Tuesday, September 21, 2021

তবু মনে রেখো - প্রসঙ্গ অ্যালঝাইমারস ডে


জ কথা তাঁদের নিয়ে। যারা মনে রাখতে পারেন না। "মনে রাখতে পারেন না" মানে ধরুন ব্রেকফাস্টে কী খেয়েছেন? ওষুধটা খেয়ে ফেলে যারা ভাবছেন ওষুধটা খেতে হবে। পুরনো স্মৃতি আসতে আসতে ফিকে হচ্ছে। কাকে কী বলেছেন? অমুক ব্যক্তি কে? তাঁর সঙ্গে কী ব্যবহার করা উচিত ? এরকম বহুবিধ দৈনন্দিন সহজ বিষয় গুলো যাঁদের কাছে মারাত্মক জটিল। ভুলে যাওয়ার একটা গহ্বরে যারা রোজ তিল তিল করে ডুবে যাচ্ছেন। আজ বিশ্ব অ্যালঝাইমার ডে World Alzheimer’s Day আর এই সেপ্টেম্বর মাসটা অ্যালঝাইমার সচেতনতার মাস। 

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের চারপাশ কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করে। বিনিদ্র রাত যাপন করি আমরা তাও বলতে পারিনা ইনসমনিয়ার কথা। শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে অঙ্গটা সেই মস্তিষ্কেরও যে সমস্যা হতে পারে এবং তার জন্য ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। এই ছোট্ট বিষয়টা এই ২০২১ এও আমাদের অনেকের মাথায় ঢোকে না। আর ঢুকলেও সামাজিক অপমানের ভয়ে অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা নিয়েই জীবনযাপন করেন। রোজ ধীরে ধীরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে বাঁচেন ।

অ্যালঝাইমার একটা জটিল মানসিক অবস্থা। যে ক্ষেত্রে আক্রান্ত মানুষটির ব্যবহারিক জীবনে চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং সামাজিক গুণাবলী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে পরিস্থিতি। পরিসংখ্যান বলছে আমাদের দেশে প্রায় ২৪ লক্ষ মানুষ এই মুহূর্তে এই রোগে আক্রান্ত। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে অ্যালঝাইমার রোগাক্রান্তদের মধ্যে পাঁচটি মানসিক রোগের বা ডিজঅর্ডারের লক্ষণ দেখা যায়। অ্যামনিজ়িয়া, আফেজ়িয়া, অ্যাপ্রাক্সিয়া, অ্যাগনোসিয়া এবং অ্যানোমিক অ্যাফেজ়িয়া। তাঁরা সংক্ষেপে এই ৫টি রোগকে 5 A of  Alzheimer’s Disease বলে চিহ্নিত করেছেন। 

অ্যামনিজ়িয়া (Amnesia)- অ্যামনিজ়িয়ায় আক্রান্তরা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন ক্রমশ। ধীরে ধীরে সমস্ত স্মৃতি লোপ পায়। যত সময় যায় ধীরে ধীরে কমতে থাকে স্মৃতির ভাঁড়ার। চেনা মানুষ এমন কি সন্তান সন্ততিকেও চিনতে পারেন না এই রোগে আক্রান্ত অনেক মানুষ। অ্যামনিজ়িয়া ২ ধরনের রেট্রোগ্রেড অ্যামনিজ়িয়া (Retrograde Amnesia) এবং অ্যান্টিরেট্রোগ্রেড অ্যামনিজ়িয়া (Anterograde Amnesia)। অনেক আক্রান্ত মানুষ চোখের সামনে যা ঘটছে তা ও মনে রাখতে পারেন না।

আফেজ়িয়া (Aphasia)- এই অবস্থায় আক্রান্ত মানুষটির ক্ষেত্রে যোগাযোগ স্থাপন, কথা বলা ভীষণ সমস্যার হয়ে পড়ে। বিশেষ করে কথাবার্তা বলা। কী বলবেন, তার জন্য কী শব্দ প্রয়োজন, কীভাবে সেই শব্দ উচ্চারণ করবেন তা অনেক সময়ে বুঝতে না পেরে মানুষটি হয় ডুবে যান নৈশব্দের অতলে নয়ত এলোমেলো কথা বলতে শুরু করেন, যে কথা বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক রহিত। এক তীব্র কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন ওই ব্যাক্তি।

 অ্যাপ্রাক্সিয়া (Apraxia)- মোটর স্কিলগুলো আক্রান্ত হয় এই পরিস্থিতিতে। যার ফলে জলের গ্লাস ধরে মুখ পর্যন্ত তোলা, স্নান করা বা জামাকাপড় পরবার মত সহজ কাজ গুলো হয়ে ওঠে দুরুহ, কষ্টকর। আর তাই ধীরে ধীরে হাঁটা চলাও হয়ে যায় কম। আক্রান্ত ব্যক্তির পড়ে যাবার ঝুঁকি বাড়ে। সারাক্ষণের দেখভালের লোক অত্যন্ত প্রয়োজন এই ধরনের মানুষদের জন্য। 

অ্যাগনোসিয়া (Agnosia)- এই পরিস্থিতিতে আক্রান্ত হয়ত কিছুটা ঠিকঠাক কথা বলতে পারছেন কিন্ত অপর দিক থেকে তাঁকে যা বলা হচ্ছে তা বুঝতে প্রচণ্ড অসুবিধা হয়। অর্থাৎ তাঁর কমিউনিকেসন স্কিলের ক্ষেত্রে সিগনাল রিসিভ করতে অসুবিধা হয়। এর ফলে প্রায়শই দেখা যায় ওই ব্যক্তির শ্রবণশক্তি, ঘ্রানশক্তি, স্বাদ, স্পর্শের অনুভুতি এবং দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয় ক্রমশ। 

অ্যানোমিক অ্যাফেজ়িয়া (Anomic Aphasia)- এই পরিস্থিতিতে অ্যাফেজ়িয়ার লক্ষণগুলো ছাড়াও মানসিক আঘাত এবং কথা বলা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। মস্তিস্কের বাঁ দিক আক্রান্ত হয়। এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে মস্তিস্কের কোষগুলি দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। 



আজ বিশ্ব অ্যালঝাইমার ডে উপলক্ষে রবীন্দ্র সেতু বা হাওড়া ব্রিজ রঙিন হবে নীল রঙে। অ্যালঝাইমার এন্ড রিলেটেড ডিজরডারস সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার কলকাতা চ্যাপ্টার আয়োজন করেছেন এই সচেতনতার। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে অ্যালঝাইমারের সচেতনতায় এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা এই রোগে আক্রান্ত মানুষ ও তাঁদের পরিবারের লড়াইয়ে শক্তি যোগাবে।










Friday, September 10, 2021

জয় করো এই তামসিরে - আত্মহত্যা কোনও সমাধান নয়


 অনেক দিন আগে কবীর সুমনের একটা অ্যালবাম বেরিয়েছিল - ঘুমোও বাউণ্ডুলে। সেই অ্যালবামে একটা গান ছিল- 

"থেমে যেতে যেতে 

একবার কোনও মতে

জোর করে যদি একবার 

হেঁটে যেতে

বেঁচে নিতে যদি একবার

বড় ভাল হত"।


আমরা রোজ মারা যাই , রাত্রে , সাময়িক, ঘুমের মধ্যে । রোজ আবার বেঁচে উঠি, জেগে উঠি সাময়িক মৃত্যু-ঘুম ছেড়ে। মৃত্যু চিরন্তন। মরণ তুঁহ মম শ্যম সমান। জন্ম নিয়েছে যে তার মৃত্যু আছেই। কাম ক্রোধ বা অন্য ষড় রিপু না থাকলেও জাগতিক প্রাণী বা উদ্ভিদের মৃত্যু এড়ানোর কোনও উপায় নেই। একটাই জীবন। একবারই খেলতে নামা। ক্রিজ ছেড়ে চলে যাব? কেন? 

আজ সারা দুনিয়া জুড়ে এই বিষয় নিয়েই কথাবার্তা হচ্ছে। আজ বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। করোনা আবহে আত্মহত্যার প্রবণতা আরও বেড়েছে মানুষের মধ্যে। বহু আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক এবং শারীরবৃত্তীয় কারণ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর অন্ধকারে। 

সমস্যা এতটাই জটিল হয়ে গেছে এই অতিমারি পরিস্থিতিতে যে শিনরিন - ইয়োকু র দেশ জাপানে এই মুহূর্তে আত্মহননের হার সবচেয়ে বেশি। জাপানিরা ভাল থাকার বিষয় তাঁদের দৈনন্দিন জীবন চর্যার মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছেন যুগ যুগ ধরে। তাহলে তাঁদের কেন এমন অবস্থা। আমাদের দেশে কৃষক, ছাত্রছাত্রী, এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের আত্মহত্যার হার বেড়েছে। বাদ যান নি ডাক্তার কিংবা শিক্ষকরাও। 

টেকনলজি আমাদের বেগ দিয়ে আবেগ কেড়ে নিয়েছে। আমরা সারাদিন অনলাইন থাকি । আপডেটেড থাকি। অথচ পাশের বাড়ির, পাশের ঘরের, পাশের বালিশের মানুষটার খোঁজ রাখি না। আর রাখি না বলেই আমরা অনেক আত্মহনন আটকাতেও পারি না। এই অবস্থায় তাই কথা বলাটা খুব জরুরী। আত্মহননের ইচ্ছা একটা মানসিক অবস্থা। যার থেকে আমাদের টেনে বার করে আনতে পারেন একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। তাই যিনি রোগী তাঁর পরিচিত, পরিবার বা বন্ধুদের উচিত ট্যাবু ভেঙে, লজ্জা সরিয়ে ডাক্তারবাবুর কাছে রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে যাওয়া। 

ইন্টারনেটে সার্চ করে রোগ সারাব, বা রোগীর কাউন্সেলিং করব ভাবাটা বোকামো। এটা একটা স্পেসালাইজড বিষয় তাই স্পেশালিষ্টকেই দরকার। আর নেটে অনেক হেল্প লাইন পাবেন। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আজ একটা প্রতিবেদন করলাম টিভি নাইন বাংলায়(TV9 Bangla)। সেই প্রতিবেদনে কিছু তথ্য নেবার জন্য হেল্প লাইনে (নাম বলছি না ) ফোন করলাম টানা দু দিন । কেউ ফোন ধরলেন না । অতএব নিজেই নিজের আলো হয়ে জ্বলে উঠুন। গোলাপ হয়ে ফুটে উঠুন। সমস্যাকে জয় করাই জীবন। সমস্যা না থাকলে মজা কোথায়?  মৃত্যু কোনও সমস্যার সমাধান নয়। বরং সমস্যাটাকে আরও কিছু মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে পালিয়ে যাওয়া। তাই চিয়ার্স টু লাইফ।  

রইল আজ আমার করা একটা ভিডিওর লিঙ্ক। 

দেখুন সেই ভিডিও


https://youtu.be/hUvPbgzMK0Y


Sunday, September 5, 2021

কে শিক্ষক?

অনেকটা শৈশববেলা তখন। রান্না করতে করতে পড়াত মা। গরম খুন্তি উঁচিয়ে বলত অমনোযোগী হলেই “দেব?” রুটির আটা মাখা সেই খুন্তিই শিখিয়েছে- মনযোগী হও। প্রণাম প্রাজ্ঞ খুন্তি

তারপর এলেবেলে ছেলেবেলা স্কুল। লাল নীল কমলা বাটিরা থরে থরে সেজে বসত। সেই স্কুলে টিফিন বেলা শিখিয়েছে- ভাগ করে খাও।

শহরের ইংলিশ মিডিয়াম। অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান মিস। হাতটা বেজায় মারকুটে। লেখা বেঁকে গেলেই ভয়। গাল লাল করে থাপ্পড় শিখিয়েছে- মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য হল মানুষ লিখতে পারে।

সরকারী স্কুলের বাইরে তেঁতুল গাছ। পাড়তে পারতাম না টকফল। শৈশবের বন্ধু শিখিয়েছে- পাথরের অব্যর্থ নিশানা। আহা কি পরম পাওয়া !

রবিবার শিখিয়েছে- সোমবার স্কুল তাই দুদ্দাড় আনন্দে হও মশগুল ।

হুহু করা সাইকেল প্যাডেল শিখিয়েছে- গতির প্রথম পাঠ।

সহপাঠী শিখিয়েছে- কলেজ কেটে সিনেমা।

যৌবন শিখিয়েছে সিগারেট, সিগারেট শিখিয়েছে- পুড়ে হও খাক

বেকারত্ব শিখিয়েছে – টিউশনি টাকা দিয়ে দেখা সুমনের গান

সুমন শিখিয়েছে- আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি, কার তাতে কী ?

প্রেমিকা শিখিয়েছে অপেক্ষা আর ছেড়ে চলে যেতে হয়

দেহ শিখিয়েছে- জন্মের জন্য ছোট আর মৃত্যুর জন্য বড় হওয়ার খেলা

দেহকাম শিখিয়েছে- চুম্বন ব্যাকরণ, ঠোঁট জ্বালা থেকে যায় থেমে গেলে কম্পন

বন্ধু শিখিয়েছে- “পাতিয়ালা কীভাবে বানাই দেখ শালা” বা “বীজ থাকলে টানলেই ফাটবে”।

প্রথম বেতন শিখিয়েছে- ২ কিলো মটন কেনা সুখ

অসুখের বিল শিখিয়েছে- ফিট থাকা কতটা জরুরী

বন্ধুর ছদ্মবেশ শিখিয়েছে- বিশ্বাস করা পাপ ( ক্ষমা করবেন রবীন্দ্রনাথ)

টিভি শিখিয়েছে- দাগ অচ্ছা হ্যয়

মালিক শিখিয়েছে- পোষালে থাক না পোষালে যা ( অথচ মুখে কিছু বলে না)

শ্রমিক শিখিয়েছে- আমারই ঘামের বৃষ্টি নামে লাল সেলাম

হাত ছাড়া ট্রেন শিখিয়েছে- ৫ মিনিটের দাম

পথ শিখিয়েছে- ঘরের টান

আর ঘর শিখিয়েছে- পথের ক্লান্তি ভুলে কোলে তুলে নিতে

স্ত্রী শিখিয়েছে – পাশে থাকা

সন্তান শিখিয়েছে- পিতৃত্ব আর আবার কার্টুন দেখা

কার্টুন শিখিয়েছে- সহজ বাঁচতে সবাই পারে না।

বটগাছ শিখিয়েছে- শুধু ছায়া দিতে হয়

ঘাস শিখিয়েছে- নত হলেও শিকড় ছড়িয়ে দেওয়া চাই

শিকড় শেখালো – রবি ঠাকুর (যাঁদের জীবনে তিনি নেই তাঁরা রোদ্দুর রায়ের চেয়েও পচা কপালে)

সূর্য শেখালো- দিন

দিন শেখালো- হয় আনি খাই নাহয় “দিন না, দিন না ,‌ আমি তো খাপের লোক”

সমানে সমানে টক্কর দেওয়া প্রতিপক্ষ শিখিয়েছে- ঠিকঠাক থাক নইলে গিলে খাব সবশুদ্ধ

রাত শিখিয়েছে- ভৌ, জাগা কুকুরের মত অতন্দ্র প্রহরা

কুকুর শিখিয়েছে- আনুগত্য আর মায়া

মায়া শিখিয়েছে- বন্ধন হীন হতে

মুক্তি বোধ শিখিয়েছে- শূন্য, (মৃত্যুর পর কমলা আগুন )

মৃত্যু বোধ শিখিয়েছে- পুড়ে গেলে রক্তমাংসঘাম পুড়ে যায় সব বদনাম/ আমার দুর্নাম যেন না পোড়ে নিস্কাম অমরত্বের ঘোরে/ আমি যেন বেঁচে থাকি না।

প্রথাগত শিক্ষকদের অত্যন্ত হতাশ করেছি আজীবন। তাই তাঁদের দূর থেকে প্রণাম। আর এরাও তো শিক্ষক তাই এদেরও স্মরণ করছি আজ। শেষে দুটো প্রিয় লাইন।

“গুরু বলে কারে প্রণাম করবি মন?
ও তোর অতীত গুরু, পথিক গুরু, গুরু অগণন”

Wednesday, September 1, 2021

প্রাণঘাতী শিরোনাম সংরক্ষণের জন্য ঘাতক


গত সোমবার লেখা আমাকে বাঘা বোলো না ব্লগটা শুরুতেই একবার চোখ বুলিয়ে নিন কারণ এই পোস্টটা ওটার সঙ্গেই সম্পর্কিত। হাওড়ার ওই অঞ্চলে বাঘরোল সাইটিং(Sighting ) হওয়ার পর থেকেই। এলাকায় একটা উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। যে ঘটনায় মানুষের খুশি হওয়ার কথা ছিল তাতেই তাঁরা আতঙ্কিত! বহুকাল ধরে এই এলাকাগুলো বাঘরোলের প্রাকৃতিক হ্যাবিট্যাট(Habitat)। অর্থাৎ স্থানীয় ইতিহাস বলছে বন্যপ্রান আর মানুষের সহাবস্থান ওই এলাকায় যুগ যুগ ধরে রয়েছে। সংঘাত হয় নি।

