বাসু ট্র্যাভেল এর ড্রাইভার রা রাস্তাঘাট বেশ ভাল ই চিনত। ওদের ওপর এক্কেবারে ডিডি গেঞ্জি র মত ভরসা করা যেত। তখন ২০০১। মোবাইল ফোনের গণতান্ত্রিকতা তখনও অধরা, বিদ্যাসাগর সেতুর টোল অনেকটা আলগা, এফ এম রেডিও তখনও আসেনি, টোটো বলতে যান নয় বাউন্ডুলে বোঝানো হত তখন। অ্যাসাইনমেন্টে ভোরে বেরোতে হলে আর রাতে ফিরতে হলে পিক আপ ড্রপিং তখন অপরাধবোধ তৈরি করত না ওটা অধিকার ছিল। আমার নামের পাশে খোঁজ খবর এর অ্যসাইনমেন্ট খাতায় লেখা হত 'কার রিপোর্টিং অ্যাট ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক হসপিটাল'। ওটাই ছিল বাড়ি র ঠিকানা। প্রায় ৫ - ৬ বছর ওরমই চলেছে। অ্যাট ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক হসপিটালে আমি দিব্যি অ্যাট হোম হয়েছি। বাধ সাধল ৬ বছর পরে। বলে না খাল কেটে কুমির ডাকা! আমার ক্ষেত্রে সেটা হল পাত পেড়ে আমার ই এক সহকর্মীকে ডাকা। শাক দিয়ে মাছ আর ঢাকতে পারলাম না।
আমার সেই সহকর্মী যে ছুপা রুস্তম হয়ে চুপি চুপি এসে আমার এক গোপনকথা পাঁচকান করবে ভাবতেও পারি নি।
তখন নরেন্দ্র মোদী গুজরাত এর মুখ্যমন্ত্রী । অফিসের গুলতানি তে শুভেন্দুদা ঝাড়ল ব্রহ্মাস্ত্র।
বল তো নন্দন আর নরেন্দ্র মোদী মধ্যে মিল কোথায়? ন্যাকা শয়তান রা সুর করে বলল কোথায়? শুভেন্দু দা শুরু করল
- মোদি সি এম (চিফ মিনিস্টার) , নন্দন সি সি এম (চিফ ক্যামেরাম্যান)
আর কী মিল
নরেন্দ্র মোদীর অস্বস্তি গোধরা, নন্দন এর অস্বস্তি পোদরা। (আমার ঠিকানা উত্তর পোদরা)
হাটে ভেঙে গেল হাঁড়ি। চারদিকে হা হা হিহি হৌ হৌ হু হু।
যতই শেক্ষপীর বলুন না কেন 'নামে কী আসে যায়' । কিন্তু আমার সে দিন থেকে এই এক নামের জন্য সরে আম বেইজ্জতি শুরু হল। ঠিকানা য় জায়গার নাম আমার মান সম্মান কেড়ে নিল।
ছোট বেলায় একটা মজার খেলা খেলতাম আমরা। যে কোন ম্যাপ নিয়ে বসে তাতে যে কোন একটা জায়গার নাম দেখে নিয়ে উল্টো দিকের বন্ধুকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া কোথায় আছে সেই জায়গাটা। স্থানের নামের খোঁজে সে অন্বেষণ এর খেলা পরবর্তীকালে ভূগোলে সাহায্য করেছিল। কতশত নাম, বিচিত্র তাদের বানান মন মাথায় একএকটা ছবি এঁকে যেত।
আসলে সব জায়গার নামকরণের পিছনে থাকে দারুণ সব গল্প। আমেরিকার মিশিগানে হেল জনপদ তৈরি হয় জর্জ রিভেসের হাত ধরে। সেটা ১৮৩০। এরপর মিশিগান যখন স্টেটহুড পায় জর্জ রিভেস কে জানতে চাওয়া হয় কী হবে স্থানটির নাম? রিভেস বলেন, " I don't care you can name it hell for all I care" ঠিক একরকম গল্প রয়েছে আমাদের হাতের কাছে, এই বাংলায়। রেল লাইন পাতা হচ্ছে সাথে সাথে চলছে স্টেশনের নামকরণের কাজ। ব্রিটিশ ভারত। বাঙালি কেরানিকে নিয়ে ইউরোপিয়ান সাহেব চলেছেন রেলপথ তদারকিতে। সাথে সাথে হয়ে চলেছে স্টেশনের নামদান। সাহেব জিজ্ঞাসা করছেন কী নাম এ জায়গাটির? কেরানি বলছেন, ঝাপাটের ঢাল, পিচকুড়ির ঢাল। সাহেব সায় দিলে টপাটপ টাই বাবুর কথা টুকে নিচ্ছেন তিনি। এমন সময় এল একটি স্টেশন, কেরানি কর্তাকে শুধোলেন কী নাম হবে এ স্টেশনের? ঢালের ধাক্কায় বিরক্ত রেলকর্তা বললেন No Other Dhal কেরানি তাঁর প্রভুভক্তির প্রতি আস্থা অটুট রেখে নাম লিখলেন নোয়াদার ঢাল! কথায় কথায় হেল থেকে নোয়াদার ঢালে এসে গেলাম। ওই হেল এর কাছে স্বর্গ মানে হেভেনও আছে! হেভেন না থাকলে প্যারাডাইস আসবে কোথা থেকে? মিশিগানে প্যারাডাইস আর হেল ৪৭৩ কিলোমিটারের তফাতে।
নাম বা বদ নাম যাই খুঁজতে জান রেলওয়ের জুড়ি মেলা ভার। পৈতৃক কারণে রেলের ছেলে বলে বলছি না রেল সত্যিই পারিবারিক সম্পর্কগুলোকে ও সম্মান দিয়েছে স্টেশনের নামে।
রাজস্থানে BAP, Nana তো বিহারে Bettiah, Bhabua আবার তেলেঙ্গানার Bibinagar থেকে রাজস্থানের Sali , সম্পর্কের ঝমঝম ঝমঝম।
আচ্ছা হরিয়ানার Diwana কী ঝাড়খন্ডের Daru খেয়ে তেলেঙ্গানার Mahboob Nagar এ হন্যে হয়ে ঘোরে রাজস্থানের Rani র খোঁজে!! তবে কেন যে কাকু মাথায় ওড়না দেয় Orhania Chacha একমাত্র ভারতীয় রেল ই দিতে পারে এর উত্তর।মজার নামের ভান্ডার ভরা পৃথিবীর বৃহত্তম রেলপথ এর দুপাশের নাম ফলকে। এক নজরে দেখে নিন রেলের পশুপ্রেম। Kutta কর্ণাটক, Billi উত্তর প্রদেশ, Kala Bakra পঞ্জাব, Gadha গুজরাত, Suar উত্তর প্রদেশ, Bhainsa তেলেঙ্গানা।
রেল স্টেশনের নামকরন করতে ঝক্কিও কম নয় এই যেমন হাওড়া খড়্গপুর লাইনে একটি স্টেশনের অনুমোদন এল। কিন্তু নাম কী হবে? প্রস্তাবিত স্টেশনটির কাছাকাছি ৩টি গ্রাম পাকুড়িয়া, মুড়াইল ও নারায়ণ। তিন পক্ষই স্টেশনের নামফলকে নিজের গ্রামের নাম দাবি করল। মামলা গড়াল কোর্ট অবধি। অবশেষে দীর্ঘতম স্টেশনের নাম পেল পশ্চিমবঙ্গ। নারায়ণপাকুড়িয়ামুড়াইল।
জায়গার নামে একটা অঞ্চলের মেজাজটাও আঁচ করা যায়। মুর্শিদ কুলি খাঁর মুর্শিদাবাদে তাই অনায়াসে হাতেহাত ধরে থাকে চেইনপাড়া, হামদামপুর, আয়েশবাগ, মতিঝিল, নশিপুর, জিয়াগঞ্জ, লালবাগ।
