Sunday, April 1, 2018

বাংলা ফুল বা ইংরেজি ফুল দুজনেরই খুব খারাপ অবস্থা | April Fool's Day |


ফুল বলে ধন্য আমি মাটির পরে। তা ধন্য না হয়ে পারা যায়? জানেন না পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না। ফুল তো ফোটেই আপনার জন্য। যাতে আপনি তাকে ফুল ভেবে যারপরনাই আমোদিত হন। বাংলা ফুল বা ইংরেজি ফুল দুজনেরই খুব ডেলিকেট কন্ডিশন। বাংলা ফুলের বৃতি , দলমন্ডল পুংকেশর গর্ভকেশর চক্র জোড়া বাহার ঈশ্বর নামক অদেখা অজানা ভয়ের পায়ে নত। কখনও আবার সংস্কৃতি নামক ভয়াবহ উদযাপনের তাড়নায় অতিষ্ঠ। কিছুদিন আগেই শান্তিনিকেতন এর আশেপাশে দোলের সময় পলাশের অতিরিক্ত ব্যবহারে ফুলটি প্রায় লোপাট হতে বসেছিল। আর ইংরেজি ফুল ! তাদের মত অপাপবিদ্ধ দুনিয়ায় মেলা ভার। সহজে বিশ্বাস। ওই যে দাড়িবুড়ো বলেছিলেন মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ । তাঁরা জীবনের পঞ্চমবেদ মেনে চলেন ওই পাঁচটি শব্দকে। তাই তো অনায়েসে জীবনের গচ্ছিত সম্পদ কৃতঘ্নের হাতে তুলে দিয়ে তাঁরা নিশ্চিন্তে থাকেন। তারপর যখন বণিকের মানদণ্ড পোহালে শর্বরী দেখা দেয় রাজদণ্ড রূপে  তখন হুঁশ ফেরে তাদের। কেজো লোকজন বলেন একটু চোখকান খোলা রাখো। চালাক হও। চলতে চলতে ওই সব মানুষজন চালক হন কিনা জানি না ,তবে চালাক হন না ,হয়তো বা চালু হন। মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো টাকা বা স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য অতি কষ্টের জমানো টাকা হয়ত আপনি ছেলের হাতে তুলে দিলেন। তারপর আপনারই ছেলে সেই ধনরাশি বেমালুম গায়েব করে দিল ব্যবসায়ে মন্দার অছিলায়। পরে জানলেন। ওসব মন্দা ফন্দা শ্রেফ ধান্দার ফান্ডা। আপনি ছেলের পাতা ফাঁদে পড়ে বগার মত কাঁদছেন। আপনি মশাই ফুল। আজ আপনার জাতীয় উদযাপন দিন। উল্লাস করুন। অন্তত একটা দিন একটু সেলিব্রেশন হচ্ছে আপনাকে নিয়ে। 
অন্যদের আপনাকে বোকা বানিয়ে পুলক জাগে। আপনার তখন চোখে ঘনায় ঘোর। অবাক হওয়ার কি আর শেষ আছে !! আগুন আগুন বাজারদরে কত শত খেলা। রাসায়নিক রঙে চোবানো বেগুন, পটল ,উচ্ছে। ফরমালিনে ভেজানো প্রায় প্রাগৈতিহাসিক মাছ। প্লাস্টিকের চাল, ডিম। ময়নাতদন্তের পথে যাওয়া মরা মুরগি, গলা কেটে ওজন বাড়ানোর জন্যে জল ঢালা পাঁঠা। ময়দা , ডিটারজেন্ট সমৃদ্ধ দুধ। মোমের পরত মাখা আপেল, আঙ্গুর। কার্বাইডে পাকানো আম। থাম থাম থাম ....

ঠগ বাছতে গাঁ নয় রাষ্ট্র উজাড়। ফোন করে ব্যাঙ্কের লোক বলে পরিচয় দিয়ে  ATM কার্ডের নম্বর CVV জেনে আপনার আকাউন্টে সাফাই অভিযান। আপনি রেজিস্টার্ড ফুল মশাই। ফুলটুস বোকা। আজকের দিনে এটুকুও জানেন না। ATM থেকে জাল কারেন্সি নোট বেরোলে যদি তৎক্ষণাৎ না বুঝে পরে ওই নোট কোন ব্যাঙ্ক বা অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ক্যাশ কাউন্টারে জমা দিতে যান। সাবধান। আপনার বোকামি আপনাকে ভয়ঙ্কর অপরাধী বা ক্রিমিনালে পরিণত করতে দু সেকেন্ড সময় নেবে। এতশত পাসওয়ার্ড , পিনকোড , নম্বর মাথা ভনভন করে ভোঁভোঁ করে চরাচর।
আগে বোকাদের পিছনে লেগে তাদের ওপর বোকামির স্ট্যাম্প মেরেই ক্ষান্ত থাকত চারপাশ। এখন তো বোকা খুঁজে পেলে তাকে ব্যবহার করে স্বার্থ সিদ্ধি করে সিদ্ধি লাভ করতে চায় খুব আপনজন। আপনার সোশ্যাল সাইট হ্যাক করে ,ফেক প্রোফাইল থেকে উস্কানি দিয়ে , যেনতেন প্রকারেণ আপনাকে বকরা বা মুরগি বানিয়ে উধাও।  অনেকটা লালগড়ের বাঘের মত। জাল কেটে হালুম হুলুম করে ভ্যানিশ। স্যার একটু চারদিক দেখে পা ফেলুন। গোটা দুনিয়ার কিছুই তো আসল না সবই ভার্চুয়াল। সব মায়া। আপনি কায়া ধরে থাকলে হবে!! গোটা দুনিয়া যখন মুরগি খুঁজতে ব্যস্ত আপনি তখন মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ বলবেন !! ডোডো পাখির মত ডায়নোসরের মত যাদুঘরে গিয়ে এরপর আপনাকে খুঁজতে হবে।
তাই নিজেকে বোকা,নিষ্পাপ ,নিস্কলুষ পদ্ম ফুল ভাববেন না। ক্ষুদিরাম বা কালিদাসের সাথেও আপনার বহু দূরের কোনো আত্মীয়তা নেই। পাইরেসিকে মারতে না পেরে আমরা এখন পাইরেটস অফ ক্যারিবিয়ানের সিকুয়েল বানাই। হোক্স নিউজ , পেড নিউজ , ফেক নিউজ বানাতে ১লা এপ্রিল লাগে না। শুধু কর্নি সেনাতে ইনভেস্ট করলেই পদ্মাবতী পদ্মাবৎ হয়ে যায়। জলবৎ সহজ সমীকরণ। রোজ ব্রাশ করা থেকে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত বারেবারে আমার মতই আপনিও বেকুব বনে যান। প্রেম করে ঠকে যান যেমন  মিষ্টি লেবু ভেবে টক লেবু কিনে ঠকেন। দুধে জল তো গয়লার ওপেন ট্রেড সিক্রেট। সোনাচুরি স্বর্ণকারের ধর্ম। আসল ঠগ গুলোকে খুঁজুন যারা আপনার সহজিয়া প্রকৃতির সুযোগে আপনাকে সাবাড় করছে। পারবেন কী ধরতে তাদের ?????

No comments: