Sunday, July 15, 2018

হাসেন অন্তর্যামী : শহরের প্লাস্টিক দূষণ মাড়িয়ে চলল ইস্কন রথের চাকা Plastic Pollution in ISKCON Ratha Yatra

তকাল ছিল রথযাত্রা। প্রতিবছরের মতন রথের ছবি করতে বেরিয়েছিলাম। অগুনতি ভক্তজন, কৃপাপ্রার্থী, সাধারণ মানুষের জনজোয়ারের ভিড়ে মিশে গিয়ে উৎসবের আঁচ গায়ে মাখতে মাখতে ছবি করছিলাম। শহর,রাজ্য,দেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের ভিড়। পথে নেমেছেন জগতের নাথ। সবার রঙে রঙ মেশাতে। সবাইকে মিলিয়ে দিতে। 'জয় জগন্নাথ' ধ্বনিতে গমগম করছে পথ। আগে দেখুন সে ছবির কোলাজ তারপর বাকি গল্প।











এপর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। হৃদয় উজাড় করা শ্রদ্ধা ভক্তি। নামগান। দুবাহু তুলে হরিবোল। বিদেশি উচ্চারণে 'হারে কৃষ্ণা হারে রামা'। মনে হচ্ছিল বিশ্ব সমাগম মিছিলে যোগ দিয়েছেন জগন্নাথ যোগ দিয়েছে জনতা। 
নাচ , গান, আল্পনা , ধুনুচি , ছৌ সব মিলে দারুন এক আবহ , সুন্দর এক পরিবেশ। প্রতিটি রথ ও  ট্যাবলোর আগে ও পিছনে জল ও পানীয়বাহি ভ্যান গাড়ির ব্যবস্থা করেছিল ইস্কন কর্তৃপক্ষ। প্রচন্ড আর্দ্রতা ও গরমে যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়ে কোনো ভক্ত তারই জন্য।  






এরই মাঝে ঘটল ঘটনাটা। শরৎ বোস রোডে কিছু মানুষজন রথযাত্রার পুণ্যার্থীদের সরবত খাওয়াতে আরম্ভ করলেন। গোলাপি সরবত প্লাস্টিকের গ্লাসে। মানুষ খেলেন কম ফেললেন বেশি। পড়ে রইলো আধখাওয়া প্লাস্টিক গ্লাস সমেত সরবত। 


ভাণ্ডারাওয়ালারা পুণ্যলাভের লোভে ভুলে গেলেন ওই পথেই আসছেন জগন্নাথ। চারপাশ পলিথিন প্লাস্টিক মলিন করে তাঁরা তখন মানুষজনকে জোরাজোরি করছেন সেবা নেওয়ার জন্য।
পড়ে রইল প্লাস্টিক। তার ওপরই মেয়েরা নাচগান করল। শহরের আপামর জনগন অপেক্ষা করল। আর রথ ,মূর্তি, সেবাইত সবাই চললেন সেই দূষণ মাড়িয়ে। হো হো হাসিতে মেতে উঠলেন জগতের নাথ।













হয়ত অনেকেই জানেন প্লাস্টিকের ভয়াবহতা। তাঁরা এটাও জানেন সম্প্রতি মুম্বই আর দিল্লিকে প্লাস্টিক মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এখনও টেলিভিশন প্রাইমটাইমে , বিজ্ঞাপনে সীমাবদ্ধ রয়েছি প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। আর যাঁরা প্লাস্টিক দূষণকে হালকা ভাবে নেন তাঁরা এই ব্লগপোস্টটিকে পাগলের প্রলাপ, অর্বাচিনের মন্তব্য অনেককিছুই বলতে পারেন তাতে কিচ্ছু যায় কিম্বা আসে না।
পরিশেষে একটা কথা ঈশ্বর ভক্তির অছিলায় ভক্তদের সেবা যদি করতেই হয় তাহলে উচ্ছিষ্ট পরিষ্কার করাও সেই সেবারই অঙ্গ এটা মাথায় রাখাও উচিত।  

Friday, June 8, 2018

পরিবেশকে ভাল রাখার ৫০ টি সহজ উপায় | 50 Easy Ways You can HELP Nature



শুধুই গেল গেল করব ? নাকি আমাদের ও করণীয় কিছু আছে। পরিবেশ বাঁচাতে কী কী করব আমরা সে সব নিয়ে আজ কয়েকটা সহজ টোটকা।  তার আগে দেখে নিন ভিডিওটা। জল বাঁচানোর কী দারুন সহজ  বৈজ্ঞানিক উপায়। শুধু মাত্র একটা ডিভাইস। প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল খুব ভাল ভাবে বাঁচানো যায় এই ছোট্ট ডিভাইসটি দিয়ে।




১) বাড়ির চারধারে যতটা পারেন সবুজ গাছ লাগান। পারলে ফল ও ফুলের গাছ লাগান। বাই প্রোডাক্ট হিসেবে মরসুমি ফল আর মধু পাবেন।
২) বাগান যদি থাকে বাগানে মাটি রাখুন যাতে বৃষ্টির জল মাটির গভীরে যাওয়ার রাস্তা পায়।
৩) টবে গাছ লাগান। একটা সবুজ বন্ধু আপনার উপকারই করবে।
৩) কিছু গাছে পাখির জন্য ছোট ছোট বাসা বানিয়ে রাখুন। নুতুন অতিথিতে বাড়িটা ভরে যাবে।
৪) পশু পাখির প্রতি স্নেহশীল হন। পথের পড়ে থাকা কুকুর ছানা বিড়াল ছানাদের বাড়িতে পুষুন। অবশ্যই প্রপার ভ্যাক্সিনেশন করে।
৫) জোর গান , লাউড স্পিকার বাজানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন।
৬) রাস্তায় হাঁটতে  হাঁটতে বা ড্রাইভ করতে করতে গান শোনার অভ্যাস মারাত্মক ! প্রথমত অন্য গাড়িকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বেশি হর্ন দিতে হয়।  দ্বিতীয়ত এই অভ্যাস আপনার প্রাণঘাতীও হতে পারে। 
৭) হাতে সময় নিয়ে রাস্তায় বেরোন। ড্রাইভ করলে হর্ন ফ্রি ড্রাইভ করুন। এটা অনেকেই সাফল্যের সাথে করে থাকে।  এই শহরেই এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা হর্ন বাজান না।  বিশ্বাস করুন একদিন পরীক্ষামূলক ভাবে হর্ন ছাড়া ধৈর্য ধরে গাড়ি চালিয়ে দেখুন। অনেকটা মানসিক আরাম পাবেন।  
৮) প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করুন।
৯) যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলবেন না।  তাতে মাইক্রোপ্লাস্টিক হওয়া এড়ানো যাবে।
১০) পুকুর , নদী ,নালা বা অনত্র যেখানে প্লাস্টিক দেখবেন সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে। ফেলুন

১১) এলাকায় প্লাস্টিক পরিষ্কার অভিযান আয়োজন করুন , জনমত তৈরী করুন।
১২) মাইক্রোবিডস বিহীন প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ইন্টারনেটে খোঁজ নিন কিসে কিসে মাইক্রোবিডস আছে।
১৩) যে সব কাপড়এ মাইক্রোফাইবার আছে তার ব্যবহার ও পরিষ্কারের ব্যাপারে সচেতন হন।
১৪) প্রাকৃতিক ফাইবার যুক্ত জামাকাপড় ব্যবহার করুন।
১৫) বাজার করতে গেলে কাপড়ের ব্যাগ , চটের ব্যাগ ব্যবহার করুন।
১৬) বাড়ি ও গাড়িতে প্রয়োজন ছাড়া এসি বন্ধ রাখুন।
১৭) গাড়ির হর্ন বাজানোর অভ্যাস কমান।
১৮) প্রয়োজন ছাড়া ইলেকট্রিক আলো পাখা বন্ধ রাখুন। সিএফএল বা কম ওয়াটের আলো ব্যবহার করুন। বাড়িতে প্রাকৃতিক আলো আসার পথ বাড়ান।
১৯) সোলার আলো পাখা খুব একটা বেশি দাম নয়।  অনলাইন শপিং এ  বা বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করুন।
২০) দাড়ি কাটার ফোমের জায়গায় জেল ব্যবহার করুন।

২১) রুম স্প্রের জায়গায় ধুপ। ডিওডেরেন্টের জায়গায় পারফিউম বা আতর ব্যবহার করুন। ফুলের ব্যবহার করুন।
২২) পুজোর ফুল বেলপাতা ও অন্যান্য পুজোর সামগ্রী নদীতে ফেলা থেকে নিজে  বিরত থাকুন। অন্য কেউ একাজ করছে দেখলে তাকেও আটকান।
২৩) বেড়াতে গেলে খেয়াল রাখুন যাতে আপনি প্লাস্টিক দূষণ না করেন।  অন্য কেউ প্লাষ্টিক ফেলে গেলে সেগুলো ওয়েস্ট বিনে ফেলুন।
২৪) ঘর পরিষ্কার করার জন্য বিষাক্ত কেমিক্যাল ছেড়ে ভেষজ ক্লিনার ব্যবহার করুন। লেবুর রস , বেকিং সোডা বা ভিনিগার দিয়ে কী দারুন ঘর পরিষ্কার হয় জানেন!! রাসায়নিক ক্লিনারের বদলে ওগুলো ব্যবহার করুন। আরও পরিবেশ ও জল বান্ধব বিকল্প খুঁজুন। নিজে জানুন অপরকে জানান।
২৫) মশা মারার ক্ষতিকর ধুপ বা লিকুইড ছেড়ে ধুনোয় কালকাসুন্দা পাতা ব্যবহার করুন। মশারি টাঙিয়ে ঘুমোনোর অভ্যাস ফিরিয়ে আনুন।
২৬) শিশুদের জু গার্ডেন পার্ক বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে যাওয়ার নিয়মিত অভ্যেস করুন।  ওদের সেখান স্বুস্থ পরিবেশের গুরুত্ব।
২৭) অতিফলনশীল নয় স্থানীয় ফসল চাষ করুন যে ফসল এর ভ্যারাইটিগুলো প্রাকৃতিক ভাবেই কম জল টানে। মনে রাখবেন MORE CROP MORE DROP . বাগানের গাছের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। রাসায়নিক ছাড়া চাষ করুন। জৈব সার ব্যবহার করুন।
২৮) রোজকার বাড়ির কাজে যত কম পারেন রাসায়নিকের ব্যবহার করুন। আর যদি রাসায়নিক ব্যবহার করতেই হয় সেগুলো সঠিক স্থানে ফেলুন যাতে ওই সব ক্ষতিকর জিনিসগুলি মাটিতে না মেশে ,কখনই মাটিতে ফেলবেন না।
২৯)  খেয়াল রাখুন যাতে বাড়ির ব্যবহার্য রং , ওষুধ , মোটর অয়েল , ইঞ্জিন অয়েল সরাসরি মাটিতে না মেশে।
৩০)  ফ্রিজের ব্যবহার কমিয়ে মাটির জালা বা কুঁজো ব্যবহার করুন। জলের অপচয় কম করুন। ব্রাশ করতে করতে ,বা দাড়ি কাটতে কাটতে বেসিনের ট্যাপ বন্ধ রাখুন।

৩১)  বাড়ির ছাদে জলের ট্যাঙ্কে অটোকাট বাজার লাগান। যাতে জল ভরে গেলেই পাম্প বন্ধ হয়ে যায়।
 ৩২) সারা বাড়ির জলের লাইনের নিয়মিত পরীক্ষা করান প্লাম্বারকে দিয়ে। কোন কল, সিস্টার্ন, ভালভ দিয়ে যেন জল নষ্ট না হয়ে যায়। যাঁরা বাস্তুশাস্ত্র বিশ্বাস করেন তারাও বলেন জল নষ্ট হওয়া খারাপ বাস্তুর লক্ষণ। আপনি আপনার আগামীর কথা ভেবে করুন।
৩৩) পারলে বৃষ্টির জল ধরে রাখার ও পরবর্তীতে সেই জল ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
৩৪)  স্নান ,কাপড় কাচা প্রয়োজন। ওগুলোকে বিলাসিতা করে ফেলবেন না। ৫ মিনিটের বেশি স্নান মানে আপনি ক্ষতি করছেন ,এটা মাথায় রাখবেন।
৩৫)  দিনের ঠান্ডা সময় গুলোতে অর্থাৎ ভোরে আর সূর্য ডোবার ঠিক পর বাগানের লনে আর গাছে জল দিন।
৩৬) কাগজ ,প্লাষ্টিক , কার্ডবোর্ড ,কাচ রিসাইকেল করুন। যে সব জিনিস তৈরিতে বেশি জল লাগে চেষ্টা করুন সেগুলো কম ব্যবহার করতে।
৩৭) GROUNDWATER RECHARGE, RAIN WATER HARVESTING বা  WATER DONATE এর ব্যাপারে জানুন ,বাড়ির শিশু ও মহিলাদের জানান , বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।
৩৮) অনুষ্ঠান বা জমায়েত এ থার্মোকল এর থালা বাতি গ্লাস কিংবা কাগজের কাপ প্লেটের বদলে কাচ , স্টিল এর বাসন ব্যবহার করুন। অনুষ্ঠান বাড়িতে শাল পাতা বা কলা পাতা কিংবা পদ্ম পাতা স্বাস্থ্যে ফিট , স্টাইলেও হিট।  
৩৯) বাড়িতেও বাসনপত্রে প্লাস্টিক এর নো এন্ট্রি করুন। 
৪০) গ্যাস , কয়লা , কাঠ এর ব্যবহার কমিয়ে ইন্ডাকশন হিটার বা সোলার কুকার , ইলেকট্রিক কুকারের ব্যবহার শিখুন। অন্যকেও সেখান। 

৪১) বিল পেমেন্টের ক্ষেত্রে কাগজের ব্যবহার একদম না করতে অনলাইনে বিল পেমেন্ট করুন। অর্থকরি লাভও পাবেন সাথে সাথে বেশ কিছু গাছের অকাল মৃত্যুও বাঁচাতে পারবেন। 
৪২) সাইকেল এর ব্যবহার বাড়ান। দূষণ মুক্ত এই যানটির জনপ্রিয়তা আমাদের দেশে পড়তি হলেও। উন্নত দেশ গুলিতে এটি এখনো একটি জনপ্রিয় পরিবহন। 
৪৩) কার পুল করুন। 
৪৪) ব্যাটারি চালিত পরিবহন  সম্বন্ধে জানুন ও বন্ধুদের জানান। 
৪৫) গাড়ির সার্ভিসিং নিয়মিত করান। দূষণ মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। 
৪৬) সেল ফোনের বা ল্যাপটপের নিয়মিত সার্ভিসিং করান যাতে বেশি পাওয়ার কনজিউম না করে। 
৪৭) এসির পাইপ থেকে বেরোনো জল জমিয়ে রেখে সেটিকে ঘর মোছার বা পরিষ্কার করার কাজে লাগান।
৪৮) বাজার করার সময় সার দেওয়া সব্জি বা চালানি মাছ এর চেয়ে স্থানীয় সব্জি বা মাছ কিনুন। খেয়াল রাখবেন যে বেগুনটি পোকায় খাওয়া সেটির স্বাদ অন্য বেগুনের চেয়ে ভাল হয়। কারণ পতঙ্গ রাসায়নিক বিষ দেওয়া সবজিতে বসে না।
৪৯) টিস্যু পেপারের বদলে রুমাল আর প্যাকেজ পানীয় জলের বদলে ধাতব জলের বোতল ব্যবহার করুন।
৫০) ছোটদের কাঠের পুতুল , মাটির পুতুল , তালপাতার সেপাই , তালপাতার বাঁশি জাতীয় খেলনা দিন।  প্লাস্টিক খেলনা ওদের কচি ত্বকের জন্য খারাপ।


Tuesday, June 5, 2018

"ওহ মা ! আর পারছি না !" এই মা আসলে কে ? World Environment Day

মি মাঝে মাঝেই ভাবি , এই যে আমরা ক্লান্ত হয়ে বলি "ওহ মা ! আর পারছি না !" এই মা আসলে কে ? জন্মদাত্রী মা ? কোন দেবী ? কে ? কে এই মা যার স্মরণাপন্ন হই আমরা ঘন ঘন। ক্লান্তি তে দিনের শেষে ঘুমের জগতে পাড়ি দেওয়ার আগে যাকে রোজ মনে মনে ধন্যবাদ দিই আমি আপনি সবাই। জন্মদাত্রী নন কারণ তাঁর সামনে "ওহ মা" বলে  ডাকলেও তিনি কোন প্রতিক্রিয়া দেন না। দেবী দেবতা হওয়ার কোন প্রশ্নই নেই। অনেক ভেবে দেখেছি , এই মা হলেন প্রকৃতি মাতা। মাদার নেচার। যাঁর জন্য আজ বড় জাঁকজমক। তিনি ভাল নেই। বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধার চেয়েও খারাপ আছেন তিনি। ফুটপাথে পাঁপড় বিক্রি করা সন্তান দ্বারা বিতাড়িত মা এর চেয়েও কষ্টে তিনি। প্রতি নিয়ত সন্তানরা তাঁকে ধর্ষণ করছে। অথচ পরম মমতায় সেই সন্তানদেরই তিনি আদর করে আগলে রেখেছেন। বুকে ক্যান্সার বাতাস। সবুজ সজীব গায়ে প্লাষ্টিক পচন। পরনের সমুদ্র নীল শাড়ির মত স্বচ্ছ জলে ঘন কাল বিষ। ভাল নেই প্রকৃতি, ভাল নেই আমাদের চারপাশ ,পরিবেশ।
 এই ধরুন কিছুদিন ধরে সকালে কাগজ খুললে দেখছি পচা মাংস মাছ খাবার হিসেবে নাকি খেয়েছি আমরা বেশ কিছু দিন।  সন্ধেয় টেলিভিশনে বা সারাদিনের ই ভিডিওতে সেই পচা গলা মাংস বাজেয়াপ্ত করার সম্প্রচার। এদিকে আবার নিপা ভাইরাস ছড়াচ্ছে আম, লিচু , মুরগিতে। খাবেন কী মশাই ? ভয়েই মরে যাবেন। আপনার আমার মত সাধারণ মানুষ সাতেও নেই পাঁচেও নেই তাদের মানসিক শান্তি নয়ছয় করে দেওয়ার জন্য এই নিউজ ফিড গুলো যথেষ্ট। দাদা এই তো পরিবেশ। তার আবার দিবস!!! ও কি খায় না মাথায় মাখে ? ঠিকই তো। এই যে কুকুর খেয়েছি মাটন ভেবে এই ভাবনা মনে ঢোকার পর থেকে চাইলেও বমি করতে পারছি না এ কি কম জ্বালা। দাদাভাই ভাববেন না। কষ্ট করে একটু গুগল করুন দেখবেন কুকুর , বিড়াল , ষণ্ডের অন্ডকোষ , টিকটিকি, আরশোলা , মাকড়সা , স্যাপ, ব্যাঙ , জ্যান্ত অক্টপাস , সব খায় তামাম দুনিয়ার মানুষ। দুনিয়া কী এই দেশেই মিজো সমাজে কুকুর খুব সম্মানীয় ও উপাদেয় পদ হিসাবে পরিবেশন  করা হয়। আবার গুগুল করুন পচা আমিষ খাবার। পচা দুধ ,পচা চিজ , সার্ক মেরে তাকে মাটির তলায় চাপা দিয়ে পচিয়ে তাকে শুকিয়ে সেই প্রায় কাঁচা সার্ক যার পোশাকি নাম হাকর্ল সেটা পরিবেশন করা হয়। অবশ্য সেটা নাক খোলা রেখে কিভাবে খাওয়া সম্ভব যাঁরা খেয়েছেন তাঁরাই জানেন। অথবা ইতালির কাসু মারজু। সত্যিকারের পচা চিজ যার থেকে পোকা (ম্যাগট ) বেরোচ্ছে সেটা চাঁদ মুখ করে ওনারা খেয়ে নেন। আর আপনি ধাপার ভাগাড় ফেরত মাংস খেয়ে দ্বিধা করছেন কী খেলাম কী খেলাম ? এ তো দেখছি শাখা প্রশাখার আনন্দ বাবুর মত দাদু আমি একনম্বর জানি দু নম্বর জানি শুনে "কী শুনলাম কী শুনলাম !!!"
ভাবনা ছাড়ুন বরং ভাবুন গোটা পৃথিবীতে উন্নত দেশগুলোয় উল্টোপাল্টা খাবার পচা খাবার আনন্দ সহকারে খাওয়া হয় সেই আনন্দযজ্ঞের নিমন্ত্রনে আপনি পাত পেড়ে খেয়ে এলেন।
ও দাদা , ও দিদি আমাদের এই কলকাতা শহরে যত হাসপাতাল , ছোট খাবারের দোকান রয়েছে সেখানকার উচ্ছিষ্ট খাবার সংগ্রহ করে নিয়ে কিছু লোকজন সব মিলিয়ে মিশিয়ে একথালা করে পেট ভর্তি খাবার এই কলকাতার হ্যাভ নটসদের দেয়। দু এক টাকার বিনিময়ে। ওদের খিদে যে বড় মারাত্মক। পাকস্থলী ভরাতে উচ্ছিষ্ট আর পচা সব এক। আয়তন ডাজ ম্যাটার নট কোয়ালিটি।
জানি মারাত্মক গা গুলোচ্ছে। পচা পচা লাগছে। ভেবেছেন কেন এত মানুষ ফুটপাথে থাকবে? দেশ কেন তাদের খাদ্য , বস্ত্র বাসস্থানের দায়িত্ত্ব নেবে না? সব সম্বলহীন কিন্তু উন্মাদ নয়, তাদের শ্রম দিয়ে যা রোজগার সেই অর্থে তারা সম্মানের জীবন কাটাতে পারে। আসলে আমাদের জীবনযাত্রার জটিলতা বাড়ার সাথে সাথে সবচেয়ে বেশি পচেছি আমরা। আমাদের টার্গেট মুখী জীবন আমাদের মনকে ওই সার্কের মতই স্বার্থপরতার বালি পাথরে চাপা দিয়ে পচিয়ে দিয়েছে। ভাগাড়ের মাংস তো সেই পচনেরই বহিঃপ্রকাশ। আপনার বিশ্বাসের পুঁজি নিয়ে যদি কোন ব্যবসায়ী বা খাদ্য বিক্রেতা আপনাকে পচা মাংস , পচা খাবার খাওয়ায় তাহলে সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে পচেছে তার হৃদয় , মনুষত্ব।
আজ পরিবেশ দিবস। আমার পরিবেশ ? ঘরের ড্রয়িং রুমে ভয় দেখানো খবরীলাল টেলিভিশন। যাদের কাছে অনুপ্রাণিত করার মত খবরের অভাব। ঘন্টা খানেক এর স্বঘোষিত জিরো আওয়ার করে তারা পাতি ঠেকের ঝগড়া বসায় তর্কের নামে। সেটের আলো নিভলে পেমেন্ট নিয়ে আবার পরের দিনের ঝগড়ার জন্য তৈরী হয় ঝগড়ুটেরা। বিনোদন চ্যানেলগুলোতেও মূল উপজীব্য ঝগড়া। আর বস্তাপচা কুসংস্কার ,অন্ধকার। যেন পিরিয়ডিক্যাল সিরিজ হলেই ডায়লগ একটু গেঁয়ো করে দিলেই হল। এদের স্ক্রিপ্ট রাইটাররা কলকাতা সৰ্বস্ব, বাস্তবজ্ঞান রহিত। এদের কাছে গ্রাম মানেই নেগেটিভ অশিক্ষিত জনগণ । এই গেল সান্ধ্য বা মোটামুটি বিনোদনের ডেইলি ডোজ।
রাস্তায় আমার পরিবেশ। হর্নের দাপটে কান পাতা দায়। তার সাথে বেআইনি সাইলেন্সার ওয়ালা বাইক। পুলিশ দেখছে কিন্তু কিছু করার নেই। কারণ শব্দদূষণের জন্য আইন ততটা কড়া এখনো নয় এখানে।
আর পথচারী ? কানে হেডফোন  সোজা যেন ব্রেনে তার ঢুকে গেছে। ও ভাই ,ও বোনটি রাস্তা তো গান শোনার জায়গা নয়। বাড়িতে শোনো। ড্রাইভ করতে করতেও সে তখন সংগীত সুধা পান করে চলেছে। অতএব আমার পরিবেশ অস্থির , ভয়ার্ত , অবিশ্বাসের বিষে নষ্ট পচা।
এবার আসি মা প্রকৃতির কথায়। এর বেশ কয়েকটা আগের ব্লগে জল , প্লাষ্টিক এসব নিয়ে বলেছি।  সংরক্ষণ কর্মীদের কথা আজ একটু হোক।  পৃথিবীটা মানুষের একচেটিয়া অধিকার কায়েম করার জায়গা নয় এখানে একটা গুবরে পোকা যতটা গুরুত্বপূর্ণ , ততটাই একটা হাতি বা বটগাছ বা হাঙ্গর। শুধু মানুষের উন্নতির কথা ভাবলে বাড়বে দূষণ ,বদলাবে জলবায়ু।  এই ধরণের বিশ্বাসকে ধর্ম করে চলা পরিবেশ আক্টিভিস্ট দের মধ্যে ২০১৫ সালে  প্রায় ১৮৫ জন আর ২০১৬এ প্রায় ২০০ জন পরিবেশ কর্মী খুন হয়েছেন। ভারতে পরিবেশ কর্মীদের কবর খোঁড়ার সংখ্যাটা বাড়ছে।




শীলা মাসুদ বাঘ বাঁচানোর আন্দোলন ও করাপ্সন এর বিরুদ্ধে কাজ করতে  গিয়ে ২০১১এ বাড়ির সামনে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে গুলিবিদ্ধ হলেন। আবার কেরালার কাদার আদিবাসীদের হাতির পরিযান পথ ও রেন ফরেস্টের সংরক্ষণের জন্য ১৫ বছরের সংগ্রাম ভারতের পরিবেশ আন্দোলনে এক উজ্জ্বল উদাহরণ। 
এসব তো জানা কথা। এতক্ষন কিছুটা আশা অনেকটা হতাশা , খানিকটা ভয় সব হল। এখন চলুন দেখি পরিবেশ রক্ষায় আপনি আমি কি করতে পারি।   
১) বাড়ির চারধারে যতটা পারেন সবুজ গাছ লাগান। 
২) বাগান যদি থাকে বাগানে মাটি রাখুন যাতে বৃষ্টির জল  গভীরে যাওয়ার রাস্তা পায়। 
৩) কিছু গাছে পাখির জন্য ছোট ছোট বাসা বানিয়ে রাখুন। নুতুন অতিথিতে বাড়িটা ভরে যাবে। 
৪) পশু পাখির প্রতি স্নেহশীল হন। 
৫) জোর গান , লাউড স্পিকার বাজানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন। 
৬) প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করুন। 
৭) বাজার করতে গেলে কাপড়ের ব্যাগ , চটের ব্যাগ ব্যবহার করুন। 
৮) বাড়ি ও গাড়িতে প্রয়োজন ছাড়া এসি বন্ধ রাখুন। 
৯) গাড়ির হর্ন বাজানোর অভ্যাস কমান। 
১০) প্রয়োজন ছাড়া ইলেকট্রিক আলো পাখা বন্ধ রাখুন। 
১১) সোলার আলো পাখা খুব একটা বেশি দাম নয়।  অনলাইন বা বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করুন। 
১২) দাড়ি কাটার ফোমের জায়গায় জেল ব্যবহার করুন। 
১৩) রুম স্প্রের জায়গায় ধুপ। ডিওডেরেন্টের জায়গায় পারফিউম বা আতর ব্যবহার করুন। ফুলের ব্যবহার করুন। 
১৪) পুজোর ফুল বেলপাতা নদীতে ফেলা থেকে বিরত থাকুন। 
১৫) বেড়াতে গেলে খেয়াল রাখুন যাতে আপনি প্লাস্টিক দূষণ না করেন।  অন্য কেউ প্লাষ্টিক ফেলে গেলে সেগুলো ওয়েস্ট বিনে ফেলুন। 
১৬) ঘর পরিষ্কার করার জন্য বিষাক্ত কেমিক্যাল ছেড়ে ভেষজ ক্লিনার ব্যবহার করুন। 
১৭) মশা মারার ক্ষতিকর ধুপ বা লিকুইড ছেড়ে ধুনোয় কালকাসুন্দা পাতা ব্যবহার করুন। 
১৮) শিশুদের জু গার্ডেন পার্ক বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে যাওয়ার নিয়মিত অভ্যেস করুন।  ওদের সেখান স্বুস্থ পরিবেশের গুরুত্ব।  

Wednesday, May 9, 2018

মিছে কোলাহল - ২৫ শে বৈশাখ

Whatsapp এ একটা ছবি পেলাম। ছবিটা দেখে বমি বমি ভাব মানে বিবমিষা লাগছিলো। একজন মানুষ যাঁর কাজ বহু মানুষ কে আলোর পথ দেখিয়েছে তাঁর ব্যক্তি সত্ত্বার প্রতি আমাদের কিছু মানুষের অন্ধতা যেমন হতাশাব্যাঞ্জক তেমনই  কুরুচিকর ও হতাশাব্যাঞ্জক এই ফটোশপ। একটা বাজে লেখার শুরু করছি।
ছবি: ইন্টারনেট 


রবি ঠাকুর আপনার প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, সম্মান নেই আমাদের। যদিও আজ আপনার দিন, আজ আপনাকে নিয়ে গদগদ ভাবাবেশ। তবু আজই বোধহয় সত্যি কথাটা কনফেস করা প্রয়োজন। বাঙালির কাছে আপনার সবচেয়ে বড় পরিচয় আপনার সঙ্গীত। আপনার প্রবন্ধ গদ্য ছোটগল্পের ভাঁড়ার নিয়ে পশ্চিম বাংলার আম বাঙালির তেমন ইন্টারেস্ট নেই। আপনি বলতে সাধারণ বাঙালি যা বোঝে সেই সঙ্গীতের জনগণতান্ত্রীকতার জন্য বরাদ্দ এখন ট্রাফিক বাতির লাউড স্পিকার। যেখানে কাঠফাটা রোদে মিসম্যাচ আপনার একা জ্যোৎস্না রাতে ঘরে না থাকার আকুতি। ছুটন্ত শহর সময়ের পিছনে তাড়া করছে যখন, তখন আপনার সুর, কথা, কোথায় কী ?!! সেকেন্ড বদলাতে থাকা ইলেকট্রনিক মনিটরে তখন সব চোখ।
মাফ করবেন রবিন ঠাকুর!!! আজ আমরা আপনার ঐতিহ্য সম ব্যক্তিত্যের গায়ে পড়া আলোর প্রতিফলন টুকু নেওয়ার জন্য উন্মাদ। আপনার জন্মদিনে আপনার সৃষ্টি আপনার পৌত্তলিকতার কাছে হার মেনেছে। আপনি যতই দাবি করুন না কেন "মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক আমি তোমাদেরই লোক। " আমরা সযত্নে আপনাকে দামি, সুদৃশ্য, অ্যান্টিক শো পিসের মত সাজিয়ে গুজিয়ে আপনাকে দেবত্ব প্রদান করেছি। আপনার পুজোর বাহ্যিক আড়ম্বরে মৃত আপনার সৃষ্টি, আপনার মূল্যবোধ, আপনার অন্তরাত্মা। আর সেই ঠাকুর আপনির নৈবেদ্যর তলায় অবিশ্বাসের পচন, স্বার্থপরতার দুর্গন্ধ, হানাহানির শঙ্কা, আর ধর্মীয় মোহের অন্ধতা। আর ওপরে জেগে থাকে বাটিকের শৌখিন পাঞ্জাবি শাড়ি , বিদেশী পারফিউম আর রজনীগন্ধার বাহার।
সত্যি বলছি, একশো ভাগ খাঁটি, খুব রাগ হয়। আপনার অসহায়তা দেখে! আপনার ছবির বুক ঢেকে যাচ্ছে ফুলে, মালায়। অন্তরের নৈবেদ্য নেই, নেই আপনার কাজের চর্চা, আছে শুধু চোখ জ্বালা করা ধুপের ধোঁয়া, দীপের আলোর ধাপ্পাবাজি। কাগজে, পাথরে, কাপড়ে, সিল্কে, সুতিতে, টেরাকোটায়, তামায়, পিতলে, ব্রোঞ্জে, ফাইবার গ্লাসে আপনার মূর্তি বানানো। "প্রাণের ঠাকুর", "আলোর দিশারী", "জীবন কাণ্ডারী" নানান বিশেষণে আজ আপনি সবিশেষ। কিন্তু সত্যিটা ভাঙা রেকর্ডের মতই দূরে কোথাও একলা অবহেলায় বাজছে- "তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না করে শুধু মিছে কোলাহল, সুধা সাগরের তীরেতে বসিয়া পান করে শুধু হলাহল।" আপনি বাঙালির এস্ট্যাবলিশমেন্ট শট, গোটা জাতটার ব্র্যান্ড এম্বাসাডার, আইকনিক ফিগার। কিন্তু আপনার পর আপনাকে, আপনার চেতনার পথকে অনুসরণ করতে আমরা কী করেছি? বৎসরান্তে দুর্গাপুজোর মত পাড়ায় পাড়ায় মাচা ঠুকে ২৫শে বৈশাখ পালন, দু এক পিস সিডি রেকর্ড করা, ইউটিউব সিংগলস্ করা, বিজ্ঞাপনে আপনাার সৃষ্টির বিকৃতি করা, বিদগ্ধ মানুষজনের বৈবাহিক ডিভিডিতে আপনার গান এডিট করে লাগিয়ে দেওয়া।এই ভাবেই বাঙালি চর্বিত চর্বণ করছে ,করে চলেছে আপনাকে। আর মাল্টিপ্লেক্সের সিনেমার শুরুতে আপনার গানের ভ্যাঙানি ভার্সন - "জ্যান জ্ঞান ম্যান ইয়াধি ন্যাঈয়াক জ্যায় হে। হে হে রাভিন্দরনাথ!!বোধহয় এভাবে শুনতে ভাল লাগছে না, জানি কিন্তু কী করব বলুন! সত্য তো ভালতেও সত্য, মন্দতেও সত্য। আর ভাল লাগছে না বলেই লিখছি। আনুষ্ঠানিক উপাচারের বাইরে আজ কোথায় আপনি?  আমাদের দৈনন্দিন জীবন চর্চা, আমাদের দৈনন্দিন বিনোদন, আমাদের সৃষ্টি, কৃষ্টি, সংস্কৃতি আজ আপনাকে ছাড়াই সাবলম্বী। টেলিভিশন এর ভীষণ ভাষণ বা আধাখেঁচড়া বাংলা শুনে বড় হচ্ছে যে প্রজন্ম তাদের কথা তো বাদই দিন। যাদের হাতে টেলিভিশনাচারের গুরু দায়িত্ব তাদের আলমারিতে আপনি থাকলেও মননে - ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই । কিংবা সংবাদ পত্রে যাঁরা উদ্বেগ জনক খবরকে গুরুত্ব দেন যাঁরা, ধর্ষকাম কে ধিক্কার দিয়ে মনের মত বন্ধু বান্ধবী বা মাসাজ পার্লারের বিজ্ঞাপন আবার তাঁরাই ছাপেন। তাঁরাই আবার প্রান্তিকে বাড়ি করেন আপনার ছত্রছায়ায় থাকবেন বলে। আপনার নামে ট্রেন, বাস, হোটেল, ট্যুরিজম কোম্পানি, চায়ের দোকান, মনিহারী, চাউমিন ব্রান্ড। ঠাকুর, কিতনে আদমি হ্যায়!!! ও ঠাকুর হাট হাট। হাট বসেছে। আর সেই হাটে একমাত্র পণ্য আপনি। বিশ্বে বাংলার ব্রান্ড ভ্যালু আপনি। বাংলার ইউ এস পি, আপনি। অথচ আজ ভয়ঙ্কর ভাবে অনুপস্থিত আপনার অস্তিত্ত্ব। এ পোড়া জাতটাকে একবার বেঁচে উঠতে বলুন আপনার অন্তরাত্মাকে অনুসরণ করে। পৌত্তলিকতা , আপনার ভজনা আপনাকে আক্ষরিক অর্থে ঠাকুর বানিয়ে ফেলা বোবা বাঙালিকে বোকা বাঙালির বোধোদয় এর প্রার্থনা করুন আপনিও, রবীন্দ্রনাথ।
ছবি : ইন্টারনেট 

পরিশেষে আর একটি সোশাল সাইটে বহুল প্রচারিত ছড়া দিলাম ছড়িয়ে।

তোমার নামে সদন যেথায়,
সেথায় আমরা প্রেম করি ;
তিনটে স্টেশন তোমার নামে,
রোজ সকালে ট্রেfন ধরি !
ভর দুপুরে ট্রাফিক জ্যামে
রোদ্দুরেতে কাঠ ফাটে,
লাউড- স্পিকারে তোমারি গান –
“পায়ের চিহ্ন এই বাটে”
আজকে তোমার হচ্ছে পুজো
ঝাড়ছি ধুলো, জ্বালছি ধূপ
বেবিডল আজ কৃষ্ণকলি
তোমার ফটোয় ফুলের স্তূপ।
কাল-ই কিন্তু স্টোর রুমেতে তে
পাঠিয়ে দেব তোমায় ঠিক,
প্রাণ জুড়োবে গান শুনিয়ে
রেডিও মির্চি রাবীন্দ্রিক !
আজকে তোমার মুর্তি ধুয়ে
করছি আমরা পরিপাটি
কাল থেকে ফের তোমার মাথায়
কাক পক্ষী করবে পটি....
আমরা পড়ব ব্যস্ত হয়ে,
আই পি এল এই সব দিনই
দাড়িবুড়ো তোমার জন্যে
বরাদ্দ বস একদিন-ই.....
ফ্যান তো হেথায় ভালোই জোটায়
অরিজিত আর হানি সিং
তোমার ফ্যানের কাউন্ট জানো?
ছদ্মবেশী ভানুসিং?
তোমার নামে পেজ রয়েছে
ফেসবুকে আজ খান শয়েক....
স্বর্গ থেকেই লাইক ঠুকে দাও
পেজ গুলোতে খান কয়েক ....
দেখবে কেমন ভরে যাবে
তোমার এফ বি নিউজ ফিড...
দেড়শ বছর পরেও তুমি
ইকুয়ালি সুপারহিট .....
আধুনিকের সংগা তুমি
তুমি গুরু তুলনাহীন
তুমি বিনা আমরা যেন
ফুচকাটা টক জল বিহীন ....
আগামী মাস টা বিয়ের সিজিন
ব্যাস্ত থাকবো প্রায় দিনই
কবিগুরু তোমার জন্য
বরাদ্দ বস এক দিনই.....

অসম্ভব একটা খারাপ লাগা থেকে উৎপন্ন হওয়া হতাশা থেকে এই লেখাটা লিখলাম। কারো খারাপ লাগলে হয় পাগলের প্রলাপ বলে ভুলে যাবেন। নয়ত নিজ গুনে ক্ষমা করবেন। 


Monday, May 7, 2018

Pradip Sur : Philosopher, Artist and Artisan







My chance to encounter with Pradip Sur was created by my current assignment. I am working in a documentary on a group of 17 prolific painters, sculptors, print maker and photographers. The shooting is taking place in Chandannagar, the former French enclave in West Bengal, His friendly behavior and jovial attitude made me feel at home and soon earned him the epithet of Da (a Bengali honorific denoting elder brother). Pradip Sir became Pradip da for all of us.

With his silvery white hair and beard, Khadi Kurta and flat cap, Pradip Sur resembles the quintessential Bengali intellectual. Not only does he live up to that image but he is also a humble  and down to earth man. So it’s hard to believe that the same person sculpted the logo of NANDAN, the Film and cultural hub of Bengal that was designed by Satyajit Ray.

Apparently the great Ray after he had designed the iconic NANDAN logo was looking for a sculptor to create the huge logo in steel. The chief engineer of the project was looking for young artists who could execute the same. The young troika of Bikas Mukherjee, Mohi Paul and Pradip Sur stepped forward. Then they had formed a new company called “United Designers”. Sur suggested that the sculpture be made from fiber glass material. The Chief engineer was too wary of Ray’s persona to make the suggestion himself. He setup a meeting between Sur and Ray. In the meeting Ray patiently listened to the young Sur and suggested Sur to return with a 1 feet diameter fiber glass replica of the logo. Sur came back within one week with a perfectly crafted fiber glass replica. Ray approved with some minimal correction and the rest is history. The 10 feet diameter NANDAN logo could still be seen on the facade of Kolkata’s premier Art and culture hub.

Sur in his young age was very much moved by Auguste Rodin’s sculpture after watching an exhibition of the famous French sculptor. He was inspired by the philosophy of Rodin’s work.


For him Rodin held out an important lesson. Namely the distinction between commercial and fine art, the distinction between artist and artisan is artificial. Sur noticed that all of the displayed works of Rodin were executed against “orders” but that never detracted from their artistic value.The great sculptor had left his Midas touch in all of his works which are now considered timeless. The fact that all of his work was delivered as commercial projects doesn’t come in way of their appreciation. I think this is a fundamental learning for all of us who are engaged in the field of visual arts and sometimes feel snobbish about popular art works.” says Sur. 

What a vision! I think this should be the guideline for all who are engaged in the trade of serious visual art form. Now a days Mukherjee, Paul and Sur have all aged gracefully. With their silver mane and wizardry with their fingers they would not feel out of place as philosophers or as Gandalf in Lord Of The Rings. Sur still frequents the NANDAN precincts. Does he feel pangs of nostalgia? Or is it just another stepping stone in the artist’s journey? Sur demurs with his trademark gentle smile. “The only thing that’s important to me whether I am able to respect my own work.”



About Pradip Sur: Sculptor Pradip Sur is the founder member of an artist guild of West Bengal named ‘CONTRIVANCE’-established in the year of 1979. Abundant Art Gallery has arranged an exhibition from 10th of this month in the Le Dame Art Gallery of London, where Sur and his other teammates’ art works will be exhibited. We are engaged in making promos for this very exhibition. 


Follow me in twitter , facebook and youtube


Tuesday, May 1, 2018

নন্দন, সত্যজিৎ ও প্রদীপ | The Sculptors who crafted the logo of NANDAN Designed by RAY

 ম্প্রতি ভারতীয় পেন্টিং ও স্কাল্পচার নিয়ে একটা কাজ করছি। প্রায় ১৬ -১৭ জন শিল্পীদের নিয়ে কাজ। প্রত্যেকের ওপর টুকটাক পড়াশোনা, তাদের কাজের ধরনের খুঁটিনাটি নিয়ে একটু রিসার্চ করে শ্যুট শুরু করলাম। চন্দননগরে পরিচয় হল শ্রী প্রদীপ সুরের সাথে। সদা আলাপি হাস্যময় প্রদীপ বাবু থেকে প্রদীপ দা হয়ে উঠতে সময় নেন খুব কম।  রঁদ্যার কাজের প্রদর্শনী দেখে যৌবনে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন প্রদীপ দা।  বিশ্বাস করেন শিল্প যদি সমাজ গ্রহণ করে তখন বুঝতে হবে সেই শিল্পের আর্ট থেকে ফাইন আর্টে উত্তরণ ঘটছে। আমরা যারা ভাবি শিল্পীর বেসিক কাজই একমাত্র ফাইন আর্ট ; প্রদীপ সুরের ভাবনা তাদের  সেই বোধকে নাড়িয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন " রঁদ্যা তাঁর জীবনে যা কাজ করেছেন সবই অর্ডারী কাজ বা ওজুরার কাজ। কিন্তু তার শৈল্পিক মূল্য কোনও মতেই কম না। অর্থাৎ আমি একটা স্কাল্পচারই করি বা বিয়ের পিঁড়েই আঁকি সবই আসলে আমার শৈল্পিক মূল্যবোধের বিচ্ছুরণের মাধ্যম। সবই আসলে আমারই কাজ। তাই সবটাই সমান গুরুত্ত্ব দিয়ে করতে হবে। " ওনাদের শিল্পীদলের নাম কন্ট্রাইভ্যান্স। আগামী ১০ তারিখ থেকে লন্ডনের লা দেম আর্ট গ্যালারি তে ওঁদের প্রদর্শনীর আয়োজন করছে Abundant Art Gallery । সেই নিয়েই আমাদের কাজ চলছিল। প্রাণবন্ত প্রদীপদা সারা শ্যুট জুড়ে ছটফটে। যেন ইউনিটের সবচেয়ে ছোট বাচ্চা। সাউন্ড টেক হচ্ছে ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রদীপ দার গলা। কাট কাট। ও প্রদীপদা চুপ করুন।
এরকমই মানুষ টা। অথচ পশ্চিমবাংলার ফিল্ম ও সংস্কৃতির পীঠস্থান নন্দনের লোগো ওনার বানানো !!!





হ্যাঁ, সময়টা আশির দশকের শেষভাগ, সত্যজিৎ রায়ের পরিকল্পনায় তৈরী হচ্ছে নন্দন। লোগো ডিজাইনের কাজ করে ফেলেছেন সত্যজিৎ। স্টিলের বিশালাকার লোগো তৈরির জন্য খোঁজা হচ্ছে ভাস্কর। প্রজেক্টের দায়িত্বে থাকা চিফ ইঞ্জিনিয়ার আর্ট কলেজের পাস আউটদের খুঁজছেন এই কাজের জন্য। এখনকার স্টলওয়ার্ট বিকাশ মুখোপাধ্যায় ,মহি পাল ও প্রদীপ সুরেরা তখন তরুণ,সবে বেরিয়েছেন আর্ট কলেজ থেকে। তাঁরা তৈরী করেছেন ইউনাইটেড ডিজাইনার নামের কোম্পানি। নন্দনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার যোগাযোগ করলেন তাঁদের সাথে। ইউনাইটেড ডিজাইনারের তরফ থেকে প্রদীপ, ইঞ্জিনিয়ারকে পরামর্শ দিলেন লোগোটা স্টিলের না করে ফাইবার গ্লাসে করবার। রায় বাবুর মুখের ওপর কথা বলার সাহস নেই জানিয়ে দিলেন অভিজ্ঞ বাস্তুকার। তরুণ প্রদীপ সত্যজিতের সাথে একটিবার আলাপ করিয়ে দিতে বললেন  চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে। সেইমত মিটিং ফিক্স হল। প্রদীপের যুক্তি মন দিয়ে শুনলেন সত্যজিৎ। একটা ছোট রেপ্লিকা দেখতে চান তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন জানালেন নন্দনের রূপকার। কিছুদিনের মধ্যে লোগোর ডিজাইনেরই দেড় ফুট ব্যসের একটা 'ন' এর ক্ষুদ্র সংস্করণ নিয়ে প্রদীপরা হাজির হলেন বিশপ লেফ্রয় রোডে। পছন্দ হল সত্যজিতের। হালকা সংশোধন দিলেন অস্কার জয়ী পরিচালক। "ব্রাশের দাগ গুলো যেন না থাকে " তৈরি হল নন্দনের ১০ ফুট ব্যসের লোগো।

আজ প্রদীপ , বিকাশ, ও মহি বাবুর বয়সে সময়ের ছাপ। মনের বয়স যদিও তরুণ। একাডেমি নন্দন চত্বরে আসেনও মাঝেমাঝে প্রদীপ সুর। কোথাও কি নস্টালজিয়ায় ভোগেন তিনি ? নাকি ভাবেন প্রতিটি কাজ ই আসলে প্রাকটিস। আর নিজেই মনে মনে হাসেন, নিজের পুরোনো কাজ দেখে।  ভাবেন স্রষ্ঠার কাজই হল চরম যত্ন সহকারে পরম মমতায় অপরের কাজকে নিজের করে তৈরি করা। তারপর তাকে ভুলে যাওয়া। হেঁটে চলা আগামীর দিকে।

Sunday, April 22, 2018

আর্থ ডে র ছুতোয় আজ শোনাব প্লাষ্টিক এর কথা


জ ধরণী the boss !! আসলে আজ ধরণী দিবস কিন্তু মজা করতে ইচ্ছে হলে এভাবেও বলা যায়। মানুষ ছাড়া বসিং আর কেই বা দেখতে পারে এই জগতে ! আগেও বলেছি এই ব্লগে আবার বলছি আজ। আর্থ ডে র ছুতোয়। আজ শোনাব প্লাষ্টিক এর কথা। যে প্রজাতির বিছানার তোষকের তলায় ক্যারি ব্যাগ আর খবরের কাগজ শায়িত থাকে তাকেই বাঙালি বলে।  আমার মা ও এর ব্যতিক্রম নয়। বাজারের সব্জি মাছ মাংসের চেয়ে প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগ তাঁর এত প্রিয় যে তাঁকে ক্ষেপিয়ে প্লাষ্টিক গণ আর ক্যারিব্যাগ রাশি বলি আমরা আড়ালে আবডালে। আসলে আমরা সবাই বোধহয় এমনই। শোর, গ্রামে ,রাস্তায় ,সমুদ্রতটে , মরুভূমিতে , দূরবর্তী পাহাড় বা দ্বীপে একটা জিনিস আমাদের জীবনযাত্রায় কমন- প্লাষ্টিক। পরিবেশ নোংরা করার সবচেয়ে সহজ এবং ভয়ঙ্কর উপাদান হল প্লাষ্টিক। প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহারে গোল্লায় যেতে বসেছে আমাদের এই গোলকটি। এই গ্রহটি। একমাত্র যেখানে প্রাণ বিরাজ করে। আপনি হয়ত বলবেন প্লাষ্টিক কি সত্যিই এত বড় ভয় ? আমাদের জীবনযাত্রাকে এত সুবিধা দেয় , জল থেকে বাঁচায় , জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে এত সাহায্য করে যে তা কি করে এতটা মারাত্মক হতে পারে।  আমাদের আসবাবপত্রে , ইমারতি দ্রব্যে , গাড়িতে, বাড়িতে , স্কুলে, অফিসে , ইলেক্ট্রনিক্সে , চিকিৎসায় সর্বত্র সবজায়গায় বিদ্যমান প্লাষ্টিক। এ তো আমাদের পরম আত্মীয়। সকালে ব্রাশ করা থেকে শুরু করে রাত্রে শুতে যাওয়া পর্যন্ত প্লাষ্টিক , পলিমার ,পলিথিন ছাড়া জীবন তো অচল ! তাহলে ধৈর্য্য ধরে এই লেখা টা পড়ুন।
১৯০৭এ প্লাস্টিকের আবিষ্কার সভ্যতার এক যুগান্তকারী ঘটনা। তারপরই প্লাস্টিকের জিনিসপত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে উঠল। তারপর বহুবছর ধরে প্লাষ্টিক, পলিথিনের মোহে আমরা বুঁদ হয়ে রইলাম। আমার পৃথিবী পলিথিনে মলিন করে Go Green এর গোঁয়ার্তুমি স্ট্যাটাস সিম্বল হল। আর আমরা বোঝার চেষ্টাই করলাম না পশুপাখির আর মানুষের শরীরে , প্রকৃতির ভারসাম্যে , জলবায়ুতে কোথায় কোথায় কী কী অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল প্লাস্টিকের হাত ধরে। তেল আর প্রাকৃতিক গ্যাস তৈরির বাইপ্রোডাক্ট হল প্লাষ্টিক। পরিবেশে বিলীন হয় না এমন কিছু হাইড্রোকার্বন যৌগ যার সবচেয়ে বড় মারণ ক্ষমতাই হল অবিনাশী হওয়া। যেন রক্তবীজের বংশ। একফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়লেই তার থেকে হাজার হাজার রাক্ষস তৈরি হবে। আর এক্ষেত্রে জলে প্লাষ্টিক মিশলেই বেগতিক। সে প্রসঙ্গে আসছি পরে। তার আগে দেখে নি সরাসরি কিভাবে প্লাষ্টিক আমাদের মানবদেহের  ক্ষতি করছে।

প্লাষ্টিক আর আপনি
দশকের পর দশক বিলিয়ন ট্রিলিয়ন গ্যালন তেল ও প্লাষ্টিক উৎপাদনের পর টনক নড়ল আমাদের।বুঝলাম আমরা কী মারাত্মক ফল এর। ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তখন দাপাদাপি করছে আমার ড্রয়িং রুমে , আপনার কিচেনে , ওনার ফ্রিজে। মাথাব্যথার বিষয় , বিড়ম্বনার বার্তা ততক্ষনে বয়ে এনেছে প্লাষ্টিক দূষণ। খাবার রাখার পাত্রে  আর পানীয় রাখার বোতলের থেকে ছড়িয়ে পড়ছে অত্যন্ত ক্ষতিকর সব বিষ যা এলোমেলো করে দিতে পারে মানব শরীরের রসায়ন। ঘেঁটে দিতে পারে ক্রোমোজোমের নামতার প্যাঁচ , বিচ্ছিরি প্রভাব ফেলতে পারে জননতনতন্ত্রের জটিলতায়। পারে কেন পারছে। প্লাস্টিকের প্রভাবে শুধু খাবার আর পানীয় বোতল, কাপ, গ্লাসে মেশা ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে বাড়ছে  অল্প বয়সে ডায়াবেটিস , মস্তিস্ক ও স্নায়ুরোগ , কার্ডিওভাসকুলার ক্ষতি , ওবেসিটি , আর্লি পিউবার্টির মত শারীরবৃত্তীয় দুর্ঘটনা।  এমনকি ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতাও বাড়াচ্ছে ওই প্লাষ্টিক , তাদের কুপ্রভাবে শরীরে কেমোথেরাপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতাও জমিনে যাচ্ছে। কিছু প্লাস্টিকে আবার থাকে  DEHP প্যাথালেট আর কেমিক্যাল BPA ওই ধরণের প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার যদি রেখে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করা হয় আর সেই রাসায়নিক সংক্রমিত খাবার যদি কোনো শিশু খায় তবে তার মানসিক ও দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে , শুধু তাই নয় হতে পারে তার হরমোনাল আর রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেমের গড়বড়ও। এবার কি একটু নিজের কাবার্ড খুলে কাচের বাসন গুলো ঝুল ঝেড়ে বের করবেন ?

প্লাষ্টিক আর পরিবেশ 
প্লাস্টিকের মত পরিবেশ নোংরা করার জুড়ি মেলা ভার। )তাই হয়তো আপনি ভাবতে পারেন নালা , নর্দমার মুখে জমে গিয়ে ব্লকেজ করে বানভাসি করা প্লাস্টিকের দূষণ চরিত্র। অরে দাঁড়ান দাঁড়ান। এখানেই শেষ নয় ক্ষতির খতিয়ান। চলুন দেখি কিভাবে জন্মায় প্লাস্টিক ? রিফাইন্ড গ্যাসোলিন , কেরোসিন , পেট্রল বা ডিজেলের মত প্লাস্টিকও একটা পেট্রোলিয়াম। তাই ড্রিল করে তৈলকূপ থেকে তেল বের করা থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে সেই তেল কে প্লাস্টিক পর্যন্ত যেতে যে সব প্রক্রিয়াকরণ চলে তাতে পরিবেশের বায়ুমণ্ডলে মেশে কার্বন মনোক্সাইড , হাইড্রোজেন সালফাইড , ওজন , বেঞ্জিন  আর মিথেন। এই গ্যাস গুলির মধ্যে মিথেনের গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ানোর ক্ষমতা কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও বেশি। একটা হিসেবে দিই পেট ( PET) হল পলিথিলিন টেরেপথ্যালেট (Polyethylene Terephthalate ) যা থেকে প্লাস্টিকের বোতল তৈরী হয়।  এই পেট এর প্রতি এক আউন্স তৈরি করতে গিয়ে বাতাসে মেশে ৫আউন্স  কার্বন ডাই অক্সাইড। বুঝুন কান্ড ! কী মারাত্মক ঝঞ্ঝাটের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের ভাগের মা প্রকৃতি , মা পৃথিবী। আগের কারণ গুলো ঘটনা গুলো একটু দূরবর্তী।  কিন্তু এটা তো একেবারে "ক্লিয়ার হ্যায় " তুফানি ঠান্ডা pet বোতলে ভরে সর উঠাকে পিও বলতে বলতে কতটা যে সর ঝুঁকিয়ে ফেলেছি আমরা। আমাদের নেহাত সখের জীবনযাত্রার খেসারত দিচ্ছে বায়ুমণ্ডল , বিষ বায়ু বুকে নিয়ে পাল্টে ফেলছে ক্লাইমেট। চলুন তো অনেক হয়েছে।  এবার সবাই অঙ্গীকার করি প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করাটা অভ্যাসে পরিণত করব। যুদ্ধং দেহি ভাবে বলি End Plastic Pollution

মহাসাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের ওজন বাড়ছে 
চমকে যাবেন না বিজ্ঞানীদের মত ২০৫০এ সারা পৃথিবীর সব মহাসাগরে ভাসমান প্লাস্টিকের মোট ওজন যা হবে তত ওজনের মাছ থাকবে না সাগরজলে। ইতিমধ্যে পৃথিবীর তিনভাগ জলে তৈরী হয়েছে ৫টি গার্বেজ প্যাচ। ক্যালিফোর্নিয়া আর হাওয়াই দ্বীপের মাঝে , আটলান্টিক আর ভারত মহাসাগরে তৈরী হয়েছে এমনি সব ভাসমান জঞ্জালের প্যাচ। তবে এর মধ্যে GPGP বা গ্রেট প্যাসিফিক গার্বেজ প্যাচ এর কথা আপনারা যাঁরা জল দিবসের ব্লগটি পড়েছেন জানেন। তো সমুদ্রের জলে এই ভাসমান প্লাস্টিক জলের ধাক্কা আর রোদের তাপে ভাঙতে থাকে।  ভেঙে ছোট ছোট টুকরোয় পরিণত হয়। সামুদ্রিক জীবজন্তুর মস্তিস্ক মানুষের মত বদমাইসিতে ভরপুর না। ওরা খাদ্যভ্রমে প্লাস্টিকের টুকরো খেয়ে ফেলে। প্লাষ্টিক তো হজম হওয়ার নয়। তারফলে যা হওয়ার তাই হয়। প্লাস্টিক জমে থাকে পাকস্থলী জুড়ে।  ওই জীবটির খাদ্যগ্রহণ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে মৃত্যুর অপেক্ষা করে প্রাণীটি। নয়তো মমির মত শুকিয়ে যায়। এদিকে পাখিদের অবস্থা আরও সঙ্গিন। মাছ ধরার সুতো , জঞ্জাল প্লাষ্টিক ব্যাগে জড়িয়ে মৃত্যু হয় বহু পাখির।সামুদ্রিক কচ্ছপরা প্লাস্টিক ব্যাগকে জেলিফিস ভেবে খেতে গিয়ে কাল ডেকে আনে। এ দৃশ্য ডকুমেন্টারি চ্যানেল গুলোয় দেখে দেখে কতকটা গা সওয়া হয়ে গেছে যেন আমাদের। সামুদ্রিক মাছ যদি প্লাস্টিক খেয়ে ফেলে তাদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।  আর কালক্রমে ওই প্লাস্টিক ভাঙতে ভাঙতে পরিণত হয় মাইক্রোপ্লাস্টিকে। মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা রক্তে প্রবেশ করে। তারপর সেই মাছ যে প্রাণী খায় তার দেহেও অনুপ্রবেশ ঘটে মাইক্রোপ্লাস্টিকের। টক্সিন ক্ষমতাধারী এই অনু প্লাস্টিক নিঃশব্দে ক্ষতি চালায়।  
মাইক্রোপ্লাস্টিক
দীর্ঘ দিন জলে বা সূর্যের আলোয় বা দুটিতেই যদি পরে থাকে সেক্ষেত্রে সেই কঠিন প্লাষ্টিক ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়। জলজ প্রাণীর খাদ্যের মাধ্যমে সেই মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে প্রাণীর রক্তে। এভাবে আমূল বদলে যায় ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য। এছাড়াও রয়েছে মাইক্রোবিড যা ব্যবহৃত হয় টুথপেস্ট , ফেস ওয়াশ , সাবান , শাওয়ার জেল আর কাপড় কাচার ডিটার্জেন্ট এ। এগুলি আসলে পলিথিলিন প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র রূপ। এছাড়া আমাদের ব্যবহার্য কাপড় যা সিন্থেটিক পলিয়েস্টার , এক্রাইলিক , নাইলন দিয়ে তৈরী সেগুলি ধোয়ার সময় ওই মাইক্রোবিডস এসে মেশে যদি নালা খালের জলে। এর  ফলেও জলে বাড়ে প্লাষ্টিক দূষণ। সরকারি সংস্থাগুলি যে জল পরিশ্রুতকরণের পদ্ধতি অবলম্বন করে তাতে ৫মিমি র কম মাইক্রোপ্লাস্টিক গুলি সরাসরি সাগরে বা নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিবিসির একটি রিপোর্ট অনুযায়ী
৯.১ বিলিয়ন মেট্রিক টন  রিসাইকেল্ড প্লাস্টিক তৈরি হয়েছে এপর্যন্ত যার জন্য ৬.৯ বিলিয়ন টন জঞ্জাল তৈরি হয়েছে। তার ৯% শুধু রিসাইকেল করা হয়েছে। আর ১২% ধ্বংস করা হয়েছে। বাকি ৭৯% মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বা সরাসরি মাটিতে জঞ্জাল হিসেবে পরে আছে।
এই বিশাল পরিমান প্লাস্টিক বর্জ্যর বেশিরভাগটাই আসে প্যাকেজিং শিল্প থেকে। ২০১৫ এ মোট প্লাস্টিক উৎপাদনের ৪২% লেগেছে প্যাকেজিং আর ৫২% প্লাস্টিক স্রেফ ফেলে দেওয়া হয়েছে। 
তবে কি কিছুই করার নেই 
একনজরে দেখে নিন আপনি কি করতে পারেন ?
১) যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলবেন না।  তাতে মাইক্রোপ্লাস্টিক হওয়া এড়ানো যাবে।
২) পুকুর , নদি ,নালা বা অনত্র যেখানে প্লাস্টিক দেখবেন সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে। ফেলুন
৩) এলাকায় প্লাস্টিক পরিষ্কার অভিযান আয়োজন করুন , জনমত তৈরী করুন। 
৪) মাইক্রোবিডস বিহীন প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ইন্টারনেটে খোঁজ নিন কিসে কিসে মাইক্রোবিডস আছে। 
৫) যে সব কাপড়এ মাইক্রোফাইবার আছে তার ব্যবহার ও পরিষ্কারের ব্যাপারে সচেতন হন। 
৬) প্রাকৃতিক ফাইবার যুক্ত জামাকাপড় ব্যবহার করুন। 


Reduce
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমান। চিন্তা ভাবনা করুন কিভাবে নিজের জীবন থেকে প্লাস্টিককে বিযুক্ত করবেন।  হয়তো প্লাস্টিকের বোতলের বদলে কাচ বা তামার বোতল ব্যবহার করতে পারেন জল রাখার কাজে।  মাটির কুঁজোও দারুন। কিন্তু প্লাস্টিক নৈব নৈব চ। প্লাস্টিকের কিছু কিনতে গেলে দুবার ভাবুন সেটা কি আপনার সত্যিই দরকার। তথাকথিত মিনারেল ওয়াটার আসলে বেশি মাত্রায় ক্লোরিন দেওয়া জল।  বাড়ি থেকে ফিল্টার করা জল ওয়াটার বটলে ক্যারি করুন। প্লাস্টিকের বোতলের কেনা জলের থেকে ওটা অনেক নিরাপদ আর নিখরচার। ডাবের জল বা কোল্ড ড্রিঙ্ক খেতে কি সত্যিই স্ট্র এর প্রয়োজন আছে ? অনুষ্ঠান বাড়িতে কলাপাতা , মাটির গ্লাস আজও কিন্তু লুকে হিট ,স্বাস্থ্যে ফিট। 

Refuse
বাজারে করতে ব্যাগ নিয়ে জান। দোকানদার ক্যারিব্যাগে জিনিস দিতে চাইলে তাকে বারণ করুন। পুরোনো সুঅভ্যাসে ফিরুন।  প্লাস্টিকের থালা , গ্লাস , বাটি র ব্যবহার বর্জন করুন। বেশি সময় নিয়ে বাজার করুন।  মলের প্যাকেজড জিনিস না কিনে বাজার ঘুরে প্লাস্টিক প্যাক বিহীন জিনিস কিনুন। স্যাসে প্যাক না কিনে বড় প্যাক কিনুন।  সাশ্রয় ও হল পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হল না। রেস্টুরেন্ট , বাজার মল সব জায়গায় বিক্রেতা প্লাস্টিক দিতে এলে তাকে ব্যারন করুন , সাথে সাথে জিজ্ঞেস করুন এই প্যাক কিনতে তাঁর খরচ হয় কি না ? তাকে বোঝান আপনি তাঁর খরচ বাঁচাচ্ছেন। প্লাস্টিক দিয়ে তৈরী করা এই বাজার আসলে সত্য না।  আধুনিক প্রযুক্তি প্লাস্টিক বিহীন প্যাকেজিং এনেছে।  তাদের আস্তে দিন।  দেখুন বাংলাদেশে পাট দিয়ে তৈরি এই প্যাকেজিং। হুবহু প্লাস্টিকের মত দেখতে সোনালী ব্যাগ।  এর বিশেস্বত্ত্ব হল মাটিতে সম্পূর্ণ মিশে যায় এই ব্যাগ।



ছবি সৌজন্য : প্রথম আলো
Reuse 
পুরানো জামাকাপড় ফেলে না দিয়ে পরিষ্কার করে যাদের প্রয়োজন সে রকম মানুষদের দিন। গ্রোসারি র জন্য আলাদা ক্যানভাসের ব্যাগ রাখুন যাতে প্লাস্টিকের ব্যাগের প্রয়োজনও না পরে আর ওই ব্যাগটি বারবার ব্যবহার করা যায়। প্লাস্টিকের বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে নানান রকম জিনিসপত্র তৈরী হচ্ছে।  বোতল দিয়েই শুধু কত কি করা যায় দেখুন।





Recycle
রাতারাতি কিছুই হয়ে যাবে না।  পরিকল্পিত ভাবে প্লাস্টিকের রিসাইকেলই একমাত্র উপায় প্লাস্টিকের দূষণের হাত থেকে বাঁচার। রিসাইকেল এর বিষয়ে জানুন আর অন্যকে জানান। আপনার প্লাস্টিক চিনুন। দেখবেন যে কোন প্লাস্টিক প্রোডাক্টের গায়ে রিসাইকেলের লোগোর মাঝে ১,২,৩,৪, এরকম সংখ্যা দেওয়া থাকে। সেই সংখ্যা গুলোর মানে জানুন।
১) PET Polyethylene terephthalate ব্যবহৃত হয় সফট ড্রিঙ্কস বোতল , পিনাট বাটার জার এ। রিসাইকেল করে তৈরী হয় দড়ি , কার্পেট , স্লিপিং ব্যাগ , বালিশ।
২) HDPE (High-density polyethylene) মাখন এর কৌটো , ডিটারজেন্ট এর বোতল , মোটর অয়েলের বোতল এ। রিসাইকেল করে তৈরী হয় ফুলদানি ,ট্রাফিক ব্যারিয়ার কোন।
৩)  PVC (Polyvinyl chloride) শ্যাম্পু বোতল , ভোজ্য তেলের বোতল , ফাস্ট ফুড এর সার্ভিসে।
রিসাইকেল করে তৈরী হয় ড্রেনেজ আর সেচের পাইপ।
৪)LDPE (Low-density polyethylene) ক্যারি ব্যাগ , পাউরুটির ব্যাগ।
৫)  PP (Polypropylene) PP বোতলের ছিপি , স্ট্র , দইয়ের কন্টেনার। রিসাইকেল করে তৈরী হয় গাড়ির ব্যাটারি কেস , প্লাষ্টিক লাম্বার।
৬) PS (Polystyrene) গরম পানীয়র কাপ , প্যাকেজিং মেটেরিয়াল। রিসাইকেল করে তৈরী হয় ক্যাসেট বক্স , ফুলদানি ,প্লাষ্টিক লাম্বার।
৭)OTHER সব রকম প্লাস্টিক এর মিশ্রণ। মাইক্রোওয়েভ পাত্র , স্কুইজ করা যায় এমন পাত্র।  এটা রিসাইকেল হয় না।  



Tuesday, April 3, 2018

অটিজম কোন প্রতিবন্ধকতা নয় বরং অন্যভাবে চিন্তাভাবনা করার দারুন অস্ত্র | World Autism Day | #LightUpBlue


একটা গাছ ,তিনটে ইঁদুর ,সাতটা ঘড়ি , বাউল গানের আসর ,একটা হাতি এই ছবি গুলো শৈশব আর কৈশোর মনের কল্পনা। একটু অন্য রকম একটু সাধারণ চিন্তা ভাবনার চেয়ে সরে বাইরে গিয়ে। এগুলো এঁকেছে আদিত্য গাঙ্গুলি , উজ্জীবন রায় , অভিষেক সরকার , বর্ষা দেব , ঈশান গুহ , শুভ্রনীল দাস রা। শুভ্রনীলের কথা আমার আগের Blog এ বলেছি এরাও শুভ্রনীলের মত অনেক পাহাড় প্রমান অসুবিধে নিয়ে বাঁচে। আমাদের সাধারণ করে দেওয়া অভ্যাস , জেনারালাইজ করার জন্যে আমরা বলে থাকি ' প্রতিবন্ধকতা ' । কিন্ত ওদের একনিষ্ঠ প্রয়াস আজ হার মানিয়েছে ওই সাধারণ করে দেওয়া শব্দটাকে। সব বাধা , কষ্ট , নিজেকে ব্যক্ত করতে না পারার যন্ত্রনা , অনবরত মাথার ভেতর জ্বলে ওঠা হাজার ঝাড়বাতির আলোকে সামলে ওরা হয়ে উঠেছে অ-সাধারণ। প্রতিবন্ধকতা নামক অপমানটাকে নিজেদের গা থেকে ঝেড়ে ফেলে ওরা হয়ে উঠেছে একেকটা নয়নতারা।


অভিষেক কোন এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে পারে না। আনন্দের উচ্ছাসে বারবার কুঁচকে যাই অভিষেক সরকারের মুখ। মাথা নুয়ে এসে গলার সাথে লেগে যায়। সামাজিক জমায়েতে গুটিয়ে যায় অভিষেক সরকার কিন্ত ওর ছবি বলে অন্য কথা। যেন অন্য এক মানুষ বসত করে অভিষেকের মনের ঘরে যে একমনে ছবি আঁকে। যে ছবি ক্যানভাসের দ্বিমাত্রিকতা ছাড়িয়ে কখন যেন বহুমাত্রিকতায় পৌঁছে যায়।
অভিষেক সরকার 



অভিষেকের ছবি
বর্ষা দেবের ছবির বিশেষত্বই হল বহু র ভিতর একের খোঁজ চালিয়ে সেই অনেক কে এক করে দেওয়া। যেন আমাদের মাঝে হাজারো ভেদাভেদ থাকলেও আমরা আসলে একই।
বর্ষার ছবির পরিমিতি বা শিল্পগুণ ছাড়াও কতটা নিখুঁত সেটা পরীক্ষা করতে হলে উপরের ছবি তা দেখুন। বাউলদের গলায় হারের পুঁতির সংখ্যা প্রায় সব ক্ষেত্রেই ১৭ , কয়েকটায় ১৮। ভাবতে অবাক লাগে এত ধৈর্য ও পায় কোথায়। আসলে ওটাই ওর অসুবিধে , অস্বস্তি। রিপিটেটিভ বিহেবিয়ার। ওদের কষ্ট, ওদের জিন ও পরিবেশ গত অসুবিধের কথা না হয় পরে দেখব পরে ভাবব এখন বর্ষার ছবি দেখি।
বর্ষা দেব 






পুনরাবৃত্তি বর্ষার ছবির বৈশিষ্ঠ কিন্ত শিশু শিল্পী মনের পরিস্ফুটনে সেই পুনরাবৃত্তি কখনোই একঘেঁয়েমি আনে না। বরং একটা বিস্তারকে দেখায়। এই বুঝি খেলনাঝুড়ি উপুড় হবে বেরিয়ে আসবে বর্ষার সিস্টার্স ইন ল , জুস ড্রিঙ্কার্স , বাউল এন্ড হিস্ ওয়াইফ, দেবীদের রূপসব  বা অন্য চরিত্ররা। ওরা যেন সব পুতুল। যেন গুগাবাবার ড্রয়িং খাতার স্কেচ সব। মুখ গম্ভীর একই রকম কিন্ত কোথাও যেন সবাই মিলে জগতের আনন্দযজ্ঞে নিমন্ত্রণ জানাচ্ছে। 

ছোট্ট ঈশানকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করবে। অথচ ওর মনের গভীরে গেলে আপনার চরাচর মাখামাখি হয়ে যাবে নিদারুন এক বিষাদে। আপাতদৃষ্টিতে হাইপারঅ্যাক্টিভ বা চঞ্চল। কিন্ত ভাবতেও পারবেন না কী পরিমান উদ্বেগ বাসা বেঁধেছে ওই ক্ষুদেমনে!!! ঈশানের সব ইমোশনকে কন্ট্রোল করে মৃত্যুচিন্তা। ওকে পড়তে হবে পরীক্ষায় ভাল করার জন্যে , তবে ভাল চাকরি পাবে , চাকরি পেলে বিয়ে করে সংসার পাতবে , তবেই ওর সন্তানাদি হবে সেই সন্তান প্রতিষ্টিত হলে ও বৃদ্ধ হবে , দাদু হবে , তারপর অমোঘ সত্য- ওর তুঁহ মম শ্যাম সমান মরণ আসবে।মা চমকে ওঠেন। মা কে প্রশ্ন করে ঈশান তারপর আমার আত্মা আবার পুনর্জন্ম নেবে তো তুমিই আমার মা হবে তো। 
"জন্মেছি আমি আগেও অনেক মরেছি তোমারই কোলে 
 মুক্তি পাইনি শুধু তোমাকেই আবার দেখব বলে " 
আমাদের যুক্তিগ্রাহ্য মন ব্যাখ্যা পায় না কিভাবে শৈশব এমন সৎ ও সত্য ফিলোজফিকে আঁকড়ে ধরতে পারে। আসলে ওরা অমনই। খুব ছোটবেলায় এক মৃত্যু চোখের সামনে দেখে মৃত্যু সম্পর্কে মিথ ,ভয় ,আড়ষ্টতা কেটে মৃত্যুর প্রকৃত অবয়ব পরিষ্কার ঈশানের। তা হল মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্য নেই তাই জীবনটাকে বাঁচো। প্রতি পাকে বাঁচো। ঘূর্ণির মত ঘুরছে পেন্সিল কালি কলম। বেরিয়ে আসছে একেকটা ছবি। আনন্দ পাচ্ছে ঈশান।নাক কুঁচকে চশমার তলায় হাসছে দুটো উজ্জ্বল চোখ। 
ঈশান গুহ 






শুভ্রনীল দাস সম্বন্ধে আপনারা জেনেছেন। ওর লড়াই সম্পর্কে আমার ব্লগপাঠকরা ওয়াকিবহাল। ওর লেখাটার ক্যাপশনে আমি লিখেছিলাম ও খেলা করে ছায়াপথে। কিছু না জেনেই।ছবিগুলো দেখে মনে হয়েছিল ওটা ছাড়া ক্যাপশন হতেই পারে না। ব্লগটা দেখে শুভ্রনীলের মা চমকিত। কারণ। শুভ্রনীলের একটা ছবির ক্যাপশন Universe is my playground . তারমানে ট্রান্সমিট হচ্ছে। ও যেটা বলতে চাইছে সমাজ সেটা বুঝতে পারছে।ব্যাখ্যা করতে পারছে। তারমানেই আর্ট থেরাপি দিয়ে কেবল ওকে সুস্থতার পথ দেখানোতে থেমে থাকল না ওর আর্ট ওয়ার্ক। সমাজের গ্রহণযোগ্যতায় ফাইন আর্টসের পর্যায়ে উন্নীত হল শুভ্রনীলের কাজ। 
শুভ্রনীল দাস 





শুভ্রনীলের ছবি 



গতকাল বিশ্ব অটিজম দিনে গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় ওরা এসেছিল। ওরা মানে আদিত্য,উজ্জীবন,অভিষেক,বর্ষা,ঈশান, শুভ্রনীলরা। ওদের সবারই রয়েছে কমবেশি অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার। সারা জীবনব্যাপী জটিল, মানসিক ও শারীরিক পরিবর্ধনের সমস্যার সম্মুখীন ওরা। ASD বা 
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার কোন রোগ বা মেন্টাল রিটার্ডেশন নয়। সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা , শিক্ষাব্যাবস্থা ও তাদের ঠিকমত অভ্যাস ও অনুসরণ করলে সমাজে অটিস্টিক শিশুরা অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে এরাই তার জ্বলন্ত উদহারণ। আরো অনেক উদহারণ পাবেন একটু গুগল করলেই।আলবার্ট আইনস্টাইন , মোৎজার্ট , লিউইস ক্যারোল , চার্লস ডারউইন এনারা সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে নক্ষত্র , এনারা সবাই কিন্তু অটিজমকে মোকাবিলা করেই জীবন যুদ্ধে শুধু জয়ীই নন পৃথিবীকে নতুন পথের দিশা দিয়েছেন ,কারণ তাঁরা অন্য ভাবে ভাবতে পারেন। অটিজম তাঁদের কাছে প্রতিবন্ধকতা নয় অস্ত্র। একটা এজেন্ট যখন আমাদের মস্তিষ্কে দুটো আলো জ্বালে তখন সেই একই এজেন্ট ওদের মাথায় কমপক্ষে ২০টি আলো জ্বালে। অটিজমের খুব সহজ ব্যাখ্যা বোধহয় এটাই। তাই সেই জ্বলে ওঠা ঝাড়বাতিটি যে একটু অন্যরকম আলো দেবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে কি ?
এবার এক নজরে দেখে নিন ২রা এপ্রিলের সন্ধ্যেটা কিভাবে কাটালো পৃথিবী। বুর্জ খলিফা থেকে নায়াগ্রা জলপ্রপাত, হোয়াইট হাউস থেকে কুতুব মিনার , রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকে সিডনি অপেরা হাউস , সারা পৃথিবীর সেরা সব স্থাপত্যগুলো রেঙেছিল অটিজিমের সচেতনতার প্রচারে ঘননীল রঙে। গোটা এপ্রিল মাসটা অটিজমের মাস। জানতে হবে। তবেই ওদের সুস্থ সুন্দর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে। তাই #LightUpBlue হ্যাসট্যাগও জেনারেট হয়েছে। 
গতকাল বিশ্বের সেরা স্থাপত্যের গায়ে নীল আলো
আর আমাদের রাজ্যে দারুন কাজ করে চলেছে অটিজম সোসাইটি ওয়েস্ট বেঙ্গল। অটিজম বিষয়ক কর্মশালা ,সচেতনতা বিস্তার ,বাবা মা এর প্রশিক্ষণ , মূলধারার স্কুলে অটিস্টিক শিশুদের যোগদান থেকে পেশাগত প্রশিক্ষণ সবেতেই ASWB সাহায্য করতে হাত বাড়িয়ে রেখেছে। ধরবেন নাকি ওদের হাত মুঠোটা কিন্তু শক্ত বেশ। 
ওঁনাদের সাথে যোগাযোগ করুন। 
Autism Society Of West Bengal
D/1/1A Katjurnagar, Kolkata -700032
Tel 033 54581576
Mobile 9830139173
e mail : autismsocietywb@gmail.com
web: www.autismsocietywb.org

চলুন না সবাই মিলে নীলের প্রসার প্রচারে সামিল হই। আর যদি হাতে সময় থাকে তো চলে জান গগনেন্দ্র প্রদর্শালায় আজই সামনে থেকে দেখে প্রথমে অবাক হোন তারপর পিঠ চাপড়ে দিন ক্ষুদেগুলোকে আর কুর্নিশ জানান ওদের অভিভাবকদের। কী অসাধ্যটাই না সাধন করছেন ওরা। তাইতো আজ ওরা অ-সাধারণ, মুক্ত আকাশেই ওদের ব্যপ্তি গোটা পৃথিবী জোড়া ওদের রং গোটা আসমান জোড়া ওদের ক্যানভাস।