যথন মানুষ নিজেদের কর্মকান্ডের ডালপালা বিস্তারে মহীরূহ হয়ে ওঠেন তখন বোধহয় গান্ধীজীর মত মনে হয় তাঁকে। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী র নামাঙ্কিত ৫৫টি রাজপথ রয়েছে আমাদের দেশে। ভারত ছাড়া বহির্বিশ্বে মহাত্মা গান্ধীর নামে রয়েছে ৬৬টি রাস্তা, যার মধ্যে নেদারল্যান্ডসেই আছে ২৮টি পথ। আসলে পথের দিশা দেখানো মানুষদের এটাই বোধহয় পরম পাওয়া, পথের সন্ধান দিতে দিতে নিজের অজান্তেই কখন যেন তাঁরাই পথ হয়ে ওঠেন। তাঁরা তারা হয়ে ওঠেন, ধ্রুবতারার মত জেগে থেকে পথভ্রষ্টকে চালিত করেন।
আর একজন হো চি মিন, একটা মানুষের নামে একটা রাষ্ট্রের রাজধানী! ভাবতেই গায়ে কাঁটা দেয়।
যেমন কাঁটা দেয় কিছু কিছু জায়গার নাম। অবশ্য ভক্তিভালবাসায় নয়, শিরদাঁড়া ঠান্ডা করা ভয়ে। Y2K র প্রথম বিহার নির্বাচন কভার করতে গিয়েছি। পাটনা থেকে চলেছি সিওয়ান। বাহুবলি বিধায়ক। বারুদের স্তুপ। নিজের চোখে দেখে এসেছি। কিম্বা এই বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে একএকটা স্থান শুধুমাত্র নির্বাচনী ও রাজনৈতিক কারনে টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে 'নাম' করেছে। তবে বহু প্রাণের মূল্যে অমন নাম না করলেই সেটা সভ্যতার ক্ষেত্রে ভাল হত।
বিপর্যয় থেকে তৈরি হয়েছে কত নাম। ১৭৪২ এ সাত খানা ডিঙি নৌকো উল্টে গেল! কালক্রমে ওল্টানো ডিঙি বর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে হল উল্টোডাঙা। আজকের শ্রীরামপুরের নাম মাহাত্ম্য নাকি রাম কৃপা হীন। এক ভিক্ষাপ্রার্থীর কাতর আকুতি Sir I Am Poor থেকেই নাকি এল শ্রীরামপুর। আচ্ছা পুর, তলা, গড় দিয়ে কত জায়গার নাম আছে ভেবে দেখেছেন!
নাম নিয়ে কথা বলতে বলতে মাথার ভিতরে কত নাম উড়ে বেড়াচ্ছে।পালামৌ, দলমা, ভীমবৈঠকা, কেঁচকি, শিওনি, কানহা, পেঞ্চ হয়ে ভিতরকণিকা, চুকচুকিয়া, মানস, বক্সা, গির, কাজিরাঙ্গা, মানস, রণথম্ভোর, সুন্দর আমার দেশের সুন্দরবন গুলো। সবুজ প্রকৃতি, সজীব বন্যপ্রাণী। ওদেরও নাম বলতে হবে। বিশেষ করে ওই নামগুলো চেনাতে হবে আমাদের আগামী প্রজন্মকে। নইলে যে বাঁচার উপায় নেই।
বাঁচার উপায় না থাকলে মানুষ যেমন পথ খোঁজে। আমিও তেমন খুঁজছিলাম। কেন আমার ঠিকানার নাম পোদরা? অনেক উপহাস, মুচকি হাসি, ঠাট্টা র গ্লানিক্লেদ ঠেলে ইতিহাস পেলাম।
অবিভক্ত বাংলার বীরত্বময় সে ইতিহাস। পোদ উপজাতি রা সুন্দরবনে প্রথম আবাদ করে। শিকার, নদীতে লুঠতরাজ ছিল তাদের জীবিকা নির্বাহের উপায়। ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় যতগুলো আঞ্চলিক শক্তি পোদরা ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম। তথ্যটা পেয়েই মন বলল মিলছে মিলছে। পূর্ণেন্দু পত্রী র কলকাতার ইতিহাসে পড়েছি বেতড় বা বেত্র তে বাঘ বেরোতে, কালিক্ষেত্র বা কালিঘাট অবধি ছিল সুন্দরবন। বাঘ আসত বলি প্রদত্ত পাঁঠার রক্তের ঘ্রাণে। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যে মানুষ গুলো প্রকৃতিকে হারিয়েছে তাদের কুর্নিশ করতেই তো আমার ঠিকানায় তাদের স্মৃতি। ইশ বড্ড ভুল হয়ে গেছে তাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে।
If you like it, comment below in the comment box and follow
Me in facebook , twitter & youtube
আমার সেই সহকর্মী যে ছুপা রুস্তম হয়ে চুপি চুপি এসে আমার এক গোপনকথা পাঁচকান করবে ভাবতেও পারি নি।
তখন নরেন্দ্র মোদী গুজরাত এর মুখ্যমন্ত্রী । অফিসের গুলতানি তে শুভেন্দুদা ঝাড়ল ব্রহ্মাস্ত্র।
বল তো নন্দন আর নরেন্দ্র মোদী মধ্যে মিল কোথায়? ন্যাকা শয়তান রা সুর করে বলল কোথায়? শুভেন্দু দা শুরু করল
- মোদি সি এম (চিফ মিনিস্টার) , নন্দন সি সি এম (চিফ ক্যামেরাম্যান)
আর কী মিল
নরেন্দ্র মোদীর অস্বস্তি গোধরা, নন্দন এর অস্বস্তি পোদরা। (আমার ঠিকানা উত্তর পোদরা)
হাটে ভেঙে গেল হাঁড়ি। চারদিকে হা হা হিহি হৌ হৌ হু হু।
যতই শেক্ষপীর বলুন না কেন 'নামে কী আসে যায়' । কিন্তু আমার সে দিন থেকে এই এক নামের জন্য সরে আম বেইজ্জতি শুরু হল। ঠিকানা য় জায়গার নাম আমার মান সম্মান কেড়ে নিল।
ছোট বেলায় একটা মজার খেলা খেলতাম আমরা। যে কোন ম্যাপ নিয়ে বসে তাতে যে কোন একটা জায়গার নাম দেখে নিয়ে উল্টো দিকের বন্ধুকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া কোথায় আছে সেই জায়গাটা। স্থানের নামের খোঁজে সে অন্বেষণ এর খেলা পরবর্তীকালে ভূগোলে সাহায্য করেছিল। কতশত নাম, বিচিত্র তাদের বানান মন মাথায় একএকটা ছবি এঁকে যেত।
আসলে সব জায়গার নামকরণের পিছনে থাকে দারুণ সব গল্প। আমেরিকার মিশিগানে হেল জনপদ তৈরি হয় জর্জ রিভেসের হাত ধরে। সেটা ১৮৩০। এরপর মিশিগান যখন স্টেটহুড পায় জর্জ রিভেস কে জানতে চাওয়া হয় কী হবে স্থানটির নাম? রিভেস বলেন, " I don't care you can name it hell for all I care" ঠিক একরকম গল্প রয়েছে আমাদের হাতের কাছে, এই বাংলায়। রেল লাইন পাতা হচ্ছে সাথে সাথে চলছে স্টেশনের নামকরণের কাজ। ব্রিটিশ ভারত। বাঙালি কেরানিকে নিয়ে ইউরোপিয়ান সাহেব চলেছেন রেলপথ তদারকিতে। সাথে সাথে হয়ে চলেছে স্টেশনের নামদান। সাহেব জিজ্ঞাসা করছেন কী নাম এ জায়গাটির? কেরানি বলছেন, ঝাপাটের ঢাল, পিচকুড়ির ঢাল। সাহেব সায় দিলে টপাটপ টাই বাবুর কথা টুকে নিচ্ছেন তিনি। এমন সময় এল একটি স্টেশন, কেরানি কর্তাকে শুধোলেন কী নাম হবে এ স্টেশনের? ঢালের ধাক্কায় বিরক্ত রেলকর্তা বললেন No Other Dhal কেরানি তাঁর প্রভুভক্তির প্রতি আস্থা অটুট রেখে নাম লিখলেন নোয়াদার ঢাল! কথায় কথায় হেল থেকে নোয়াদার ঢালে এসে গেলাম। ওই হেল এর কাছে স্বর্গ মানে হেভেনও আছে! হেভেন না থাকলে প্যারাডাইস আসবে কোথা থেকে? মিশিগানে প্যারাডাইস আর হেল ৪৭৩ কিলোমিটারের তফাতে।
নাম বা বদ নাম যাই খুঁজতে জান রেলওয়ের জুড়ি মেলা ভার। পৈতৃক কারণে রেলের ছেলে বলে বলছি না রেল সত্যিই পারিবারিক সম্পর্কগুলোকে ও সম্মান দিয়েছে স্টেশনের নামে।
রাজস্থানে BAP, Nana তো বিহারে Bettiah, Bhabua আবার তেলেঙ্গানার Bibinagar থেকে রাজস্থানের Sali , সম্পর্কের ঝমঝম ঝমঝম।
আচ্ছা হরিয়ানার Diwana কী ঝাড়খন্ডের Daru খেয়ে তেলেঙ্গানার Mahboob Nagar এ হন্যে হয়ে ঘোরে রাজস্থানের Rani র খোঁজে!! তবে কেন যে কাকু মাথায় ওড়না দেয় Orhania Chacha একমাত্র ভারতীয় রেল ই দিতে পারে এর উত্তর।মজার নামের ভান্ডার ভরা পৃথিবীর বৃহত্তম রেলপথ এর দুপাশের নাম ফলকে। এক নজরে দেখে নিন রেলের পশুপ্রেম। Kutta কর্ণাটক, Billi উত্তর প্রদেশ, Kala Bakra পঞ্জাব, Gadha গুজরাত, Suar উত্তর প্রদেশ, Bhainsa তেলেঙ্গানা।
রেল স্টেশনের নামকরন করতে ঝক্কিও কম নয় এই যেমন হাওড়া খড়্গপুর লাইনে একটি স্টেশনের অনুমোদন এল। কিন্তু নাম কী হবে? প্রস্তাবিত স্টেশনটির কাছাকাছি ৩টি গ্রাম পাকুড়িয়া, মুড়াইল ও নারায়ণ। তিন পক্ষই স্টেশনের নামফলকে নিজের গ্রামের নাম দাবি করল। মামলা গড়াল কোর্ট অবধি। অবশেষে দীর্ঘতম স্টেশনের নাম পেল পশ্চিমবঙ্গ। নারায়ণপাকুড়িয়ামুড়াইল।
জায়গার নামে একটা অঞ্চলের মেজাজটাও আঁচ করা যায়। মুর্শিদ কুলি খাঁর মুর্শিদাবাদে তাই অনায়াসে হাতেহাত ধরে থাকে চেইনপাড়া, হামদামপুর, আয়েশবাগ, মতিঝিল, নশিপুর, জিয়াগঞ্জ, লালবাগ।
যথন মানুষ নিজেদের কর্মকান্ডের ডালপালা বিস্তারে মহীরূহ হয়ে ওঠেন তখন বোধহয় গান্ধীজীর মত মনে হয় তাঁকে। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী র নামাঙ্কিত ৫৫টি রাজপথ রয়েছে আমাদের দেশে। ভারত ছাড়া বহির্বিশ্বে মহাত্মা গান্ধীর নামে রয়েছে ৬৬টি রাস্তা, যার মধ্যে নেদারল্যান্ডসেই আছে ২৮টি পথ। আসলে পথের দিশা দেখানো মানুষদের এটাই বোধহয় পরম পাওয়া, পথের সন্ধান দিতে দিতে নিজের অজান্তেই কখন যেন তাঁরাই পথ হয়ে ওঠেন। তাঁরা তারা হয়ে ওঠেন, ধ্রুবতারার মত জেগে থেকে পথভ্রষ্টকে চালিত করেন।
আর একজন হো চি মিন, একটা মানুষের নামে একটা রাষ্ট্রের রাজধানী! ভাবতেই গায়ে কাঁটা দেয়।
যেমন কাঁটা দেয় কিছু কিছু জায়গার নাম। অবশ্য ভক্তিভালবাসায় নয়, শিরদাঁড়া ঠান্ডা করা ভয়ে। Y2K র প্রথম বিহার নির্বাচন কভার করতে গিয়েছি। পাটনা থেকে চলেছি সিওয়ান। বাহুবলি বিধায়ক। বারুদের স্তুপ। নিজের চোখে দেখে এসেছি। কিম্বা এই বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে একএকটা স্থান শুধুমাত্র নির্বাচনী ও রাজনৈতিক কারনে টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে 'নাম' করেছে। তবে বহু প্রাণের মূল্যে অমন নাম না করলেই সেটা সভ্যতার ক্ষেত্রে ভাল হত।
বিপর্যয় থেকে তৈরি হয়েছে কত নাম। ১৭৪২ এ সাত খানা ডিঙি নৌকো উল্টে গেল! কালক্রমে ওল্টানো ডিঙি বর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে হল উল্টোডাঙা। আজকের শ্রীরামপুরের নাম মাহাত্ম্য নাকি রাম কৃপা হীন। এক ভিক্ষাপ্রার্থীর কাতর আকুতি Sir I Am Poor থেকেই নাকি এল শ্রীরামপুর। আচ্ছা পুর, তলা, গড় দিয়ে কত জায়গার নাম আছে ভেবে দেখেছেন!
নাম নিয়ে কথা বলতে বলতে মাথার ভিতরে কত নাম উড়ে বেড়াচ্ছে।পালামৌ, দলমা, ভীমবৈঠকা, কেঁচকি, শিওনি, কানহা, পেঞ্চ হয়ে ভিতরকণিকা, চুকচুকিয়া, মানস, বক্সা, গির, কাজিরাঙ্গা, মানস, রণথম্ভোর, সুন্দর আমার দেশের সুন্দরবন গুলো। সবুজ প্রকৃতি, সজীব বন্যপ্রাণী। ওদেরও নাম বলতে হবে। বিশেষ করে ওই নামগুলো চেনাতে হবে আমাদের আগামী প্রজন্মকে। নইলে যে বাঁচার উপায় নেই।
বাঁচার উপায় না থাকলে মানুষ যেমন পথ খোঁজে। আমিও তেমন খুঁজছিলাম। কেন আমার ঠিকানার নাম পোদরা? অনেক উপহাস, মুচকি হাসি, ঠাট্টা র গ্লানিক্লেদ ঠেলে ইতিহাস পেলাম।
অবিভক্ত বাংলার বীরত্বময় সে ইতিহাস। পোদ উপজাতি রা সুন্দরবনে প্রথম আবাদ করে। শিকার, নদীতে লুঠতরাজ ছিল তাদের জীবিকা নির্বাহের উপায়। ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় যতগুলো আঞ্চলিক শক্তি পোদরা ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম। তথ্যটা পেয়েই মন বলল মিলছে মিলছে। পূর্ণেন্দু পত্রী র কলকাতার ইতিহাসে পড়েছি বেতড় বা বেত্র তে বাঘ বেরোতে, কালিক্ষেত্র বা কালিঘাট অবধি ছিল সুন্দরবন। বাঘ আসত বলি প্রদত্ত পাঁঠার রক্তের ঘ্রাণে। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যে মানুষ গুলো প্রকৃতিকে হারিয়েছে তাদের কুর্নিশ করতেই তো আমার ঠিকানায় তাদের স্মৃতি। ইশ বড্ড ভুল হয়ে গেছে তাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে।
If you like it, comment below in the comment box and follow
Me in facebook , twitter & youtube
No comments:
Post a Comment