Friday, June 8, 2018

পরিবেশকে ভাল রাখার ৫০ টি সহজ উপায় | 50 Easy Ways You can HELP Nature



শুধুই গেল গেল করব ? নাকি আমাদের ও করণীয় কিছু আছে। পরিবেশ বাঁচাতে কী কী করব আমরা সে সব নিয়ে আজ কয়েকটা সহজ টোটকা।  তার আগে দেখে নিন ভিডিওটা। জল বাঁচানোর কী দারুন সহজ  বৈজ্ঞানিক উপায়। শুধু মাত্র একটা ডিভাইস। প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল খুব ভাল ভাবে বাঁচানো যায় এই ছোট্ট ডিভাইসটি দিয়ে।




১) বাড়ির চারধারে যতটা পারেন সবুজ গাছ লাগান। পারলে ফল ও ফুলের গাছ লাগান। বাই প্রোডাক্ট হিসেবে মরসুমি ফল আর মধু পাবেন।
২) বাগান যদি থাকে বাগানে মাটি রাখুন যাতে বৃষ্টির জল মাটির গভীরে যাওয়ার রাস্তা পায়।
৩) টবে গাছ লাগান। একটা সবুজ বন্ধু আপনার উপকারই করবে।
৩) কিছু গাছে পাখির জন্য ছোট ছোট বাসা বানিয়ে রাখুন। নুতুন অতিথিতে বাড়িটা ভরে যাবে।
৪) পশু পাখির প্রতি স্নেহশীল হন। পথের পড়ে থাকা কুকুর ছানা বিড়াল ছানাদের বাড়িতে পুষুন। অবশ্যই প্রপার ভ্যাক্সিনেশন করে।
৫) জোর গান , লাউড স্পিকার বাজানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন।
৬) রাস্তায় হাঁটতে  হাঁটতে বা ড্রাইভ করতে করতে গান শোনার অভ্যাস মারাত্মক ! প্রথমত অন্য গাড়িকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বেশি হর্ন দিতে হয়।  দ্বিতীয়ত এই অভ্যাস আপনার প্রাণঘাতীও হতে পারে। 
৭) হাতে সময় নিয়ে রাস্তায় বেরোন। ড্রাইভ করলে হর্ন ফ্রি ড্রাইভ করুন। এটা অনেকেই সাফল্যের সাথে করে থাকে।  এই শহরেই এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা হর্ন বাজান না।  বিশ্বাস করুন একদিন পরীক্ষামূলক ভাবে হর্ন ছাড়া ধৈর্য ধরে গাড়ি চালিয়ে দেখুন। অনেকটা মানসিক আরাম পাবেন।  
৮) প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করুন।
৯) যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলবেন না।  তাতে মাইক্রোপ্লাস্টিক হওয়া এড়ানো যাবে।
১০) পুকুর , নদী ,নালা বা অনত্র যেখানে প্লাস্টিক দেখবেন সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে। ফেলুন

১১) এলাকায় প্লাস্টিক পরিষ্কার অভিযান আয়োজন করুন , জনমত তৈরী করুন।
১২) মাইক্রোবিডস বিহীন প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ইন্টারনেটে খোঁজ নিন কিসে কিসে মাইক্রোবিডস আছে।
১৩) যে সব কাপড়এ মাইক্রোফাইবার আছে তার ব্যবহার ও পরিষ্কারের ব্যাপারে সচেতন হন।
১৪) প্রাকৃতিক ফাইবার যুক্ত জামাকাপড় ব্যবহার করুন।
১৫) বাজার করতে গেলে কাপড়ের ব্যাগ , চটের ব্যাগ ব্যবহার করুন।
১৬) বাড়ি ও গাড়িতে প্রয়োজন ছাড়া এসি বন্ধ রাখুন।
১৭) গাড়ির হর্ন বাজানোর অভ্যাস কমান।
১৮) প্রয়োজন ছাড়া ইলেকট্রিক আলো পাখা বন্ধ রাখুন। সিএফএল বা কম ওয়াটের আলো ব্যবহার করুন। বাড়িতে প্রাকৃতিক আলো আসার পথ বাড়ান।
১৯) সোলার আলো পাখা খুব একটা বেশি দাম নয়।  অনলাইন শপিং এ  বা বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করুন।
২০) দাড়ি কাটার ফোমের জায়গায় জেল ব্যবহার করুন।

২১) রুম স্প্রের জায়গায় ধুপ। ডিওডেরেন্টের জায়গায় পারফিউম বা আতর ব্যবহার করুন। ফুলের ব্যবহার করুন।
২২) পুজোর ফুল বেলপাতা ও অন্যান্য পুজোর সামগ্রী নদীতে ফেলা থেকে নিজে  বিরত থাকুন। অন্য কেউ একাজ করছে দেখলে তাকেও আটকান।
২৩) বেড়াতে গেলে খেয়াল রাখুন যাতে আপনি প্লাস্টিক দূষণ না করেন।  অন্য কেউ প্লাষ্টিক ফেলে গেলে সেগুলো ওয়েস্ট বিনে ফেলুন।
২৪) ঘর পরিষ্কার করার জন্য বিষাক্ত কেমিক্যাল ছেড়ে ভেষজ ক্লিনার ব্যবহার করুন। লেবুর রস , বেকিং সোডা বা ভিনিগার দিয়ে কী দারুন ঘর পরিষ্কার হয় জানেন!! রাসায়নিক ক্লিনারের বদলে ওগুলো ব্যবহার করুন। আরও পরিবেশ ও জল বান্ধব বিকল্প খুঁজুন। নিজে জানুন অপরকে জানান।
২৫) মশা মারার ক্ষতিকর ধুপ বা লিকুইড ছেড়ে ধুনোয় কালকাসুন্দা পাতা ব্যবহার করুন। মশারি টাঙিয়ে ঘুমোনোর অভ্যাস ফিরিয়ে আনুন।
২৬) শিশুদের জু গার্ডেন পার্ক বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে যাওয়ার নিয়মিত অভ্যেস করুন।  ওদের সেখান স্বুস্থ পরিবেশের গুরুত্ব।
২৭) অতিফলনশীল নয় স্থানীয় ফসল চাষ করুন যে ফসল এর ভ্যারাইটিগুলো প্রাকৃতিক ভাবেই কম জল টানে। মনে রাখবেন MORE CROP MORE DROP . বাগানের গাছের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। রাসায়নিক ছাড়া চাষ করুন। জৈব সার ব্যবহার করুন।
২৮) রোজকার বাড়ির কাজে যত কম পারেন রাসায়নিকের ব্যবহার করুন। আর যদি রাসায়নিক ব্যবহার করতেই হয় সেগুলো সঠিক স্থানে ফেলুন যাতে ওই সব ক্ষতিকর জিনিসগুলি মাটিতে না মেশে ,কখনই মাটিতে ফেলবেন না।
২৯)  খেয়াল রাখুন যাতে বাড়ির ব্যবহার্য রং , ওষুধ , মোটর অয়েল , ইঞ্জিন অয়েল সরাসরি মাটিতে না মেশে।
৩০)  ফ্রিজের ব্যবহার কমিয়ে মাটির জালা বা কুঁজো ব্যবহার করুন। জলের অপচয় কম করুন। ব্রাশ করতে করতে ,বা দাড়ি কাটতে কাটতে বেসিনের ট্যাপ বন্ধ রাখুন।

৩১)  বাড়ির ছাদে জলের ট্যাঙ্কে অটোকাট বাজার লাগান। যাতে জল ভরে গেলেই পাম্প বন্ধ হয়ে যায়।
 ৩২) সারা বাড়ির জলের লাইনের নিয়মিত পরীক্ষা করান প্লাম্বারকে দিয়ে। কোন কল, সিস্টার্ন, ভালভ দিয়ে যেন জল নষ্ট না হয়ে যায়। যাঁরা বাস্তুশাস্ত্র বিশ্বাস করেন তারাও বলেন জল নষ্ট হওয়া খারাপ বাস্তুর লক্ষণ। আপনি আপনার আগামীর কথা ভেবে করুন।
৩৩) পারলে বৃষ্টির জল ধরে রাখার ও পরবর্তীতে সেই জল ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
৩৪)  স্নান ,কাপড় কাচা প্রয়োজন। ওগুলোকে বিলাসিতা করে ফেলবেন না। ৫ মিনিটের বেশি স্নান মানে আপনি ক্ষতি করছেন ,এটা মাথায় রাখবেন।
৩৫)  দিনের ঠান্ডা সময় গুলোতে অর্থাৎ ভোরে আর সূর্য ডোবার ঠিক পর বাগানের লনে আর গাছে জল দিন।
৩৬) কাগজ ,প্লাষ্টিক , কার্ডবোর্ড ,কাচ রিসাইকেল করুন। যে সব জিনিস তৈরিতে বেশি জল লাগে চেষ্টা করুন সেগুলো কম ব্যবহার করতে।
৩৭) GROUNDWATER RECHARGE, RAIN WATER HARVESTING বা  WATER DONATE এর ব্যাপারে জানুন ,বাড়ির শিশু ও মহিলাদের জানান , বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।
৩৮) অনুষ্ঠান বা জমায়েত এ থার্মোকল এর থালা বাতি গ্লাস কিংবা কাগজের কাপ প্লেটের বদলে কাচ , স্টিল এর বাসন ব্যবহার করুন। অনুষ্ঠান বাড়িতে শাল পাতা বা কলা পাতা কিংবা পদ্ম পাতা স্বাস্থ্যে ফিট , স্টাইলেও হিট।  
৩৯) বাড়িতেও বাসনপত্রে প্লাস্টিক এর নো এন্ট্রি করুন। 
৪০) গ্যাস , কয়লা , কাঠ এর ব্যবহার কমিয়ে ইন্ডাকশন হিটার বা সোলার কুকার , ইলেকট্রিক কুকারের ব্যবহার শিখুন। অন্যকেও সেখান। 

৪১) বিল পেমেন্টের ক্ষেত্রে কাগজের ব্যবহার একদম না করতে অনলাইনে বিল পেমেন্ট করুন। অর্থকরি লাভও পাবেন সাথে সাথে বেশ কিছু গাছের অকাল মৃত্যুও বাঁচাতে পারবেন। 
৪২) সাইকেল এর ব্যবহার বাড়ান। দূষণ মুক্ত এই যানটির জনপ্রিয়তা আমাদের দেশে পড়তি হলেও। উন্নত দেশ গুলিতে এটি এখনো একটি জনপ্রিয় পরিবহন। 
৪৩) কার পুল করুন। 
৪৪) ব্যাটারি চালিত পরিবহন  সম্বন্ধে জানুন ও বন্ধুদের জানান। 
৪৫) গাড়ির সার্ভিসিং নিয়মিত করান। দূষণ মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। 
৪৬) সেল ফোনের বা ল্যাপটপের নিয়মিত সার্ভিসিং করান যাতে বেশি পাওয়ার কনজিউম না করে। 
৪৭) এসির পাইপ থেকে বেরোনো জল জমিয়ে রেখে সেটিকে ঘর মোছার বা পরিষ্কার করার কাজে লাগান।
৪৮) বাজার করার সময় সার দেওয়া সব্জি বা চালানি মাছ এর চেয়ে স্থানীয় সব্জি বা মাছ কিনুন। খেয়াল রাখবেন যে বেগুনটি পোকায় খাওয়া সেটির স্বাদ অন্য বেগুনের চেয়ে ভাল হয়। কারণ পতঙ্গ রাসায়নিক বিষ দেওয়া সবজিতে বসে না।
৪৯) টিস্যু পেপারের বদলে রুমাল আর প্যাকেজ পানীয় জলের বদলে ধাতব জলের বোতল ব্যবহার করুন।
৫০) ছোটদের কাঠের পুতুল , মাটির পুতুল , তালপাতার সেপাই , তালপাতার বাঁশি জাতীয় খেলনা দিন।  প্লাস্টিক খেলনা ওদের কচি ত্বকের জন্য খারাপ।


Tuesday, June 5, 2018

"ওহ মা ! আর পারছি না !" এই মা আসলে কে ? World Environment Day

মি মাঝে মাঝেই ভাবি , এই যে আমরা ক্লান্ত হয়ে বলি "ওহ মা ! আর পারছি না !" এই মা আসলে কে ? জন্মদাত্রী মা ? কোন দেবী ? কে ? কে এই মা যার স্মরণাপন্ন হই আমরা ঘন ঘন। ক্লান্তি তে দিনের শেষে ঘুমের জগতে পাড়ি দেওয়ার আগে যাকে রোজ মনে মনে ধন্যবাদ দিই আমি আপনি সবাই। জন্মদাত্রী নন কারণ তাঁর সামনে "ওহ মা" বলে  ডাকলেও তিনি কোন প্রতিক্রিয়া দেন না। দেবী দেবতা হওয়ার কোন প্রশ্নই নেই। অনেক ভেবে দেখেছি , এই মা হলেন প্রকৃতি মাতা। মাদার নেচার। যাঁর জন্য আজ বড় জাঁকজমক। তিনি ভাল নেই। বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধার চেয়েও খারাপ আছেন তিনি। ফুটপাথে পাঁপড় বিক্রি করা সন্তান দ্বারা বিতাড়িত মা এর চেয়েও কষ্টে তিনি। প্রতি নিয়ত সন্তানরা তাঁকে ধর্ষণ করছে। অথচ পরম মমতায় সেই সন্তানদেরই তিনি আদর করে আগলে রেখেছেন। বুকে ক্যান্সার বাতাস। সবুজ সজীব গায়ে প্লাষ্টিক পচন। পরনের সমুদ্র নীল শাড়ির মত স্বচ্ছ জলে ঘন কাল বিষ। ভাল নেই প্রকৃতি, ভাল নেই আমাদের চারপাশ ,পরিবেশ।
 এই ধরুন কিছুদিন ধরে সকালে কাগজ খুললে দেখছি পচা মাংস মাছ খাবার হিসেবে নাকি খেয়েছি আমরা বেশ কিছু দিন।  সন্ধেয় টেলিভিশনে বা সারাদিনের ই ভিডিওতে সেই পচা গলা মাংস বাজেয়াপ্ত করার সম্প্রচার। এদিকে আবার নিপা ভাইরাস ছড়াচ্ছে আম, লিচু , মুরগিতে। খাবেন কী মশাই ? ভয়েই মরে যাবেন। আপনার আমার মত সাধারণ মানুষ সাতেও নেই পাঁচেও নেই তাদের মানসিক শান্তি নয়ছয় করে দেওয়ার জন্য এই নিউজ ফিড গুলো যথেষ্ট। দাদা এই তো পরিবেশ। তার আবার দিবস!!! ও কি খায় না মাথায় মাখে ? ঠিকই তো। এই যে কুকুর খেয়েছি মাটন ভেবে এই ভাবনা মনে ঢোকার পর থেকে চাইলেও বমি করতে পারছি না এ কি কম জ্বালা। দাদাভাই ভাববেন না। কষ্ট করে একটু গুগল করুন দেখবেন কুকুর , বিড়াল , ষণ্ডের অন্ডকোষ , টিকটিকি, আরশোলা , মাকড়সা , স্যাপ, ব্যাঙ , জ্যান্ত অক্টপাস , সব খায় তামাম দুনিয়ার মানুষ। দুনিয়া কী এই দেশেই মিজো সমাজে কুকুর খুব সম্মানীয় ও উপাদেয় পদ হিসাবে পরিবেশন  করা হয়। আবার গুগুল করুন পচা আমিষ খাবার। পচা দুধ ,পচা চিজ , সার্ক মেরে তাকে মাটির তলায় চাপা দিয়ে পচিয়ে তাকে শুকিয়ে সেই প্রায় কাঁচা সার্ক যার পোশাকি নাম হাকর্ল সেটা পরিবেশন করা হয়। অবশ্য সেটা নাক খোলা রেখে কিভাবে খাওয়া সম্ভব যাঁরা খেয়েছেন তাঁরাই জানেন। অথবা ইতালির কাসু মারজু। সত্যিকারের পচা চিজ যার থেকে পোকা (ম্যাগট ) বেরোচ্ছে সেটা চাঁদ মুখ করে ওনারা খেয়ে নেন। আর আপনি ধাপার ভাগাড় ফেরত মাংস খেয়ে দ্বিধা করছেন কী খেলাম কী খেলাম ? এ তো দেখছি শাখা প্রশাখার আনন্দ বাবুর মত দাদু আমি একনম্বর জানি দু নম্বর জানি শুনে "কী শুনলাম কী শুনলাম !!!"
ভাবনা ছাড়ুন বরং ভাবুন গোটা পৃথিবীতে উন্নত দেশগুলোয় উল্টোপাল্টা খাবার পচা খাবার আনন্দ সহকারে খাওয়া হয় সেই আনন্দযজ্ঞের নিমন্ত্রনে আপনি পাত পেড়ে খেয়ে এলেন।
ও দাদা , ও দিদি আমাদের এই কলকাতা শহরে যত হাসপাতাল , ছোট খাবারের দোকান রয়েছে সেখানকার উচ্ছিষ্ট খাবার সংগ্রহ করে নিয়ে কিছু লোকজন সব মিলিয়ে মিশিয়ে একথালা করে পেট ভর্তি খাবার এই কলকাতার হ্যাভ নটসদের দেয়। দু এক টাকার বিনিময়ে। ওদের খিদে যে বড় মারাত্মক। পাকস্থলী ভরাতে উচ্ছিষ্ট আর পচা সব এক। আয়তন ডাজ ম্যাটার নট কোয়ালিটি।
জানি মারাত্মক গা গুলোচ্ছে। পচা পচা লাগছে। ভেবেছেন কেন এত মানুষ ফুটপাথে থাকবে? দেশ কেন তাদের খাদ্য , বস্ত্র বাসস্থানের দায়িত্ত্ব নেবে না? সব সম্বলহীন কিন্তু উন্মাদ নয়, তাদের শ্রম দিয়ে যা রোজগার সেই অর্থে তারা সম্মানের জীবন কাটাতে পারে। আসলে আমাদের জীবনযাত্রার জটিলতা বাড়ার সাথে সাথে সবচেয়ে বেশি পচেছি আমরা। আমাদের টার্গেট মুখী জীবন আমাদের মনকে ওই সার্কের মতই স্বার্থপরতার বালি পাথরে চাপা দিয়ে পচিয়ে দিয়েছে। ভাগাড়ের মাংস তো সেই পচনেরই বহিঃপ্রকাশ। আপনার বিশ্বাসের পুঁজি নিয়ে যদি কোন ব্যবসায়ী বা খাদ্য বিক্রেতা আপনাকে পচা মাংস , পচা খাবার খাওয়ায় তাহলে সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে পচেছে তার হৃদয় , মনুষত্ব।
আজ পরিবেশ দিবস। আমার পরিবেশ ? ঘরের ড্রয়িং রুমে ভয় দেখানো খবরীলাল টেলিভিশন। যাদের কাছে অনুপ্রাণিত করার মত খবরের অভাব। ঘন্টা খানেক এর স্বঘোষিত জিরো আওয়ার করে তারা পাতি ঠেকের ঝগড়া বসায় তর্কের নামে। সেটের আলো নিভলে পেমেন্ট নিয়ে আবার পরের দিনের ঝগড়ার জন্য তৈরী হয় ঝগড়ুটেরা। বিনোদন চ্যানেলগুলোতেও মূল উপজীব্য ঝগড়া। আর বস্তাপচা কুসংস্কার ,অন্ধকার। যেন পিরিয়ডিক্যাল সিরিজ হলেই ডায়লগ একটু গেঁয়ো করে দিলেই হল। এদের স্ক্রিপ্ট রাইটাররা কলকাতা সৰ্বস্ব, বাস্তবজ্ঞান রহিত। এদের কাছে গ্রাম মানেই নেগেটিভ অশিক্ষিত জনগণ । এই গেল সান্ধ্য বা মোটামুটি বিনোদনের ডেইলি ডোজ।
রাস্তায় আমার পরিবেশ। হর্নের দাপটে কান পাতা দায়। তার সাথে বেআইনি সাইলেন্সার ওয়ালা বাইক। পুলিশ দেখছে কিন্তু কিছু করার নেই। কারণ শব্দদূষণের জন্য আইন ততটা কড়া এখনো নয় এখানে।
আর পথচারী ? কানে হেডফোন  সোজা যেন ব্রেনে তার ঢুকে গেছে। ও ভাই ,ও বোনটি রাস্তা তো গান শোনার জায়গা নয়। বাড়িতে শোনো। ড্রাইভ করতে করতেও সে তখন সংগীত সুধা পান করে চলেছে। অতএব আমার পরিবেশ অস্থির , ভয়ার্ত , অবিশ্বাসের বিষে নষ্ট পচা।
এবার আসি মা প্রকৃতির কথায়। এর বেশ কয়েকটা আগের ব্লগে জল , প্লাষ্টিক এসব নিয়ে বলেছি।  সংরক্ষণ কর্মীদের কথা আজ একটু হোক।  পৃথিবীটা মানুষের একচেটিয়া অধিকার কায়েম করার জায়গা নয় এখানে একটা গুবরে পোকা যতটা গুরুত্বপূর্ণ , ততটাই একটা হাতি বা বটগাছ বা হাঙ্গর। শুধু মানুষের উন্নতির কথা ভাবলে বাড়বে দূষণ ,বদলাবে জলবায়ু।  এই ধরণের বিশ্বাসকে ধর্ম করে চলা পরিবেশ আক্টিভিস্ট দের মধ্যে ২০১৫ সালে  প্রায় ১৮৫ জন আর ২০১৬এ প্রায় ২০০ জন পরিবেশ কর্মী খুন হয়েছেন। ভারতে পরিবেশ কর্মীদের কবর খোঁড়ার সংখ্যাটা বাড়ছে।




শীলা মাসুদ বাঘ বাঁচানোর আন্দোলন ও করাপ্সন এর বিরুদ্ধে কাজ করতে  গিয়ে ২০১১এ বাড়ির সামনে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে গুলিবিদ্ধ হলেন। আবার কেরালার কাদার আদিবাসীদের হাতির পরিযান পথ ও রেন ফরেস্টের সংরক্ষণের জন্য ১৫ বছরের সংগ্রাম ভারতের পরিবেশ আন্দোলনে এক উজ্জ্বল উদাহরণ। 
এসব তো জানা কথা। এতক্ষন কিছুটা আশা অনেকটা হতাশা , খানিকটা ভয় সব হল। এখন চলুন দেখি পরিবেশ রক্ষায় আপনি আমি কি করতে পারি।   
১) বাড়ির চারধারে যতটা পারেন সবুজ গাছ লাগান। 
২) বাগান যদি থাকে বাগানে মাটি রাখুন যাতে বৃষ্টির জল  গভীরে যাওয়ার রাস্তা পায়। 
৩) কিছু গাছে পাখির জন্য ছোট ছোট বাসা বানিয়ে রাখুন। নুতুন অতিথিতে বাড়িটা ভরে যাবে। 
৪) পশু পাখির প্রতি স্নেহশীল হন। 
৫) জোর গান , লাউড স্পিকার বাজানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন। 
৬) প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করুন। 
৭) বাজার করতে গেলে কাপড়ের ব্যাগ , চটের ব্যাগ ব্যবহার করুন। 
৮) বাড়ি ও গাড়িতে প্রয়োজন ছাড়া এসি বন্ধ রাখুন। 
৯) গাড়ির হর্ন বাজানোর অভ্যাস কমান। 
১০) প্রয়োজন ছাড়া ইলেকট্রিক আলো পাখা বন্ধ রাখুন। 
১১) সোলার আলো পাখা খুব একটা বেশি দাম নয়।  অনলাইন বা বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করুন। 
১২) দাড়ি কাটার ফোমের জায়গায় জেল ব্যবহার করুন। 
১৩) রুম স্প্রের জায়গায় ধুপ। ডিওডেরেন্টের জায়গায় পারফিউম বা আতর ব্যবহার করুন। ফুলের ব্যবহার করুন। 
১৪) পুজোর ফুল বেলপাতা নদীতে ফেলা থেকে বিরত থাকুন। 
১৫) বেড়াতে গেলে খেয়াল রাখুন যাতে আপনি প্লাস্টিক দূষণ না করেন।  অন্য কেউ প্লাষ্টিক ফেলে গেলে সেগুলো ওয়েস্ট বিনে ফেলুন। 
১৬) ঘর পরিষ্কার করার জন্য বিষাক্ত কেমিক্যাল ছেড়ে ভেষজ ক্লিনার ব্যবহার করুন। 
১৭) মশা মারার ক্ষতিকর ধুপ বা লিকুইড ছেড়ে ধুনোয় কালকাসুন্দা পাতা ব্যবহার করুন। 
১৮) শিশুদের জু গার্ডেন পার্ক বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে যাওয়ার নিয়মিত অভ্যেস করুন।  ওদের সেখান স্বুস্থ পরিবেশের গুরুত্ব।