তারপর এলেবেলে ছেলেবেলা স্কুল। লাল নীল কমলা বাটিরা থরে থরে সেজে বসত। সেই স্কুলে টিফিন বেলা শিখিয়েছে- ভাগ করে খাও।
শহরের ইংলিশ মিডিয়াম। অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান মিস। হাতটা বেজায় মারকুটে। লেখা বেঁকে গেলেই ভয়। গাল লাল করে থাপ্পড় শিখিয়েছে- মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য হল মানুষ লিখতে পারে।
সরকারী স্কুলের বাইরে তেঁতুল গাছ। পাড়তে পারতাম না টকফল। শৈশবের বন্ধু শিখিয়েছে- পাথরের অব্যর্থ নিশানা। আহা কি পরম পাওয়া !
রবিবার শিখিয়েছে- সোমবার স্কুল তাই দুদ্দাড় আনন্দে হও মশগুল ।
হুহু করা সাইকেল প্যাডেল শিখিয়েছে- গতির প্রথম পাঠ।
সহপাঠী শিখিয়েছে- কলেজ কেটে সিনেমা।
যৌবন শিখিয়েছে সিগারেট, সিগারেট শিখিয়েছে- পুড়ে হও খাক
বেকারত্ব শিখিয়েছে – টিউশনি টাকা দিয়ে দেখা সুমনের গান
সুমন শিখিয়েছে- আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি, কার তাতে কী ?
প্রেমিকা শিখিয়েছে অপেক্ষা আর ছেড়ে চলে যেতে হয়
দেহ শিখিয়েছে- জন্মের জন্য ছোট আর মৃত্যুর জন্য বড় হওয়ার খেলা
দেহকাম শিখিয়েছে- চুম্বন ব্যাকরণ, ঠোঁট জ্বালা থেকে যায় থেমে গেলে কম্পন
বন্ধু শিখিয়েছে- “পাতিয়ালা কীভাবে বানাই দেখ শালা” বা “বীজ থাকলে টানলেই ফাটবে”।
প্রথম বেতন শিখিয়েছে- ২ কিলো মটন কেনা সুখ
অসুখের বিল শিখিয়েছে- ফিট থাকা কতটা জরুরী
বন্ধুর ছদ্মবেশ শিখিয়েছে- বিশ্বাস করা পাপ ( ক্ষমা করবেন রবীন্দ্রনাথ)
টিভি শিখিয়েছে- দাগ অচ্ছা হ্যয়
মালিক শিখিয়েছে- পোষালে থাক না পোষালে যা ( অথচ মুখে কিছু বলে না)
শ্রমিক শিখিয়েছে- আমারই ঘামের বৃষ্টি নামে লাল সেলাম
হাত ছাড়া ট্রেন শিখিয়েছে- ৫ মিনিটের দাম
পথ শিখিয়েছে- ঘরের টান
আর ঘর শিখিয়েছে- পথের ক্লান্তি ভুলে কোলে তুলে নিতে
স্ত্রী শিখিয়েছে – পাশে থাকা
সন্তান শিখিয়েছে- পিতৃত্ব আর আবার কার্টুন দেখা
কার্টুন শিখিয়েছে- সহজ বাঁচতে সবাই পারে না।
বটগাছ শিখিয়েছে- শুধু ছায়া দিতে হয়
ঘাস শিখিয়েছে- নত হলেও শিকড় ছড়িয়ে দেওয়া চাই
শিকড় শেখালো – রবি ঠাকুর (যাঁদের জীবনে তিনি নেই তাঁরা রোদ্দুর রায়ের চেয়েও পচা কপালে)
সূর্য শেখালো- দিন
দিন শেখালো- হয় আনি খাই নাহয় “দিন না, দিন না , আমি তো খাপের লোক”
সমানে সমানে টক্কর দেওয়া প্রতিপক্ষ শিখিয়েছে- ঠিকঠাক থাক নইলে গিলে খাব সবশুদ্ধ
রাত শিখিয়েছে- ভৌ, জাগা কুকুরের মত অতন্দ্র প্রহরা
কুকুর শিখিয়েছে- আনুগত্য আর মায়া
মায়া শিখিয়েছে- বন্ধন হীন হতে
মুক্তি বোধ শিখিয়েছে- শূন্য, (মৃত্যুর পর কমলা আগুন )
মৃত্যু বোধ শিখিয়েছে- পুড়ে গেলে রক্তমাংসঘাম পুড়ে যায় সব বদনাম/ আমার দুর্নাম যেন না পোড়ে নিস্কাম অমরত্বের ঘোরে/ আমি যেন বেঁচে থাকি না।
প্রথাগত শিক্ষকদের অত্যন্ত হতাশ করেছি আজীবন। তাই তাঁদের দূর থেকে প্রণাম। আর এরাও তো শিক্ষক তাই এদেরও স্মরণ করছি আজ। শেষে দুটো প্রিয় লাইন।
“গুরু বলে কারে প্রণাম করবি মন?
ও তোর অতীত গুরু, পথিক গুরু, গুরু অগণন”
No comments:
Post a Comment