তোর্সা পাড়ের বৃত্তান্ত
প্রকাশিত লেখা : হ্যাংলা হেঁশেল (সংখ্যা ০২) , নভেম্বর ২০১২
'শুনেছি উত্তরবঙ্গে নাকি ইলেকট্রিক শক চালিয়ে মাছ ধরা হয় ?' প্রশ্নটা শুনে জলপাইগুড়ির মৎস্যপ্রেমী পুলাকদা একটু বিরক্তই হলেন। বললেন , ' উত্তরবঙ্গের মাছ সম্বন্ধে শুধু এটাই জিজ্ঞাস্য হল ! আর কিছু নেই ? তিস্তা , তোর্সা , জলঢাকা , রায়ডাক , বালাসন , মূর্তি , মাল ,মহানন্দা জুড়ে যে অজস্র মাছের বৈচিত্র্য ছড়িয়ে আছে , তা জানতে না চেয়ে শুধু এটা !' হ্যাঁ এভাবে কেউ কেউ বেআইনি উপায়ে পাথরের তলায় লুকিয়ে থাকা ট্যাংরা আর ভাম মাছ ধরছে। তবে এটা কখনই মূল পন্থা নয়। আমাদের নদী, পুকুর, বিল , ডোবায় প্রচুর জেলে চিরাচরিত প্রথা মেনেই মাছ ধরছে। শোল , বোয়াল ,আড় ,সরপুঁটি ,ট্যাংরা ,চিতল ,পাবদা ,রিঠা ,বাচা এখানকার নদী ,নালা ,বিল ডোবায় ভর্তি। আর রয়েছে উত্তরবঙ্গের গৌরব বোরোলি। কেউ কেউ অবশ্য আদর করে বৈরলি বলেও ডাকে। বোরোলি মাছের সবচেয়ে সুস্বাদু প্রজাতিটি পাওয়া যায় কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জে। এ ছাড়াও কোচবিহারে চাপিলা বলে আরও একটি মাছ পাওয়া যায়। বোরোলি অনেকটা মৌরলা মাছের মত দেখতে , তবে আকারে মৌরলার থেকে একটু বড় আর খুব ডেলিকেট। '
পুলাকদার সঙ্গে আড্ডা চলছিল ,এমন সময় দু'কাপ চা হাতে বৌদি এসে বললেন , কাঁচা মাছ নিয়ে তোমার দাদার কারবার , তা শুধু মাছ চিনলেই হবে ? বোরোলির সবচেয়ে সোজা , অথচ অভিজাত রেসিপিটা টুকে নাও , কাজে লাগবে।
বোরোলির পাতলা ঝাল
পরিষ্কার করে ধোয়া ১৫০ গ্রাম বোরোলি মাছ ,
দেড় চামচ আদাবাটা ,
১/২ চামচ গোটা কালোজিরে
৪-৫ টি কাঁচালঙ্কা মাঝখান থেকে চেরা
১/২ চামচ রসুনবাটা ,
১ চামচ পিয়াঁজবাটা ,
১ টি কুঁচোন টমেটো ,
ধনেপাতা ,
নুন স্বাদ মত
হলুদগুঁড়ো সামান্য
করে অল্প তেল দিয়ে গরম করে কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে আদা , রসুন, পিয়াঁজ বাটা অল্প নেড়ে নিয়ে মিশ্রনটায় হলুদ নুন দিয়ে জল ঢালতে হবে। জল অল্প অল্প ফোটা শুরু করলে বোরোলি মাছ , টমেটো কুচি আর চেরা লঙ্কাগুলো দিয়ে কড়াইটা চাপা দিয়ে কম আঁচে রান্না করতে হবে। মাঝে মাঝে ঢাকনা সরিয়ে দেখে নিতে হবে জল যেন পর্যাপ্ত থাকে। নামানোর আগে ধনেপাতা দিয়ে গরম গরম তুলাইপাঞ্জি চালের ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।
ভাবলাম গল্প হলেও সত্যি ! যেন সাক্ষাৎ মা অন্নপূর্ণা তুলাইপাঞ্জি বেড়ে তার ওপর বোরোলি ঢেলে ভ্যানিশ হয়ে গেলেন। গন্ধে পুরো মম চিত্তে নিতি নৃত্য। কুলকুচি করার পরও স্বাদ লেগে থাকে জিভে ,তালুতে, টাকরায় !!
বৌদিকে বললাম 'এ তো খুব সহজ রান্না। ' বৌদি বললেন সহজ কাজটা সহজ ভাবে করতে পারাটা সহজ না , দক্ষতা লাগে আর লাগে আন্দাজ। ' বৌদি চলে যেতে পুলাকদা বলছিলেন বাচা মাছের কথা। কীভাবে ওরা পদ্মা থেকে ওপরে এসে এই উত্তরবঙ্গে ডিম পেড়ে আবার পদ্মায় ফেরে সেই পরিযান বৃত্তান্ত। আবার স্থানীয় ভাষায় 'খোকসা ' বলে এক ধরনের স্বাদু মাছ পাওয়া যায় , যারা জল বাড়লে নদী-নালায় দেখা যায় তাদের কথাও শুনলাম। পরিযায়ী মাছেদের মধ্যে আর একটি হল 'চাপিলা '
প্রথম বর্ষায় আর শীতে কোচবিহারের নদী ভরে ওঠে এই চাপিলায় , জানলাম। আর জানলাম 'রায়চ্যাং ' বলে আর একটি নদী পরিযায়ী মাছের কথা।
'বোরোলি ভাজা আর টি-ভদকা ককটেল পুরো নাদিম শ্রবণ জুটি গো ', বললেন পুলাকদা।
'সেটা কেমন?' জানতে চাইলাম।
শুরু করলেন পুলাকদা ,
টি -ভদকা : রেসিপি
'ভদকার বোতলে মকাইবাড়ি চা এর দুটো টি -ব্যাগ ডুবিয়ে মিনিট পাঁচেক রাখো আর ততক্ষণে ঝিরিঝিরি করে মিহি কুঁচোনো পিঁয়াজ , আদা, রসুন আর বোরোলি মাছ ছাঁকা তেলে ভেজে তুলে নাও। দু চারটে শুকনো লঙ্কা আলাদা করে ভেজে মাছ ভাজাটার ওপর ছড়িয়ে দাও। এবার দুটো কাঁচা লঙ্কা মাঝামাঝি চিরে নাও , একটা লেবু ( পাতি অথবা গন্ধরাজ ) গোল গোল করে স্লাইস কেটে রাখো। এবার গ্লাসে তিন-চারটে বরফ কিউব দিয়ে মকাইবাড়ির রস মাখা ভদকা ঢালো। তার মধ্যে লঙ্কা চেরা গুলো ডুবিয়ে দাও আর লেবুর দুটো স্লাইস জাস্ট ভাসিয়ে দাও। সঙ্গে বোরোলি ফ্রাই। রায় বেরেলিতে জিতলেও এ মেজাজ পাবে না। মেজাজটাই আসল ! তবে আজ না। এখন ভরদুপুর। আমি সানডাউন না হলে কোহল Alcohol এ হাত দিই না। কোক চলবে ?'
নোলা গড়িয়ে লালা পাকস্থলী অবধি পৌঁছে গিয়েছে। অতএব , কী আর করা যাবে , কোকশাস্ত্রতেই অনিচ্ছুক মনোনিবেশ করলাম। যার যেমন কপাল আর কী !!
প্রকাশিত লেখা : হ্যাংলা হেঁশেল (সংখ্যা ০২) , নভেম্বর ২০১২
'শুনেছি উত্তরবঙ্গে নাকি ইলেকট্রিক শক চালিয়ে মাছ ধরা হয় ?' প্রশ্নটা শুনে জলপাইগুড়ির মৎস্যপ্রেমী পুলাকদা একটু বিরক্তই হলেন। বললেন , ' উত্তরবঙ্গের মাছ সম্বন্ধে শুধু এটাই জিজ্ঞাস্য হল ! আর কিছু নেই ? তিস্তা , তোর্সা , জলঢাকা , রায়ডাক , বালাসন , মূর্তি , মাল ,মহানন্দা জুড়ে যে অজস্র মাছের বৈচিত্র্য ছড়িয়ে আছে , তা জানতে না চেয়ে শুধু এটা !' হ্যাঁ এভাবে কেউ কেউ বেআইনি উপায়ে পাথরের তলায় লুকিয়ে থাকা ট্যাংরা আর ভাম মাছ ধরছে। তবে এটা কখনই মূল পন্থা নয়। আমাদের নদী, পুকুর, বিল , ডোবায় প্রচুর জেলে চিরাচরিত প্রথা মেনেই মাছ ধরছে। শোল , বোয়াল ,আড় ,সরপুঁটি ,ট্যাংরা ,চিতল ,পাবদা ,রিঠা ,বাচা এখানকার নদী ,নালা ,বিল ডোবায় ভর্তি। আর রয়েছে উত্তরবঙ্গের গৌরব বোরোলি। কেউ কেউ অবশ্য আদর করে বৈরলি বলেও ডাকে। বোরোলি মাছের সবচেয়ে সুস্বাদু প্রজাতিটি পাওয়া যায় কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জে। এ ছাড়াও কোচবিহারে চাপিলা বলে আরও একটি মাছ পাওয়া যায়। বোরোলি অনেকটা মৌরলা মাছের মত দেখতে , তবে আকারে মৌরলার থেকে একটু বড় আর খুব ডেলিকেট। '
পুলাকদার সঙ্গে আড্ডা চলছিল ,এমন সময় দু'কাপ চা হাতে বৌদি এসে বললেন , কাঁচা মাছ নিয়ে তোমার দাদার কারবার , তা শুধু মাছ চিনলেই হবে ? বোরোলির সবচেয়ে সোজা , অথচ অভিজাত রেসিপিটা টুকে নাও , কাজে লাগবে।
বোরোলির পাতলা ঝাল
পরিষ্কার করে ধোয়া ১৫০ গ্রাম বোরোলি মাছ ,
দেড় চামচ আদাবাটা ,
১/২ চামচ গোটা কালোজিরে
৪-৫ টি কাঁচালঙ্কা মাঝখান থেকে চেরা
১/২ চামচ রসুনবাটা ,
১ চামচ পিয়াঁজবাটা ,
১ টি কুঁচোন টমেটো ,
ধনেপাতা ,
নুন স্বাদ মত
হলুদগুঁড়ো সামান্য
করে অল্প তেল দিয়ে গরম করে কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে আদা , রসুন, পিয়াঁজ বাটা অল্প নেড়ে নিয়ে মিশ্রনটায় হলুদ নুন দিয়ে জল ঢালতে হবে। জল অল্প অল্প ফোটা শুরু করলে বোরোলি মাছ , টমেটো কুচি আর চেরা লঙ্কাগুলো দিয়ে কড়াইটা চাপা দিয়ে কম আঁচে রান্না করতে হবে। মাঝে মাঝে ঢাকনা সরিয়ে দেখে নিতে হবে জল যেন পর্যাপ্ত থাকে। নামানোর আগে ধনেপাতা দিয়ে গরম গরম তুলাইপাঞ্জি চালের ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।
ভাবলাম গল্প হলেও সত্যি ! যেন সাক্ষাৎ মা অন্নপূর্ণা তুলাইপাঞ্জি বেড়ে তার ওপর বোরোলি ঢেলে ভ্যানিশ হয়ে গেলেন। গন্ধে পুরো মম চিত্তে নিতি নৃত্য। কুলকুচি করার পরও স্বাদ লেগে থাকে জিভে ,তালুতে, টাকরায় !!
বৌদিকে বললাম 'এ তো খুব সহজ রান্না। ' বৌদি বললেন সহজ কাজটা সহজ ভাবে করতে পারাটা সহজ না , দক্ষতা লাগে আর লাগে আন্দাজ। ' বৌদি চলে যেতে পুলাকদা বলছিলেন বাচা মাছের কথা। কীভাবে ওরা পদ্মা থেকে ওপরে এসে এই উত্তরবঙ্গে ডিম পেড়ে আবার পদ্মায় ফেরে সেই পরিযান বৃত্তান্ত। আবার স্থানীয় ভাষায় 'খোকসা ' বলে এক ধরনের স্বাদু মাছ পাওয়া যায় , যারা জল বাড়লে নদী-নালায় দেখা যায় তাদের কথাও শুনলাম। পরিযায়ী মাছেদের মধ্যে আর একটি হল 'চাপিলা '
প্রথম বর্ষায় আর শীতে কোচবিহারের নদী ভরে ওঠে এই চাপিলায় , জানলাম। আর জানলাম 'রায়চ্যাং ' বলে আর একটি নদী পরিযায়ী মাছের কথা।
'বোরোলি ভাজা আর টি-ভদকা ককটেল পুরো নাদিম শ্রবণ জুটি গো ', বললেন পুলাকদা।
'সেটা কেমন?' জানতে চাইলাম।
শুরু করলেন পুলাকদা ,
টি -ভদকা : রেসিপি
'ভদকার বোতলে মকাইবাড়ি চা এর দুটো টি -ব্যাগ ডুবিয়ে মিনিট পাঁচেক রাখো আর ততক্ষণে ঝিরিঝিরি করে মিহি কুঁচোনো পিঁয়াজ , আদা, রসুন আর বোরোলি মাছ ছাঁকা তেলে ভেজে তুলে নাও। দু চারটে শুকনো লঙ্কা আলাদা করে ভেজে মাছ ভাজাটার ওপর ছড়িয়ে দাও। এবার দুটো কাঁচা লঙ্কা মাঝামাঝি চিরে নাও , একটা লেবু ( পাতি অথবা গন্ধরাজ ) গোল গোল করে স্লাইস কেটে রাখো। এবার গ্লাসে তিন-চারটে বরফ কিউব দিয়ে মকাইবাড়ির রস মাখা ভদকা ঢালো। তার মধ্যে লঙ্কা চেরা গুলো ডুবিয়ে দাও আর লেবুর দুটো স্লাইস জাস্ট ভাসিয়ে দাও। সঙ্গে বোরোলি ফ্রাই। রায় বেরেলিতে জিতলেও এ মেজাজ পাবে না। মেজাজটাই আসল ! তবে আজ না। এখন ভরদুপুর। আমি সানডাউন না হলে কোহল Alcohol এ হাত দিই না। কোক চলবে ?'
নোলা গড়িয়ে লালা পাকস্থলী অবধি পৌঁছে গিয়েছে। অতএব , কী আর করা যাবে , কোকশাস্ত্রতেই অনিচ্ছুক মনোনিবেশ করলাম। যার যেমন কপাল আর কী !!
No comments:
Post a Comment