আজ একটা প্রেমের গল্প শোনাবো।
প্রেম মরতে শেখায়, প্রেম বাঁচতে শেখায়; প্রেম মৃত্যুর দুয়ার থেকে জীবন এর দোরগোড়ায় মানুষকে ঝুঁটি ধরে টেনে আনে। কিন্তু এই প্রেম জীবন নদীর ওপারে গিয়েও উজ্জ্বল হয়ে থাকে ভালোবাসার উত্তাপে। জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে এই প্রেম অমরত্ব লাভ করে। জেগে থাকে নিষ্পলক।
উত্তর পূর্বের রাজ্য মিজোরামে ছোট্ট শহর আইজল। শহরে গেলে প্রথমেই চোখে পড়বে পথে দোকানে, পাবলিক প্লেস গুলোতে অহরহ এডস এর প্রচার বার্তা। অবাধ যৌনতা, যথেচ্ছ নেশা ও মাদক এর ব্যবহার আর লাগামহীন জীবনযাত্রায় মিজো গড়পড়তা মানুষজনের মধ্যে এডস আর যক্ষা রোগ মহামারীর আকার নিয়েছে। গড় আয়ু ৫০ বছরে নেমে এসেছে গোটা জনগোষ্ঠীর। কাজেই সরকারি প্রচারে প্রতি ৫০ মিটারে পোস্টারিং, শারীরিক মেলামেশায় কন্ডোমের ব্যবহার এর। মনে হবে এ কোন জাহান্নামে এসে পড়লাম। ভিতর ভিতর একটা পঙ্কিল ভয় কাজ করবে। ঘিনঘিনে ভয়। রাত্রে ফাঁকা পথে একলা পুরুষ ও নিরাপদ নয় এখানে। রাত গভীর হলে রাত্রির নীরবতা খান খান করে সশব্দে ছুটে চলে দুচাকা চারচাকা যান। শহরের আলো আঁধারি গলি ঘুঁজিতে মিশকালো অন্ধকারে মিশে যায় দুটো শরীর। নেশাগ্রস্ত পা গুলো টলতে টলতে কোন আস্তানায় পৌঁছায় সে খবর আরক্ত চোখও রাখে না।
ব্যাভিচার এর এমন পীঠস্থানের পাঁকেই ফুটে উঠেছে প্রেমের শতদল।
Map of K V Paradise
আইজল শহর থেকে ৪৫মিনিটের দূরত্বে ব্যাংখঙ , ব্যাংখঙ এর কাছেই ধূর্তলাং পাহাড়ে যে কাউকে মিনি তাজমহল এর ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে কে ভি প্যারাডাইস।
কে ভি - খলহ্রিং আর ভার্তে র নামের আদ্যাক্ষর। খলহ্রিং এর স্ত্রী ভার্তে ২০০১ সালে একটি পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। স্বভাবতই ভেঙে পড়েন খলহ্রিং। স্ত্রীর হঠাৎ বিয়োগে এলোমেলো করে যাওয়া জীবন হতেই পারত আর পাঁচটা জীবনের মত। বিস্মৃতির আর স্বজন বিয়োগের বিরহে জীবন কাটিয়ে দিতেই পারতেন খলহ্রিং। কিন্তু সে পথে না হেঁটে অন্য রাস্তায় পা বাড়ালেন খলহ্রিং।
পাহাড়ের ঢালে
একটা জমি ছিল তার। সে জমি তে ভার্তে র স্মৃতিতে তৈরী করলেন এক সৌধ।
নীল আকাশের পটভূমিতে তিনতলা শ্বেতশুভ্র সৌধ। যেন জমে থাকা নয়নের জল।
চারিদিকে ফিসফিস করে কথা বলে হাওয়া রা। পায়ের কাছে নীল লাল সাদা হলুদ নাম না জানা ফুল। আর চোখ ঝলসে দেওয়া সাদা মিনার- কে ভি প্যারাডাইস। একটু উঁচুতে মূল সৌধ তে উঠতে হয়। প্রায় ৫০-৬০ টি সিঁড়ি। গোটা সৌধকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য পাইন গাছ। সিঁড়ি পার করে সাদা চাতালে ওঠার মুখে একজন বৃদ্ধ কেয়ারটেকার। প্রবেশ মূল্য নিলেন ১০ টাকা। চোখ ধাঁধানো সাদার ওপর তখন বিকেলের রোদ পড়েছে। মূল দরজা পেরিয়ে ঢুকলাম সৌধর নিচের তলায়।
ভার্তে র বিশাল একটি ছবি আর ফুলের সমারোহ ঘিরে আছে সমাধি।
ঘোরানো সিঁড়ি উঠে গেছে ২য় তলায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় একটি কাঁচের আলমারি। সার সার সাজানো আছে মহিলাদের জামাকাপড়। মিজো হরফ তর্জমা করে যা বুঝলাম সেগুলো ভার্তে র ব্যবহৃত পোশাক। সামনেই সেই অভিশপ্ত ট্রাডিশনাল মিজো ড্রেস যা পরে শেষ যাত্রায় সওয়ার
হয়েছিলেন ভার্তে। তারপর সার সার ভার্তে র পছন্দের পোশাক। মন ভারাক্রান্ত হয়ে আসে। একটা মানুষের অস্তিত্ব যেন ওই পোশাক গুলোর মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট। এখানেই যেন কোথাও আছে সে। কোথাও যেন গেছে সে, এখনই এসে খুলে দেবে এই কাঁচের আলমারি ,তুলে ধরবে এ সব প্রিয় পোশাক ,প্রিয় ব্যবহার্য জিনিস। দূর পাহাড়ে সূর্যের আলোর তেজ কমে আসে। পড়ন্ত বেলায় কে যেন বলে ,
"কৌন আয়েগা ? কোই নেহি আয়া হোগা !
সায়েদ হাওয়ানে মেরে দরওয়াজা হিলায়া হোগা ! "
এরপর ওপরের তলা। সিঁড়ি দিয়ে উঠে গম্বুজ এর মত অল্প আলোর ধ্যান কক্ষ। মনের দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, বিহ্বলতা, সব কিছুর ওপরে জেগে থাকেন যে সর্বশক্তিমান । তাঁর অস্তিত্ত্বের খোঁজে দু মিনিট বসলে কখন যেন আধ ঘন্টা কেটে যায়।
ভার্তে র সৌধ থেকে নেমে আসছি হঠাৎ নারী কণ্ঠের ফিসফিস, চাপা হাসি। সূর্যাস্তের লালিমা গোটা ভ্যালি জুড়ে। নাস্তিক মনেও হঠাৎ সন্দেহ এল !!! তবে কি ভার্তে ? ভুল ভাঙল ২য় তলায় এসে।
এক প্রেমিক যুগল অন্তরঙ্গ হয়ে বসে। এ তো আসলে ভার্তেই। এ তো আসলে খলহ্রিং এর স্বপ্ন। যে তাঁর প্রিয়তমা বেঁচে থাকবেন মৃত্যুর পরও।
ভাবতে অবাক লাগে এই গোটা কর্মকান্ড একটা মানুষ এর ব্যক্তিগত প্রয়াস। যে কর্মকান্ডের নেপথ্যে রয়েছে তাঁর প্রেয়সীর প্রতি অদম্য ভালোবাসা।
শরীরী প্রেম এর তাৎক্ষণিকতা, প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে বিশ্বাসহীনতা ,ঘরে ঘরে বিচ্ছেদ যখন রোজনামচায় পরিণত হয়েছে সেই সময়ে খলহ্রিং এর এই প্রেম কাহিনী যেন অন্য এক দিগন্ত খুলে দেয়।
কে ভি প্যারাডাইসের ভিডিও
KV PARADISE | MINI TAJMAHAL
If you like it comment below in the comment box and follow
Follow me in facebook twitter & YouTube
প্রেম মরতে শেখায়, প্রেম বাঁচতে শেখায়; প্রেম মৃত্যুর দুয়ার থেকে জীবন এর দোরগোড়ায় মানুষকে ঝুঁটি ধরে টেনে আনে। কিন্তু এই প্রেম জীবন নদীর ওপারে গিয়েও উজ্জ্বল হয়ে থাকে ভালোবাসার উত্তাপে। জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে এই প্রেম অমরত্ব লাভ করে। জেগে থাকে নিষ্পলক।
উত্তর পূর্বের রাজ্য মিজোরামে ছোট্ট শহর আইজল। শহরে গেলে প্রথমেই চোখে পড়বে পথে দোকানে, পাবলিক প্লেস গুলোতে অহরহ এডস এর প্রচার বার্তা। অবাধ যৌনতা, যথেচ্ছ নেশা ও মাদক এর ব্যবহার আর লাগামহীন জীবনযাত্রায় মিজো গড়পড়তা মানুষজনের মধ্যে এডস আর যক্ষা রোগ মহামারীর আকার নিয়েছে। গড় আয়ু ৫০ বছরে নেমে এসেছে গোটা জনগোষ্ঠীর। কাজেই সরকারি প্রচারে প্রতি ৫০ মিটারে পোস্টারিং, শারীরিক মেলামেশায় কন্ডোমের ব্যবহার এর। মনে হবে এ কোন জাহান্নামে এসে পড়লাম। ভিতর ভিতর একটা পঙ্কিল ভয় কাজ করবে। ঘিনঘিনে ভয়। রাত্রে ফাঁকা পথে একলা পুরুষ ও নিরাপদ নয় এখানে। রাত গভীর হলে রাত্রির নীরবতা খান খান করে সশব্দে ছুটে চলে দুচাকা চারচাকা যান। শহরের আলো আঁধারি গলি ঘুঁজিতে মিশকালো অন্ধকারে মিশে যায় দুটো শরীর। নেশাগ্রস্ত পা গুলো টলতে টলতে কোন আস্তানায় পৌঁছায় সে খবর আরক্ত চোখও রাখে না।
ব্যাভিচার এর এমন পীঠস্থানের পাঁকেই ফুটে উঠেছে প্রেমের শতদল।
Map of K V Paradise
আইজল শহর থেকে ৪৫মিনিটের দূরত্বে ব্যাংখঙ , ব্যাংখঙ এর কাছেই ধূর্তলাং পাহাড়ে যে কাউকে মিনি তাজমহল এর ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে কে ভি প্যারাডাইস।
কে ভি - খলহ্রিং আর ভার্তে র নামের আদ্যাক্ষর। খলহ্রিং এর স্ত্রী ভার্তে ২০০১ সালে একটি পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। স্বভাবতই ভেঙে পড়েন খলহ্রিং। স্ত্রীর হঠাৎ বিয়োগে এলোমেলো করে যাওয়া জীবন হতেই পারত আর পাঁচটা জীবনের মত। বিস্মৃতির আর স্বজন বিয়োগের বিরহে জীবন কাটিয়ে দিতেই পারতেন খলহ্রিং। কিন্তু সে পথে না হেঁটে অন্য রাস্তায় পা বাড়ালেন খলহ্রিং।
পাহাড়ের ঢালে
একটা জমি ছিল তার। সে জমি তে ভার্তে র স্মৃতিতে তৈরী করলেন এক সৌধ।
নীল আকাশের পটভূমিতে তিনতলা শ্বেতশুভ্র সৌধ। যেন জমে থাকা নয়নের জল।
চারিদিকে ফিসফিস করে কথা বলে হাওয়া রা। পায়ের কাছে নীল লাল সাদা হলুদ নাম না জানা ফুল। আর চোখ ঝলসে দেওয়া সাদা মিনার- কে ভি প্যারাডাইস। একটু উঁচুতে মূল সৌধ তে উঠতে হয়। প্রায় ৫০-৬০ টি সিঁড়ি। গোটা সৌধকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য পাইন গাছ। সিঁড়ি পার করে সাদা চাতালে ওঠার মুখে একজন বৃদ্ধ কেয়ারটেকার। প্রবেশ মূল্য নিলেন ১০ টাকা। চোখ ধাঁধানো সাদার ওপর তখন বিকেলের রোদ পড়েছে। মূল দরজা পেরিয়ে ঢুকলাম সৌধর নিচের তলায়।
ভার্তে র বিশাল একটি ছবি আর ফুলের সমারোহ ঘিরে আছে সমাধি।
ঘোরানো সিঁড়ি উঠে গেছে ২য় তলায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় একটি কাঁচের আলমারি। সার সার সাজানো আছে মহিলাদের জামাকাপড়। মিজো হরফ তর্জমা করে যা বুঝলাম সেগুলো ভার্তে র ব্যবহৃত পোশাক। সামনেই সেই অভিশপ্ত ট্রাডিশনাল মিজো ড্রেস যা পরে শেষ যাত্রায় সওয়ার
হয়েছিলেন ভার্তে। তারপর সার সার ভার্তে র পছন্দের পোশাক। মন ভারাক্রান্ত হয়ে আসে। একটা মানুষের অস্তিত্ব যেন ওই পোশাক গুলোর মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট। এখানেই যেন কোথাও আছে সে। কোথাও যেন গেছে সে, এখনই এসে খুলে দেবে এই কাঁচের আলমারি ,তুলে ধরবে এ সব প্রিয় পোশাক ,প্রিয় ব্যবহার্য জিনিস। দূর পাহাড়ে সূর্যের আলোর তেজ কমে আসে। পড়ন্ত বেলায় কে যেন বলে ,
"কৌন আয়েগা ? কোই নেহি আয়া হোগা !
সায়েদ হাওয়ানে মেরে দরওয়াজা হিলায়া হোগা ! "
এরপর ওপরের তলা। সিঁড়ি দিয়ে উঠে গম্বুজ এর মত অল্প আলোর ধ্যান কক্ষ। মনের দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, বিহ্বলতা, সব কিছুর ওপরে জেগে থাকেন যে সর্বশক্তিমান । তাঁর অস্তিত্ত্বের খোঁজে দু মিনিট বসলে কখন যেন আধ ঘন্টা কেটে যায়।
ভার্তে র সৌধ থেকে নেমে আসছি হঠাৎ নারী কণ্ঠের ফিসফিস, চাপা হাসি। সূর্যাস্তের লালিমা গোটা ভ্যালি জুড়ে। নাস্তিক মনেও হঠাৎ সন্দেহ এল !!! তবে কি ভার্তে ? ভুল ভাঙল ২য় তলায় এসে।
এক প্রেমিক যুগল অন্তরঙ্গ হয়ে বসে। এ তো আসলে ভার্তেই। এ তো আসলে খলহ্রিং এর স্বপ্ন। যে তাঁর প্রিয়তমা বেঁচে থাকবেন মৃত্যুর পরও।
ভাবতে অবাক লাগে এই গোটা কর্মকান্ড একটা মানুষ এর ব্যক্তিগত প্রয়াস। যে কর্মকান্ডের নেপথ্যে রয়েছে তাঁর প্রেয়সীর প্রতি অদম্য ভালোবাসা।
শরীরী প্রেম এর তাৎক্ষণিকতা, প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে বিশ্বাসহীনতা ,ঘরে ঘরে বিচ্ছেদ যখন রোজনামচায় পরিণত হয়েছে সেই সময়ে খলহ্রিং এর এই প্রেম কাহিনী যেন অন্য এক দিগন্ত খুলে দেয়।
কে ভি প্যারাডাইসের ভিডিও
KV PARADISE | MINI TAJMAHAL
If you like it comment below in the comment box and follow
Follow me in facebook twitter & YouTube
No comments:
Post a Comment