Tuesday, February 27, 2018

এ সড়ক কোমাগ্রস্থ - সুস্থ হোক আন্দুল রোড

আন্দুল রোড ইউজার্স এসোসিয়েশন সই সংগ্রহ অভিযান শুরু করছে। অভিনন্দন।

আজ থেকে বছর খানেক আগে এই এক ই বিষয়ে কিছু ফেসবুক পোস্ট করেছিলাম। অবাক করা সাড়া পেয়েছিলাম।  আজ সেই পোস্ট গুলি এক জায়গায় করলাম। 

June 29, 2017
দিনে ও রাতে আন্দুল রোডের ছবি এগুলো। দ্বিতীয় হুগলি সেতুর টোল প্লাজা র ৭,৮ বা ৯ নম্বর ফ্ল্যাঙ্ক দিয়ে নেমে আন্দুল রোড ধরলে দিনের যে কোন সময়ে এ রকম বা এর চেয়ে ও মারাত্মক ট্রাফিক কণ্ডিশন দেখা যায় ইদানিং। ভারী পণ্যবাহী ট্রাক, নড়তে না চাওয়া বাস, মিনি বাস, রিফিউজালে অভ্যস্ত No Refusal ট্যাক্সি, টোটো, মাইক্রো, বাইক, সাইকেল, বাইসাইকেল, রিকশা.... 
সব মিলিয়ে প্রাণান্তকর অবস্থা পথচারীদের। অথচ এই রাস্তাতেই রয়েছে প্রায় ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৪টি হাসপাতাল, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও আন্দুল রাজবাড়ির মত ট্যুরিস্ট স্পট। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বাজার, ৪-৫ টি বাস টার্মিনাস। যার ফলে ভীড়় স্বাভাবিক ভাবেই থাকে। যদিও এই পথের রাধাদাসীতে Indian Oil Corporation Ltd.এর ফিলিং স্টেশন থাকায় অয়েল ট্যাঙ্কারের চলাচল বহুকাল যাবৎ তবু সাম্প্রতিক কালে অতি ভারী পণ্যবাহী লরি ও ট্রেলার চলাচলের ফলে স্কুলের পড়ুয়া, সাইকেলচারী, সাধারণ পথচারী ও বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের চলাচলের স্থান হয়েছে নয়নজুলি। অপ্রসস্থ সে নয়নজুলি হয় খানাখন্দে জলে ভরা না হয় কনস্ট্রাকশন মেটিরিয়ালে ভরপুর।
এর ফলে বিরক্তি, ধৈর্য্যচ্যুতি, ঝগড়া প্রতিনিয়ত চলতে থাকে এ পথে। অথচ শুধু দুরপাল্লার ভারী ও মাঝারি পণ্যবাহী লরি এ পথে বন্ধ করলেই মসৃণ হতে পারে নিত্যযাত্রা।
এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার হল NH6 বা ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে কলকাতা ঢোকার ক্ষেত্রে আন্দুল রোড ব্যবহার করলে অনেকটাই দুরত্ব সাশ্রয় হয়, যদি কোন গাড়ি কোনা এক্সপ্রেস ওয়ে ব্যবহার করে তার অপেক্ষা। এই পথে জানজটে আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্স বা দমকলের মত জরুরি পরিষেবা মূলক বাহন দেখা যায় তাই আখচার।




June 30, 2017
আমার একটা পোস্ট যে আপনাদের এভাবে নাড়া দেবে ধারণা ছিল না। বুঝতে পারতাম এ রাস্তার দুপাশে শৈশব হতচকিত, বার্ধক্য কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তীব্র হর্ণ, জোরালো আলো ঝগড়া ঝামেলা এ রাস্তার নিত্যকার সঙ্গী। পরিচয় হল আপনাদের সাথে।
জানলাম যে
জয়তী মন্ডল দেশাই এর বাচ্চা কে স্কুলে নিয়ে যেতে চরম ভোগান্তি হয়, যেমনটা হয় সলিল ধাড়া র ছেলের স্কুলে লেট ।রূপালি সাহার বাচ্চা যে স্কুল বাসে যায় তা আন্দুল রোডে জানজটে থমকে থমকে যখন স্কুলে পৌছোয় তখন প্রথম পিরিয়ড এর ক্লাস শেষ । তাই মলি দে, বাণিশ্রী কুণ্ডু রা আস্থা হারাচ্ছেন প্রশাসনের সদর্থক ভুমিকায় । তবু সুগত বাসু, বিন্দাবন পাল বা সলিল ধাড়া রা আশা রাখছেন যদি Botanical Garden Police Station এ পিটিসন দেওয়া যায়। রাস্তা পারাপার এর ভয়াবহ আবহ সবার মনে মগজে। দাবি উঠছে আন্দুল রোড চওড়া করার। রাস্তার ওপর দোকান পাট, নয়নজুলি তে গর্ত জল কাদা, বাজার।
দাবি উঠছে #চওড়া_হোক_আন্দুল_রোড এই দুর্বিসহ অবস্থা থেকে পরিত্রানের উপায় কি সত্যিই নেই?
কেউ কেউ #পথ_অবরোধ এর দাবি তুলেছেন। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি অবরোধ সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারবে না। এ রাস্তার দুপাশে এতগুলো স্কুল ও হাসপাতাল থাকায় অবরুদ্ধ হয়ে থাকা মানুষ জনের অসুবিধাই বাড়বে। তারচেয়ে প্রশাসনের নজরে বিষয়টি এনে বারবার হ্যামার করলে সুফল হয়ত পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে Change.org তে পিটিসন করা যেতে পারে। এই সংস্থাই কিন্তু যশোর রোডে নির্বিচারে গাছ কাটা আটকে দিয়েছে। ওঁদের পিটিশন এর কপি যায় President of India আর Supreme Court of India য়। প্রয়োজনে Green Bench এর দ্বারস্থ হয়ে Public Interest Litigation ফাইল করা যায় Howrah Judicial Court এ।
তবে তার আগে আমরা কিছু বিষয় নজরে রাখব।
১.প্রশাসন নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত করবে কিন্তু তা বজায় রাখতে হবে আমাদের ই।
২. হাতে সময় নিয়ে রাস্তায় বেরোব
৩. ধৈর্য চ্যুত হয়ে খিটমিট ঝগড়া ঝামেলা রাস্তায় করব না
৪. বাইক হেলমেট ছাড়া চালাব না
৫. গাড়ির দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা নিয়মিত করাব
৬. বাসে সিট দখলের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল হব শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও মহিলাদের প্রতি।
৭. সাইকেল চালানোর সময় রাতে অবশ্যই হেডল্যাম্প জ্বালাব
৮.রাতের বেলা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করার সময় পারতপক্ষে সাদা পোশাক পরব যাতে গাড়ির চালক হেডলাইটের আলোয় সহজেই দেখতে পান।

পরিশেষে একটি কথা আপনাদের কারও সাথে যদি আমাদের মাননীয় লোকসভার এম পি Prasun Banerjee র সাক্ষাৎ হয় ওনাকেও জানিয়ে রাখুন বিষয়টি। সুরক্ষিত থাকুন, ভাল থাকুন।
মজা করে নাকি বলা হয়, "আন্দুল রোডে যদি তুমি সফল ভাবে গাড়ি চালাতে পারো তাহলে নিশ্চিত থেকো পৃথিবীর যে কোনো রাস্তায় তুমি অনায়াসে গাড়ি চালিয়ে নেবে।" সত্যি রাস্তার একপাশে স্টোভ কুকার সারানোর দোকান তো অন্য পাশে খাসি মুরগি র ঝুলে পড়া কসাই খানা। একপ্রান্তে উচ্ছেবেগুনপটলমুলো তো অন্য প্রান্তে সেলাই সুতো, ত্বক চকচকে করা হাজারো ক্রিমের মনিহারী। দুর্গাপুজো রাস্তার নাভীশ্বাস। ঈদ রাস্তার নাভীশ্বাস। বড়দিন রাস্তার নাভীশ্বাস। রাজনৈতিক তামাশা রাস্তার নাভীশ্বাস। এর ওপর আজ ফাইবার অপটিক কেবল বসবে তো কাল CESC Limited র কাজ, চালাও গাঁইতি ফিতে বেঁধে। এর ওপর তো রয়েছেই পাড়ার জলসা, জলসত্রে জোর করে সরবত বিলি। মৃতদেহ বাহী চারপাঈ, মহরম থেকে রাম নবমী। বাসে আটকে থেকে বমি পটি পেয়ে গেলেও পালাবার পথ নাই। গাড়ি তে যাঁরা চেপে রয়েছেন তাঁদের একরকম ভোগান্তি, আর যাঁরা হেঁটে বা সাইকেলে যাচ্ছেন সে মানুষ গুলোর অবস্থা মারাত্মক মর্মান্তিক। বেচারা। ওনারা যাবেন কোথা দিয়ে?! জায়গা কই? ১৬, ২২, চাকার ট্রেলার অতিক্রম করে যে ভাই, দাদা, কাকুরা সাইকেল চালিয়ে আসেন তাঁরা সত্যিই কম ঝুঁকি নিয়ে চলেন না। গেস্টকীন, লালকুঠি এলাকার কটি ছবি দিলাম।।
পরিশেষে আজ ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জন্ম ও প্রয়াণ দিনে তাঁরই একটি উক্তি রাখলাম। ভালো থাকুন সবাই।
"We have the ability and if, with faith in our future, we exert ourselves with determination, nothing, I am sure, no obstacles, however formidable or insurmountable they may appear at present, can stop our progress... (if we) all work unitedly, keeping our vision clear and with a firm grasp of our problems."- Dr. B. C. Roy



গতকাল আমার এক পরিচিত মানুষের সাথে আন্দুল রোডের জানজটে বিষয়ে কথা হচ্ছিল। উনি সব বিষয় শুনে বললেন এই কাজ শুধুমাত্র থানায় ডেপুটেশন দিয়ে হবে না। যেহেতু কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের একাধিক দপ্তর এর সাথে জড়িত। তাই বড় আকারের জনসচেতনতা মূলক উদ্যোগ দরকার। বড় আকারের জনসচেতনতা মূলক উদ্যোগ।
আর আজকের সকাল দেখুন কি ঘটল।
সংকীর্ণ পথ, রাস্তার পাশে অপ্রসস্ত কাঁচামাটি আর ভারী পণ্যবাহী লরি। ঠিক এই আশঙ্কাই করেছি শেষ ৩টি পোস্ট এ। অনেক হয়েছে বন্ধ হোক ভারী যান চলাচল আন্দুল রোডে। শুধু ভাবুন আজ ষদি একটা কাজের দিন হত। যদি আজ নারায়ণা হাসপাতালে আউটডোর ভীড় থিকথিকে হত। স্কুল, কলেজ অফিস এর মানুষের ঢল থাকত পথে। কি একটা চরম দুর্ভোগ হত আজ।
আজ সকালে অফিসে আসার সময় কলেজ ঘাট ও নারায়ণা হাসপাতালের মাঝে লরি দুর্ঘটনা র ছবি। হতাহতের খবর জানি না।



বেসিকালি আমি (আমরা) খেলাধুলা, গান, সিনেমা নিয়ে কাজ করি। হার্ড কোর নিউজ করেছি শুরুর দিকে। আন্দুল রোডের পোস্ট টায় মনে হচ্ছিল বুঝি শুরুর সে দিন গুলো ফিরে এল। ৪২হাজারের বেশি মানুষের ইনভল্ভমেন্ট, ৫২৭টি শেয়ার, আপনারা সবাই এগিয়ে এসে এত কমেন্ট করলেন ভাবলাম বুঝি কিছু হচ্ছে। বিশেষত শেষ পোস্টটি করার পর যখন দেখলাম রাস্তায় অফিস টাইমে ট্রাকের আনাগোনা কমছে, ভাবলাম বুঝি e-governance এর চোখে পড়েছে আমাদের দুর্দশার রোজনামচা। কিন্তু আজকের ছবি গুলো দেখে মনে হল কোথায় কি! সকাল ১০.৩০ স্কুল, অফিস গামী মানুষের ভিড় তারমধ্যে দেখুন কেমন ঢুকে পড়েছে লরি, ট্রাক। বাস থামিয়ে বকুলতলার মোড়ে ৬১ নম্বর বাস ড্রাইভারের চা খাওয়াও আছে। তারই সাথে আছে অনেক পিছনে জানজটে আটকে থাকা অ্যাম্বুলেন্সের কান ফাটানো আর্তনাদ। টোটোরাও আছেন স্বমহিমায়। রাস্তার পাশে বালি স্টোন চিপ নামানো ট্রাক আছে। আছে সার সার বালি সিমেন্ট স্টোন চিপ বওয়া ঠেলাগাড়ি। কানফাটানো, নাকজ্বালানো ভ্যানো বা লাদেন গাড়ি তারাও আছে। পলিউশন কন্ট্রোল কে বুড়ো আঙুল দেখানো ট্যাক্সির কালোধোঁয়া আছে। হেলমেট বিহীন বাইক আছে। আছে তাদের তীব্র গতি আর কানে তালা লাগিয়ে দেওয়া বিকট আওয়াজ। সবই আছে, নেই শুধু কোথাও কোন নিয়ম....
এ প্রসঙ্গে একটা মজার কথা বলি। রাস্তায় অনেক মানুষ জন ঘুরে বেড়ান যাঁরা অল্প বিস্তর মানসিক ভাবে ঘেঁটে যাওয়া বা চাপগ্রস্ত। তাঁদের সাথে কথা বলতে আমার বেশ লাগে। সেদিন দানেশ শেখ লেনে দাঁড়িয়েছি তো ওই রকম একজন এলেন। "চা খাব ৫টাকা দিন"। দিলাম।
উনি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন জানি, নিশ্চিত ভাবে নিজের ঘোরে থাকেন। হতদরিদ্র পরনের কাপড়। বললাম কেমন চলছে কাজ? "আরে এপারে (নিজেকে দেখিয়ে) প্রশাসন ওপারে সব দুঃশাসন, ওগুলো পুলিশ না শো পিস"। অতি কষ্টে হাসি চাপলাম। কথা হচ্ছিল হঠাৎ একটা টোটো দুম করে কোনো ইণ্ডিকেটর না দিয়ে ইউ টার্ণ নিতে গিয়ে বাজারের ব্যাগ বাহী এক পথচারীর প্রায় ঘাড়ে উঠে পড়ে। উনি আবার সরব। "এগুলোর না আছে সেন্স না আছে লাইসেন্স "। সত্যি তো একটা মানুষ যাঁকে তথাকথিত সুস্থ আমরা তারকাটা, ছিটগ্রস্ত, পাগল বলে ভাবি তিনিও তাঁর অবিন্যস্ত মন মাথা জীবন দিয়ে পরিষ্কার বুঝতে পারছেন গলদের গোড়া টা কোথায়! পারছেন শুধু যাঁদের ওপর রয়েছে দায়ভার। 


No comments: