গত সোমবার লেখা আমাকে বাঘা বোলো না ব্লগটা শুরুতেই একবার চোখ বুলিয়ে নিন কারণ এই পোস্টটা ওটার সঙ্গেই সম্পর্কিত। হাওড়ার ওই অঞ্চলে বাঘরোল সাইটিং(Sighting ) হওয়ার পর থেকেই। এলাকায় একটা উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। যে ঘটনায় মানুষের খুশি হওয়ার কথা ছিল তাতেই তাঁরা আতঙ্কিত! বহুকাল ধরে এই এলাকাগুলো বাঘরোলের প্রাকৃতিক হ্যাবিট্যাট(Habitat)। অর্থাৎ স্থানীয় ইতিহাস বলছে বন্যপ্রান আর মানুষের সহাবস্থান ওই এলাকায় যুগ যুগ ধরে রয়েছে। সংঘাত হয় নি।
তাহলে এখন কেন হচ্ছে? প্রথমত এর জন্য দায়ী অশিক্ষা। এই অশিক্ষা বলতে আমি কোনও স্কুল কলেজ বা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার কথা বলছি না। প্রকৃতি লব্ধ জ্ঞান। তলানিতে এসে পৌঁছেছে আমাদের। প্রতিদিন প্রকৃতির সঙ্গে যোগ কমে যাচ্ছে আমাদের। ফলত আমরা জানি না কোনটা কী। আমাদের চারপাশে কী আছে, যার সঙ্গে যাদের সঙ্গে আমাদের নিবিড় যোগ যুগ যুগান্ত ধরে!
ইন্টারনেটের গণতান্ত্রিকতা আমদের সুবিধা দিয়েছে ইনফরমেশন খোঁজার। একই সঙ্গে ইন্টারনেট অশিক্ষা ছড়ানোরও একটা উত্তম মাধ্যম। আপনার হাতে ডেটা আছে, মোবাইলে বাই ডিফল্ট একটা ক্যামেরা আছে যাতে ফোটো ও ভিডিও রেকর্ড হয়। অতএব মনের মাধুরী মিশায়ে তাহারে করুন রচনা!!
এই কথা লেখার কারণ ওই দুটি গ্রামের মানুষকে "অজানা জন্তু" সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দেওয়ার বদলে কিছু ইউটিউব মিডিয়া এলাকায় গিয়ে যা করলেন সেটাকে আর যাই হোক সাংবাদিকতা বলা যায় না। বন্যপ্রান সম্বন্ধে কাজ করতে গেলে প্রতিবেদন বিজ্ঞানভিত্তিক হওয়া উচিত। বিজ্ঞান দাঁড়িয়ে থাকে প্রাথমিক ৩ শর্তের ওপর পরীক্ষা, নিরীক্ষা এবং সিদ্ধান্ত। বন্যপ্রানের প্রতিবেদনও তাই হওয়া উচিত। এটা আমার মত। এবং আমার এই ধারণা তৈরি হয়েছে বর্তমান পৃথিবীতে হার্ডকোর ওয়াইল্ড লাইফ কভারেজ অনুধাবন করে। এটাই হওয়া উচিত। এটা একটা ষ্ট্যাণ্ডার্ড রীতি।
সংরক্ষণ কর্মীরা প্রায়ই বলে থাকেন বন্য প্রাণ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে "মশলা" খবর বা " Sensational News" প্রাণঘাতী। সংরক্ষণের জন্য মারাত্মকও বটে। এক্ষেত্রে ওই গ্রাম গুলির মানুষ আতঙ্কিত। তাঁদের কাছে যাবার আগে অল্প একটু পড়াশোনা করতেই পারতেন সংবাদ কর্মীরা। বাঘ আর বাঘরোলের তফাতটা নিজে জানতেই পারতেন। তা না করে তাঁরা যেটা করলেন তা হল কেবল উত্তেজনা ক্যামেরাবন্দী করে সেই উত্তেজনাটিকেই আরও বাড়ালেন। এরপর গ্রামবাসীরা যদি নিরীহ ফিশিং ক্যাটটিকে বাঘ বা অজানা প্রাণী ভেবে আতঙ্কে, ভয়ে পিটিয়ে মারে তার দায় কে নেবে?
একদিকে রাজ্যপ্রাণীটিকে নিয়ে নেই সরকারি মন্ত্রক স্তরে সচেতনতা প্রসারের উদ্যোগ, কম সুবিধাপ্রাপ্ত বন দপ্তরের কর্মী (অনেকটা ঢাল তরোয়াল বিহীন কেবল মনের জোর সর্বস্ব নিধিরাম সরদার ) আর কিছু বন্যপ্রান সংগঠন (যাঁদের ফান্ড নেই আছে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর উদ্যোগ), এই নিয়ে সংরক্ষণ (পড়ুন মোকাবিলা) চলছে আমাদের রাজ্য প্রাণীটিকে বাঁচানোর। IUCN তালিকায় যে লাল। মানে অবলুপ্তির প্রহর গুনছে। উল্টোদিকে সীমাহীন অশিক্ষা।
No comments:
Post a Comment