Tuesday, February 27, 2018

এ সড়ক কোমাগ্রস্থ - সুস্থ হোক আন্দুল রোড

আন্দুল রোড ইউজার্স এসোসিয়েশন সই সংগ্রহ অভিযান শুরু করছে। অভিনন্দন।

আজ থেকে বছর খানেক আগে এই এক ই বিষয়ে কিছু ফেসবুক পোস্ট করেছিলাম। অবাক করা সাড়া পেয়েছিলাম।  আজ সেই পোস্ট গুলি এক জায়গায় করলাম। 

June 29, 2017
দিনে ও রাতে আন্দুল রোডের ছবি এগুলো। দ্বিতীয় হুগলি সেতুর টোল প্লাজা র ৭,৮ বা ৯ নম্বর ফ্ল্যাঙ্ক দিয়ে নেমে আন্দুল রোড ধরলে দিনের যে কোন সময়ে এ রকম বা এর চেয়ে ও মারাত্মক ট্রাফিক কণ্ডিশন দেখা যায় ইদানিং। ভারী পণ্যবাহী ট্রাক, নড়তে না চাওয়া বাস, মিনি বাস, রিফিউজালে অভ্যস্ত No Refusal ট্যাক্সি, টোটো, মাইক্রো, বাইক, সাইকেল, বাইসাইকেল, রিকশা.... 
সব মিলিয়ে প্রাণান্তকর অবস্থা পথচারীদের। অথচ এই রাস্তাতেই রয়েছে প্রায় ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৪টি হাসপাতাল, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও আন্দুল রাজবাড়ির মত ট্যুরিস্ট স্পট। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বাজার, ৪-৫ টি বাস টার্মিনাস। যার ফলে ভীড়় স্বাভাবিক ভাবেই থাকে। যদিও এই পথের রাধাদাসীতে Indian Oil Corporation Ltd.এর ফিলিং স্টেশন থাকায় অয়েল ট্যাঙ্কারের চলাচল বহুকাল যাবৎ তবু সাম্প্রতিক কালে অতি ভারী পণ্যবাহী লরি ও ট্রেলার চলাচলের ফলে স্কুলের পড়ুয়া, সাইকেলচারী, সাধারণ পথচারী ও বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের চলাচলের স্থান হয়েছে নয়নজুলি। অপ্রসস্থ সে নয়নজুলি হয় খানাখন্দে জলে ভরা না হয় কনস্ট্রাকশন মেটিরিয়ালে ভরপুর।
এর ফলে বিরক্তি, ধৈর্য্যচ্যুতি, ঝগড়া প্রতিনিয়ত চলতে থাকে এ পথে। অথচ শুধু দুরপাল্লার ভারী ও মাঝারি পণ্যবাহী লরি এ পথে বন্ধ করলেই মসৃণ হতে পারে নিত্যযাত্রা।
এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার হল NH6 বা ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে কলকাতা ঢোকার ক্ষেত্রে আন্দুল রোড ব্যবহার করলে অনেকটাই দুরত্ব সাশ্রয় হয়, যদি কোন গাড়ি কোনা এক্সপ্রেস ওয়ে ব্যবহার করে তার অপেক্ষা। এই পথে জানজটে আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্স বা দমকলের মত জরুরি পরিষেবা মূলক বাহন দেখা যায় তাই আখচার।




June 30, 2017
আমার একটা পোস্ট যে আপনাদের এভাবে নাড়া দেবে ধারণা ছিল না। বুঝতে পারতাম এ রাস্তার দুপাশে শৈশব হতচকিত, বার্ধক্য কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তীব্র হর্ণ, জোরালো আলো ঝগড়া ঝামেলা এ রাস্তার নিত্যকার সঙ্গী। পরিচয় হল আপনাদের সাথে।
জানলাম যে
জয়তী মন্ডল দেশাই এর বাচ্চা কে স্কুলে নিয়ে যেতে চরম ভোগান্তি হয়, যেমনটা হয় সলিল ধাড়া র ছেলের স্কুলে লেট ।রূপালি সাহার বাচ্চা যে স্কুল বাসে যায় তা আন্দুল রোডে জানজটে থমকে থমকে যখন স্কুলে পৌছোয় তখন প্রথম পিরিয়ড এর ক্লাস শেষ । তাই মলি দে, বাণিশ্রী কুণ্ডু রা আস্থা হারাচ্ছেন প্রশাসনের সদর্থক ভুমিকায় । তবু সুগত বাসু, বিন্দাবন পাল বা সলিল ধাড়া রা আশা রাখছেন যদি Botanical Garden Police Station এ পিটিসন দেওয়া যায়। রাস্তা পারাপার এর ভয়াবহ আবহ সবার মনে মগজে। দাবি উঠছে আন্দুল রোড চওড়া করার। রাস্তার ওপর দোকান পাট, নয়নজুলি তে গর্ত জল কাদা, বাজার।
দাবি উঠছে #চওড়া_হোক_আন্দুল_রোড এই দুর্বিসহ অবস্থা থেকে পরিত্রানের উপায় কি সত্যিই নেই?
কেউ কেউ #পথ_অবরোধ এর দাবি তুলেছেন। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি অবরোধ সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারবে না। এ রাস্তার দুপাশে এতগুলো স্কুল ও হাসপাতাল থাকায় অবরুদ্ধ হয়ে থাকা মানুষ জনের অসুবিধাই বাড়বে। তারচেয়ে প্রশাসনের নজরে বিষয়টি এনে বারবার হ্যামার করলে সুফল হয়ত পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে Change.org তে পিটিসন করা যেতে পারে। এই সংস্থাই কিন্তু যশোর রোডে নির্বিচারে গাছ কাটা আটকে দিয়েছে। ওঁদের পিটিশন এর কপি যায় President of India আর Supreme Court of India য়। প্রয়োজনে Green Bench এর দ্বারস্থ হয়ে Public Interest Litigation ফাইল করা যায় Howrah Judicial Court এ।
তবে তার আগে আমরা কিছু বিষয় নজরে রাখব।
১.প্রশাসন নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত করবে কিন্তু তা বজায় রাখতে হবে আমাদের ই।
২. হাতে সময় নিয়ে রাস্তায় বেরোব
৩. ধৈর্য চ্যুত হয়ে খিটমিট ঝগড়া ঝামেলা রাস্তায় করব না
৪. বাইক হেলমেট ছাড়া চালাব না
৫. গাড়ির দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা নিয়মিত করাব
৬. বাসে সিট দখলের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল হব শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও মহিলাদের প্রতি।
৭. সাইকেল চালানোর সময় রাতে অবশ্যই হেডল্যাম্প জ্বালাব
৮.রাতের বেলা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করার সময় পারতপক্ষে সাদা পোশাক পরব যাতে গাড়ির চালক হেডলাইটের আলোয় সহজেই দেখতে পান।

পরিশেষে একটি কথা আপনাদের কারও সাথে যদি আমাদের মাননীয় লোকসভার এম পি Prasun Banerjee র সাক্ষাৎ হয় ওনাকেও জানিয়ে রাখুন বিষয়টি। সুরক্ষিত থাকুন, ভাল থাকুন।
মজা করে নাকি বলা হয়, "আন্দুল রোডে যদি তুমি সফল ভাবে গাড়ি চালাতে পারো তাহলে নিশ্চিত থেকো পৃথিবীর যে কোনো রাস্তায় তুমি অনায়াসে গাড়ি চালিয়ে নেবে।" সত্যি রাস্তার একপাশে স্টোভ কুকার সারানোর দোকান তো অন্য পাশে খাসি মুরগি র ঝুলে পড়া কসাই খানা। একপ্রান্তে উচ্ছেবেগুনপটলমুলো তো অন্য প্রান্তে সেলাই সুতো, ত্বক চকচকে করা হাজারো ক্রিমের মনিহারী। দুর্গাপুজো রাস্তার নাভীশ্বাস। ঈদ রাস্তার নাভীশ্বাস। বড়দিন রাস্তার নাভীশ্বাস। রাজনৈতিক তামাশা রাস্তার নাভীশ্বাস। এর ওপর আজ ফাইবার অপটিক কেবল বসবে তো কাল CESC Limited র কাজ, চালাও গাঁইতি ফিতে বেঁধে। এর ওপর তো রয়েছেই পাড়ার জলসা, জলসত্রে জোর করে সরবত বিলি। মৃতদেহ বাহী চারপাঈ, মহরম থেকে রাম নবমী। বাসে আটকে থেকে বমি পটি পেয়ে গেলেও পালাবার পথ নাই। গাড়ি তে যাঁরা চেপে রয়েছেন তাঁদের একরকম ভোগান্তি, আর যাঁরা হেঁটে বা সাইকেলে যাচ্ছেন সে মানুষ গুলোর অবস্থা মারাত্মক মর্মান্তিক। বেচারা। ওনারা যাবেন কোথা দিয়ে?! জায়গা কই? ১৬, ২২, চাকার ট্রেলার অতিক্রম করে যে ভাই, দাদা, কাকুরা সাইকেল চালিয়ে আসেন তাঁরা সত্যিই কম ঝুঁকি নিয়ে চলেন না। গেস্টকীন, লালকুঠি এলাকার কটি ছবি দিলাম।।
পরিশেষে আজ ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জন্ম ও প্রয়াণ দিনে তাঁরই একটি উক্তি রাখলাম। ভালো থাকুন সবাই।
"We have the ability and if, with faith in our future, we exert ourselves with determination, nothing, I am sure, no obstacles, however formidable or insurmountable they may appear at present, can stop our progress... (if we) all work unitedly, keeping our vision clear and with a firm grasp of our problems."- Dr. B. C. Roy



গতকাল আমার এক পরিচিত মানুষের সাথে আন্দুল রোডের জানজটে বিষয়ে কথা হচ্ছিল। উনি সব বিষয় শুনে বললেন এই কাজ শুধুমাত্র থানায় ডেপুটেশন দিয়ে হবে না। যেহেতু কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের একাধিক দপ্তর এর সাথে জড়িত। তাই বড় আকারের জনসচেতনতা মূলক উদ্যোগ দরকার। বড় আকারের জনসচেতনতা মূলক উদ্যোগ।
আর আজকের সকাল দেখুন কি ঘটল।
সংকীর্ণ পথ, রাস্তার পাশে অপ্রসস্ত কাঁচামাটি আর ভারী পণ্যবাহী লরি। ঠিক এই আশঙ্কাই করেছি শেষ ৩টি পোস্ট এ। অনেক হয়েছে বন্ধ হোক ভারী যান চলাচল আন্দুল রোডে। শুধু ভাবুন আজ ষদি একটা কাজের দিন হত। যদি আজ নারায়ণা হাসপাতালে আউটডোর ভীড় থিকথিকে হত। স্কুল, কলেজ অফিস এর মানুষের ঢল থাকত পথে। কি একটা চরম দুর্ভোগ হত আজ।
আজ সকালে অফিসে আসার সময় কলেজ ঘাট ও নারায়ণা হাসপাতালের মাঝে লরি দুর্ঘটনা র ছবি। হতাহতের খবর জানি না।



বেসিকালি আমি (আমরা) খেলাধুলা, গান, সিনেমা নিয়ে কাজ করি। হার্ড কোর নিউজ করেছি শুরুর দিকে। আন্দুল রোডের পোস্ট টায় মনে হচ্ছিল বুঝি শুরুর সে দিন গুলো ফিরে এল। ৪২হাজারের বেশি মানুষের ইনভল্ভমেন্ট, ৫২৭টি শেয়ার, আপনারা সবাই এগিয়ে এসে এত কমেন্ট করলেন ভাবলাম বুঝি কিছু হচ্ছে। বিশেষত শেষ পোস্টটি করার পর যখন দেখলাম রাস্তায় অফিস টাইমে ট্রাকের আনাগোনা কমছে, ভাবলাম বুঝি e-governance এর চোখে পড়েছে আমাদের দুর্দশার রোজনামচা। কিন্তু আজকের ছবি গুলো দেখে মনে হল কোথায় কি! সকাল ১০.৩০ স্কুল, অফিস গামী মানুষের ভিড় তারমধ্যে দেখুন কেমন ঢুকে পড়েছে লরি, ট্রাক। বাস থামিয়ে বকুলতলার মোড়ে ৬১ নম্বর বাস ড্রাইভারের চা খাওয়াও আছে। তারই সাথে আছে অনেক পিছনে জানজটে আটকে থাকা অ্যাম্বুলেন্সের কান ফাটানো আর্তনাদ। টোটোরাও আছেন স্বমহিমায়। রাস্তার পাশে বালি স্টোন চিপ নামানো ট্রাক আছে। আছে সার সার বালি সিমেন্ট স্টোন চিপ বওয়া ঠেলাগাড়ি। কানফাটানো, নাকজ্বালানো ভ্যানো বা লাদেন গাড়ি তারাও আছে। পলিউশন কন্ট্রোল কে বুড়ো আঙুল দেখানো ট্যাক্সির কালোধোঁয়া আছে। হেলমেট বিহীন বাইক আছে। আছে তাদের তীব্র গতি আর কানে তালা লাগিয়ে দেওয়া বিকট আওয়াজ। সবই আছে, নেই শুধু কোথাও কোন নিয়ম....
এ প্রসঙ্গে একটা মজার কথা বলি। রাস্তায় অনেক মানুষ জন ঘুরে বেড়ান যাঁরা অল্প বিস্তর মানসিক ভাবে ঘেঁটে যাওয়া বা চাপগ্রস্ত। তাঁদের সাথে কথা বলতে আমার বেশ লাগে। সেদিন দানেশ শেখ লেনে দাঁড়িয়েছি তো ওই রকম একজন এলেন। "চা খাব ৫টাকা দিন"। দিলাম।
উনি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন জানি, নিশ্চিত ভাবে নিজের ঘোরে থাকেন। হতদরিদ্র পরনের কাপড়। বললাম কেমন চলছে কাজ? "আরে এপারে (নিজেকে দেখিয়ে) প্রশাসন ওপারে সব দুঃশাসন, ওগুলো পুলিশ না শো পিস"। অতি কষ্টে হাসি চাপলাম। কথা হচ্ছিল হঠাৎ একটা টোটো দুম করে কোনো ইণ্ডিকেটর না দিয়ে ইউ টার্ণ নিতে গিয়ে বাজারের ব্যাগ বাহী এক পথচারীর প্রায় ঘাড়ে উঠে পড়ে। উনি আবার সরব। "এগুলোর না আছে সেন্স না আছে লাইসেন্স "। সত্যি তো একটা মানুষ যাঁকে তথাকথিত সুস্থ আমরা তারকাটা, ছিটগ্রস্ত, পাগল বলে ভাবি তিনিও তাঁর অবিন্যস্ত মন মাথা জীবন দিয়ে পরিষ্কার বুঝতে পারছেন গলদের গোড়া টা কোথায়! পারছেন শুধু যাঁদের ওপর রয়েছে দায়ভার। 


নামেই তো যায় আসে !!!

বাসু ট্র্যাভেল এর ড্রাইভার রা রাস্তাঘাট বেশ ভাল ই চিনত। ওদের ওপর এক্কেবারে ডিডি গেঞ্জি র মত ভরসা করা যেত। তখন ২০০১। মোবাইল ফোনের গণতান্ত্রিকতা তখনও অধরা, বিদ্যাসাগর সেতুর টোল অনেকটা আলগা, এফ এম রেডিও তখনও আসেনি, টোটো বলতে যান নয় বাউন্ডুলে বোঝানো হত তখন। অ্যাসাইনমেন্টে ভোরে বেরোতে হলে আর রাতে ফিরতে হলে পিক আপ ড্রপিং তখন অপরাধবোধ তৈরি করত না ওটা অধিকার ছিল। আমার নামের পাশে খোঁজ খবর এর অ্যসাইনমেন্ট খাতায় লেখা হত 'কার রিপোর্টিং অ্যাট ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক হসপিটাল'। ওটাই ছিল বাড়ি র ঠিকানা। প্রায় ৫ - ৬ বছর ওরমই চলেছে। অ্যাট ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক হসপিটালে আমি দিব্যি অ্যাট হোম হয়েছি। বাধ সাধল ৬ বছর পরে। বলে না খাল কেটে কুমির ডাকা! আমার ক্ষেত্রে সেটা হল পাত পেড়ে আমার ই এক সহকর্মীকে ডাকা। শাক দিয়ে মাছ আর ঢাকতে পারলাম না।
আমার সেই সহকর্মী যে ছুপা রুস্তম হয়ে চুপি চুপি এসে আমার এক গোপনকথা পাঁচকান করবে ভাবতেও পারি নি।
তখন নরেন্দ্র মোদী গুজরাত এর মুখ্যমন্ত্রী । অফিসের গুলতানি তে শুভেন্দুদা ঝাড়ল ব্রহ্মাস্ত্র।
বল তো নন্দন আর নরেন্দ্র মোদী মধ্যে মিল কোথায়? ন্যাকা শয়তান রা সুর করে বলল কোথায়? শুভেন্দু দা শুরু করল
- মোদি সি এম (চিফ মিনিস্টার) , নন্দন সি সি এম (চিফ ক্যামেরাম্যান)
আর কী মিল
নরেন্দ্র মোদীর অস্বস্তি গোধরা, নন্দন এর অস্বস্তি পোদরা। (আমার ঠিকানা উত্তর পোদরা)
হাটে ভেঙে গেল হাঁড়ি। চারদিকে হা হা হিহি হৌ হৌ হু হু।
যতই শেক্ষপীর বলুন না কেন 'নামে কী আসে যায়' । কিন্তু আমার সে দিন থেকে এই এক নামের জন্য সরে আম বেইজ্জতি শুরু হল। ঠিকানা য় জায়গার নাম আমার মান সম্মান কেড়ে নিল।
ছোট বেলায় একটা মজার খেলা খেলতাম আমরা। যে কোন ম্যাপ নিয়ে বসে তাতে যে কোন একটা জায়গার নাম দেখে নিয়ে উল্টো দিকের বন্ধুকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া কোথায় আছে সেই জায়গাটা। স্থানের নামের খোঁজে সে অন্বেষণ এর খেলা পরবর্তীকালে ভূগোলে সাহায্য করেছিল। কতশত নাম, বিচিত্র তাদের বানান মন মাথায় একএকটা ছবি এঁকে যেত।

আসলে সব জায়গার নামকরণের পিছনে থাকে দারুণ সব গল্প। আমেরিকার মিশিগানে হেল জনপদ তৈরি হয় জর্জ রিভেসের হাত ধরে। সেটা ১৮৩০। এরপর মিশিগান যখন স্টেটহুড পায় জর্জ রিভেস কে জানতে চাওয়া হয় কী হবে স্থানটির নাম? রিভেস বলেন, " I don't care you can name it hell for all I care" ঠিক একরকম গল্প রয়েছে আমাদের হাতের কাছে, এই বাংলায়। রেল লাইন পাতা হচ্ছে সাথে সাথে চলছে স্টেশনের নামকরণের কাজ। ব্রিটিশ ভারত। বাঙালি কেরানিকে নিয়ে ইউরোপিয়ান সাহেব চলেছেন রেলপথ তদারকিতে। সাথে সাথে হয়ে চলেছে স্টেশনের নামদান। সাহেব জিজ্ঞাসা করছেন কী নাম এ জায়গাটির? কেরানি বলছেন,  ঝাপাটের ঢাল, পিচকুড়ির ঢাল। সাহেব সায় দিলে টপাটপ টাই বাবুর কথা টুকে নিচ্ছেন তিনি। এমন সময় এল একটি স্টেশন, কেরানি কর্তাকে শুধোলেন কী নাম হবে এ স্টেশনের? ঢালের ধাক্কায় বিরক্ত রেলকর্তা বললেন No Other Dhal কেরানি তাঁর প্রভুভক্তির প্রতি আস্থা অটুট রেখে নাম লিখলেন নোয়াদার ঢাল! কথায় কথায় হেল থেকে নোয়াদার ঢালে এসে গেলাম। ওই হেল এর কাছে স্বর্গ মানে হেভেনও আছে! হেভেন না থাকলে প্যারাডাইস আসবে কোথা থেকে? মিশিগানে প্যারাডাইস আর হেল ৪৭৩ কিলোমিটারের তফাতে।
নাম বা বদ নাম যাই খুঁজতে জান রেলওয়ের জুড়ি মেলা ভার। পৈতৃক কারণে রেলের ছেলে বলে বলছি না রেল সত্যিই পারিবারিক সম্পর্কগুলোকে ও সম্মান দিয়েছে স্টেশনের নামে।
রাজস্থানে BAP, Nana  তো বিহারে Bettiah, Bhabua আবার তেলেঙ্গানার Bibinagar থেকে রাজস্থানের Sali ,  সম্পর্কের ঝমঝম ঝমঝম।
আচ্ছা হরিয়ানার Diwana কী ঝাড়খন্ডের Daru খেয়ে তেলেঙ্গানার Mahboob Nagar এ হন্যে হয়ে ঘোরে রাজস্থানের Rani র খোঁজে!! তবে কেন যে কাকু মাথায় ওড়না দেয় Orhania Chacha একমাত্র ভারতীয় রেল ই দিতে পারে এর উত্তর।মজার নামের ভান্ডার ভরা পৃথিবীর বৃহত্তম রেলপথ এর দুপাশের নাম ফলকে। এক নজরে দেখে নিন রেলের পশুপ্রেম। Kutta কর্ণাটক, Billi উত্তর প্রদেশ, Kala Bakra পঞ্জাব, Gadha গুজরাত, Suar উত্তর প্রদেশ, Bhainsa তেলেঙ্গানা।
রেল স্টেশনের নামকরন করতে ঝক্কিও কম নয় এই যেমন হাওড়া খড়্গপুর লাইনে একটি স্টেশনের অনুমোদন এল। কিন্তু নাম কী হবে? প্রস্তাবিত স্টেশনটির কাছাকাছি ৩টি গ্রাম পাকুড়িয়া, মুড়াইল ও নারায়ণ। তিন পক্ষই স্টেশনের নামফলকে নিজের গ্রামের নাম দাবি করল। মামলা গড়াল কোর্ট অবধি। অবশেষে দীর্ঘতম স্টেশনের নাম পেল পশ্চিমবঙ্গ। নারায়ণপাকুড়িয়ামুড়াইল।
জায়গার নামে একটা অঞ্চলের মেজাজটাও আঁচ করা যায়। মুর্শিদ কুলি খাঁর মুর্শিদাবাদে তাই অনায়াসে হাতেহাত ধরে থাকে চেইনপাড়া, হামদামপুর, আয়েশবাগ, মতিঝিল, নশিপুর, জিয়াগঞ্জ, লালবাগ।
যথন মানুষ নিজেদের কর্মকান্ডের ডালপালা বিস্তারে মহীরূহ হয়ে ওঠেন তখন বোধহয় গান্ধীজীর মত মনে হয় তাঁকে। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী র নামাঙ্কিত ৫৫টি রাজপথ রয়েছে আমাদের দেশে। ভারত ছাড়া বহির্বিশ্বে মহাত্মা গান্ধীর নামে রয়েছে ৬৬টি রাস্তা, যার মধ্যে নেদারল্যান্ডসেই আছে ২৮টি পথ। আসলে পথের দিশা দেখানো মানুষদের এটাই বোধহয় পরম পাওয়া, পথের সন্ধান দিতে দিতে নিজের অজান্তেই কখন যেন তাঁরাই পথ হয়ে ওঠেন। তাঁরা তারা হয়ে ওঠেন, ধ্রুবতারার মত জেগে থেকে পথভ্রষ্টকে চালিত করেন।
আর একজন হো চি মিন, একটা মানুষের নামে একটা রাষ্ট্রের রাজধানী! ভাবতেই গায়ে কাঁটা দেয়।
যেমন কাঁটা দেয় কিছু কিছু জায়গার নাম। অবশ্য ভক্তিভালবাসায় নয়, শিরদাঁড়া ঠান্ডা করা ভয়ে। Y2K র প্রথম বিহার নির্বাচন কভার করতে গিয়েছি। পাটনা থেকে চলেছি সিওয়ান। বাহুবলি বিধায়ক। বারুদের স্তুপ। নিজের চোখে দেখে এসেছি। কিম্বা এই বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে একএকটা স্থান শুধুমাত্র নির্বাচনী ও রাজনৈতিক কারনে টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে 'নাম' করেছে। তবে বহু প্রাণের মূল্যে অমন নাম না করলেই সেটা সভ্যতার ক্ষেত্রে ভাল হত।
বিপর্যয় থেকে তৈরি হয়েছে কত নাম। ১৭৪২ এ সাত খানা ডিঙি নৌকো উল্টে গেল! কালক্রমে ওল্টানো ডিঙি বর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে হল উল্টোডাঙা। আজকের শ্রীরামপুরের নাম মাহাত্ম্য নাকি রাম কৃপা হীন। এক ভিক্ষাপ্রার্থীর কাতর আকুতি Sir I Am Poor থেকেই নাকি এল শ্রীরামপুর। আচ্ছা পুর, তলা, গড় দিয়ে কত জায়গার নাম আছে ভেবে দেখেছেন!

নাম নিয়ে কথা বলতে বলতে মাথার ভিতরে কত নাম উড়ে বেড়াচ্ছে।পালামৌ, দলমা, ভীমবৈঠকা, কেঁচকি, শিওনি, কানহা, পেঞ্চ হয়ে ভিতরকণিকা, চুকচুকিয়া, মানস, বক্সা, গির, কাজিরাঙ্গা, মানস, রণথম্ভোর, সুন্দর আমার দেশের সুন্দরবন গুলো। সবুজ প্রকৃতি, সজীব বন্যপ্রাণী।  ওদেরও নাম বলতে হবে। বিশেষ করে ওই নামগুলো চেনাতে হবে আমাদের আগামী প্রজন্মকে। নইলে যে বাঁচার উপায় নেই।
বাঁচার উপায় না থাকলে মানুষ যেমন পথ খোঁজে। আমিও তেমন খুঁজছিলাম। কেন আমার ঠিকানার নাম পোদরা? অনেক উপহাস, মুচকি হাসি, ঠাট্টা র গ্লানিক্লেদ ঠেলে ইতিহাস পেলাম।
অবিভক্ত বাংলার বীরত্বময় সে ইতিহাস। পোদ উপজাতি রা সুন্দরবনে প্রথম আবাদ করে। শিকার, নদীতে লুঠতরাজ ছিল তাদের জীবিকা নির্বাহের উপায়। ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় যতগুলো আঞ্চলিক শক্তি পোদরা ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম। তথ্যটা পেয়েই মন বলল মিলছে মিলছে। পূর্ণেন্দু পত্রী র কলকাতার ইতিহাসে পড়েছি বেতড় বা বেত্র তে বাঘ বেরোতে, কালিক্ষেত্র বা কালিঘাট অবধি ছিল সুন্দরবন। বাঘ আসত বলি প্রদত্ত পাঁঠার রক্তের ঘ্রাণে। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যে মানুষ গুলো প্রকৃতিকে হারিয়েছে তাদের কুর্নিশ করতেই তো আমার ঠিকানায় তাদের স্মৃতি। ইশ বড্ড ভুল হয়ে গেছে তাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে।


If you like it, comment below in the comment box and follow
Me in facebook , twitter & youtube 


Monday, February 19, 2018

নাথিং অ-ফিসিয়াল...




আমার এক পিসি ছিলেন। খুব ছোট বয়সে তাঁর বিয়ে হয় এক বিপত্নীকের সাথে। বিয়ের অল্প দিনের মধ্যে সামান্য ব্যবধানে হতে থাকে বাচ্ছাকাচ্ছা। তিন সন্তানের জননী বালিকা পিসি তাঁর পরিণত বয়সে আসার আগেই স্বামী হারা হন। অল্প বয়সে বিধবা নিজের জীবনের সব জৌলুস বিসর্জন দিয়ে সাদা থানের পরিধিতে সন্তানদের মানুষ করতে থাকেন। আমার স্মৃতিতে পিসির প্রথম মোলাকাত যখন  তখন তিনি প্রায় ৫০ ছুঁই ছুঁই। আমি বড় হতে লাগলাম পিসি বৃদ্ধা হতে লাগলেন। আমরা ভাইবোনরা কোন এক অদৃশ্য পারিবারিক বর্ণ বিপর্যয়ের উত্তারিধাকারে পিসিকে 'আপি' সম্বোধনে ডাকতাম। আপির যত বয়স বাড়তে লাগলো তাঁর হাঁটা চলা কথাবলা সব কিছুর মধ্যে অনাবিল এক হাস্যরস সঞ্চার হত আমাদের মনে। স্বল্প শিক্ষিতা, আবেগ সর্বস্ব, জীবনের ঘোরপ্যাঁচ না জানা, পূর্ণিমা অমাবস্যার ঘোরতর পালনে, এঁটো সকড়ি ক্লিষ্ট মমতাময়ী আপি যেন ছিলেন সবার পারিবারিক ক্রেস, উপোসের বাইবেল আর আমাদের কাছে ভুল শব্দের ডিকশনারী। যেমন ধরো বেসিন, আপি বলবেন ডেসিন। আবার তর্ক করবেন "তোরা হাসছিস ? তবে কী ওটা মেশিন না কী বেসিন"
এরকমই  চলত। অনেক শব্দ ভুলভাল রূপে হাজির হতো আমাদের শৈশবে। হিসি করতে যাওয়া আপির ডিকশনারী তে হয়ে যেত "ফাঁকে" যাওয়া। আমাদের চাপা হাসির রোল থামতো না।
যেমন মাছের আঁশ থাকে কিন্তু আপির ডিকশনারীতে মাংস ,ডিম , পেঁয়াজ ,রসুন সব্বার আঁশ ছিল।
আসলে বাঙালি বোধহয় এমনই। পাকস্থলীকে মাছ দিয়ে ভরিয়ে রাখে। শাক দিয়ে ঢেকে রাখে স্মৃতিজাল তবু সে স্মৃতির লতাপাতা ঠেলে প্রাণপণ বেরিয়ে আসে রুপোলি মেছো মন।

এই যেমন এখন আমার লতাপাতা চাপা স্মৃতিতে ভিড় করে আসছে ছেলেবেলার মফঃস্বল রেল শহরের ছোট মাছ বাজার। মাটিতে গোল করে বড় জোর ১০ কী ১৫ জন মাছ বিক্রেতা। বাবা ডিউটি তে গিয়ে প্রায়ই ২দিন কী ৩ দিন পর ফিরতেন। সাইকেল নিয়ে হাফ প্যান্ট আমি হাজির হতাম পালান কাকু ,লক্ষী পিসি বা বাতাসী পিসির সামনে মনমত মাছ বেছে ওজন করে নিলেই কাজ মিটে যেত। দর দাম মেটানোর পর্ব হত বাবা বাজার যাওয়ার দিনে। সে সব দিন এখন শীর্ষেন্দু র উপন্যাস এর মতোই অলীক।

এমনই অলীক কয়েকটা দিন কেটেছিল শ্রীনগরে। একটা জনপ্রিয় ভ্রমণ শো তে তখন কাজ করি। অমরনাথ যাত্রা শ্যুট করে লাদাখ যাব। ইন্টারলাইন পারমিট শুটিং এর অনুমতি আর পর্যটন দপ্তরের কিছু টুকটাক কাজ বাকি। অতএব প্রায় সপ্তাহ খানেক থাকতে হবে শ্রীনগরে। সকালে অফিসিয়াল কাজ সেরে গোটা দিন নিরবিচ্ছিন্ন বিশ্রাম। কাশ্মীর কি কলি র ডাল যতই মোহময়ী হোক না কেন আমার কাছে তখন ভাসমান হাউজ বোটের নিঃসঙ্গতা নিরস দিন বিরস করে দিচ্ছিল। হাউজ বোটের এক কেয়ারটেকার একটা ছিপ হাতে ধরিয়ে পরামর্শ দিলেন মাছ ধরার । লেগে পড়লাম। সারা দুপুর চার আর ছিপ সম্বল করে ভাগ্য অন্বেষণ। প্রথম প্রথম কিছুই এল না। ঝাঁঝি, পানা, পাতাকে মাছ ভাবলাম। তারপর ফাতনা নড়ল ছিপে টান লাগল ছোট ছোট মাছ আসতে লাগল। সামনে শালিমার বাগ নিসাদবাগ, চারচিনার।  ডাল লেকের পটভূমিতে উড়ে যাচ্ছে কত মাছরাঙা,  ভেসে যাচ্ছে রঙিন শিকার। শিকারীর চোখ নিয়ে একা আমি সে সব দৃশ্যকল্প থেকে দূরে একা ধনঞ্জয়ের মত মাছের ধ্যান।
পদ্মার ইলিশ ডিলিশিয়াস শুনেছিলাম। প্রথম চোখে এবং চেখে দেখলাম চিটাগাং ক্লাবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটবোর্ড বিদেশী সাংবাদিকদের অভ্যর্থনায় একটা পার্টি থ্রো করেছিল ভারত বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা ট্রাইনেশন কাপের সময় ২০১১ সালে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শচীন তেন্ডুলকরের টেস্ট সেঞ্চুরি দেখা, ৫ ফুটের ভিতর দাঁড়িয়ে মাস্টারব্লাস্টারের নেটে নকিং দেখা যদি লাইফটাইম এক্সপিরিয়েন্স হয় তাহলে ওরিজিনাল পদ্মার ইলিশ খাওয়া আর একটা লাইফটাইম এক্সপিরিয়েন্স এর সমাপতন। সে ইলিশ ভাজা আর বিরিয়ানির স্বাদ শব্দে বর্ণনার অতীত।
ইলিশ নিয়ে বিস্তর আদিখ্যেতায় যে সব মোহনবাগানী এতক্ষণে ভ্রু কোঁচকাচ্ছেন তাঁদের জন্য এবার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। সালটা ২০০৬ সুন্দরবনের ডাকাতদের নিয়ে একটা তথ্যচিত্র র শ্যুটিং করছি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনবিভাগের সহযোগিতা য় শ্যুট চলছিল খাঁড়ি আর জঙ্গলের গভীরে। সাথে সাথে বিশাল ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মাঝে মাঝে জেগে থাকা জনজীবনের হালহকিকত দেখছিলাম আমরা। সুধন্যখালির পথে যেতে এরকমই এক গ্রামে খেয়েছিলাম এ গ্রেড কাঁকড়া আর দারুণ চিংড়ি। সুন্দরবন এ আধা নোনা জলের চিংড়ির স্বাদ ভেড়ির চিংড়ির থেকে অনেকটাই আলাদা। আকারে বড় বিশেষ নয় কিন্তু স্বাদে অতুলনীয়।  গোয়ার সমুদ্র সৈকতে বিভিন্ন স্যাকে অবশ্য ওজনে বড় চিংড়ি বা 'লবস্টার' পাওয়া যায়। খাওয়ার আগে সেগুলোর ছবি তুলে হাঁটু জলে পা ডুবিয়ে নৈশাহারে চরম তৃপ্তি, পরম সুখ।

আর আমাদের  তাজপুর, মন্দারমণি, শঙ্করপুর বা দীঘা তো মেছো বাঙালির অভয়ারণ্য। যাঁরা এই অঞ্চলে  গেছেন পারলে একবার শঙ্করপুর মৎস্য বন্দর বা দীঘা মোহনার মাছ বাজার ঘুরে আসতে পারেন। তাজা সামুদ্রিক মাছের এত ভাল বাজার সকাল সকাল ফুরফুরে করে দেবে প্রাণমন।  যেমন পারেন বর্ষাকালে  শিয়ালদহ থেকে ডায়মন্ড হারবার লোকালে চেপে বসতে। ইলিশের মরসুমে স্টেশন থেকে ভ্যান রিকশা  নিয়ে যান মাছের আডৎ। দেখবেন সার সার ট্রলার থেকে কুইন্টাল কুইন্টাল ইলিশ এসে স্তুপাকারে জমা হচ্ছে। বিশাল বিশাল দাঁড়ি পাল্লায় বেলচা করে তোলা হচ্ছে সাধের ইলিশ । আমার ভেতো বাঙালি মনে কালচারাল শক লেগেছিল । বেলচা বাহিত ইলিশের করুন দৃশ্যকল্প অতি বড় মোহনবাগানী ও সইতে পারবেন না। নিলামের দরদাম হাঁকডাক, কলরব, কোলাহল কাটিয়ে বাড়ি ফেরার পরও নাকে ভাসবে ইলিশের মোহময় সুগন্ধ।

মাছের গন্ধে গদগদ বাঙালি। কিন্তু সেই গন্ধই কখনও কখনও প্রাণ ঘাতিকা হয়ে যায়। না আমি শুঁটকির মৎস্যগন্ধা থেকে সুস্বাদু যোজনগন্ধা হয়ে ওঠার গল্প বলছি না। আমি ফিস সসের কথা বলছি। সময়টা ২০১১ সালের দুর্গাপুজোর সময়। ভিয়েতনাম যাচ্ছি ১০-১২ ঘন্টার বিমান যাত্রা আর তারপর ঘন্টা তিনেক গাড়িতে আসার পর রাত ২টো নাগাদ হোটেল পৌঁছলাম। খিদেয় পেট চুঁইচুঁই। রুম সার্ভিস শেষ অর্ডার দিয়ে গেল, নুডুলস । টেবলে সল্ট, পেপার, চিলি, টোমাটো সসের সাথে ছোট্ট কাচের বোতলে ফিস সস। আমার সহকর্মী সাংবাদিক খিদের চোটে সব সসের সাথে ফিস সসও ঢেলে নিল নুডুলস এ। প্রথম গ্রাস মুখে তোলার পর তার মুখের মানচিত্র গেল বদলে। দ্বিতীয় গ্রাস মুখে উঠতেই তার গা গুলিয়ে বমি উঠে এল। তারপর সারা ভিয়েতনাম সফর মুর্তিমান ত্রাসের মত হয়ে রইল ফিস সস। দু দেশের কত মিল মাছে ভাতে মিল, জাতীয় ফুলের পদ্মে মিল, ফুটবল প্রেমে মিল। শুধু ফিস সসের দুশমনীর জন্যই "তোমার নাম আমার নাম ভিয়েতনাম" হল না।

পূর্বের থেকে পশ্চিমে গেলেও আমার সঙ্গে আঁশের মত এঁটে রইল মাছ। ডেনমার্কের হিরৎস্যালস বন্দরের কাছেই পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম সামুদ্রিক মাছের অ্যাকোরিয়াম। আর তার পরের স্টেশনেই অগুনতি ফিস ক্যাফে আর ফিস বুটিক। ঢুঁ মারতেই ট্রাউট, টুনা, সার্কের অসাধারণ সব ডিশ আর তার সাথে প্রণ, লোবস্টার। ফিলে করা কাঁচা মাছের হিমশীতল শোকেস রয়েছে তারপাশেই। একটু এগিয়ে গেলেই সার সার বিলাস বহুল ইয়াচ তাদের সেরা গেমের ছবি সাজিয়ে নোঙর ফেলে দাঁড়িয়ে অ্যাঙ্গলিং টুরিস্ট দের অপেক্ষায়। পকেটের কিছু ক্রোণ খরচ করলেই নর্ন সি বা আটলান্টিকের গভীরে নিয়ে গিয়ে মাছ ধরা দেখিয়ে সেই মাছ সহযোগে ভরপেট পেটপুজো করিয়ে তীরে ফেরত।















লেখাটা লিখছি মণিপুরের ইম্ফল থেকে। ফুটবল ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচারের কাজে এসেছি। গত মাসেও এসেছিলাম। তখন ২৬শে জানুয়ারি। বনধ চলছে। কোথাও একটাও জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যাচ্ছে না। ফাঁকা বাজারের একপাশে শুধু একটা দোকান খোলা। খবরের কাগজে শুকনো কিছু ভাজা মাছ (স্থানীয় ভাষায় 'নারি' ) সাজিয়ে বসে আছেন এক মহিলা। কোনও ক্রেতা কোত্থাও নেই। শুধু মিলিটারির অ্যান্টি এক্সপ্লোসিভ সাঁজোয়া গাড়ি আর ভারী বুটের শব্দ। মনে হল খবরের কাগজের ওপর এই মৎস্য অবতারই আজকের হেডলাইন।

If you like it comment below in the comment box and follow
Me in facebook , twitter & youtube




প্যারালাল মিডিয়া এ প্রকাশিত 


Wednesday, February 7, 2018

এক অন্য প্রেমের গল্প | কে ভি প্যারাডাইস... K V Paradise | A different Love Story

আজ একটা প্রেমের গল্প শোনাবো।

প্রেম মরতে শেখায়, প্রেম বাঁচতে শেখায়; প্রেম মৃত্যুর দুয়ার থেকে জীবন এর দোরগোড়ায় মানুষকে ঝুঁটি ধরে টেনে আনে। কিন্তু এই প্রেম জীবন নদীর ওপারে গিয়েও উজ্জ্বল হয়ে থাকে ভালোবাসার উত্তাপে। জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে এই প্রেম অমরত্ব লাভ করে। জেগে থাকে নিষ্পলক।
উত্তর পূর্বের রাজ্য মিজোরামে ছোট্ট শহর আইজল। শহরে গেলে প্রথমেই চোখে পড়বে পথে দোকানে, পাবলিক প্লেস গুলোতে অহরহ এডস এর প্রচার বার্তা। অবাধ যৌনতা, যথেচ্ছ নেশা ও মাদক এর ব্যবহার আর  লাগামহীন জীবনযাত্রায় মিজো গড়পড়তা মানুষজনের মধ্যে এডস আর যক্ষা রোগ মহামারীর আকার নিয়েছে। গড় আয়ু ৫০ বছরে নেমে এসেছে গোটা জনগোষ্ঠীর। কাজেই সরকারি প্রচারে প্রতি ৫০ মিটারে পোস্টারিং, শারীরিক মেলামেশায় কন্ডোমের ব্যবহার এর। মনে হবে এ কোন জাহান্নামে এসে পড়লাম। ভিতর ভিতর একটা পঙ্কিল ভয় কাজ করবে। ঘিনঘিনে ভয়। রাত্রে ফাঁকা পথে একলা পুরুষ ও নিরাপদ নয় এখানে। রাত গভীর হলে রাত্রির নীরবতা খান খান করে সশব্দে ছুটে চলে দুচাকা চারচাকা যান। শহরের আলো আঁধারি গলি ঘুঁজিতে মিশকালো অন্ধকারে মিশে যায় দুটো শরীর। নেশাগ্রস্ত পা গুলো টলতে টলতে কোন আস্তানায় পৌঁছায় সে খবর আরক্ত চোখও রাখে না।
ব্যাভিচার এর এমন পীঠস্থানের পাঁকেই ফুটে উঠেছে প্রেমের শতদল।


Map of K V Paradise

আইজল শহর থেকে ৪৫মিনিটের দূরত্বে ব্যাংখঙ , ব্যাংখঙ এর কাছেই  ধূর্তলাং পাহাড়ে যে কাউকে মিনি তাজমহল এর ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেই  দেখিয়ে দেবে কে ভি প্যারাডাইস।
কে ভি - খলহ্রিং আর ভার্তে র নামের আদ্যাক্ষর।  খলহ্রিং এর স্ত্রী ভার্তে  ২০০১ সালে একটি পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। স্বভাবতই ভেঙে পড়েন খলহ্রিং। স্ত্রীর হঠাৎ বিয়োগে এলোমেলো করে যাওয়া জীবন হতেই পারত আর পাঁচটা জীবনের মত।  বিস্মৃতির আর স্বজন বিয়োগের বিরহে জীবন কাটিয়ে দিতেই পারতেন খলহ্রিং। কিন্তু সে পথে না হেঁটে অন্য রাস্তায় পা বাড়ালেন খলহ্রিং।

পাহাড়ের ঢালে
একটা জমি ছিল তার।  সে জমি তে ভার্তে র স্মৃতিতে তৈরী করলেন এক সৌধ।
নীল আকাশের পটভূমিতে তিনতলা শ্বেতশুভ্র সৌধ। যেন জমে থাকা নয়নের জল।
চারিদিকে ফিসফিস করে কথা বলে হাওয়া রা। পায়ের কাছে নীল লাল সাদা হলুদ নাম না জানা ফুল। আর চোখ ঝলসে দেওয়া সাদা মিনার- কে ভি প্যারাডাইস। একটু উঁচুতে মূল সৌধ তে উঠতে হয়। প্রায় ৫০-৬০ টি সিঁড়ি। গোটা সৌধকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য পাইন গাছ। সিঁড়ি পার করে সাদা চাতালে ওঠার মুখে একজন বৃদ্ধ কেয়ারটেকার। প্রবেশ মূল্য নিলেন ১০ টাকা। চোখ ধাঁধানো সাদার ওপর তখন বিকেলের রোদ পড়েছে। মূল দরজা পেরিয়ে ঢুকলাম সৌধর নিচের তলায়।
ভার্তে র বিশাল একটি ছবি আর ফুলের সমারোহ ঘিরে আছে সমাধি।





ঘোরানো সিঁড়ি উঠে গেছে ২য় তলায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় একটি কাঁচের আলমারি। সার সার সাজানো আছে মহিলাদের  জামাকাপড়। মিজো হরফ তর্জমা করে যা বুঝলাম সেগুলো ভার্তে র ব্যবহৃত পোশাক। সামনেই সেই অভিশপ্ত ট্রাডিশনাল মিজো ড্রেস যা পরে শেষ যাত্রায় সওয়ার

হয়েছিলেন ভার্তে। তারপর সার সার ভার্তে র পছন্দের পোশাক।  মন ভারাক্রান্ত হয়ে আসে। একটা মানুষের অস্তিত্ব যেন ওই পোশাক গুলোর মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট। এখানেই যেন কোথাও আছে সে। কোথাও যেন গেছে সে, এখনই এসে খুলে দেবে এই কাঁচের আলমারি ,তুলে ধরবে এ সব প্রিয় পোশাক ,প্রিয় ব্যবহার্য জিনিস। দূর পাহাড়ে সূর্যের আলোর তেজ কমে আসে। পড়ন্ত বেলায় কে যেন বলে ,
 "কৌন আয়েগা ? কোই নেহি আয়া হোগা !
সায়েদ হাওয়ানে মেরে দরওয়াজা হিলায়া হোগা ! "




এরপর ওপরের তলা। সিঁড়ি দিয়ে উঠে গম্বুজ এর মত অল্প আলোর ধ্যান কক্ষ। মনের দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, বিহ্বলতা, সব কিছুর ওপরে জেগে থাকেন যে সর্বশক্তিমান । তাঁর অস্তিত্ত্বের  খোঁজে দু মিনিট বসলে কখন যেন আধ ঘন্টা কেটে যায়।
ভার্তে র সৌধ থেকে নেমে আসছি হঠাৎ নারী কণ্ঠের ফিসফিস, চাপা হাসি। সূর্যাস্তের লালিমা গোটা ভ্যালি জুড়ে। নাস্তিক মনেও হঠাৎ সন্দেহ এল !!! তবে কি ভার্তে ? ভুল ভাঙল ২য় তলায় এসে।


এক প্রেমিক যুগল অন্তরঙ্গ হয়ে বসে। এ তো আসলে ভার্তেই। এ তো আসলে খলহ্রিং এর স্বপ্ন। যে তাঁর প্রিয়তমা বেঁচে থাকবেন মৃত্যুর পরও।
ভাবতে অবাক লাগে এই গোটা কর্মকান্ড একটা মানুষ এর ব্যক্তিগত প্রয়াস। যে কর্মকান্ডের নেপথ্যে রয়েছে তাঁর প্রেয়সীর প্রতি অদম্য ভালোবাসা।
শরীরী প্রেম এর তাৎক্ষণিকতা, প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে বিশ্বাসহীনতা ,ঘরে ঘরে বিচ্ছেদ যখন রোজনামচায় পরিণত হয়েছে সেই সময়ে খলহ্রিং এর এই প্রেম কাহিনী যেন অন্য এক দিগন্ত খুলে দেয়।

কে ভি প্যারাডাইসের ভিডিও
KV PARADISE | MINI TAJMAHAL


If you like it comment below in the comment box and follow
Follow me in facebook twitter & YouTube