Sunday, April 22, 2018

আর্থ ডে র ছুতোয় আজ শোনাব প্লাষ্টিক এর কথা


জ ধরণী the boss !! আসলে আজ ধরণী দিবস কিন্তু মজা করতে ইচ্ছে হলে এভাবেও বলা যায়। মানুষ ছাড়া বসিং আর কেই বা দেখতে পারে এই জগতে ! আগেও বলেছি এই ব্লগে আবার বলছি আজ। আর্থ ডে র ছুতোয়। আজ শোনাব প্লাষ্টিক এর কথা। যে প্রজাতির বিছানার তোষকের তলায় ক্যারি ব্যাগ আর খবরের কাগজ শায়িত থাকে তাকেই বাঙালি বলে।  আমার মা ও এর ব্যতিক্রম নয়। বাজারের সব্জি মাছ মাংসের চেয়ে প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগ তাঁর এত প্রিয় যে তাঁকে ক্ষেপিয়ে প্লাষ্টিক গণ আর ক্যারিব্যাগ রাশি বলি আমরা আড়ালে আবডালে। আসলে আমরা সবাই বোধহয় এমনই। শোর, গ্রামে ,রাস্তায় ,সমুদ্রতটে , মরুভূমিতে , দূরবর্তী পাহাড় বা দ্বীপে একটা জিনিস আমাদের জীবনযাত্রায় কমন- প্লাষ্টিক। পরিবেশ নোংরা করার সবচেয়ে সহজ এবং ভয়ঙ্কর উপাদান হল প্লাষ্টিক। প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহারে গোল্লায় যেতে বসেছে আমাদের এই গোলকটি। এই গ্রহটি। একমাত্র যেখানে প্রাণ বিরাজ করে। আপনি হয়ত বলবেন প্লাষ্টিক কি সত্যিই এত বড় ভয় ? আমাদের জীবনযাত্রাকে এত সুবিধা দেয় , জল থেকে বাঁচায় , জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে এত সাহায্য করে যে তা কি করে এতটা মারাত্মক হতে পারে।  আমাদের আসবাবপত্রে , ইমারতি দ্রব্যে , গাড়িতে, বাড়িতে , স্কুলে, অফিসে , ইলেক্ট্রনিক্সে , চিকিৎসায় সর্বত্র সবজায়গায় বিদ্যমান প্লাষ্টিক। এ তো আমাদের পরম আত্মীয়। সকালে ব্রাশ করা থেকে শুরু করে রাত্রে শুতে যাওয়া পর্যন্ত প্লাষ্টিক , পলিমার ,পলিথিন ছাড়া জীবন তো অচল ! তাহলে ধৈর্য্য ধরে এই লেখা টা পড়ুন।
১৯০৭এ প্লাস্টিকের আবিষ্কার সভ্যতার এক যুগান্তকারী ঘটনা। তারপরই প্লাস্টিকের জিনিসপত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে উঠল। তারপর বহুবছর ধরে প্লাষ্টিক, পলিথিনের মোহে আমরা বুঁদ হয়ে রইলাম। আমার পৃথিবী পলিথিনে মলিন করে Go Green এর গোঁয়ার্তুমি স্ট্যাটাস সিম্বল হল। আর আমরা বোঝার চেষ্টাই করলাম না পশুপাখির আর মানুষের শরীরে , প্রকৃতির ভারসাম্যে , জলবায়ুতে কোথায় কোথায় কী কী অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল প্লাস্টিকের হাত ধরে। তেল আর প্রাকৃতিক গ্যাস তৈরির বাইপ্রোডাক্ট হল প্লাষ্টিক। পরিবেশে বিলীন হয় না এমন কিছু হাইড্রোকার্বন যৌগ যার সবচেয়ে বড় মারণ ক্ষমতাই হল অবিনাশী হওয়া। যেন রক্তবীজের বংশ। একফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়লেই তার থেকে হাজার হাজার রাক্ষস তৈরি হবে। আর এক্ষেত্রে জলে প্লাষ্টিক মিশলেই বেগতিক। সে প্রসঙ্গে আসছি পরে। তার আগে দেখে নি সরাসরি কিভাবে প্লাষ্টিক আমাদের মানবদেহের  ক্ষতি করছে।

প্লাষ্টিক আর আপনি
দশকের পর দশক বিলিয়ন ট্রিলিয়ন গ্যালন তেল ও প্লাষ্টিক উৎপাদনের পর টনক নড়ল আমাদের।বুঝলাম আমরা কী মারাত্মক ফল এর। ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তখন দাপাদাপি করছে আমার ড্রয়িং রুমে , আপনার কিচেনে , ওনার ফ্রিজে। মাথাব্যথার বিষয় , বিড়ম্বনার বার্তা ততক্ষনে বয়ে এনেছে প্লাষ্টিক দূষণ। খাবার রাখার পাত্রে  আর পানীয় রাখার বোতলের থেকে ছড়িয়ে পড়ছে অত্যন্ত ক্ষতিকর সব বিষ যা এলোমেলো করে দিতে পারে মানব শরীরের রসায়ন। ঘেঁটে দিতে পারে ক্রোমোজোমের নামতার প্যাঁচ , বিচ্ছিরি প্রভাব ফেলতে পারে জননতনতন্ত্রের জটিলতায়। পারে কেন পারছে। প্লাস্টিকের প্রভাবে শুধু খাবার আর পানীয় বোতল, কাপ, গ্লাসে মেশা ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে বাড়ছে  অল্প বয়সে ডায়াবেটিস , মস্তিস্ক ও স্নায়ুরোগ , কার্ডিওভাসকুলার ক্ষতি , ওবেসিটি , আর্লি পিউবার্টির মত শারীরবৃত্তীয় দুর্ঘটনা।  এমনকি ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতাও বাড়াচ্ছে ওই প্লাষ্টিক , তাদের কুপ্রভাবে শরীরে কেমোথেরাপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতাও জমিনে যাচ্ছে। কিছু প্লাস্টিকে আবার থাকে  DEHP প্যাথালেট আর কেমিক্যাল BPA ওই ধরণের প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার যদি রেখে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করা হয় আর সেই রাসায়নিক সংক্রমিত খাবার যদি কোনো শিশু খায় তবে তার মানসিক ও দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে , শুধু তাই নয় হতে পারে তার হরমোনাল আর রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেমের গড়বড়ও। এবার কি একটু নিজের কাবার্ড খুলে কাচের বাসন গুলো ঝুল ঝেড়ে বের করবেন ?

প্লাষ্টিক আর পরিবেশ 
প্লাস্টিকের মত পরিবেশ নোংরা করার জুড়ি মেলা ভার। )তাই হয়তো আপনি ভাবতে পারেন নালা , নর্দমার মুখে জমে গিয়ে ব্লকেজ করে বানভাসি করা প্লাস্টিকের দূষণ চরিত্র। অরে দাঁড়ান দাঁড়ান। এখানেই শেষ নয় ক্ষতির খতিয়ান। চলুন দেখি কিভাবে জন্মায় প্লাস্টিক ? রিফাইন্ড গ্যাসোলিন , কেরোসিন , পেট্রল বা ডিজেলের মত প্লাস্টিকও একটা পেট্রোলিয়াম। তাই ড্রিল করে তৈলকূপ থেকে তেল বের করা থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে সেই তেল কে প্লাস্টিক পর্যন্ত যেতে যে সব প্রক্রিয়াকরণ চলে তাতে পরিবেশের বায়ুমণ্ডলে মেশে কার্বন মনোক্সাইড , হাইড্রোজেন সালফাইড , ওজন , বেঞ্জিন  আর মিথেন। এই গ্যাস গুলির মধ্যে মিথেনের গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ানোর ক্ষমতা কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও বেশি। একটা হিসেবে দিই পেট ( PET) হল পলিথিলিন টেরেপথ্যালেট (Polyethylene Terephthalate ) যা থেকে প্লাস্টিকের বোতল তৈরী হয়।  এই পেট এর প্রতি এক আউন্স তৈরি করতে গিয়ে বাতাসে মেশে ৫আউন্স  কার্বন ডাই অক্সাইড। বুঝুন কান্ড ! কী মারাত্মক ঝঞ্ঝাটের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের ভাগের মা প্রকৃতি , মা পৃথিবী। আগের কারণ গুলো ঘটনা গুলো একটু দূরবর্তী।  কিন্তু এটা তো একেবারে "ক্লিয়ার হ্যায় " তুফানি ঠান্ডা pet বোতলে ভরে সর উঠাকে পিও বলতে বলতে কতটা যে সর ঝুঁকিয়ে ফেলেছি আমরা। আমাদের নেহাত সখের জীবনযাত্রার খেসারত দিচ্ছে বায়ুমণ্ডল , বিষ বায়ু বুকে নিয়ে পাল্টে ফেলছে ক্লাইমেট। চলুন তো অনেক হয়েছে।  এবার সবাই অঙ্গীকার করি প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করাটা অভ্যাসে পরিণত করব। যুদ্ধং দেহি ভাবে বলি End Plastic Pollution

মহাসাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের ওজন বাড়ছে 
চমকে যাবেন না বিজ্ঞানীদের মত ২০৫০এ সারা পৃথিবীর সব মহাসাগরে ভাসমান প্লাস্টিকের মোট ওজন যা হবে তত ওজনের মাছ থাকবে না সাগরজলে। ইতিমধ্যে পৃথিবীর তিনভাগ জলে তৈরী হয়েছে ৫টি গার্বেজ প্যাচ। ক্যালিফোর্নিয়া আর হাওয়াই দ্বীপের মাঝে , আটলান্টিক আর ভারত মহাসাগরে তৈরী হয়েছে এমনি সব ভাসমান জঞ্জালের প্যাচ। তবে এর মধ্যে GPGP বা গ্রেট প্যাসিফিক গার্বেজ প্যাচ এর কথা আপনারা যাঁরা জল দিবসের ব্লগটি পড়েছেন জানেন। তো সমুদ্রের জলে এই ভাসমান প্লাস্টিক জলের ধাক্কা আর রোদের তাপে ভাঙতে থাকে।  ভেঙে ছোট ছোট টুকরোয় পরিণত হয়। সামুদ্রিক জীবজন্তুর মস্তিস্ক মানুষের মত বদমাইসিতে ভরপুর না। ওরা খাদ্যভ্রমে প্লাস্টিকের টুকরো খেয়ে ফেলে। প্লাষ্টিক তো হজম হওয়ার নয়। তারফলে যা হওয়ার তাই হয়। প্লাস্টিক জমে থাকে পাকস্থলী জুড়ে।  ওই জীবটির খাদ্যগ্রহণ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে মৃত্যুর অপেক্ষা করে প্রাণীটি। নয়তো মমির মত শুকিয়ে যায়। এদিকে পাখিদের অবস্থা আরও সঙ্গিন। মাছ ধরার সুতো , জঞ্জাল প্লাষ্টিক ব্যাগে জড়িয়ে মৃত্যু হয় বহু পাখির।সামুদ্রিক কচ্ছপরা প্লাস্টিক ব্যাগকে জেলিফিস ভেবে খেতে গিয়ে কাল ডেকে আনে। এ দৃশ্য ডকুমেন্টারি চ্যানেল গুলোয় দেখে দেখে কতকটা গা সওয়া হয়ে গেছে যেন আমাদের। সামুদ্রিক মাছ যদি প্লাস্টিক খেয়ে ফেলে তাদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।  আর কালক্রমে ওই প্লাস্টিক ভাঙতে ভাঙতে পরিণত হয় মাইক্রোপ্লাস্টিকে। মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা রক্তে প্রবেশ করে। তারপর সেই মাছ যে প্রাণী খায় তার দেহেও অনুপ্রবেশ ঘটে মাইক্রোপ্লাস্টিকের। টক্সিন ক্ষমতাধারী এই অনু প্লাস্টিক নিঃশব্দে ক্ষতি চালায়।  
মাইক্রোপ্লাস্টিক
দীর্ঘ দিন জলে বা সূর্যের আলোয় বা দুটিতেই যদি পরে থাকে সেক্ষেত্রে সেই কঠিন প্লাষ্টিক ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়। জলজ প্রাণীর খাদ্যের মাধ্যমে সেই মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে প্রাণীর রক্তে। এভাবে আমূল বদলে যায় ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য। এছাড়াও রয়েছে মাইক্রোবিড যা ব্যবহৃত হয় টুথপেস্ট , ফেস ওয়াশ , সাবান , শাওয়ার জেল আর কাপড় কাচার ডিটার্জেন্ট এ। এগুলি আসলে পলিথিলিন প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র রূপ। এছাড়া আমাদের ব্যবহার্য কাপড় যা সিন্থেটিক পলিয়েস্টার , এক্রাইলিক , নাইলন দিয়ে তৈরী সেগুলি ধোয়ার সময় ওই মাইক্রোবিডস এসে মেশে যদি নালা খালের জলে। এর  ফলেও জলে বাড়ে প্লাষ্টিক দূষণ। সরকারি সংস্থাগুলি যে জল পরিশ্রুতকরণের পদ্ধতি অবলম্বন করে তাতে ৫মিমি র কম মাইক্রোপ্লাস্টিক গুলি সরাসরি সাগরে বা নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিবিসির একটি রিপোর্ট অনুযায়ী
৯.১ বিলিয়ন মেট্রিক টন  রিসাইকেল্ড প্লাস্টিক তৈরি হয়েছে এপর্যন্ত যার জন্য ৬.৯ বিলিয়ন টন জঞ্জাল তৈরি হয়েছে। তার ৯% শুধু রিসাইকেল করা হয়েছে। আর ১২% ধ্বংস করা হয়েছে। বাকি ৭৯% মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বা সরাসরি মাটিতে জঞ্জাল হিসেবে পরে আছে।
এই বিশাল পরিমান প্লাস্টিক বর্জ্যর বেশিরভাগটাই আসে প্যাকেজিং শিল্প থেকে। ২০১৫ এ মোট প্লাস্টিক উৎপাদনের ৪২% লেগেছে প্যাকেজিং আর ৫২% প্লাস্টিক স্রেফ ফেলে দেওয়া হয়েছে। 
তবে কি কিছুই করার নেই 
একনজরে দেখে নিন আপনি কি করতে পারেন ?
১) যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলবেন না।  তাতে মাইক্রোপ্লাস্টিক হওয়া এড়ানো যাবে।
২) পুকুর , নদি ,নালা বা অনত্র যেখানে প্লাস্টিক দেখবেন সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে। ফেলুন
৩) এলাকায় প্লাস্টিক পরিষ্কার অভিযান আয়োজন করুন , জনমত তৈরী করুন। 
৪) মাইক্রোবিডস বিহীন প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ইন্টারনেটে খোঁজ নিন কিসে কিসে মাইক্রোবিডস আছে। 
৫) যে সব কাপড়এ মাইক্রোফাইবার আছে তার ব্যবহার ও পরিষ্কারের ব্যাপারে সচেতন হন। 
৬) প্রাকৃতিক ফাইবার যুক্ত জামাকাপড় ব্যবহার করুন। 


Reduce
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমান। চিন্তা ভাবনা করুন কিভাবে নিজের জীবন থেকে প্লাস্টিককে বিযুক্ত করবেন।  হয়তো প্লাস্টিকের বোতলের বদলে কাচ বা তামার বোতল ব্যবহার করতে পারেন জল রাখার কাজে।  মাটির কুঁজোও দারুন। কিন্তু প্লাস্টিক নৈব নৈব চ। প্লাস্টিকের কিছু কিনতে গেলে দুবার ভাবুন সেটা কি আপনার সত্যিই দরকার। তথাকথিত মিনারেল ওয়াটার আসলে বেশি মাত্রায় ক্লোরিন দেওয়া জল।  বাড়ি থেকে ফিল্টার করা জল ওয়াটার বটলে ক্যারি করুন। প্লাস্টিকের বোতলের কেনা জলের থেকে ওটা অনেক নিরাপদ আর নিখরচার। ডাবের জল বা কোল্ড ড্রিঙ্ক খেতে কি সত্যিই স্ট্র এর প্রয়োজন আছে ? অনুষ্ঠান বাড়িতে কলাপাতা , মাটির গ্লাস আজও কিন্তু লুকে হিট ,স্বাস্থ্যে ফিট। 

Refuse
বাজারে করতে ব্যাগ নিয়ে জান। দোকানদার ক্যারিব্যাগে জিনিস দিতে চাইলে তাকে বারণ করুন। পুরোনো সুঅভ্যাসে ফিরুন।  প্লাস্টিকের থালা , গ্লাস , বাটি র ব্যবহার বর্জন করুন। বেশি সময় নিয়ে বাজার করুন।  মলের প্যাকেজড জিনিস না কিনে বাজার ঘুরে প্লাস্টিক প্যাক বিহীন জিনিস কিনুন। স্যাসে প্যাক না কিনে বড় প্যাক কিনুন।  সাশ্রয় ও হল পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হল না। রেস্টুরেন্ট , বাজার মল সব জায়গায় বিক্রেতা প্লাস্টিক দিতে এলে তাকে ব্যারন করুন , সাথে সাথে জিজ্ঞেস করুন এই প্যাক কিনতে তাঁর খরচ হয় কি না ? তাকে বোঝান আপনি তাঁর খরচ বাঁচাচ্ছেন। প্লাস্টিক দিয়ে তৈরী করা এই বাজার আসলে সত্য না।  আধুনিক প্রযুক্তি প্লাস্টিক বিহীন প্যাকেজিং এনেছে।  তাদের আস্তে দিন।  দেখুন বাংলাদেশে পাট দিয়ে তৈরি এই প্যাকেজিং। হুবহু প্লাস্টিকের মত দেখতে সোনালী ব্যাগ।  এর বিশেস্বত্ত্ব হল মাটিতে সম্পূর্ণ মিশে যায় এই ব্যাগ।



ছবি সৌজন্য : প্রথম আলো
Reuse 
পুরানো জামাকাপড় ফেলে না দিয়ে পরিষ্কার করে যাদের প্রয়োজন সে রকম মানুষদের দিন। গ্রোসারি র জন্য আলাদা ক্যানভাসের ব্যাগ রাখুন যাতে প্লাস্টিকের ব্যাগের প্রয়োজনও না পরে আর ওই ব্যাগটি বারবার ব্যবহার করা যায়। প্লাস্টিকের বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে নানান রকম জিনিসপত্র তৈরী হচ্ছে।  বোতল দিয়েই শুধু কত কি করা যায় দেখুন।





Recycle
রাতারাতি কিছুই হয়ে যাবে না।  পরিকল্পিত ভাবে প্লাস্টিকের রিসাইকেলই একমাত্র উপায় প্লাস্টিকের দূষণের হাত থেকে বাঁচার। রিসাইকেল এর বিষয়ে জানুন আর অন্যকে জানান। আপনার প্লাস্টিক চিনুন। দেখবেন যে কোন প্লাস্টিক প্রোডাক্টের গায়ে রিসাইকেলের লোগোর মাঝে ১,২,৩,৪, এরকম সংখ্যা দেওয়া থাকে। সেই সংখ্যা গুলোর মানে জানুন।
১) PET Polyethylene terephthalate ব্যবহৃত হয় সফট ড্রিঙ্কস বোতল , পিনাট বাটার জার এ। রিসাইকেল করে তৈরী হয় দড়ি , কার্পেট , স্লিপিং ব্যাগ , বালিশ।
২) HDPE (High-density polyethylene) মাখন এর কৌটো , ডিটারজেন্ট এর বোতল , মোটর অয়েলের বোতল এ। রিসাইকেল করে তৈরী হয় ফুলদানি ,ট্রাফিক ব্যারিয়ার কোন।
৩)  PVC (Polyvinyl chloride) শ্যাম্পু বোতল , ভোজ্য তেলের বোতল , ফাস্ট ফুড এর সার্ভিসে।
রিসাইকেল করে তৈরী হয় ড্রেনেজ আর সেচের পাইপ।
৪)LDPE (Low-density polyethylene) ক্যারি ব্যাগ , পাউরুটির ব্যাগ।
৫)  PP (Polypropylene) PP বোতলের ছিপি , স্ট্র , দইয়ের কন্টেনার। রিসাইকেল করে তৈরী হয় গাড়ির ব্যাটারি কেস , প্লাষ্টিক লাম্বার।
৬) PS (Polystyrene) গরম পানীয়র কাপ , প্যাকেজিং মেটেরিয়াল। রিসাইকেল করে তৈরী হয় ক্যাসেট বক্স , ফুলদানি ,প্লাষ্টিক লাম্বার।
৭)OTHER সব রকম প্লাস্টিক এর মিশ্রণ। মাইক্রোওয়েভ পাত্র , স্কুইজ করা যায় এমন পাত্র।  এটা রিসাইকেল হয় না।  



Tuesday, April 3, 2018

অটিজম কোন প্রতিবন্ধকতা নয় বরং অন্যভাবে চিন্তাভাবনা করার দারুন অস্ত্র | World Autism Day | #LightUpBlue


একটা গাছ ,তিনটে ইঁদুর ,সাতটা ঘড়ি , বাউল গানের আসর ,একটা হাতি এই ছবি গুলো শৈশব আর কৈশোর মনের কল্পনা। একটু অন্য রকম একটু সাধারণ চিন্তা ভাবনার চেয়ে সরে বাইরে গিয়ে। এগুলো এঁকেছে আদিত্য গাঙ্গুলি , উজ্জীবন রায় , অভিষেক সরকার , বর্ষা দেব , ঈশান গুহ , শুভ্রনীল দাস রা। শুভ্রনীলের কথা আমার আগের Blog এ বলেছি এরাও শুভ্রনীলের মত অনেক পাহাড় প্রমান অসুবিধে নিয়ে বাঁচে। আমাদের সাধারণ করে দেওয়া অভ্যাস , জেনারালাইজ করার জন্যে আমরা বলে থাকি ' প্রতিবন্ধকতা ' । কিন্ত ওদের একনিষ্ঠ প্রয়াস আজ হার মানিয়েছে ওই সাধারণ করে দেওয়া শব্দটাকে। সব বাধা , কষ্ট , নিজেকে ব্যক্ত করতে না পারার যন্ত্রনা , অনবরত মাথার ভেতর জ্বলে ওঠা হাজার ঝাড়বাতির আলোকে সামলে ওরা হয়ে উঠেছে অ-সাধারণ। প্রতিবন্ধকতা নামক অপমানটাকে নিজেদের গা থেকে ঝেড়ে ফেলে ওরা হয়ে উঠেছে একেকটা নয়নতারা।


অভিষেক কোন এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে পারে না। আনন্দের উচ্ছাসে বারবার কুঁচকে যাই অভিষেক সরকারের মুখ। মাথা নুয়ে এসে গলার সাথে লেগে যায়। সামাজিক জমায়েতে গুটিয়ে যায় অভিষেক সরকার কিন্ত ওর ছবি বলে অন্য কথা। যেন অন্য এক মানুষ বসত করে অভিষেকের মনের ঘরে যে একমনে ছবি আঁকে। যে ছবি ক্যানভাসের দ্বিমাত্রিকতা ছাড়িয়ে কখন যেন বহুমাত্রিকতায় পৌঁছে যায়।
অভিষেক সরকার 



অভিষেকের ছবি
বর্ষা দেবের ছবির বিশেষত্বই হল বহু র ভিতর একের খোঁজ চালিয়ে সেই অনেক কে এক করে দেওয়া। যেন আমাদের মাঝে হাজারো ভেদাভেদ থাকলেও আমরা আসলে একই।
বর্ষার ছবির পরিমিতি বা শিল্পগুণ ছাড়াও কতটা নিখুঁত সেটা পরীক্ষা করতে হলে উপরের ছবি তা দেখুন। বাউলদের গলায় হারের পুঁতির সংখ্যা প্রায় সব ক্ষেত্রেই ১৭ , কয়েকটায় ১৮। ভাবতে অবাক লাগে এত ধৈর্য ও পায় কোথায়। আসলে ওটাই ওর অসুবিধে , অস্বস্তি। রিপিটেটিভ বিহেবিয়ার। ওদের কষ্ট, ওদের জিন ও পরিবেশ গত অসুবিধের কথা না হয় পরে দেখব পরে ভাবব এখন বর্ষার ছবি দেখি।
বর্ষা দেব 






পুনরাবৃত্তি বর্ষার ছবির বৈশিষ্ঠ কিন্ত শিশু শিল্পী মনের পরিস্ফুটনে সেই পুনরাবৃত্তি কখনোই একঘেঁয়েমি আনে না। বরং একটা বিস্তারকে দেখায়। এই বুঝি খেলনাঝুড়ি উপুড় হবে বেরিয়ে আসবে বর্ষার সিস্টার্স ইন ল , জুস ড্রিঙ্কার্স , বাউল এন্ড হিস্ ওয়াইফ, দেবীদের রূপসব  বা অন্য চরিত্ররা। ওরা যেন সব পুতুল। যেন গুগাবাবার ড্রয়িং খাতার স্কেচ সব। মুখ গম্ভীর একই রকম কিন্ত কোথাও যেন সবাই মিলে জগতের আনন্দযজ্ঞে নিমন্ত্রণ জানাচ্ছে। 

ছোট্ট ঈশানকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করবে। অথচ ওর মনের গভীরে গেলে আপনার চরাচর মাখামাখি হয়ে যাবে নিদারুন এক বিষাদে। আপাতদৃষ্টিতে হাইপারঅ্যাক্টিভ বা চঞ্চল। কিন্ত ভাবতেও পারবেন না কী পরিমান উদ্বেগ বাসা বেঁধেছে ওই ক্ষুদেমনে!!! ঈশানের সব ইমোশনকে কন্ট্রোল করে মৃত্যুচিন্তা। ওকে পড়তে হবে পরীক্ষায় ভাল করার জন্যে , তবে ভাল চাকরি পাবে , চাকরি পেলে বিয়ে করে সংসার পাতবে , তবেই ওর সন্তানাদি হবে সেই সন্তান প্রতিষ্টিত হলে ও বৃদ্ধ হবে , দাদু হবে , তারপর অমোঘ সত্য- ওর তুঁহ মম শ্যাম সমান মরণ আসবে।মা চমকে ওঠেন। মা কে প্রশ্ন করে ঈশান তারপর আমার আত্মা আবার পুনর্জন্ম নেবে তো তুমিই আমার মা হবে তো। 
"জন্মেছি আমি আগেও অনেক মরেছি তোমারই কোলে 
 মুক্তি পাইনি শুধু তোমাকেই আবার দেখব বলে " 
আমাদের যুক্তিগ্রাহ্য মন ব্যাখ্যা পায় না কিভাবে শৈশব এমন সৎ ও সত্য ফিলোজফিকে আঁকড়ে ধরতে পারে। আসলে ওরা অমনই। খুব ছোটবেলায় এক মৃত্যু চোখের সামনে দেখে মৃত্যু সম্পর্কে মিথ ,ভয় ,আড়ষ্টতা কেটে মৃত্যুর প্রকৃত অবয়ব পরিষ্কার ঈশানের। তা হল মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্য নেই তাই জীবনটাকে বাঁচো। প্রতি পাকে বাঁচো। ঘূর্ণির মত ঘুরছে পেন্সিল কালি কলম। বেরিয়ে আসছে একেকটা ছবি। আনন্দ পাচ্ছে ঈশান।নাক কুঁচকে চশমার তলায় হাসছে দুটো উজ্জ্বল চোখ। 
ঈশান গুহ 






শুভ্রনীল দাস সম্বন্ধে আপনারা জেনেছেন। ওর লড়াই সম্পর্কে আমার ব্লগপাঠকরা ওয়াকিবহাল। ওর লেখাটার ক্যাপশনে আমি লিখেছিলাম ও খেলা করে ছায়াপথে। কিছু না জেনেই।ছবিগুলো দেখে মনে হয়েছিল ওটা ছাড়া ক্যাপশন হতেই পারে না। ব্লগটা দেখে শুভ্রনীলের মা চমকিত। কারণ। শুভ্রনীলের একটা ছবির ক্যাপশন Universe is my playground . তারমানে ট্রান্সমিট হচ্ছে। ও যেটা বলতে চাইছে সমাজ সেটা বুঝতে পারছে।ব্যাখ্যা করতে পারছে। তারমানেই আর্ট থেরাপি দিয়ে কেবল ওকে সুস্থতার পথ দেখানোতে থেমে থাকল না ওর আর্ট ওয়ার্ক। সমাজের গ্রহণযোগ্যতায় ফাইন আর্টসের পর্যায়ে উন্নীত হল শুভ্রনীলের কাজ। 
শুভ্রনীল দাস 





শুভ্রনীলের ছবি 



গতকাল বিশ্ব অটিজম দিনে গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় ওরা এসেছিল। ওরা মানে আদিত্য,উজ্জীবন,অভিষেক,বর্ষা,ঈশান, শুভ্রনীলরা। ওদের সবারই রয়েছে কমবেশি অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার। সারা জীবনব্যাপী জটিল, মানসিক ও শারীরিক পরিবর্ধনের সমস্যার সম্মুখীন ওরা। ASD বা 
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার কোন রোগ বা মেন্টাল রিটার্ডেশন নয়। সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা , শিক্ষাব্যাবস্থা ও তাদের ঠিকমত অভ্যাস ও অনুসরণ করলে সমাজে অটিস্টিক শিশুরা অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে এরাই তার জ্বলন্ত উদহারণ। আরো অনেক উদহারণ পাবেন একটু গুগল করলেই।আলবার্ট আইনস্টাইন , মোৎজার্ট , লিউইস ক্যারোল , চার্লস ডারউইন এনারা সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে নক্ষত্র , এনারা সবাই কিন্তু অটিজমকে মোকাবিলা করেই জীবন যুদ্ধে শুধু জয়ীই নন পৃথিবীকে নতুন পথের দিশা দিয়েছেন ,কারণ তাঁরা অন্য ভাবে ভাবতে পারেন। অটিজম তাঁদের কাছে প্রতিবন্ধকতা নয় অস্ত্র। একটা এজেন্ট যখন আমাদের মস্তিষ্কে দুটো আলো জ্বালে তখন সেই একই এজেন্ট ওদের মাথায় কমপক্ষে ২০টি আলো জ্বালে। অটিজমের খুব সহজ ব্যাখ্যা বোধহয় এটাই। তাই সেই জ্বলে ওঠা ঝাড়বাতিটি যে একটু অন্যরকম আলো দেবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে কি ?
এবার এক নজরে দেখে নিন ২রা এপ্রিলের সন্ধ্যেটা কিভাবে কাটালো পৃথিবী। বুর্জ খলিফা থেকে নায়াগ্রা জলপ্রপাত, হোয়াইট হাউস থেকে কুতুব মিনার , রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকে সিডনি অপেরা হাউস , সারা পৃথিবীর সেরা সব স্থাপত্যগুলো রেঙেছিল অটিজিমের সচেতনতার প্রচারে ঘননীল রঙে। গোটা এপ্রিল মাসটা অটিজমের মাস। জানতে হবে। তবেই ওদের সুস্থ সুন্দর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে। তাই #LightUpBlue হ্যাসট্যাগও জেনারেট হয়েছে। 
গতকাল বিশ্বের সেরা স্থাপত্যের গায়ে নীল আলো
আর আমাদের রাজ্যে দারুন কাজ করে চলেছে অটিজম সোসাইটি ওয়েস্ট বেঙ্গল। অটিজম বিষয়ক কর্মশালা ,সচেতনতা বিস্তার ,বাবা মা এর প্রশিক্ষণ , মূলধারার স্কুলে অটিস্টিক শিশুদের যোগদান থেকে পেশাগত প্রশিক্ষণ সবেতেই ASWB সাহায্য করতে হাত বাড়িয়ে রেখেছে। ধরবেন নাকি ওদের হাত মুঠোটা কিন্তু শক্ত বেশ। 
ওঁনাদের সাথে যোগাযোগ করুন। 
Autism Society Of West Bengal
D/1/1A Katjurnagar, Kolkata -700032
Tel 033 54581576
Mobile 9830139173
e mail : autismsocietywb@gmail.com
web: www.autismsocietywb.org

চলুন না সবাই মিলে নীলের প্রসার প্রচারে সামিল হই। আর যদি হাতে সময় থাকে তো চলে জান গগনেন্দ্র প্রদর্শালায় আজই সামনে থেকে দেখে প্রথমে অবাক হোন তারপর পিঠ চাপড়ে দিন ক্ষুদেগুলোকে আর কুর্নিশ জানান ওদের অভিভাবকদের। কী অসাধ্যটাই না সাধন করছেন ওরা। তাইতো আজ ওরা অ-সাধারণ, মুক্ত আকাশেই ওদের ব্যপ্তি গোটা পৃথিবী জোড়া ওদের রং গোটা আসমান জোড়া ওদের ক্যানভাস। 









  





Sunday, April 1, 2018

বাংলা ফুল বা ইংরেজি ফুল দুজনেরই খুব খারাপ অবস্থা | April Fool's Day |


ফুল বলে ধন্য আমি মাটির পরে। তা ধন্য না হয়ে পারা যায়? জানেন না পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না। ফুল তো ফোটেই আপনার জন্য। যাতে আপনি তাকে ফুল ভেবে যারপরনাই আমোদিত হন। বাংলা ফুল বা ইংরেজি ফুল দুজনেরই খুব ডেলিকেট কন্ডিশন। বাংলা ফুলের বৃতি , দলমন্ডল পুংকেশর গর্ভকেশর চক্র জোড়া বাহার ঈশ্বর নামক অদেখা অজানা ভয়ের পায়ে নত। কখনও আবার সংস্কৃতি নামক ভয়াবহ উদযাপনের তাড়নায় অতিষ্ঠ। কিছুদিন আগেই শান্তিনিকেতন এর আশেপাশে দোলের সময় পলাশের অতিরিক্ত ব্যবহারে ফুলটি প্রায় লোপাট হতে বসেছিল। আর ইংরেজি ফুল ! তাদের মত অপাপবিদ্ধ দুনিয়ায় মেলা ভার। সহজে বিশ্বাস। ওই যে দাড়িবুড়ো বলেছিলেন মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ । তাঁরা জীবনের পঞ্চমবেদ মেনে চলেন ওই পাঁচটি শব্দকে। তাই তো অনায়েসে জীবনের গচ্ছিত সম্পদ কৃতঘ্নের হাতে তুলে দিয়ে তাঁরা নিশ্চিন্তে থাকেন। তারপর যখন বণিকের মানদণ্ড পোহালে শর্বরী দেখা দেয় রাজদণ্ড রূপে  তখন হুঁশ ফেরে তাদের। কেজো লোকজন বলেন একটু চোখকান খোলা রাখো। চালাক হও। চলতে চলতে ওই সব মানুষজন চালক হন কিনা জানি না ,তবে চালাক হন না ,হয়তো বা চালু হন। মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো টাকা বা স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য অতি কষ্টের জমানো টাকা হয়ত আপনি ছেলের হাতে তুলে দিলেন। তারপর আপনারই ছেলে সেই ধনরাশি বেমালুম গায়েব করে দিল ব্যবসায়ে মন্দার অছিলায়। পরে জানলেন। ওসব মন্দা ফন্দা শ্রেফ ধান্দার ফান্ডা। আপনি ছেলের পাতা ফাঁদে পড়ে বগার মত কাঁদছেন। আপনি মশাই ফুল। আজ আপনার জাতীয় উদযাপন দিন। উল্লাস করুন। অন্তত একটা দিন একটু সেলিব্রেশন হচ্ছে আপনাকে নিয়ে। 
অন্যদের আপনাকে বোকা বানিয়ে পুলক জাগে। আপনার তখন চোখে ঘনায় ঘোর। অবাক হওয়ার কি আর শেষ আছে !! আগুন আগুন বাজারদরে কত শত খেলা। রাসায়নিক রঙে চোবানো বেগুন, পটল ,উচ্ছে। ফরমালিনে ভেজানো প্রায় প্রাগৈতিহাসিক মাছ। প্লাস্টিকের চাল, ডিম। ময়নাতদন্তের পথে যাওয়া মরা মুরগি, গলা কেটে ওজন বাড়ানোর জন্যে জল ঢালা পাঁঠা। ময়দা , ডিটারজেন্ট সমৃদ্ধ দুধ। মোমের পরত মাখা আপেল, আঙ্গুর। কার্বাইডে পাকানো আম। থাম থাম থাম ....

