Friday, October 2, 2020

Live on 150 th Gandhi Jayanti


 We are coming live tomorrow at 10.00 a.m. Stay tuned

Tuesday, September 22, 2020

ডেটলাইন ২১ সেপ্টেম্বর এবং...

 কর্মজীবনের শুরুটা হয়েছিল তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুরে। ফলে সংবাদ মাধ্যমের বেশ কয়েকজন বন্ধু বান্ধব আছেন সেখানে। তাদের মধ্যেই কয়েকজনের জন্য ২০০৬ এর ২১ সেপ্টেম্বর মারাত্মক চিন্তায় কেটেছিল দিনটা। সেদিন মেদিনীপুরের লালগড়ের ঝিটকার জঙ্গলে ঘটেছিল এক ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। বন্ধু সৌম্যেশ্বর,সঞ্জীব এবং আরও কয়েকজন মারাত্মক আহত হন সেই দিন।


জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বাজেয়াপ্ত করা আইইডি ল্যান্ড মাইন নিস্ক্রিয় করার কথা ছিল সেইদিন। আর সেইমত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির কভারেজে গিয়েছিলেন অপু(সঞ্জীব) , সুমন, সোম( সৌম্যেশ্বর), দেবনাথ, অরুন দা রা। সব ঠিকঠাক চলছিল। ল্যাণ্ড মাইন ডিফিউজ করা শুরু হয়েছে। ক্যামেরা রোল করেছে। পুলিশ কর্মী দেখাচ্ছেন কিভাবে কাজটি করেন তাঁরা। হঠাৎ গগন বিদারী আওয়াজ। মারাত্মক আহত সোম আর অপু।

সোম বরাবর দারুণ ফ্রেমের জন্য যা খুশি তাই করত। বিস্ফোরণে ওই বোমার স্প্লিণ্টার ওর মুখে লাগে। একটা চোখ বাঁচিয়ে দিয়েছিল ক্যামেরা টা। অন্য চোখটা কেড়ে নিয়েছিল।

অপুর সারা গায়ে লেগে ছিল বোমার স্প্লিণ্টার। দুমাস শয্যাশায়ী হয়ে ছিল হাসপাতালে। আরও বন্ধুরাও আহত হয়েছিলেন।

আর ওই পুলিশকর্মী যিনি নিস্ক্রিয় করছিলেন আইইডিটি, তিনি মারা গিয়েছিলেন বিস্ফোরণের তীব্র অভিঘাতে।

সে দিন ওই ঘটনার পর যখন ওদের কোনও খবর পাচ্ছি না তখন প্রচণ্ড উৎকণ্ঠায় কাটছিল দিনটা, কলকাতায় আমিও সেদিন অ্যাসাইনমেণ্টে। সারাটা দিন কাজে মন দিতে পারিনি।

বারবার মনে পড়ছিল মেদিনীপুরে থাকাকালীন পঞ্চুর চকের নিত্ত নৈমিত্তিক আড্ডা। যে যার অ্যাসাইনমেণ্ট শেষ করে অলিখিত প্রেস ক্লাব, পঞ্চুর চকে এসে জুটত। কত আড্ডা হত- পেশগত, ব্যক্তিগত, সিরিয়াস, হালকা। সব যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।

কাট টু

বাংলাদেশ গিয়ে আলাপ হয়েছিল জহিরুলের সঙ্গে। ওখানে যতবার কভারেজে গিয়েছি ওর সাথে সখ্যতা বেড়েছে। জহিরুল (জনির) হঠাৎ বেশ কিছুদিন কোনও ফোন নেই, ফেসবুক আপডেট নেই কী খবর? জানা গেল রাবার বুলেট লেগেছে ওর হাতে। উত্তাল জনতার বিক্ষোভ কভার করছিল ও। দুমাস হাসপাতালে। তারপরেও ঢাকায় অন্য একটি বহুল আলোচিত আন্দোলন কভার করতে গিয়ে ভিড় থেকে উড়ে আসে ককটেল বোম,পুলিশকে লক্ষ্য করে। পুলিশের ঠিক পিছনে ক্যামেরায় চোখ রাখা জনির লিভারের একটু ওপরে এসে ফাটে সেই "ককটেল"। সে চোট কাটতেও সময় লাগে বেশ কিছু দিন ।

কাট টু

ছোট আঙারিয়া, গড়বেতা, কেশপুর নিয়ে উত্তাল মেদিনীপুর তখন রোজই সংবাদ শিরোনামে। আমাদের গাড়ির চালক ছিলেন যিনি তাঁর পিতৃদত্ত নামটাই জানতাম না। সবাই ডাকত "হণ্ডা দা" বলে। একদিন অ্যাম্বাসেডরের বনেটে বসে পা এর ওপর পা তুলে সেই প্রবীণ সারথি হণ্ডা দা বলেছিলেন, "দেখো বাবা আমরা খবর করতে এসেছি খবর হ'তে নয়"।

আজকের দিনে আর প্রাসঙ্গিক মনে হয় না ওই কথাগুলো। যখন দেখি বিপন্ন সহকর্মীদের ছবি বিজ্ঞাপন হয়। যখন দেখি কোমর জলে বা গলা জলে দাঁড়িয়ে কাজ করাটা অর্ডার অফ দ্যা ডে হয়।

একটু কি সিনেম্যাটিক হতে পারে না আমাদের মিডিয়ার শট ডিভিশন? গঙ্গায় জল উঠলে বা নামলে একটা বড় টাইমল্যাপস হয়ত ১০ সেকেণ্ডে আট ঘণ্টার গল্প বলতে পারত। যদি একটা স্টেডিয়াম তৈরি বা একটা বীজের অঙ্কুরোদগম দেখানো সম্ভব হতে পারে তাহলে জোয়ার ভাঁটা তো বাচ্চো কা খেল!

কিংবা একটা ড্রোণ উড়ে এসে যদি বিদ্ধস্ত আর্তদের জলমগ্ন স্কুলবাড়ি বা উঁচু দাওয়ায় ধরে তাহলে সেই হোভার শট হাজার শব্দকে থামিয়ে এক জোরালো প্রতিশব্দ রাখতে পারে জীবনের।

অথচ আজও বিপন্ন হতে হয় আমার আমাদের বন্ধু, ভাইবোনদাদাদিদিসম চিত্রগ্রাহকদের, সংবাদকর্মীদের। অথচ একটা সঠিক, একটা সেরা মুহূর্তের খোঁজে আমরা ভিউ ফাইণ্ডারে এক একটা জীবন অতিবাহিত করি। ক্যামেরাকে সন্তান সম আদরে সামলে রাখি। ক্যামেরাকে প্রেয়সীর মত আলিঙ্গন করি। পড়লে ক্যামেরাকে বুকের ওপর নিয়ে পড়ি। উঠলে ক্যামেরা মাথার ওপর নিয়েই উঠি, সব সমস্যা, প্রতিকুলতা, সমালোচনার ঊর্ধ্বে। অথচ...

কাট ইট (কী যাতা করে চলেছ তখন থেকে এসব কেউ দেখে নাকি? লেখে নাকি? শোনে নাকি? বলে নাকি? স্টপ ইট। প্যাক আপ... )  

Monday, September 21, 2020

নিঃস্বকর্মা

 


মেচেদার প্রসেঞ্জিত মণ্ডলের বাবা দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। নিয়মিত ওষুধ পথ্য চলত। ওষুধ শেষ হয়ে গিয়েছিল তাই বাড়ির একমাত্র রোজগেরে ছেলে প্রসেঞ্জিতকে তার বাবা বলেছিলেন ওষুধটা আনতে। পকেটে একটাও পয়সা ছিল না। বেতন বকেয়া। দিশাহীন,নিরুপায় প্রসেঞ্জিত অসহায় হয়ে মেচেদা টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ভিতরই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।

১১ মাস বেতন না পেয়ে লক্ষ্মীকান্তপুর লোকালে বাড়ি ফেরার সময় চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে জীবন শেষ করেন সুশান্ত প্রামাণিক।

একই ভাবে আলিপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সুজয় দাসও আত্মহননের পথ বেছে নেন। ওনারা সবাই ছিলেন বিএসএনএলের ঠিকা শ্রমিক।

এ পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ১৪ জন বিএসএনএলের কর্মী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তার মধ্যে ১১জনই এই বাংলার। কেন আত্মহত্যা করছেন একসময়ে ভারত সরকারের টেলিকম দপ্তরের আওতায় থাকা কর্মীরা?

তথ্য বলছে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা বিএসএনএল গত ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত ৭৮,৫৬৯ জন কর্মীকে ভিআরএস দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের ব্যায়ভার ১২০০ কোটি টাকা থেকে ৩০০ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? ঠিকা শ্রমিকদের বকেয়া এখনও কেন মিটছে না? কেন স্থায়ী কর্মীরা দুমাসে একবার করে বেতন পাচ্ছেন? কোনও সদুত্তর নেই।

এই লক ডাউনের মধ্যে অন্যান্য বেসরকারি টেলিকম সংস্থা গুলি যেখানে চাপের মুখে পড়েছে গ্রাহক ছেড়ে চলে যাওয়ায় সেখানে বিএসএনএলের গ্রাহক বেড়েছে ২,০০,০০০ এর ও বেশি। শুধু তাইই নয়। লক ডাউন ও করোনা পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিমাসে ১৪০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকা আয় করেছে বিএসএনএল। তবুও কেন থাকছে এমন দুর্দশা?

বেসরকারি টেলিকম ও মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো ব্যবহার করে থাকে বিএসএনএলেরই ইনফ্রাস্ট্রাকচার। এর বাবদ ওই সংস্থা গুলো থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে কেন্দ্র সরকার। বেশ কিছুদিন অনাদায়ী হয়ে পড়েছে কেন্দ্র সরকারের প্রাপ্য সেই অর্থ। সম্প্রতি দেশের শীর্ষ আদালতে গিয়েছিল ওই বেসরকারি টেলিকম সংস্থা গুলি। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে জানিয়েছেন ওই বকেয়া মেটানোর সময়সীমা আগামী ১০ বছর বর্ধিত করা হল।

তার ওপর বিএসএনএলে 4G নেটওয়ার্ক যুক্ত করবার বিষয় টিকে এখনও মঞ্জুর করল না টেলিকম দপ্তর। বিএসএনএলের কর্মীদের সংগঠন বিএসএনএল এমপ্লয়িজ অ্যাসোশিয়েসনের পক্ষে এ নিয়ে লাগাতার আন্দোলন চলছে। সংগঠনের পক্ষে অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়, অনিমেষ মিত্ররা বলছেন এখন দ্বিমুখী আন্দোলন চালাতে হচ্ছে , প্রথমটা শ্রমিক ছাঁটাই প্রতিরোধ একই সাথে 4G নেটওয়ার্কের সংযুক্তিকরণ।

টেলিকম মন্ত্রক দায় ঝেড়ে ফেলে বলেছে ঠিকা শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোর কোনও দায় নেই সরকারের। এই অবস্থাতেই দিন কাটাচ্ছেন রক্তমাংসের বিশ্বকর্মারা নিঃস্ব কর্মা হয়ে।


কেন নিজের গান গাইতে পারছেন না শিলাজিৎ? কারা বাধা দিচ্ছে?

 ভাবুন তো 

বব ডিলান "ব্লোয়িং ইন দ্য উইণ্ডস" গাইতে গেলে কারও অনুমতি নিচ্ছেন, "মে আই সিং মাই সং?"
বা রজার ওয়াটার্স কিংবা মাইকেল জ্যাকসন অনুমতি নিচ্ছেন " মে আই? সিং?"
বা সলিল চৌধুরী হারমোনিয়ামের বেলো টেনে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন একটা অনুমতির, তবেই তিনি গাইবেন "ও আলোর পথযাত্রী এ যে রাত্রি এখানে থেমো না।"
বা আয়ুব বাচ্চু, বা আবিদা পরভিন, বা চিস্তি বাউল, বা এ আর রহমন বা... আরও অনেক সপ্তসুরের সারথিরা অনুমতি নিচ্ছেন? "আমি কি আমার গান গাইতে পারি?????? মহাশয়, মহাশয়া"

কী ভাবছেন ভুল বকছি? একদমই নয় এমনটাই হচ্ছে। । এই শহরেই হচ্ছে। ঘোরতর ভাবে হচ্ছে, প্রতিনিয়ত, রোজ হচ্ছে।

যার সঙ্গে হচ্ছে তাঁর পাঁজরে আলপিন বিঁধে যাওয়ার মত যন্ত্রণা নিঃশব্দে রক্ত ক্ষরণ ঘটাচ্ছে লাবডুব করা হৃৎপিণ্ডে।
মন, মাথা, শরীর মশাল হয়ে জ্বলছে। নিজের লেখা সুর করা গান তাঁর কণ্ঠ হতে কারা "নিল ভুলায়ে" ?



