Thursday, March 1, 2018

দোলের নেশা । হোলির মাদকতা

 এগুলো গতকাল কলকাতার বড়বাজার এলাকার ছবি। দোলের আগের দিন , আকাশে বাতাসে নেশা নেশা ভাব। তা তো হবেই। আমি আর আমার স্ত্রী আমরা যে কোনো উৎসব এর সময় ক্যামেরা নিয়ে গন্তব্য হীন ভাবে বেরিয়ে পড়ি।  তেমনই গতকাল এর এই ট্রিপ। চারদিকে আবির গুলাল রং এর মাঝে এই দৃশ্য আমার চোখ টানছিলো।

হাহাকার এর এমন কোলাজ দেখিনি। গুঁতোগুঁতি করে, ধাক্কা মেরে এতো লোকজন কিসের জন্যে হন্যে ?
দূর থেকে দেখে অন্য দিকে এগোলাম।
ফুটপাথে সারসার দোকান। অবাঙালি পরিবার এর বাবা মা সন্তান রা  রাস্তার ওপর অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসেছে। গুলাল এর গন্ধে ম ম করছে গোটা চত্ত্বর।



একসময় লিখেছিলাম

"পিচকিরিতে প্রাণ ঢেলেছি
এগিয়ে এলো দোল
রাই কিশোরী ও জানেমন
বিনোদবেনি  খোল"                     
                                                             চতুর্দিকে রঙের রায়ট। হাজারো চোখধাঁধানো রং এর পিচকিরি। বাজারের থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে বিক্রি হচ্ছে সব কিছু। অনেক রকমের পিচকিরি।  কোনটা চিরাচরিত  পিস্টন, কোনটা আধুনিক প্লাষ্টিক এর। এই যেমন এই দোকানটার দুইতলা জোড়া শোকেসে সাজানো রয়েছে শুধুই পিচকিরি।















অনেক রং। কোনটা বাঁদুরে কোনটা ভেষজ। কোনটা লাল কোনটা বেগুনি , কোনটা সবুজ কোনটা নীল। রঙের স্থায়ীত্ব অনুযায়ী দাম।

 পাইকারি ছাড়াও রয়েছে খুচরো ব্যবসায়ী রা। রং কেনার আগে টেস্ট করে নেওয়ার সুযোগ দিতে দিতে ওদের দোল শুরু হয়েছে সাততাড়াতাড়ি। রং থেকে বাঁচার জন্য রয়েছে ডিজাইনার টুপি স্কাল, চুল। রয়েছে মুখোশ বা মাস্কও।
 
রঙ খেলার এতো আয়োজনের মধ্যে প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো ওই প্রথম ছবিটার। ওটা কিসের দোকান ? কোলাহল কলরব এর মাঝে একটা ঘোর কাজ করছিলো। ক্যানিং স্ট্রিট আর তার আশেপাশে মহাত্মা গান্ধী রোডের গলিগুলোতে এই দু এক দিন অন্য সব ব্যবসা মোটামুটি বন্ধ। সব ই রঙের দখলে।






এতকিছুর মাঝেও আবার সেই দৃশ্যটা মনে পড়ে গেল ওই দোকান তা কিসের। ছবি বলছিল চেনা সুরাগৃহ কি ওটা ? মগজ বলছিলো মনে হয় না। মনমাথার দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে ভিড় ঠেলে এগিয়ে গেলাম। 

বড়বাজারের অতি পরিচিত প্রতাপমল গোবিন্দরাম গুলাল স্টোর।  ১৯০০ সালে স্থাপিত। শতবর্ষ প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যায় ভেষজ গুলাল। যে গুলালের বিশেষত্ত্বের জন্য দাম ও বাজারে চলতি গুলালের চেয়ে অনেকটাই বেশি। কতটা বেশি ?
গোলাপি গুলাল / আবির      ২০ গ্রাম  - ৬০   টাকা 
                                             ৫০ গ্রাম  - ১৩০ টাকা 
                                           ১০০ গ্রাম  - ২৩০ টাকা 

অন্য রঙের গুলাল / আবির   ২০ গ্রাম - ৫০   টাকা 
                                               ৫০ গ্রাম - ১০০ টাকা 
                                             ১০০ গ্রাম - ১৫০ টাকা 

এত দাম তারপরেও এত চাহিদা সুতরাং আবিরের গুণমানের সম্বন্ধে ধারণা স্পষ্ট হল। সত্যি শুধুমাত্র মাদক এর নেশাই যে প্রকৃত নেশা নয় ! কেউ যেমন রাবড়ির নেশা করতে পছন্দ করেন তেমনই অনেকেই আবার আবির গুলাল এর নেশা করতেও পছন্দ করেন। আর এই নেশার জন্য অপেক্ষা পুরো একটা বছরের। 

সকলকে রঙিন শুভেচ্ছা। দোল হোলি ভাল কাটুক। Wrong নয় রঙ On হোক সব্বার জীবনে। 



No comments: