Thursday, March 22, 2018

জল পাই কোথায় , বলতে পারেন !!!! World Water Day | A gentle reminder

খন সবে ট্রাভেল ট্যুরিজম জার্নালিজম শুরু করেছি। বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লো। প্রায় দেড় মাসের অ্যাসাইনমেন্ট পেলাম অমরনাথ যাত্রা আর লাদ্দাখ। অমরনাথ এর হিমশীতল জ্যোতির্লিঙ্গ কভার করে শ্রীনগর হয়ে মানালি ফিরে মানালি থেকে রোটাং পাস দিয়ে ঢুকলাম প্যারাডাইস ও আর্থ লাদাখে। ৩ দিনের কোয়ালিস সফর। দিনে গাড়ি চলবে থেমে থেমে। আর সন্ধ্যের মধ্যে ঢুকে পড়তে হবে দিনের গন্তব্যে। থেমে চলার কারণ শুট করতে যত বেশি সময় পাওয়া যায়। তার ফলে খুব ভোরে উঠে আমরা তৈরী হয়ে নিতাম। সূর্যোদয় কখনো চলন্ত গাড়ি থেকে কখনো রাস্তার মাঝে পেতাম। এখানে বৈচিত্রময় প্রকৃতি,মানুষ ও নানান রকম। মোরেই মালভূমি, দুপাশে ধু ধু করছে তৃণভূমি প্রায় ৩০ কিমি রাস্তা চোখের সামনে খোলা এমন সময় দূরে দেখা গেল ধুলো উড়িয়ে কালো কিছু এগিয়ে আসছে। একটা দল বা ঝুন্ড জাতীয় কিছু। ড্রাইভার গাড়ির গতি কমালেন। সাথে ছিলেন ভ্রমণ পত্রিকার ফোটোগ্রাফার কমলেশ কামিলা। কমলেশ দা বললেন ,"ভয় পেয় না ওরা চাংপা, পশমিনা উল তৈরী হয় যে ছাগল থেকে সেই ছাগল চরায়। যাযাবর ওরা, সব আছে কিন্তু এখানে জল নেই। তাই গাড়ি দেখলেই ছুটে আসে যদি কিছু জল পায় ট্যুরিস্টদের থেকে। " অবাক হয়ে ভিরমি খেয়ে সে এক যা তা অবস্থা আমার। ওরা এল। গাড়ির কাঁচ নামলো। শুকনো মুখ , ফাটা ঠোঁট , হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে জল চাইছে। আমরা গাড়ির দরজা খুলে নেমে যতটা সম্ভব জল ওদের দিলাম। হাত নাড়তে নাড়তে বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে ওরা মিলিয়ে গেল।


যদিও পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যেখানে জলের অস্তিত্ব রয়েছে। পৃথিবীর এক ভাগ স্থল তিন ভাগ জল আমরা জানি।  কিন্তু সেই জলের তিন চতুর্থাংশ মেরু বরফ হিসেবে বন্দী। বাকি জলের কেবল মাত্র ২.৫%   স্বচ্ছ , পেয়। এই জলের ওপর দখলদারি নিয়েই মধ্য প্রাচ্যে যত যুদ্ধ , যত অশান্তি সেই ১৯১৮ থেকে এক শতাব্দী কেটে গেল কিন্তু জল নিয়ে কেউ এক চুল ও মাটি ছাড়তে নারাজ। চীনের জনসংখ্যা মোট পৃথিবীর লোকসংখ্যার প্রায় ১/৪ ভাগ। সেই চীনেও প্রায় ৯০% জল ভয়ঙ্কর ভাবে দূষিত। তাই পৃথিবীর তাবড় অর্থনীতিবিদদের মতে আগামী ২০২৫ নাগাদ পেট্রো তেলের চেয়েও মহার্ঘ্য হবে পরিষ্কার পানীয় জল। যেহেতু মেরু বরফের তুষার রাজ্য সাইবেরিয়ার অধিকাংশ চীনে তাই আগামীতে H2O র লার্জেস্ট প্রোডিউসার হবে চীন। আর মেরু বরফের মধ্যে শীতঘুমে অতি প্রাচীন থাকা ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া সেক্ষেত্রে আবার সজীব হয়ে কী ধ্বংস লীলা দেখায় সেটা ভেবেও চিন্তার ভাঁজ পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কপালে। 



খাস কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০০ টি ওয়ার্ড বেশ অতি মাত্রায় আর্সেনিক আক্রান্ত। WHO র বেঁধে দেওয়া আর্সেনিকের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে শহরের জলে।  কল্লোলিনীর শরীরে ছড়াচ্ছে বিষ। উত্তর কলকাতার জলের গুনগত মান হ্রাস পাবার কারণ হিসেবে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা দুষছেন রাজারহাটের তীব্র নগরায়ানকে। এর সাথে দোসর হয়েছে মূল শহরের নতুন নির্মাণ। যদি একটি সাবেকি বাড়ি ভেঙে তৈরী হয় একটি বহুতল সেক্ষেত্রে ওই একই জায়গায় জলের চাহিদা হঠাৎ করে বেশ কয়েক গুন্ বেড়ে যায়। যেহেতু আগের থেকে বেশি মানুষ ওই একই জায়গায় থাকছেন তাই ভূগর্ভ থেকে চোঁ চোঁ করে তুলে আনা জলের পরিমাণও বাড়ছে। যতটা উঠছে সে তুলনায় ক্ষতিপূরণ হচ্ছে না। কারন নগর পরিবেশে বাড়ির চারপাশের অধিকাংশ অঞ্চলই কংক্রিটে ঢাকা। তার ফলে বৃষ্টির জল বা অন্য কাজে উদবৃত্ত জল মাটিতে মিশে মাটির গভীরে যাবার সুযোগ পাচ্ছে না। বরং কংক্রিট বেয়ে নালিতে মিশে চলে যাচ্ছে নদীতে, সেখান থেকে সাগরে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা একে জলের অপচয়ই বলছেন।


পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চল , বাঁকুড়া , পশ্চিম মেদিনীপুর , পুরুলিয়া ছাড়াও উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলা শুখা মরসুমে জলকস্টে ভোগে। পুরুলিয়া বাঁকুড়া র এমন জনপদও রয়েছে যেখানে জলের যোগান পেতে রোজ ৫-৬ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। তাই NABARD এর সহযোগিতায় শুরু হয়েছে এক লক্ষ গ্রামকে চিহ্নিতকরণের কাজ। যে গ্রামগুলিতে জলকষ্টের তীব্রতা মাত্রাতিরিক্ত। ২০১৬ এ  ৪০০০০ গ্রাম থেকে দারুন সাড়া পাওয়া গেছে।
তবে কী দায়িত্বটা শুধুই সরকারী সংস্থা গুলির , নাবার্ডের ,হু র। আমাদের কিছুই করার নেই !!
আমরা দেখেছি একটি নরম পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থা দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফরতাবাদে ভুগর্ভস্থ জল কী যথেচ্ছ ভাবে তুলে নিয়েছিল। ফলস্বরূপ আশপাশের চাষের জমি শুকিয়ে গিয়েছিলো। অঞ্চলের মানুষজন এর প্রতিরোধের তীব্রতায় নড়েচড়ে বসে বহুজাতিক কোম্পানিটি। এসব অতীত। অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

 কিন্তু আগামী দিন গুলো কেমন ? কিভাবে মোকাবিলা করা যাবে জলের অপচয়। কিছু সহজ উপায় বাতলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
১. অতিফলনশীল নয় স্থানীয় ফসল চাষ করুন যে ফসল এর ভ্যারাইটিগুলো প্রাকৃতিক ভাবেই কম জল টানে। মনে রাখবেন MORE CROP MORE DROP . বাগানের গাছের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। রাসায়নিক ছাড়া চাষ করুন। জৈব সার ব্যবহার করুন।
২. রোজকার বাড়ির কাজে যত কম পারেন রাসায়নিকের ব্যবহার করুন। আর যদি রাসায়নিক ব্যবহার করতেই হয় সেগুলো সঠিক স্থানে ফেলুন ,কখনই মাটিতে ফেলবেন না।
৩. খেয়াল রাখুন যাতে বাড়ির ব্যবহার্য রং , ওষুধ , মোটর অয়েল , ইঞ্জিন অয়েল সরাসরি মাটিতে না মেশে।
৪. ফ্রিজের ব্যবহার কমিয়ে মাটির জালা বা কুঁজো ব্যবহার করুন। জলের অপচয় কম করুন। ব্রাশ করতে করতে ,বা দাড়ি কাটতে কাটতে বেসিনের ট্যাপ বন্ধ রাখুন।
৫. বাড়ির ছাদে জলের ট্যাঙ্কে অটোকাট বাজার লাগান। যাতে জল ভরে গেলেই পাম্প বন্ধ হয়ে যায়।
 সারা বাড়ির জলের লাইনের নিয়মিত পরীক্ষা করান প্লাম্বারকে দিয়ে। কোন কল, সিস্টার্ন, ভালভ দিয়ে যেন জল নষ্ট না হয়ে যায়। যাঁরা বাস্তুশাস্ত্র বিশ্বাস করেন তারাও বলেন জল নষ্ট হওয়া খারাপ বাস্তুর লক্ষণ। আপনি আপনার আগামীর কথা ভেবে করুন। পারলে বৃষ্টির জল ধরে রাখার ও পরবর্তীতে সেই জল ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
৬. স্নান ,কাপড় কাচা প্রয়োজন। ওগুলোকে বিলাসিতা করে ফেলবেন না। ৫ মিনিটের বেশি স্নান মানে আপনি ক্ষতি করছেন ,এটা মাথায় রাখবেন।
৭. দিনের ঠান্ডা সময় গুলোতে অর্থাৎ ভোরে আর সূর্য ডোবার ঠিক পর বাগানের লনে আর গাছে জল দিন।
৮. কাগজ ,প্লাষ্টিক , কার্ডবোর্ড ,কাচ রিসাইকেল করুন। যে সব জিনিস তৈরিতে বেশি জল লাগে চেষ্টা করুন সেগুলো কম ব্যবহার করতে।
৯. লেবুর রস , বেকিং সোডা বা ভিনিগার দিয়ে কী দারুন ঘর পরিষ্কার হয় জানেন!! রাসায়নিক ক্লিনারের বদলে ওগুলো ব্যবহার করুন। রুম ফ্রেশনারের বদলে ধুপ , বডি স্প্রের বদলে আতর ব্যবহার করুন। আরও পরিবেশ ও জল বান্ধব বিকল্প খুঁজুন।  নিজে জানুন অপরকে জানান।
১০. GROUNDWATER RECHARGE, RAIN WATER HARVESTING বা  WATER DONATE এর ব্যাপারে জানুন ,বাড়ির শিশু ও মহিলাদের জানান , বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

শুধু মাত্র  HAPPY WATER DAY না বলে চলুন এই অঙ্গীকারগুলো আমরা সবাই আজ থেকে অভ্যাসে পরিণত করার শপথ নিই। তবে যদি আগামীকাল ভাল থাকে। অলরেডি অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। আর দেরি করব না আমরা।

No comments: