দিল। একটা পুরোনো খবরের কাগজে পেন দিয়ে হিজিবিজি লিখতে লাগল।অন্য দিন লোকটা হাত নেড়ে ট্র্যাফিক কন্ট্রোল করে, আজ লিখছে দেখে মজা করে জিজ্ঞেস করলাম কি লিখছ? পাগল বলল ওপারে ওরা দুঃশাসন আর এপারে আমি প্রশাসন, বুঝলি আমি প্রশাসন, তাই সব কিছু লিখে রাখছি, সব হিসাব, সব হিসসা, সব কিসসা, সব কিসু । মরবে মরবে সব মরবে । বললাম আবার শাপ দিচ্ছ। ও বলল দেবো না? জানিস তোরা নালির ধারে কাগজ জ্বালিয়ে ভাত রাঁধতে কেমন লাগে? কুকুরের মত ভ্যাট থেকে পচা খাবার খেতে কেমন লাগে? তোদের পুজো তে একবার ও মনে হয় আমাদের কথা? কখনও তোদের ইচ্ছে হয় আমাদের দুমুঠো খেতে দিতে? গু মুতের মত ভাবিস আমাদের, তাই না? আমাদের ভোট নেই, তাই আমরা ভাটের। চল আমরা গুয়ের মতই ফেলনা, আমার দরকার নেই তোদের, মর তোরা।
একা দাঁড়িয়ে রইলাম, সত্যি ই কি আমাদের বিপুল পরিমাণ বৈভব আর আনন্দের সাথে ওদের খুব সামান্য কিছু প্রয়োজন কে জুড়ে নিলে শারদোৎসব কি যথার্থই সর্বাঙ্গীন হত না?
উৎসব সর্বস্ব বিবেক নিয়ে হতভম্ব হয়ে রইলাম । সত্যিই কি উৎসব আমাদের সার্বজনীন?
(লেখাটি আসলে কল্পনা প্রসূত না হলেও, এটাকে কাল্পনিক অথবা পাগলের প্রলাপ ভেবে নিয়ে দেখুন, অদ্ভুত আরাম লাগবে । স্থান কাল পাত্র কারও সাথে মিল সম্পুর্ণ কাকতালীয় , কাউকে  বা কারও ধর্মীয় ভাবাবেগ এ আঘাত করা এ লেখার প্রাথমিক উদ্দেশ্য নয়)



Do Share your VIEWS and REVIEWS in the comment box below.

Follow me in facebook https://www.facebook.com/nandan2017/
                       twitter https://twitter.com/Nandanpaul