Wednesday, March 21, 2018

আমার এই ছোট্ট ঝুড়ি, এতে রাম রাবণ আছে .......

পুতুল নাচ আমাদের বয়সী মানুষ জন অবশ্যই এক বার না এক বার দেখেছেন ছোটবেলায়। আমাদের দেশে পুতুল নাচের বিরাট এক ঐতিহ্য মন্ডিত ইতিহাস আছে। মধ্যযুগে অবিভক্ত বাংলা সাহিত্যে পুতুল নাচের উল্লেখ পাওয়া যায়। শুধু মাত্র শিশুদের খেলনা ছাড়াও সচেতনতা ও সামাজিক বার্তা প্রচারের মাধ্যম হিসেবে এবং রামকৃষ্ণের ভাষায় 'লোকশিক্ষা ' র হাতিয়ার হিসেবে পুতুল নাচের ভূমিকা চিরায়ত। মূলতঃ স্বল্প শিক্ষিত প্রান্তিক গ্রামীণ মানুষ জন, যাদের বাস মাটির খুব কাছে তাদের অবকাশ বিনোদনের হাত ধরে বেঁচে রয়েছে এই আর্ট ফর্মটি। নেই কোনো সামাজিক স্বীকৃতি , কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা। রয়েছেন  কিছু প্রান্তিক মানুষজন আর তাদের নেশাকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছে। এদিকে রয়েছে বর্তমান সময়ে বিনোদনের হাজারো মাধ্যম , আর তাদের চোখ ধাঁধানো উপস্থাপনার মোড়ক।  ধাক্কায় পিছোতে পিছোতে প্রায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে এই শিল্প মাধ্যমটির।

বাঙলার পুতুল নাচের আসর আর এখন বসে না মফঃস্বলে। অথচ কী গৌরবান্বিত এই সংস্কৃতি ! বেণী পুতুল, ডাঙের পুতুল, তারের পুতুল, চদর বদর , সুতো পুতুল ,বনরাকু, ছায়া দিয়ে পুতুল নাচ আরও কত কী।  সহজ সরল উপস্থাপনা সরাসরি সংযোগ করে দর্শকদের সাথে। ছোটদের সাথে সাথে তাজ্জব বনে যায় বড়রাও ! পুতুল কথা বলে! হ্যাঁ আমি ভেন্ট্রিলোকুইজম এর কথা বলছি।
ধূমকেতু পাপেট থিয়েটারের প্রাণ দিলীপ মন্ডল ও তাঁর কথাবলা পুতুল 


সৌনাভ সেনগুপ্ত র সাথে অনেক দিনের পরিচয়। মিরাক্কেল এ সবে তখন ও কাজ করেছে। খেল @ ১১ বলে একটা খেলার অনুষ্ঠানে Anchor করবে সৌনাভ। আমি ক্যামেরা র দায়িত্বে। সেই শুরু কাছ থেকে নারদ কে দেখা। নিজে দিনের খবর জেনে নিয়ে স্ক্রিপ্ট করত সৌনাভ।  নারদ (সৌনাভ র পুতুল - আমরা বলি অল্টার ইগো ) আর সৌনাভ করত উপস্থাপনা। ললিত মোদী কান্ড , গ্রেগ চ্যাপেল কান্ড , বি সি সি আই এর অন্দর মহল এর খবর। যে কথা গুলো কোনো নিউজ চ্যানেলে সৌনাভর মুখ দিয়ে বললে নির্ঘাত মানহানির মামলা হত সে গুলো নারদ এর মুখে পড়তেই পেটে খিল ধরানো হাসির রোল। রোল চলতে চলতে আমরা ফ্লোরে মুখ বন্ধ করে হাসতাম। এই হচ্ছে পাওয়ার অফ পাপেট। কখনও নারদ গাইত গাজীর গান কখনো সারে জাহাঁ সে আচ্ছা। বাংলা টেলিভিশনের ইতিহাসে নারদের মত এত ধারালো ক্রিকেট উপস্থাপক বোধহয় আসে নি। ভেন্ট্রিলোকুইজমকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে ওরা দুজন ! নাকি একজন ! না বোধহয় দুজনই।
নারদ ও সৌনাভ সেনগুপ্ত  Khel @11 এর সেটে 


পুতুল নিয়ে এতো কথা বলছি কারণ আজ বিশ্ব পুতুল দিবস। পুতুলদের জন্য আজকের দিনটা। ১৯৯৩ থেকে ২১শে মার্চ পালিত হয়ে আসছে পুতুল দিবস। প্রখ্যাত পুতুলিয়া সংগীত নাটক একাডেমি বিজয়ী  দাদি পুদুমজি র পরামর্শে UNESCO র পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০২ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে পুতুল দিবস।
আমাদের শহর কলকাতায় রবীন্দ্র ভারতী পশ্চিমবঙ্গ নৃত্য নাটক সংগীত ও দৃশ্যকলা আকাদেমি আজ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির দ্বারকানাথ মঞ্চে উদযাপন করল এই দিন। দুপুর ৩তে থেকে শুরু হল বিভিন্ন পুতুল নাটক। কোনোটায় বার্তা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ,কোথাও পরিবেশ সচেতনতা ,কোনোটায় আবার বন ও বন্য প্রাণী রা এগিয়ে এসে বলছে "কী করছো তোমরা ! বন বাঁচাও তবে তো তোমরা বাঁচবে "



পাখি পুতুল 

বাঘ বাঁচাও 

বাতাসে অক্সিজেন কমছে  

দড়ি ধরে টানলেই  তালপাতার সেপাইয়ের হাত পা নড়ে !!!

বগুলা থেকে পুতুল নিয়ে এসেছিলেন প্রবীণ শিল্পী রঞ্জন রায়। শ্রীমা পুতুল নাট্য সমাজ নাম একটি দল চালান রঞ্জন বাবু। সুতোর পুতুলের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ দেখলে চোখকে বিশ্বাস করা যায় না। পুতুল টিকে নিয়ে জিমন্যাস্টিক্স দেখানোর দৃশ্য মঞ্চে শেষ হতেই দর্শকদের করতালিতে ফেটে পড়লো দ্বারকানাথ মঞ্চ। বগুলার মুড়াগাছার এই অসামান্য শিল্পীর কিছু মুহূর্ত রইল। 
অভ্যাস করছেন রঞ্জন রায় 











                                                         জিমন্যাস্টিক্স করছে পুতুল



বাংলার পুতুলনাট্য কর্মীরা সমবেত হয়ে এক ছাতার তলায় এসে তৈরি করেছে 'পাপেট মঞ্চ' সেই সংস্থার উদ্যোগে এই আয়োজন কিছু কচি কাঁচা সজীব মনকে শেখাল জীবনটা আসলে পুতুল খেলারই আসর। আমরা সবাই এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা।কার সুতোয় কখন কে টান মারে কেউ জানে না!!!



   

No comments: