আজ কথা তাঁদের নিয়ে। যারা মনে রাখতে পারেন না। "মনে রাখতে পারেন না" মানে ধরুন ব্রেকফাস্টে কী খেয়েছেন? ওষুধটা খেয়ে ফেলে যারা ভাবছেন ওষুধটা খেতে হবে। পুরনো স্মৃতি আসতে আসতে ফিকে হচ্ছে। কাকে কী বলেছেন? অমুক ব্যক্তি কে? তাঁর সঙ্গে কী ব্যবহার করা উচিত ? এরকম বহুবিধ দৈনন্দিন সহজ বিষয় গুলো যাঁদের কাছে মারাত্মক জটিল। ভুলে যাওয়ার একটা গহ্বরে যারা রোজ তিল তিল করে ডুবে যাচ্ছেন। আজ বিশ্ব অ্যালঝাইমার ডে World Alzheimer’s Day আর এই সেপ্টেম্বর মাসটা অ্যালঝাইমার সচেতনতার মাস।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের চারপাশ কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করে। বিনিদ্র রাত যাপন করি আমরা তাও বলতে পারিনা ইনসমনিয়ার কথা। শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে অঙ্গটা সেই মস্তিষ্কেরও যে সমস্যা হতে পারে এবং তার জন্য ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। এই ছোট্ট বিষয়টা এই ২০২১ এও আমাদের অনেকের মাথায় ঢোকে না। আর ঢুকলেও সামাজিক অপমানের ভয়ে অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা নিয়েই জীবনযাপন করেন। রোজ ধীরে ধীরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে বাঁচেন ।
অ্যালঝাইমার একটা জটিল মানসিক অবস্থা। যে ক্ষেত্রে আক্রান্ত মানুষটির ব্যবহারিক জীবনে চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং সামাজিক গুণাবলী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে পরিস্থিতি। পরিসংখ্যান বলছে আমাদের দেশে প্রায় ২৪ লক্ষ মানুষ এই মুহূর্তে এই রোগে আক্রান্ত। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে অ্যালঝাইমার রোগাক্রান্তদের মধ্যে পাঁচটি মানসিক রোগের বা ডিজঅর্ডারের লক্ষণ দেখা যায়। অ্যামনিজ়িয়া, আফেজ়িয়া, অ্যাপ্রাক্সিয়া, অ্যাগনোসিয়া এবং অ্যানোমিক অ্যাফেজ়িয়া। তাঁরা সংক্ষেপে এই ৫টি রোগকে 5 A of Alzheimer’s Disease বলে চিহ্নিত করেছেন।
অ্যামনিজ়িয়া (Amnesia)- অ্যামনিজ়িয়ায় আক্রান্তরা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন ক্রমশ। ধীরে ধীরে সমস্ত স্মৃতি লোপ পায়। যত সময় যায় ধীরে ধীরে কমতে থাকে স্মৃতির ভাঁড়ার। চেনা মানুষ এমন কি সন্তান সন্ততিকেও চিনতে পারেন না এই রোগে আক্রান্ত অনেক মানুষ। অ্যামনিজ়িয়া ২ ধরনের রেট্রোগ্রেড অ্যামনিজ়িয়া (Retrograde Amnesia) এবং অ্যান্টিরেট্রোগ্রেড অ্যামনিজ়িয়া (Anterograde Amnesia)। অনেক আক্রান্ত মানুষ চোখের সামনে যা ঘটছে তা ও মনে রাখতে পারেন না।
আফেজ়িয়া (Aphasia)- এই অবস্থায় আক্রান্ত মানুষটির ক্ষেত্রে যোগাযোগ স্থাপন, কথা বলা ভীষণ সমস্যার হয়ে পড়ে। বিশেষ করে কথাবার্তা বলা। কী বলবেন, তার জন্য কী শব্দ প্রয়োজন, কীভাবে সেই শব্দ উচ্চারণ করবেন তা অনেক সময়ে বুঝতে না পেরে মানুষটি হয় ডুবে যান নৈশব্দের অতলে নয়ত এলোমেলো কথা বলতে শুরু করেন, যে কথা বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক রহিত। এক তীব্র কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন ওই ব্যাক্তি।
অ্যাপ্রাক্সিয়া (Apraxia)- মোটর স্কিলগুলো আক্রান্ত হয় এই পরিস্থিতিতে। যার ফলে জলের গ্লাস ধরে মুখ পর্যন্ত তোলা, স্নান করা বা জামাকাপড় পরবার মত সহজ কাজ গুলো হয়ে ওঠে দুরুহ, কষ্টকর। আর তাই ধীরে ধীরে হাঁটা চলাও হয়ে যায় কম। আক্রান্ত ব্যক্তির পড়ে যাবার ঝুঁকি বাড়ে। সারাক্ষণের দেখভালের লোক অত্যন্ত প্রয়োজন এই ধরনের মানুষদের জন্য।
অ্যাগনোসিয়া (Agnosia)- এই পরিস্থিতিতে আক্রান্ত হয়ত কিছুটা ঠিকঠাক কথা বলতে পারছেন কিন্ত অপর দিক থেকে তাঁকে যা বলা হচ্ছে তা বুঝতে প্রচণ্ড অসুবিধা হয়। অর্থাৎ তাঁর কমিউনিকেসন স্কিলের ক্ষেত্রে সিগনাল রিসিভ করতে অসুবিধা হয়। এর ফলে প্রায়শই দেখা যায় ওই ব্যক্তির শ্রবণশক্তি, ঘ্রানশক্তি, স্বাদ, স্পর্শের অনুভুতি এবং দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয় ক্রমশ।
অ্যানোমিক অ্যাফেজ়িয়া (Anomic Aphasia)- এই পরিস্থিতিতে অ্যাফেজ়িয়ার লক্ষণগুলো ছাড়াও মানসিক আঘাত এবং কথা বলা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। মস্তিস্কের বাঁ দিক আক্রান্ত হয়। এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে মস্তিস্কের কোষগুলি দ্রুত নষ্ট হচ্ছে।
আজ বিশ্ব অ্যালঝাইমার ডে উপলক্ষে রবীন্দ্র সেতু বা হাওড়া ব্রিজ রঙিন হবে নীল রঙে। অ্যালঝাইমার এন্ড রিলেটেড ডিজরডারস সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার কলকাতা চ্যাপ্টার আয়োজন করেছেন এই সচেতনতার। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে অ্যালঝাইমারের সচেতনতায় এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা এই রোগে আক্রান্ত মানুষ ও তাঁদের পরিবারের লড়াইয়ে শক্তি যোগাবে।