অনেক দিন আগে কবীর সুমনের একটা অ্যালবাম বেরিয়েছিল - ঘুমোও বাউণ্ডুলে। সেই অ্যালবামে একটা গান ছিল-
"থেমে যেতে যেতে
একবার কোনও মতে
জোর করে যদি একবার
হেঁটে যেতে
বেঁচে নিতে যদি একবার
বড় ভাল হত"।
আমরা রোজ মারা যাই , রাত্রে , সাময়িক, ঘুমের মধ্যে । রোজ আবার বেঁচে উঠি, জেগে উঠি সাময়িক মৃত্যু-ঘুম ছেড়ে। মৃত্যু চিরন্তন। মরণ তুঁহ মম শ্যম সমান। জন্ম নিয়েছে যে তার মৃত্যু আছেই। কাম ক্রোধ বা অন্য ষড় রিপু না থাকলেও জাগতিক প্রাণী বা উদ্ভিদের মৃত্যু এড়ানোর কোনও উপায় নেই। একটাই জীবন। একবারই খেলতে নামা। ক্রিজ ছেড়ে চলে যাব? কেন?
আজ সারা দুনিয়া জুড়ে এই বিষয় নিয়েই কথাবার্তা হচ্ছে। আজ বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। করোনা আবহে আত্মহত্যার প্রবণতা আরও বেড়েছে মানুষের মধ্যে। বহু আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক এবং শারীরবৃত্তীয় কারণ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর অন্ধকারে।
সমস্যা এতটাই জটিল হয়ে গেছে এই অতিমারি পরিস্থিতিতে যে শিনরিন - ইয়োকু র দেশ জাপানে এই মুহূর্তে আত্মহননের হার সবচেয়ে বেশি। জাপানিরা ভাল থাকার বিষয় তাঁদের দৈনন্দিন জীবন চর্যার মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছেন যুগ যুগ ধরে। তাহলে তাঁদের কেন এমন অবস্থা। আমাদের দেশে কৃষক, ছাত্রছাত্রী, এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের আত্মহত্যার হার বেড়েছে। বাদ যান নি ডাক্তার কিংবা শিক্ষকরাও।
টেকনলজি আমাদের বেগ দিয়ে আবেগ কেড়ে নিয়েছে। আমরা সারাদিন অনলাইন থাকি । আপডেটেড থাকি। অথচ পাশের বাড়ির, পাশের ঘরের, পাশের বালিশের মানুষটার খোঁজ রাখি না। আর রাখি না বলেই আমরা অনেক আত্মহনন আটকাতেও পারি না। এই অবস্থায় তাই কথা বলাটা খুব জরুরী। আত্মহননের ইচ্ছা একটা মানসিক অবস্থা। যার থেকে আমাদের টেনে বার করে আনতে পারেন একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। তাই যিনি রোগী তাঁর পরিচিত, পরিবার বা বন্ধুদের উচিত ট্যাবু ভেঙে, লজ্জা সরিয়ে ডাক্তারবাবুর কাছে রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে যাওয়া।
ইন্টারনেটে সার্চ করে রোগ সারাব, বা রোগীর কাউন্সেলিং করব ভাবাটা বোকামো। এটা একটা স্পেসালাইজড বিষয় তাই স্পেশালিষ্টকেই দরকার। আর নেটে অনেক হেল্প লাইন পাবেন। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আজ একটা প্রতিবেদন করলাম টিভি নাইন বাংলায়(TV9 Bangla)। সেই প্রতিবেদনে কিছু তথ্য নেবার জন্য হেল্প লাইনে (নাম বলছি না ) ফোন করলাম টানা দু দিন । কেউ ফোন ধরলেন না । অতএব নিজেই নিজের আলো হয়ে জ্বলে উঠুন। গোলাপ হয়ে ফুটে উঠুন। সমস্যাকে জয় করাই জীবন। সমস্যা না থাকলে মজা কোথায়? মৃত্যু কোনও সমস্যার সমাধান নয়। বরং সমস্যাটাকে আরও কিছু মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে পালিয়ে যাওয়া। তাই চিয়ার্স টু লাইফ।
রইল আজ আমার করা একটা ভিডিওর লিঙ্ক।
https://youtu.be/hUvPbgzMK0Y
No comments:
Post a Comment