Sunday, September 11, 2022

ওঁদের জীবনের ম্যাজিকে হার মেনেছে ৯/১১

সহজ কিছু বিষয়। রোজকার জীবনে ঘটে যাওয়া জীবনের দৈনন্দিন কিছু যাপন। কিছু আপাত হতাশাব্যাঞ্জক ঘটনার ছদ্মবেশে আশীর্বাদ এসেছিল ওঁদের জীবনে। ১১/০৯/২০০১ হতে পারত ওঁদের জীবনের শেষ দিন। অথচ ওঁরা বেঁচে গেছেন জীবন নামক এক অদ্ভুত ম্যাজিকের ভোজবাজিতে। আজ ওঁদের গল্প। নাকি গল্প হলেও সত্যি! 

ঘটনাঃ১ মায়ের ডাক

২০০১ এর ১১ সেপ্টেম্বর। 
হলি উইন্টার ও তাঁর কলেজের বন্ধুরা একটি গেট টুগেদার পরিকল্পনা করেন। উইন্টার, সেই সময়ে ডেনভার শহরে থাকতেন, ১১ই সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে ছিল সেই সারপ্রাইজ গেট টুগেদার। কলেজে হলি উইন্টারের দুই প্রিয় বন্ধু, যাঁরা শিকাগো এবং নিউ ইয়র্ক সিটিতে থাকতেন তাঁদের গেট টুগেদার। পরিকল্পনা ছিল দুই বন্ধু আগের রাতে নিউ ইয়র্কে উড়ে গিয়ে ঠিক সকাল ৮টায় অপর বন্ধুর টুইন টাওয়ারের অফিসে শ্যাম্পেন এবং ক্যাভিয়ারের প্রাতঃরাশ নিয়ে হাজির হবেন।
হলি উইন্টার

উইন্টারের মা নিউইয়র্কের আপস্টেট অঞ্চলে থাকতেন। উইন্টার তাঁর মাকে এই খবর জানাতে তিনি বলেন যে তিনি তিনি মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে ডেনভার যাচ্ছেন। অনেক অনুরোধেও উইন্টারের মা সেই ট্রিপ বাতিল করেন না। ফলে বাধ্য হয়েই নিজের সারপ্রাইজ পিকনিক বাতিল করেন হলি উইন্টার। তবে তাঁর শিকাগোর বন্ধু চলে যান নিউইয়র্ক। সারপ্রাইজ ব্রেকফাস্টের পরিকল্পনাও সফল হয়। দুই বন্ধু সকাল ৮টায় ফোনও করে তৃতীয় বন্ধু, হলি উইন্টারকে।  তাঁরা বেশ কিছুক্ষণ হাসি ঠাট্টা মশকরা করে কথা বলে ফোনে। আর তারপরই মারাত্মক সেই ঘটনা। অদ্ভুত ভাবে উইন্টার বেঁচে গেলেও তাঁর দুই বন্ধুকে কেড়ে নেয় ৯/১১র নাশকতা হামলা। 


ঘটনাঃ২ ছুটির ছন্দে বাঁচল প্রাণ

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা ব্রেন্ডা ক্রিস্টেনসেন পাবলিক রিলেশন ব্যবসার জন্য প্রতি বছর ম্যানহাটনের টুইন টাওয়ারে তার বার্ষিক মিডিয়া সফর রাখতেন। ক্লায়েন্ট, সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের সাথে অনুষ্ঠিত হত এক সপ্তাহব্যাপী সাক্ষাতকার। কোনও দিন এর অন্যথা হয় নি। 

ব্রেন্ডা ক্রিস্টেনসেন  

শুধু ২০০১এ এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়। সেই বছর তিনি ছুটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে বছর ম্যানহাটনের ডাউনটাউনে না থেকে, ক্রিস্টেনসেন জ্যামাইকায় তার বৌদির সঙ্গে দেখা করে নিউ অরলিন্সের একটি হোটেলে রাত কাটিয়েছিলেন। পরের দিন এই খবর পেয়ে তিনি আঁতকে ওঠেন। 


ঘটনাঃ ৩ অকারণ দেরি, ভাল

জেমস স্টেফুরাক

জেমস স্টেফুরাক শেয়ার ট্রেডিং করতেন। তাঁর সকালের মিটিংয়ের জন্য রোজই সকাল ৯টার মধ্যে টুইন টাওয়ারে পৌঁছতে হত। কিন্তু ১১ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে অদ্ভুত ভাবে ধীর লয়ে দিন শুরু হয় জেমস স্টেফুরাকের। তিনি তাঁর প্রতিদিনের শিডিউল থেকে প্রায় ২০ মিনিট লেটে চলছিলেন। আর তারপর যখন টেলিভিশন অন করেন তখন দেখেন বীভৎস সেই ঘটনা। আজও ভাগ্যকে আর তাঁর দেরি হওয়াকে ধন্যবাদ দেন জেমস। এখন জেমস বিবাহিত এবং চার সন্তানের পিতা।  

ঘটনাঃ ৪ সম্পর্কে ভাঙন অভিশাপ নয় 

ক্রিস্টাল ব্রাউন

ক্রিস্টাল ক্লিয়ার কমিউনিকেশনের সিইও এবং প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টাল ব্রাউন-টাটাম ২০০১ এ বিয়ে করেন। ওই বছরের জুনে তাঁর নিউ ইয়র্ক সিটিতে বসবাস করার পরিকল্পনা ছিল। টুইন টাওয়ার টু-তে কর্মরত মরগান স্ট্যানলি ডিন উইটারের কাছ থেকে চাকরির প্রস্তাবও ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তিনি এমন কিছু বিষয় আবিষ্কার করেন যাতে তিনি বিবাহের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন।। যখন ৯/১১ হয়েছিল, তখন তিনি আতঙ্কে অসাড় হতে যান। কারণ সব যদি ঠিকঠাক থাকত তাহলে সেই মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড টাওয়ার 2-এ তাঁর কাজ করার কথা। একটি ভাঙা সম্পর্ক এভাবেই  একটি আশীর্বাদের মোড়কে জীবন বাঁচিয়েছিল ক্রিস্টাল ব্রাউনের। 

ঘটনাঃ ৫ গাড়ি খারাপ-ভাল

জর্জ কিথের নতুন বিএমডব্লিউ ১০ সেপ্টেম্বর ২০০১ অপ্রত্যাশিতভাবে ফার্স্ট গিয়ারে চলে যায়। ম্যানহাটনের ডাউনটাউনে সকাল ৮টায় মিটিংয়ে যাওয়ার আশা নিয়ে তিনি পরের দিন সকাল সাতটায় গাড়ি সারাতে ডিলারশিপে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেন। সাতটায় বিএমডব্লিউ ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখেন মেকানিক নেই। মেকানিক্স আটটার আগে আসবেন না।

জর্জ কিথ 

তাই  তিন মিনিটের মেরামতের জন্য এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় জর্জ কিথকে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টাওয়ার টু-এর ৭৩ তলায় মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য তিনি যখন গাড়ি সারিয়ে রওনা হন। তখন এক্সপ্রেসওয়েতে থিকথিকে জানজট। একটা প্লেন হিট করেছে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। দ্বিতীয় বিমানটি উড়ে যায় তাঁর মাথার ওপর দিয়ে। ট্রাফিক জ্যামে আটকে রেডিওয় খবর শুনতে শুনতে দেরি করে আসা মেকানিককে মনে মনে ধন্যবাদ দেন জর্জ। 

ঘটনাঃ ৬ স্মোকিং সেভস লাইফ

গ্রিয়ার এপস্টেইন, তখন দ্বিতীয় টাওয়ারে মরগান স্ট্যানলির একজন এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর। তিনি সকাল সাড়ে সাতটায় অফিসে আসেন।  ইমেল চেক করে কিছু স্টাফ মেম্বারদের সঙ্গে দেখা করে ৪৩ তলায় ক্যাফেটেরিয়ায় যান। কফি সহযোগে ব্রেকফাস্ট করে ৮টা ৪০এ,  একজন সহকর্মীর কাছ থেকে একটি কল পান যিনি পরামর্শ দেন যে তাঁরা সিগারেট খেতে খেতে পরবর্তী বৈঠকের জন্য প্রস্তুতি নেবেন৷
গ্রিয়ার এপস্টেইন

সেই মত গ্রিয়ার সিগারেট কেস নিয়ে লিফটের দিকে রওনা দেন। নিচের তলায় পৌঁছানোর সাথে সাথে লিফট  লাফিয়ে লাফিয়ে ওঠে।  ততক্ষণে প্রথম  টাওয়ারে বিমান হানা হয়ে গেছে। তিনি দেখেন টাওয়ারের গায়ে একটি বিশাল গর্ত। তারপর শুধু হাহাকার আর আর্তনাদ। চোখের সামনে দ্বিতীয় প্লেনটিও হামলা চালায়। হয়ত গ্রিয়ার এপস্টেইনও ৩০০০ মৃতের মধ্যে একজন হতেন। কিন্তু অদ্ভুতভাবে তাঁকে বাঁচিয়ে দেয় একটি স্মোকিং ব্রেক। 

ঘটনাঃ ৭ হাতছাড়া ট্রেন বাঁচাল জীবন
৭ সেপ্টেম্বর ছাঁটাই হন লরা সোরোকফ গেলম্যান। তারপর থেকে রোজ তিনি চাকরির খোঁজে পোর্ট এলাকায় যেতেন। সকালে তাঁর যাতায়াতের সময়ে তিনি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার স্টেশন থেকে পোর্ট অথরিটির পাতাল রেলে চড়তেন।  ১১ সেপ্টেম্বর  সকালেও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের পাশে বেকারত্বের অফিসে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।  কিন্তু ভিড়ের জন্য সেদিন ট্রেনে উঠতে পারেন নি। আর এতেই প্রাণ বেঁচে যায় লরার। 



  
  


No comments: