সবাইকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা। যদিও নারীত্ত্বের জয়গান ৩৬৫ দিন জুড়েই। বাড়িতে মা , স্ত্রী , মেয়ে , বোন এরা ছাড়াও আমাদের জীবন জুড়ে রয়েছেন প্রচুর সহযোগী হাত যাঁদের ছাড়া জীবন অচল। আজ অনেক পুরানো অপ্রাসঙ্গিক একটা লেখা দিলাম। লিখেছিলাম ২৯শে ডিসেম্বর ২০১২ , যেদিন মারা যান নির্ভয়া। ছটা বছর পার। ছবিটা খুব একটা বদলায় নি। দিল্লির একটা ঘটনা গোটা দেশকে রাগে, ঘৃণায়, প্রতিবাদে , এক করে দিয়েছিল। আজ কেন জানিনা খুব মনে পড়ছে জ্যোতি সিং পাণ্ডের কথা। মাফ করবেন সুখের দিনে অ সুখ ডেকে আনার জন্য। এটা না কবিতা। কাব্ব্যি খুঁজতে যাওয়া বৃথা এখানে।
অসুর পদ্মকলি ও ভগবান
মেয়েটার গর্ভে পদ্মফুল ছিল
বাতাস মাতানো ঘ্রান ছিল
আশ্বিনের পড়ন্ত হিমে
ধানের খোসার মাঝে জমা
দুধসাদা মিঠে রস ছিল
আর ছিল -
দুচোখভরা বেয়াড়া রকম
আকাশকুসুম স্বপ্নকলি।
সারা দেশ ওর মেডিক্যাল বুলেটিনে
মঙ্গল প্রার্থনা করছিল।
ছাত্রী, শিক্ষিকা, টিউশন পড়ায়
যে মেয়েরা, যারা বাসের ভিড়ে
বুকে আর শরীরের নানা
চোরাগলিতে নির্লজ্জ্ব অস্বস্তিকর
হাতের ঠোক্কর খেতে খেতে অফিস যায়
আর অফিস থেকে বাড়ি ফেরে সেই মেয়েগুলো,
ব্যস্ত অফিস এক্সিকিউটিভ থেকে
প্রোডাকশনের হেয়ার ড্রেসার মেয়েরা,
পেট্রল পাম্পের কর্মী মেয়েরা,
শপিং মলের সুরক্ষার আর
ব্যাগেজ কাউন্টারের দায়িত্বে
থাকা প্যান্ট শার্টের সাথে
বেমানান শাঁখা-পলা, সিঁদুর
পরা মেয়েরা,
সেলস রিপোর্টে পুরুষদের পিছনে ফেলা বা সমানে থাকা মেয়েরা,
বিমান সেবিকা, ডাক্তার, নার্স, প্লাস্টিক কুড়ানি, মডেল, চাওয়ালি ,
ডাক ও তার বিভাগের মেয়েরা, শহরে
গ্রামেগঞ্জে, প্রতিদিন যারা সাদামাটা জীবন কাটায়,
খবরের শিরোনামে না থাকা সেই সব মেয়েরা --
লাদাখ থেকে লালগড় হয়ে লন্ডন
বা লস এঞ্জেলেস পর্যন্ত
তামাম মেয়েরা প্রার্থনা করছিল ;
আর কিছু লজ্জ্বিত পুরুষ -
সে সব মেয়েদের বাবা,দাদা, ভাই, প্রেমিকরা।
ফেসবুকে, ট্যুইটারে, টিভি চ্যানেলে,
মোমবাতিতে,কালো পতাকায়,
জল কামানে, কাঁদুনে গ্যাস আর
লাঠির সামনে প্রতিবাদ, প্রতিরোধও
করছিল।
কিন্তু পদ্মকলি ছিল তো মেয়েটির গর্ভে।
তাই অসুরেরা মেয়েটার
দুপায়ের ফাঁকে তাদের পুংদন্ড
পুরেও যখন ভেবেছে
'দন্ডটা কম হল'
তখন ঢুকিয়ে দিয়েছে
আস্ত একটা লৌহদন্ড।
আসুরিক নখ-দাঁত-লালমাখা-জিভ
মেয়েটার ছিঁড়ে যাওয়া যোনি, তলপেটে।
ফেটে গেল অন্ত্র, মূত্রথলি,
সংক্রমিত যকৃৎ,
বিষ মিশে গেল হৃদয়ে।
ধমনী, শিরা আর
স্নায়ু বেয়ে মৃত্যুর
পরোয়ানা জারি হল ঠিক
একশো চুয়াল্লিশ ধারার মতো।
সব প্রার্থনাদুয়ামান্নত
ব্যর্থ করে মেয়েটা
মারা গেল।
এবার দেবতাদের পালা।
খুঁটে খাবে মৃত মেয়েটার
কমলকুঁড়ি, নাকি
রক্ত মাখা ব্যালট।
*********************
No comments:
Post a Comment