তিনি শিলাজিৎ মজুমদার। নব্বই এর দশকে নতুন ধারার বাংলা গানকে যে সব শিল্পীরা অন্য খাতে বইয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন আজ নিজের গানের লিরিক ও সুরের কপিরাইটের জন্য খুব কষ্টে আছেন। কোনও পাবলিক পারফরমেন্সে নিজের গান গাইবার আইনত অধিকার নাকি নেই তাঁর।

নব্বই এর দশকে বেসিক বাংলা গানের ধারা বাংলা গানের ইতিহাসে না এলে কী হত তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে গবেষণা করতে পারে আগামী দিনের সাহিত্য বা সঙ্গীতের ছাত্রছাত্রীরা। সেই নতুন ধারার বাংলা গানের এক উজ্জ্বল শিল্পী গাইতে পারছেন না নিজের গান। ভাবতে পারেন 'বাজল ছুটির ঘণ্টা', বা 'ঘুম পেয়েছে বাড়ি যা' বা 'প্রেম যেন ওয়েসিস' এখন শোনা যাবে না শিলাজিৎ এর কণ্ঠে! কোনও লাইভ অনুষ্ঠানে! এমন কি "ওলোলোমামা তালালামাতিনি মামাআমিতে" এই মন মাতানো ইয়ডেলিং ও আমি আপনি আর শুনতে পাব না শিলাজিৎ এর কণ্ঠে! উনি পারবেন না গান গুলি গাইতে! সুরগুলো ছাড়তে! অথচ গান গুলি তাঁরই লেখা। তাঁরই সুর করা। কী রকম কষ্ট হয় ভাবতে পারেন?
ওই যে কোভিড সংক্রমণের শুরুর সময় একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, মনে আছে? এক স্বাস্থ্যকর্মী মা তিন সপ্তাহ বাড়ি যেতে পারেন নি। তারপর তাঁর স্বামী তাদের তিন বছরের শিশু কন্যাকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালের সামনে। প্রায় কুড়ি ফুট দূর থেকে মা আর মেয়ের দেখা হচ্ছে। ওই স্বাস্থ্যকর্মী মা তাঁর সন্তানকে আদর করতে পারছেন না, পাছে সংক্রমণ ছড়িয়ে যায়। অঝোর ধারায় কাঁদছে মা আর ৩ বছরের শিশু কন্যা! এ বিচ্ছেদ যেন তার সাথেই তুলনীয়। কোথাও তার চেয়েও বেশি। ওই স্বাস্থ্যকর্মী মা হয়ত এখন ফিরে পেয়েছেন তাঁর কোলে সন্তানটিকে কিন্তু আমাদের নাগরিক বাউল?

লেখকরা এক একটা অক্ষর লেখেন অনেক আদর দিয়ে, অনেক আবেগ মিশিয়ে। সুরকাররা লেখায় প্রাণ দান করেন সাত সুর বুলিয়ে বুলিয়ে। আর গায়ক সেই গানে নিজের সেরা এক্সপ্রেশনটা দিয়ে তাকে মানুষের মনে গেঁথে দেন। তাই তো গান হিট হয়। সুর হণ্ট করে। কথা ভাবায়। আর এই লেখা, সুর করা এবং গাওয়া এই তিনটি কাজ যদি একটি মানুষই করে গানটিকে অমর করে তাহলে তো সেই গান তাঁর সন্তানসম। তাঁর থেকে সেই গান কেড়ে নেওয়া তো শুধু অপরাধই নয়, পাপ।

এরকমই কাজ চলছে। আমাদের শহরে। যে মিউজিক কোম্পানির সঙ্গে আজীবন কাজ করে এসেছেন শিলাজিৎ তারাই তাঁকে কপিরাইট স্ট্রাইক করছে। শিল্পী বলছেন "১৯৯৪ এর ১ সেপ্টেম্বর আমার যে অ্যালবাম বেরিয়েছিল আমি তা গাইতে পারব না। আমার লেখা, আমার সুর, আমার চিৎকার, আমার শীৎকার, আমার আবেগ অন্যকে বিক্রি করে দিয়েছে ওই কোম্পানি, আমাকে অন্ধকারে রেখে। তাই আমি চাইলেও ওই গান গুলো গাইতে পারব না। আমার প্রভিডেণ্ট ফাণ্ড নেই, ওই গান গুলিই আমার সন্তান, আমার সম্পদ। অথচ আমাকে তাদের ছুঁতে দেওয়া হচ্ছে না। চাইলেও আদর করে গাইতে দেওয়া হচ্ছে না ওই গান গুলো।"
শুধু 'ভূমিকা'ই নয় ওনাদের সঙ্গে রেকর্ড করা সমস্ত গানেই কপিরাইট স্ট্রাইক করছে শিল্পীকে। আর সেই গানের সংখ্যাও নেহাত কম নয় ৫০এর ও বেশি।

তবে যখন সাধারণ মানুষ হেরে যায় হতাশ হয় তখনই সেই হতাশার স্তুপ থেকেই জেগে ওঠে একজন শিল্পীর সত্ত্বা। তাই বোধহয় শিল্পীদের প্রতিবাদ তাদের সৃষ্টিতে। সেই পথেই হেঁটেছেন শিলাজিৎ। তাই ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে নিজের ইউটউবে শিলাজিৎ শুরু করলেন রি-ভুমিকা। প্রতিদিন গেয়েছেন ১টি করে নদিনে মোট ৯টি গান। সেই গানগুলি গাইতে গিয়ে বারে বারে কথা ও সুর পাল্টেই গেয়েছেন শিলাজিৎ। তৈরি হয়েছে নতুন এক একটা গান। ২০ সেপ্টেম্বর একটি অনুষ্ঠান হল ভুমিকা রিলিজের ২৬ বছরের উদযাপনে। "ভূমিকা থেকে রিভূমিকা" শীর্ষক ওই অনলাইন অনুষ্ঠানের টাইটেল কার্ডে স্বকীয় ভঙ্গিতে শিলাজিৎ বলছেন -" আসবিস আসবিস, না আসবিস না আসবিস, আমরা থাকবিস"।

Tuesday, May 19, 2020

মাতৃভাষা-জিন্দাবাদ !! ১৯শে মে


 কথায় বলে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না।  আজ ঐ ওপরের মানুষগুলোর কথা আমাদের স্মরণে নেই। অথচ বাংলা ভাষার জন্য ওনাদের অবদান কিংবা ১৯শে মে এর গুরুত্ব ২১ শে ফেব্রুয়ারি র চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এগার জন ভাষা শহীদের আত্মবলিদান আজ প্রায় বিস্মৃত, বাঙালি।  বাঙালি বলতে আমি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কথা বলছি। যাঁরা ২১শের সকালে ফেসবুক টুইটার হোয়াটস্যাপে পারলে হ্যাপি ভাষা দিবস মেসেজ পাঠাতেও কার্পণ্য করেন না।  শুভ ভাষা দিবস তো মুড়ি মুড়কির মত ছড়িয়ে পড়ে সাইবার মঞ্চে। ভাষা শহীদ দের সাথে 'শুভ' শব্দটা যায় ! আহ বাঙালি ! বাহ বাঙালি ! কেন কী বলা বাঙালি ! অনেকই  খুশি হলাম বলা বাঙালি ! খুব কষ্ট হয় যখন ভাবি এই ভাষাটার, উচ্চারণের অধিকার চেয়ে বুলেটের সামনে বুক পাততেও কার্পণ্য করেন নি কিছু মানুষ।কাঁটাতারের দুই পারের বাঙালি, বাংলা ভাষার অভিমানে জীবন বিসর্জন করতেও পিছপা হন নি।  ইতিহাস সাক্ষী রেখেছে গরম সীসের আর রক্তে ভেসে যাওয়া জন্মভূমির। জন্মদাত্রী মা , ভাষাও তো মা। ভাষা আবার সেতুও।  কিন্তু সেই ভাষা যখন রাজনীতির বিষয় তখনই ঘটে বিপত্তি। 








৬০ এর দশকে আসামের বরাক উপত্যকায় বসবাসকারী বাঙালির সংখ্যা অসমের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ ছিল। সেই বরাক উপত্যকার জনসাধারণের ওপর অসমীয়া ভাষাকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী।  ১০ অক্টোবর, ১৯৬০ সালের সেই সময়ের অসমের মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চলিহা অসমীয়াকে আসামের একমাত্র সরকারী ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। উত্তর করিমগঞ্জ-এর বিধায়ক রণেন্দ্রমোহন দাস এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু ২৪ অক্টোবর প্রস্তাবটি বিধানসভায় গৃহীত হয়।

নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার তাগিদেই তারা অসমীয়কে সরকারী ভাষা মেনে নিয়ে বাংলা ভাষাকে পাশাপাশি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন শুরু করেন ওই এলাকার বাঙালিরা । অন্য ভাষাভাষী গোষ্ঠীও বাঙালিদের এই আন্দোলনকে সমর্থন করে। বরাক তীরের বাঙালীরা দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করে যে কোন মূল্যে বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষার। আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। অসমের খাসিয়া, গারো, বোরো, মিশামী, ডিমসা, মণিপুরী, বিষ্ণুপ্রিয়াসহ সংখ্যালঘু প্রায় জনগোষ্ঠীই এতে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন প্রদান করে। এতে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অসমীয়া উত্তেজিত জনতা বাঙালি অভিবাসীদের আক্রমণ করে। জুলাই ও সেপ্টেম্বরে সহিংসতা যখন উচ্চ রূপ নেয়, তখন প্রায় ৫০,০০০ বাঙালি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যায়। আরো  ৯০,০০০ বাঙালি বরাক উপত্যকা ও উত্তর-পূর্বের অন্যত্র পালিয়ে যায়।গোপাল মেহরোত্রার নেতৃত্বে এক ব্যক্তির একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কামরূপ জেলার গোরেশ্বর অঞ্চলের ২৫টি গ্রামের ৪,০১৯টি কুঁড়েঘর এবং ৫৮টি বাড়ি ধ্বংস ও আক্রমণ করা হয়; এই জেলা ছিল সহিংসতার সবচেয়ে আক্রান্ত এলাকা।
এই অন্যায়ের প্রতিবাদে বরাক উপত্যকায় তৈরী হয় কাছাড় গণ সংগ্রাম পরিষদ , ১৯৬১ র ৫ ই ফেব্রুয়ারি। ২৪শে এপ্রিল থেকে ২রা মে অসমের ২০০ মাইল ব্যাপী একটি পদযাত্রার আয়োজন করে ওই পরিষদ।  গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচার চালাতে থাকেন পরিষদের যুবকরা । পদযাত্রার শেষে পরিষদের মুখ্যাধিকারী রথীন্দ্রনাথ সেন ঘোষণা করেছিলেন যে, যদি ১৩ এপ্রিল,১৯৬১ সালের ভিতর বাংলাকে সরকারী ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা না হয়, ১৯ মে তে তাঁরা ব্যাপক হরতাল করবেন। ১২ মে তে অসম রাইফেল, মাদ্রাজ রেজিমেন্ট ও কেন্দ্রীয় সংরক্ষিত পুলিশ বাহিনী শিলচরে ফ্ল্যাগ মার্চ করেছিল। ১৮ মে তে অসম পুলিশ আন্দোলনের নেতা নলিনীকান্ত দাস, রথীন্দ্রনাথ সেন ও বিধুভূষণ চৌধুরী (সাপ্তাহিক যুগশক্তির সম্পাদক) কে গ্রেপ্তার করে। এছাড়াও গ্রেফতার হন ছাত্রনেতা নিশীথরঞ্জন দাস| ভাষা আন্দোলনের ডাক গোটা কাছাড়ের চেহারা পাল্টে দিয়েছিল | তাই এ গ্রেফতারে প্রত্যেকটি জনপদ গ্রাম যেন বিক্ষোভে আরও ফুঁসে উঠল। সহস্র বলিষ্ঠ কণ্ঠে আওয়াজ উঠল মাতৃভাষা-জিন্দাবাদ। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য গোটা কাছাড় প্রস্তুত হয়ে রইল।
শিলচর ,করিমগঞ্জ , হাইলাকান্দিতে ব্যাপক হরতাল ও পিকেটিং শুরু হয় ১৯শে মে ১৯৬১র সকাল থেকে।  স্থির করা হয়েছিল বিকেল চারটের ট্রেনটি চলে যাওয়ার পর উঠবে হরতাল ও পিকেটিং। সকাল থেকে একটিও টিকিট বিক্রি হয় নি তখনকার তারাপুর, বর্তমানের শিলচর স্টেশনে। বিমান বন্দরের রানওয়ে তে শুয়ে পড়ে সত্যাগ্রহীরা , অফিসের সামনেও পিকেটিং করেন তাঁরা। জারি হয় ১৪৪ ধারা। 








দুপুর আড়াইটে- কাটিগোরার কাছে ৯ জন আন্দোলনকারীকে  গ্রেপ্তার করে একটি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার সময় তারাপুর স্টেশনের পিকেটিংকারীদের তীব্র অবরোধের মুখে পড়ে ওই ট্রাকটি। ভয় পেয়ে ড্রাইভার ট্রাকটি নিয়ে পালতে গেলে অজ্ঞাতপরিচয় কেউ ট্রাকটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণ করে দমকল। এরপর দমন ও উৎপীড়ন চরমে ওঠে। 
দুপুর ২টো ৩৫- প্যারামিলিটারী বাহিনী লাইনে শুয়ে থাকা ও স্টেশনে অবরোধকারীদের বন্দুক ও লাঠি দিয়ে মারা শুরু করে. এরই মধ্যে চলে গুলি। সাত মিনিটে ফায়ার হয় সতেরটি বুলেট, আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে। বারো জনের দেহে লাগে গুলি। ঘটনাস্থলেই মারা যান ৯ জন। ২জন বীরেন্দ্র সূত্রধর ও সত্যেন্দ্র দেব পরে. ২১শে মে মারা যান। সারা বিশ্বের ভাষা আন্দোলনের একমাত্র নারী শহীদ কমলা ভট্টাচার্য তখন সবে মাধ্যমিক দিয়েছেন , রেজাল্ট প্রকাশিত হয় নি।  ষোল বছরের তরুণীর ডান চোখের তলা দিয়ে মাথা ফুঁড়ে দেয় একটি বুলেট।  

২০শে মে শিলচরের জনগণ ভাষা শহীদদের শবদেহ নিয়ে শোকমিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনের ঝাঁঝে সরকারী ঘোষণা আসে।  বরাক উপত্যকার ভাষা হিসেবে বাংলা সরকারী স্বীকৃতি পায়। 

ছাত্র সমাজের ডাকা এক আন্দোলন গণঅভ্যূথানের চেহারা নেয় শুধুমাত্র ভাষার অভিমানে। আজ তাই মূল্যায়নের সময় এসেছে আমাদের মাতৃভাষার কারণে যাঁরা প্রাণ দিলেন তাঁদের কথা আলোচনার তাঁদের জানার সময় এসেছে। 
সবাই ভাল থাকবেন। 

আজকের এই লেখাটা শেষ করব আমার খুব প্রিয় দুজনের কথা বলে। প্রান্তিক দেব আর পিয়ালী দাস আমার স্নেহভাজন দুজন , এই ছেলে মেয়ে দুটি নতুন ব্লগ শুরু করেছে।  বড় ভাল লেখে ওরা।  আমার মতন আবোল তাবোল নয়। ওদের ব্লগে একবার করে বেরিয়ে আসবেন।  ভাল লাগবে। 

প্রান্তিকের ব্লগ  
My Travel And Pictures     

পিয়ালীর ব্লগ

Piyali's Talk  (যাঁরা পিয়ালীকে চেনেন আমি জানি তাঁরা পিয়ালীর ব্লগের  নামটার শেষে লিখতে চাইবেন that continues )


আর আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতি সংক্রান্ত আমার পেজ Mother Nature আর আমার শ্যুট করা  পাখি সাপ ও অন্যান্য ভিডিও দেখতে চলে আসুন মাদার নেচারের এই চ্যানেলে 

Sunday, May 10, 2020

মা মানে কি শুধুমাত্র নারী সত্ত্বা?

মা , মাতরঃ ,মাদার ,ময়েডর ,মারে ,মায়র ,মাকি ,মাজকে ,মাঈকা ,মুক্যুইন ,মেমে ,মামিঙ্কা ,মর ,মত্তার ,মতিনা ,মাটকা ,মি ,আম্মি ,মাটার ; এমন হাজারো শব্দে বিশ্ব জুড়ে মা কে ডাকা হয়।  অপার স্নেহ, মায়া ও মমতা মাখা জন্মদাত্রী রা ভাষার পরিবর্তনে, দেশের পরিবর্তনে তাই বোধহয় এমন সুক্ষ্ম এক মিলে মিলেমিশে যান। আপনি ইংরেজিতে AM লিখুন, এবার ঐ শব্দের অক্ষর গুলি উল্টে দিন, দেখুন MA হয়ে গেছে। অর্থাৎ কিনা I AM HERE FOR MA আজ মাতৃত্বের উদযাপন চলছে সারা দেশ জুড়ে। আসলে কী কোনও একটা দিনে মা এর উদযাপনকে সীমাবদ্ধ রাখা যায়? আমাদের সবার , সম্পূর্ণ প্রাণীজগতের অস্তিত্বই তো মা এর কারনে, মা এর কল্যাণে। আজ শোনাব কিছু মা দের  গল্প যারা নারী না হয়েও কিন্তু মা ! হ্যাঁ ঠিকই পড়লেন। 
ছোট্ট অবিনাশের সাথে আদিত্য 

পুনের আদিত্য তিওয়ারি। চাকরি করতেন আই টি ফার্মে ।  অবিনাশকে দত্তক নেবার জন্য আইনি লড়াই শুরু করেন। দীর্ঘ লড়াইয়ের শেষে ২০১৬ এ তিনি অবিনাশ বলে একটি ডাউন্স সিনড্রোম শিশুকে একক অভিভাকত্বে নেন। অবিনাশের পরিচর্যা আদিত্যকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। দারুণ মজায় আছেন দুজনে। আদিত্য মনে করেন পেরেনটিং জেন্ডার বায়াসড নয়। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃত্ব দিবসে আদিত্য ভূষিত হচ্ছেন Best Mommy Of The World পুরস্কারে। ইউনাইটেড নেশনসে আয়োজিত  শিশুর বিকাশ ও বড় হওয়ার ওপর একটি সেমিনারে যোগদানের আমন্ত্রণও পেয়েছেন আদিত্য।
কি বলবেন !
ট্র্যান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট গৌরি সাওয়ান্ত

ণেশ সুরেশ সাওয়ান্ত,  এখন লিঙ্গ পরিবর্তন করে গৌরি। ২০০১ এ সোনাগাছির থেকে একটি কন্যা শিশুকে তিনি দত্তক নেন।শিশুটির মা ছিলেন দেহ পসারিণী। HIV AIDS এ সেই মহিলা মারা যাবার পর শিশুটির দিদিমা ঠিক করেন মেয়েও মা এর মতই নামবে দেহ ব্যবসায় কিন্ত গৌরির অদম্য মনের ইচ্ছা, মমতা ও সহমর্মিতা  শিশুটিকে দেয় এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। গৌরিও  নিজের মধ্যে আনেন অনেক পরিবর্তন। মেয়ে যেন আমূল পাল্টে দিয়েছে ট্র্যান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট গৌরি সাওয়ান্তকে।  কি বলবেন! "কুমাতা কখনও নয়"। 
পাড়ার গলিতে বাচ্চা দেওয়া নেড়ি , মুখে করে ছানা নিয়ে যাওয়া দুধ, মাছ চোর পুষি কিম্বা কাকের বাসায় ডিম পাড়া কোকিল সবাই আসলে মা। পুরনো হিন্দি সিনেমার মা এর চরিত্রে অভিনয় করা নিরুপা রায়ের মতই নিরুপায় ওরা। যেমন নিরুপায় মলিন ছেঁড়া কাপড়ের পাগলি টা। কোনও তথাকথিত সভ্য সমাজে বসবাসকারী পুরুষের লালসার শিকার যে হয় নির্জন রাত গভীরে। খাবার হুঁশ নেই, কাপড়ের হুঁশ নেই তবুও পাগলি সন্তানকে স্তন্য পান করায় । কে শেখায় ওকে? হয়ত মাতৃত্বই শেখায়। তাই শুধু একটা দিন নয় ৩৬৫ দিন ধরে চলুক এই সব মায়েদের জয়গান। যারা আঁচলে হলুদ মাখা হাত মুছতে মুছতে নিজের ক্যরিয়ার, শখ সব উৎসর্গ করে দেয় সন্তানদের জন্য তাদের কি আর একটা দিনে ধন্যবাদ দেওয়া যায়?

আমার youtube চ্যানেল Mother Nature আর আমার Nandan Paul চ্যানেলে আপনাদের স্বাগত। ফেসবুকে আসুন Mother Nature আর Nandan Paul পেজে কথা হবে।  সবাই ঘরে থাকুন , ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।