Tuesday, May 1, 2018

নন্দন, সত্যজিৎ ও প্রদীপ | The Sculptors who crafted the logo of NANDAN Designed by RAY

 ম্প্রতি ভারতীয় পেন্টিং ও স্কাল্পচার নিয়ে একটা কাজ করছি। প্রায় ১৬ -১৭ জন শিল্পীদের নিয়ে কাজ। প্রত্যেকের ওপর টুকটাক পড়াশোনা, তাদের কাজের ধরনের খুঁটিনাটি নিয়ে একটু রিসার্চ করে শ্যুট শুরু করলাম। চন্দননগরে পরিচয় হল শ্রী প্রদীপ সুরের সাথে। সদা আলাপি হাস্যময় প্রদীপ বাবু থেকে প্রদীপ দা হয়ে উঠতে সময় নেন খুব কম।  রঁদ্যার কাজের প্রদর্শনী দেখে যৌবনে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন প্রদীপ দা।  বিশ্বাস করেন শিল্প যদি সমাজ গ্রহণ করে তখন বুঝতে হবে সেই শিল্পের আর্ট থেকে ফাইন আর্টে উত্তরণ ঘটছে। আমরা যারা ভাবি শিল্পীর বেসিক কাজই একমাত্র ফাইন আর্ট ; প্রদীপ সুরের ভাবনা তাদের  সেই বোধকে নাড়িয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন " রঁদ্যা তাঁর জীবনে যা কাজ করেছেন সবই অর্ডারী কাজ বা ওজুরার কাজ। কিন্তু তার শৈল্পিক মূল্য কোনও মতেই কম না। অর্থাৎ আমি একটা স্কাল্পচারই করি বা বিয়ের পিঁড়েই আঁকি সবই আসলে আমার শৈল্পিক মূল্যবোধের বিচ্ছুরণের মাধ্যম। সবই আসলে আমারই কাজ। তাই সবটাই সমান গুরুত্ত্ব দিয়ে করতে হবে। " ওনাদের শিল্পীদলের নাম কন্ট্রাইভ্যান্স। আগামী ১০ তারিখ থেকে লন্ডনের লা দেম আর্ট গ্যালারি তে ওঁদের প্রদর্শনীর আয়োজন করছে Abundant Art Gallery । সেই নিয়েই আমাদের কাজ চলছিল। প্রাণবন্ত প্রদীপদা সারা শ্যুট জুড়ে ছটফটে। যেন ইউনিটের সবচেয়ে ছোট বাচ্চা। সাউন্ড টেক হচ্ছে ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রদীপ দার গলা। কাট কাট। ও প্রদীপদা চুপ করুন।
এরকমই মানুষ টা। অথচ পশ্চিমবাংলার ফিল্ম ও সংস্কৃতির পীঠস্থান নন্দনের লোগো ওনার বানানো !!!





হ্যাঁ, সময়টা আশির দশকের শেষভাগ, সত্যজিৎ রায়ের পরিকল্পনায় তৈরী হচ্ছে নন্দন। লোগো ডিজাইনের কাজ করে ফেলেছেন সত্যজিৎ। স্টিলের বিশালাকার লোগো তৈরির জন্য খোঁজা হচ্ছে ভাস্কর। প্রজেক্টের দায়িত্বে থাকা চিফ ইঞ্জিনিয়ার আর্ট কলেজের পাস আউটদের খুঁজছেন এই কাজের জন্য। এখনকার স্টলওয়ার্ট বিকাশ মুখোপাধ্যায় ,মহি পাল ও প্রদীপ সুরেরা তখন তরুণ,সবে বেরিয়েছেন আর্ট কলেজ থেকে। তাঁরা তৈরী করেছেন ইউনাইটেড ডিজাইনার নামের কোম্পানি। নন্দনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার যোগাযোগ করলেন তাঁদের সাথে। ইউনাইটেড ডিজাইনারের তরফ থেকে প্রদীপ, ইঞ্জিনিয়ারকে পরামর্শ দিলেন লোগোটা স্টিলের না করে ফাইবার গ্লাসে করবার। রায় বাবুর মুখের ওপর কথা বলার সাহস নেই জানিয়ে দিলেন অভিজ্ঞ বাস্তুকার। তরুণ প্রদীপ সত্যজিতের সাথে একটিবার আলাপ করিয়ে দিতে বললেন  চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে। সেইমত মিটিং ফিক্স হল। প্রদীপের যুক্তি মন দিয়ে শুনলেন সত্যজিৎ। একটা ছোট রেপ্লিকা দেখতে চান তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন জানালেন নন্দনের রূপকার। কিছুদিনের মধ্যে লোগোর ডিজাইনেরই দেড় ফুট ব্যসের একটা 'ন' এর ক্ষুদ্র সংস্করণ নিয়ে প্রদীপরা হাজির হলেন বিশপ লেফ্রয় রোডে। পছন্দ হল সত্যজিতের। হালকা সংশোধন দিলেন অস্কার জয়ী পরিচালক। "ব্রাশের দাগ গুলো যেন না থাকে " তৈরি হল নন্দনের ১০ ফুট ব্যসের লোগো।

আজ প্রদীপ , বিকাশ, ও মহি বাবুর বয়সে সময়ের ছাপ। মনের বয়স যদিও তরুণ। একাডেমি নন্দন চত্বরে আসেনও মাঝেমাঝে প্রদীপ সুর। কোথাও কি নস্টালজিয়ায় ভোগেন তিনি ? নাকি ভাবেন প্রতিটি কাজ ই আসলে প্রাকটিস। আর নিজেই মনে মনে হাসেন, নিজের পুরোনো কাজ দেখে।  ভাবেন স্রষ্ঠার কাজই হল চরম যত্ন সহকারে পরম মমতায় অপরের কাজকে নিজের করে তৈরি করা। তারপর তাকে ভুলে যাওয়া। হেঁটে চলা আগামীর দিকে।

No comments: