ঈশানকে মনে আছে? ঈশান নন্দ কিশোর আওয়াস্তি। তারে জমিন পর এর আট বছরের সেই কিশোর বর্ণমালার অক্ষরগুলো যার চোখের সামনে এসে নাচত অবিরাম। অঙ্কের সংখ্যাদের কাল্পনিক নাচ যার উত্তর গুলিয়ে দিত। ডিসলেক্সিয়া ডিসঅর্ডারের আড়ালে চাপা পড়ে ছিল যার একটা পরিপূর্ণ শৈল্পিক সত্ত্বা। সবাই তাকে ভুল বুঝত। বাবা, মা, দাদা, স্কুলের টিচাররা, সব্বাই। কুঁড়ে অপদার্থ ভাবত । তাই শাস্তি হিসেবে তাকে পাঠানো হল বোর্ডিং স্কুলে। চেনা মানুষজন, চেনা পরিবেশ থেকে উপড়ে গিয়ে কুঁকড়ে গেল তার শিশু মন। তারপর কী হয়েছিল তা সবারই জানা। রাম শঙ্কর নিকুম্ভ স্যারের যাদুকাঠি বা তুলির ছোঁয়ায় বদলে গেল ঈশানের জীবনের গতিপথ। অমনোযোগী ঈশান ছবি আঁকার সাথে সাথে পড়াশোনাতেও ভাল করতে লাগল।
তবে শুভ্রনীল দাসের নিকুম্ভ স্যার ছিল না। মা ছিল। শুধু ডিসলেক্সিয়াই ছিল না। ছিল সেন্সরি প্রসেসিং ইস্যু সম্পর্কিত হাইপারঅ্যাক্টিভিটির সমস্যা আর তারই কারণে অটিজিম ও ডিসলেক্সিয়া । কী এই সেন্সরি প্রসেসিং ইস্যু? কোন দৃশ্য, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শের প্রতি অতিরিক্ত রিঅ্যাকটিভ হয় এই শিশুরা। কখনও আবার কম রিঅ্যাকট্ভ ও হয়। দৃশ্য,শব্দ,স্পর্শ, গন্ধ ও স্বাদ এই সব কটি অনুভূতি ওদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে এদিক ওদিক করে দিতে পারে। বর্তমান সময়ে অনেক শিশুরই হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার এর সমস্যা দেখা যায়। কিন্তু সেন্সরি প্রসেসিং ইস্যু র সাথে হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার। একটু বিরল। হয়নি এ সংক্রান্ত কোন বিস্তারিত রিসার্চ। এই রকম অবস্থায় শুভ্রনীলের লড়াইটা বেশ চ্যালেঞ্জের ছিল। ক্ষুদে শুভ্রনীল হাতে পেন্সিল ধরতে পারত না। তার সাথে ছিল হাইপারঅ্যাক্টিভিটির কারণে প্রচন্ড ছটফটানি। পেশায় চিকিৎসক মা তাই ছেলেকে ছবি আঁকিয়ে সুস্থির করতে চাইলেন। কিন্তু যে পেন্সিল ধরে থাকতে পারে না হাতে সে কি করে ছবি আঁকবে !!! নিজের পেশাগত অভিজ্ঞতা আর মায়ের মমতা মিশিয়ে কাজ শুরু করলেন ডা: জ্যোতিশুভ্রা দাস। প্রথমে ছেলের হাতে জল লাগিয়ে সেই হাত শুকনো দেওয়ালে আলতো চাপ দিলেন। ফুটে উঠল করতলের জলছবি ! পুঁচকে মনটা আনন্দে খিলখিল করে উঠল। এরপর জলে গুলে দিলেন রঙ। ছেলেকে বললেন ওই রং ভেজা হাতের ছাপ দেওয়ালে দিতে। একটা দিগন্ত খুলে গেল। এরপর ধীরে ধীরে অভ্যাস চলল। করতল , আঙ্গুল , হাতের তালু। রঙ পেয়ে শুভ্রনীলের শ্বেতশুভ্র শৈশবের ক্যানভাসেও আনন্দের লাল,গোলাপি,নীল অনুভূতিগুলো ডানা মেলল। বাড়িতেই পাড়ার এক আঁকার শিক্ষকের কাছে ছেলের ক্লাস শুরু করলেন জ্যোতিশুভ্রা। শুধু শিক্ষককে বলে দিলেন কী ধরণের ছবি আঁকাতে হবে তাঁর ক্ষুদেটিকে। এও এক থেরাপি।
সেন্সরি প্রসেসিং ইস্যু সম্পর্কিত হাইপারঅ্যাক্টিভিটির মোকাবিলায় আর্ট থেরাপি। আশেপাশে অনেকেই হয়ত তখন বিশ্বাস করতে পারেনি কী চমক অপেক্ষা করছে ছেলেটির আগামী জীবনে।
এদিকে বাড়িতে রবীন্দ্রসংগীত শোনার চল ছিল। তাই কিভাবে,কোন অবচেতনে যেন ওই হুড়মুড় দুর্দ্দার কাঁচামনে পাকা আসন পেতে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। হয়ত ওর বাবার রোল খেতে রাস্তার দোকানে গেছে শুভ্রনীল, দোকানদার তখনও স্টোভ জ্বালেনি।
ব্যাস শুরু হয়ে গেল , " আগুন জ্বালো
আগুন জ্বালো ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো। একলা রাতের অন্ধকারে আমি চাই পথের আলো ॥ "
কিংবা স্কুলে রাখিবন্ধন চলছে। একা গুটিয়ে বসে আছে শুভ্রনীল। মায়ের সাথে বাড়ি ফিরতে ফিরতে মায়ের কানে ফিসফিস করে সুর আসছে , " মনে করে সখি বাঁধিয়া রাখিও আমার হাতের রাখি তোমার কনক কঙ্কনে। "
জ্যোতিশুভ্রা মনে মনে ভাবলেন ঠিকই চলছে।
কে বলবে এ ছেলে বাহ্যজ্ঞানরহিত। এর মধ্যে যে নীহারিকার বাস , এ যে খেলা করে ছায়াপথ জুড়ে।
ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে শুভ্রনীল। ও এখন পেন পেন্সিল ধরতে পারে। এই কিশোর বয়েসেই ও নিজস্ব একটা ফর্ম তৈরী করে ফেলেছে। সম্প্রতি একাডেমি অফ ফাইন আর্টসে হয়ে গেল মমার্তের সামার শো। সেই প্রদর্শনীতে ছিল শুভ্রনীলের চারটি ছবি। সিরিয়ার শিশুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে নিজের শিল্পসৃষ্টিও করল সে। অনেক দূর যেতে হবে শুভ্রনীল। তোমার পরিচয় তুমি একজন শিল্পী। আর কে না জানে শিল্পীদের মন মাপার ক্ষমতা সাধারণ মানুষদের এক্তিয়ারের বাইরে। এগিয়ে চলো বন্ধু। ছবি গুলো দেখুন। আর এই লেখাটা শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। যাতে অনেক শুভ্রনীল যারা এখনো আলোর দিশা পায়নি তারা অন্তত জানতে পারে যে হয়। চেষ্টা আর উদ্যম থাকলে অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করা যায়।
নক্ষত্ররা মাটিতেই থাকে শুধু তাদের খুঁজে বের করতে হয় |
তবে শুভ্রনীল দাসের নিকুম্ভ স্যার ছিল না। মা ছিল। শুধু ডিসলেক্সিয়াই ছিল না। ছিল সেন্সরি প্রসেসিং ইস্যু সম্পর্কিত হাইপারঅ্যাক্টিভিটির সমস্যা আর তারই কারণে অটিজিম ও ডিসলেক্সিয়া । কী এই সেন্সরি প্রসেসিং ইস্যু? কোন দৃশ্য, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শের প্রতি অতিরিক্ত রিঅ্যাকটিভ হয় এই শিশুরা। কখনও আবার কম রিঅ্যাকট্ভ ও হয়। দৃশ্য,শব্দ,স্পর্শ, গন্ধ ও স্বাদ এই সব কটি অনুভূতি ওদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে এদিক ওদিক করে দিতে পারে। বর্তমান সময়ে অনেক শিশুরই হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার এর সমস্যা দেখা যায়। কিন্তু সেন্সরি প্রসেসিং ইস্যু র সাথে হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার। একটু বিরল। হয়নি এ সংক্রান্ত কোন বিস্তারিত রিসার্চ। এই রকম অবস্থায় শুভ্রনীলের লড়াইটা বেশ চ্যালেঞ্জের ছিল। ক্ষুদে শুভ্রনীল হাতে পেন্সিল ধরতে পারত না। তার সাথে ছিল হাইপারঅ্যাক্টিভিটির কারণে প্রচন্ড ছটফটানি। পেশায় চিকিৎসক মা তাই ছেলেকে ছবি আঁকিয়ে সুস্থির করতে চাইলেন। কিন্তু যে পেন্সিল ধরে থাকতে পারে না হাতে সে কি করে ছবি আঁকবে !!! নিজের পেশাগত অভিজ্ঞতা আর মায়ের মমতা মিশিয়ে কাজ শুরু করলেন ডা: জ্যোতিশুভ্রা দাস। প্রথমে ছেলের হাতে জল লাগিয়ে সেই হাত শুকনো দেওয়ালে আলতো চাপ দিলেন। ফুটে উঠল করতলের জলছবি ! পুঁচকে মনটা আনন্দে খিলখিল করে উঠল। এরপর জলে গুলে দিলেন রঙ। ছেলেকে বললেন ওই রং ভেজা হাতের ছাপ দেওয়ালে দিতে। একটা দিগন্ত খুলে গেল। এরপর ধীরে ধীরে অভ্যাস চলল। করতল , আঙ্গুল , হাতের তালু। রঙ পেয়ে শুভ্রনীলের শ্বেতশুভ্র শৈশবের ক্যানভাসেও আনন্দের লাল,গোলাপি,নীল অনুভূতিগুলো ডানা মেলল। বাড়িতেই পাড়ার এক আঁকার শিক্ষকের কাছে ছেলের ক্লাস শুরু করলেন জ্যোতিশুভ্রা। শুধু শিক্ষককে বলে দিলেন কী ধরণের ছবি আঁকাতে হবে তাঁর ক্ষুদেটিকে। এও এক থেরাপি।
এ এক নতুন আর্ট ফর্ম |
এদিকে বাড়িতে রবীন্দ্রসংগীত শোনার চল ছিল। তাই কিভাবে,কোন অবচেতনে যেন ওই হুড়মুড় দুর্দ্দার কাঁচামনে পাকা আসন পেতে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। হয়ত ওর বাবার রোল খেতে রাস্তার দোকানে গেছে শুভ্রনীল, দোকানদার তখনও স্টোভ জ্বালেনি।
ব্যাস শুরু হয়ে গেল , " আগুন জ্বালো
আগুন জ্বালো ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো। একলা রাতের অন্ধকারে আমি চাই পথের আলো ॥ "
কিংবা স্কুলে রাখিবন্ধন চলছে। একা গুটিয়ে বসে আছে শুভ্রনীল। মায়ের সাথে বাড়ি ফিরতে ফিরতে মায়ের কানে ফিসফিস করে সুর আসছে , " মনে করে সখি বাঁধিয়া রাখিও আমার হাতের রাখি তোমার কনক কঙ্কনে। "
জ্যোতিশুভ্রা মনে মনে ভাবলেন ঠিকই চলছে।
মা , ডা: জ্যোতিশুভ্রা দাসের সাথে শুভ্রনীল |
ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে শুভ্রনীল। ও এখন পেন পেন্সিল ধরতে পারে। এই কিশোর বয়েসেই ও নিজস্ব একটা ফর্ম তৈরী করে ফেলেছে। সম্প্রতি একাডেমি অফ ফাইন আর্টসে হয়ে গেল মমার্তের সামার শো। সেই প্রদর্শনীতে ছিল শুভ্রনীলের চারটি ছবি। সিরিয়ার শিশুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে নিজের শিল্পসৃষ্টিও করল সে। অনেক দূর যেতে হবে শুভ্রনীল। তোমার পরিচয় তুমি একজন শিল্পী। আর কে না জানে শিল্পীদের মন মাপার ক্ষমতা সাধারণ মানুষদের এক্তিয়ারের বাইরে। এগিয়ে চলো বন্ধু। ছবি গুলো দেখুন। আর এই লেখাটা শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। যাতে অনেক শুভ্রনীল যারা এখনো আলোর দিশা পায়নি তারা অন্তত জানতে পারে যে হয়। চেষ্টা আর উদ্যম থাকলে অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করা যায়।
ডানদিকের ৪টি ছবি শুভ্রনীলের আঁকা |
No comments:
Post a Comment