তাহলে এখন কেন হচ্ছে? প্রথমত এর জন্য দায়ী অশিক্ষা। এই অশিক্ষা বলতে আমি কোনও স্কুল কলেজ বা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার কথা বলছি না। প্রকৃতি লব্ধ জ্ঞান। তলানিতে এসে পৌঁছেছে আমাদের। প্রতিদিন প্রকৃতির সঙ্গে যোগ কমে যাচ্ছে আমাদের। ফলত আমরা জানি না কোনটা কী। আমাদের চারপাশে কী আছে, যার সঙ্গে যাদের সঙ্গে আমাদের নিবিড় যোগ যুগ যুগান্ত ধরে! 

ইন্টারনেটের গণতান্ত্রিকতা আমদের সুবিধা দিয়েছে ইনফরমেশন খোঁজার। একই সঙ্গে ইন্টারনেট অশিক্ষা ছড়ানোরও একটা উত্তম মাধ্যম। আপনার হাতে ডেটা আছে, মোবাইলে বাই ডিফল্ট একটা ক্যামেরা আছে যাতে ফোটো ও ভিডিও রেকর্ড হয়। অতএব মনের মাধুরী মিশায়ে তাহারে করুন রচনা!! 

এই কথা লেখার কারণ ওই দুটি গ্রামের মানুষকে "অজানা জন্তু" সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দেওয়ার বদলে কিছু ইউটিউব মিডিয়া এলাকায় গিয়ে যা করলেন সেটাকে আর যাই হোক সাংবাদিকতা বলা যায় না। বন্যপ্রান সম্বন্ধে কাজ করতে গেলে প্রতিবেদন বিজ্ঞানভিত্তিক হওয়া উচিত। বিজ্ঞান দাঁড়িয়ে থাকে প্রাথমিক ৩ শর্তের ওপর পরীক্ষা, নিরীক্ষা এবং সিদ্ধান্ত। বন্যপ্রানের প্রতিবেদনও তাই হওয়া উচিত। এটা আমার মত। এবং আমার এই ধারণা তৈরি হয়েছে বর্তমান পৃথিবীতে হার্ডকোর ওয়াইল্ড লাইফ কভারেজ অনুধাবন করে। এটাই হওয়া উচিত। এটা একটা ষ্ট্যাণ্ডার্ড রীতি। 

সংরক্ষণ কর্মীরা প্রায়ই বলে থাকেন বন্য প্রাণ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে "মশলা" খবর বা " Sensational News" প্রাণঘাতী। সংরক্ষণের জন্য মারাত্মকও বটে। এক্ষেত্রে ওই গ্রাম গুলির মানুষ আতঙ্কিত। তাঁদের কাছে যাবার আগে অল্প একটু পড়াশোনা করতেই পারতেন সংবাদ কর্মীরা। বাঘ আর বাঘরোলের তফাতটা নিজে জানতেই পারতেন। তা না করে তাঁরা যেটা করলেন তা হল কেবল উত্তেজনা ক্যামেরাবন্দী করে সেই উত্তেজনাটিকেই আরও বাড়ালেন। এরপর গ্রামবাসীরা যদি নিরীহ ফিশিং ক্যাটটিকে বাঘ বা অজানা প্রাণী ভেবে আতঙ্কে, ভয়ে পিটিয়ে মারে তার দায় কে নেবে? 

একদিকে রাজ্যপ্রাণীটিকে নিয়ে নেই সরকারি মন্ত্রক স্তরে সচেতনতা প্রসারের উদ্যোগ, কম সুবিধাপ্রাপ্ত বন দপ্তরের কর্মী (অনেকটা ঢাল তরোয়াল বিহীন কেবল মনের জোর সর্বস্ব নিধিরাম সরদার ) আর কিছু বন্যপ্রান সংগঠন (যাঁদের ফান্ড নেই আছে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর উদ্যোগ), এই নিয়ে সংরক্ষণ (পড়ুন মোকাবিলা) চলছে আমাদের রাজ্য প্রাণীটিকে বাঁচানোর। IUCN তালিকায় যে লাল। মানে অবলুপ্তির প্রহর গুনছে। উল্টোদিকে সীমাহীন অশিক্ষা।