ঠগ বাছতে গাঁ নয় রাষ্ট্র উজাড়। ফোন করে ব্যাঙ্কের লোক বলে পরিচয় দিয়ে  ATM কার্ডের নম্বর CVV জেনে আপনার আকাউন্টে সাফাই অভিযান। আপনি রেজিস্টার্ড ফুল মশাই। ফুলটুস বোকা। আজকের দিনে এটুকুও জানেন না। ATM থেকে জাল কারেন্সি নোট বেরোলে যদি তৎক্ষণাৎ না বুঝে পরে ওই নোট কোন ব্যাঙ্ক বা অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ক্যাশ কাউন্টারে জমা দিতে যান। সাবধান। আপনার বোকামি আপনাকে ভয়ঙ্কর অপরাধী বা ক্রিমিনালে পরিণত করতে দু সেকেন্ড সময় নেবে। এতশত পাসওয়ার্ড , পিনকোড , নম্বর মাথা ভনভন করে ভোঁভোঁ করে চরাচর।
আগে বোকাদের পিছনে লেগে তাদের ওপর বোকামির স্ট্যাম্প মেরেই ক্ষান্ত থাকত চারপাশ। এখন তো বোকা খুঁজে পেলে তাকে ব্যবহার করে স্বার্থ সিদ্ধি করে সিদ্ধি লাভ করতে চায় খুব আপনজন। আপনার সোশ্যাল সাইট হ্যাক করে ,ফেক প্রোফাইল থেকে উস্কানি দিয়ে , যেনতেন প্রকারেণ আপনাকে বকরা বা মুরগি বানিয়ে উধাও।  অনেকটা লালগড়ের বাঘের মত। জাল কেটে হালুম হুলুম করে ভ্যানিশ। স্যার একটু চারদিক দেখে পা ফেলুন। গোটা দুনিয়ার কিছুই তো আসল না সবই ভার্চুয়াল। সব মায়া। আপনি কায়া ধরে থাকলে হবে!! গোটা দুনিয়া যখন মুরগি খুঁজতে ব্যস্ত আপনি তখন মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ বলবেন !! ডোডো পাখির মত ডায়নোসরের মত যাদুঘরে গিয়ে এরপর আপনাকে খুঁজতে হবে।
তাই নিজেকে বোকা,নিষ্পাপ ,নিস্কলুষ পদ্ম ফুল ভাববেন না। ক্ষুদিরাম বা কালিদাসের সাথেও আপনার বহু দূরের কোনো আত্মীয়তা নেই। পাইরেসিকে মারতে না পেরে আমরা এখন পাইরেটস অফ ক্যারিবিয়ানের সিকুয়েল বানাই। হোক্স নিউজ , পেড নিউজ , ফেক নিউজ বানাতে ১লা এপ্রিল লাগে না। শুধু কর্নি সেনাতে ইনভেস্ট করলেই পদ্মাবতী পদ্মাবৎ হয়ে যায়। জলবৎ সহজ সমীকরণ। রোজ ব্রাশ করা থেকে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত বারেবারে আমার মতই আপনিও বেকুব বনে যান। প্রেম করে ঠকে যান যেমন  মিষ্টি লেবু ভেবে টক লেবু কিনে ঠকেন। দুধে জল তো গয়লার ওপেন ট্রেড সিক্রেট। সোনাচুরি স্বর্ণকারের ধর্ম। আসল ঠগ গুলোকে খুঁজুন যারা আপনার সহজিয়া প্রকৃতির সুযোগে আপনাকে সাবাড় করছে। পারবেন কী ধরতে তাদের ?????