Monday, September 21, 2020

নিঃস্বকর্মা

 


মেচেদার প্রসেঞ্জিত মণ্ডলের বাবা দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। নিয়মিত ওষুধ পথ্য চলত। ওষুধ শেষ হয়ে গিয়েছিল তাই বাড়ির একমাত্র রোজগেরে ছেলে প্রসেঞ্জিতকে তার বাবা বলেছিলেন ওষুধটা আনতে। পকেটে একটাও পয়সা ছিল না। বেতন বকেয়া। দিশাহীন,নিরুপায় প্রসেঞ্জিত অসহায় হয়ে মেচেদা টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ভিতরই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।

১১ মাস বেতন না পেয়ে লক্ষ্মীকান্তপুর লোকালে বাড়ি ফেরার সময় চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে জীবন শেষ করেন সুশান্ত প্রামাণিক।

একই ভাবে আলিপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সুজয় দাসও আত্মহননের পথ বেছে নেন। ওনারা সবাই ছিলেন বিএসএনএলের ঠিকা শ্রমিক।

এ পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ১৪ জন বিএসএনএলের কর্মী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তার মধ্যে ১১জনই এই বাংলার। কেন আত্মহত্যা করছেন একসময়ে ভারত সরকারের টেলিকম দপ্তরের আওতায় থাকা কর্মীরা?

তথ্য বলছে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা বিএসএনএল গত ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত ৭৮,৫৬৯ জন কর্মীকে ভিআরএস দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের ব্যায়ভার ১২০০ কোটি টাকা থেকে ৩০০ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? ঠিকা শ্রমিকদের বকেয়া এখনও কেন মিটছে না? কেন স্থায়ী কর্মীরা দুমাসে একবার করে বেতন পাচ্ছেন? কোনও সদুত্তর নেই।

এই লক ডাউনের মধ্যে অন্যান্য বেসরকারি টেলিকম সংস্থা গুলি যেখানে চাপের মুখে পড়েছে গ্রাহক ছেড়ে চলে যাওয়ায় সেখানে বিএসএনএলের গ্রাহক বেড়েছে ২,০০,০০০ এর ও বেশি। শুধু তাইই নয়। লক ডাউন ও করোনা পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিমাসে ১৪০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকা আয় করেছে বিএসএনএল। তবুও কেন থাকছে এমন দুর্দশা?

বেসরকারি টেলিকম ও মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো ব্যবহার করে থাকে বিএসএনএলেরই ইনফ্রাস্ট্রাকচার। এর বাবদ ওই সংস্থা গুলো থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে কেন্দ্র সরকার। বেশ কিছুদিন অনাদায়ী হয়ে পড়েছে কেন্দ্র সরকারের প্রাপ্য সেই অর্থ। সম্প্রতি দেশের শীর্ষ আদালতে গিয়েছিল ওই বেসরকারি টেলিকম সংস্থা গুলি। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে জানিয়েছেন ওই বকেয়া মেটানোর সময়সীমা আগামী ১০ বছর বর্ধিত করা হল।

তার ওপর বিএসএনএলে 4G নেটওয়ার্ক যুক্ত করবার বিষয় টিকে এখনও মঞ্জুর করল না টেলিকম দপ্তর। বিএসএনএলের কর্মীদের সংগঠন বিএসএনএল এমপ্লয়িজ অ্যাসোশিয়েসনের পক্ষে এ নিয়ে লাগাতার আন্দোলন চলছে। সংগঠনের পক্ষে অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়, অনিমেষ মিত্ররা বলছেন এখন দ্বিমুখী আন্দোলন চালাতে হচ্ছে , প্রথমটা শ্রমিক ছাঁটাই প্রতিরোধ একই সাথে 4G নেটওয়ার্কের সংযুক্তিকরণ।

টেলিকম মন্ত্রক দায় ঝেড়ে ফেলে বলেছে ঠিকা শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোর কোনও দায় নেই সরকারের। এই অবস্থাতেই দিন কাটাচ্ছেন রক্তমাংসের বিশ্বকর্মারা নিঃস্ব কর্মা হয়ে।


No comments: