Saturday, March 31, 2018

মানুষের বাঁদরামি | 'বন গরম ' | REST IN PEACE - Mother NATURE

সু দান তো গেল দেখে নিন আর কি কি অবলুপ্তির পথে যেতে চলেছে খুব শিগগিরই

প্রকাশিত লেখা


নেচার পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ২২শে মার্চ ২০১৮, বিশ্ব জল দিবসে একটা খবর বেরিয়েছে। খবর না বলে একটা চলমান অভিযানের রিপোর্ট বলাই ভালো। মহাসমুদ্রে ভাসমান জঞ্জাল নিয়ে একটা বিস্তারিত পরিসংখ্যান তুলে ধরে নেচার জানাচ্ছে শুধুমাত্র প্রশান্ত মহাসাগরেই নাকি ভাসমান প্লাস্টিক জঞ্জালের পরিমান ৭৯০০০ টন ! তাও আবার ১.৬ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে আছে এই প্লাষ্টিক নোংরা। আর হবে নাই বা কেন ! প্রতি বছর গড়ে উৎপাদিত ৩২০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিকের কতটাই বা রিসাইকেল করা যায় ? কী ভাবছেন আজ শুরুতে কী হল আমার? লেখাতে  নস্টালজিয়া নেই , সিনেমা নেই , আছে আতঙ্ক ছড়ানো বুকিশ কিছু তথ্য। আমি আপনাদের বলছিনা যে ভাবুন অলিভ রিডলে কচ্ছপ, বা সিল, বা হাতুড়ি মাথা হাঙ্গর, বা নীল তিমিদের কি হচ্ছে কল্পনা করতে।
গ্রেট প্যাসেফিক গারবেজ প্যাচ 


আসলে সেদিন বিশ্ব জল দিবস গেল। তো আমার ব্লগে একটা লেখা লেখার জন্য একটু অন্তর্জাল সাগরে চান করে নিজেই ঘেঁটে গেছি। জল দিবস গেল। গেল তো গেল। কার তাতে কী ? আর্থ ডে যায়। যায় তো যায় ! ওয়াইল্ড লাইফ ডে যায়। যায় তো যায়! আদিখ্যেতা হয় ! ফেসবুক ট্যুইটার হয়। তারপর চুলকে মুলকে হালকা করে কড়ে আঙ্গুল তুলে শুয়ে পড়ি। নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ভাবি আরো টাকা ,বড় ফ্ল্যাট ,বড় গাড়ি। একটা গ্রহ পৃথিবী। তার এক ভাগ স্থল তিন ভাগ জল আমরা জানি।  কিন্তু সেই জলের তিন চতুর্থাংশ মেরু বরফ হিসেবে বন্দী। বাকি জলের কেবল মাত্র ২.৫%   স্বচ্ছ , পেয়। এই জলের ওপর দখলদারি নিয়েই মধ্য প্রাচ্যে যত যুদ্ধ , যত অশান্তি সেই ১৯১৮ থেকে এক শতাব্দী কেটে গেল কিন্তু জল নিয়ে কেউ এক চুল ও মাটি ছাড়তে নারাজ। চীনের জনসংখ্যা মোট পৃথিবীর লোকসংখ্যার প্রায় ১/৪ ভাগ। সেই চীনেও প্রায় ৯০% জল ভয়ঙ্কর ভাবে দূষিত। তাই পৃথিবীর তাবড় অর্থনীতিবিদদের মতে আগামী ২০২৫ নাগাদ পেট্রো তেলের চেয়েও মহার্ঘ্য হবে পরিষ্কার পানীয় জল।

ধুর এত ভাববেন না তো। কী হবে ভেবে ? একসময় ডাইনোসর ছিল ,ম্যামথ ছিল। ছিল তো ছিল। আজ তো কেউ নেই সব ফর্সা। আছে কে ? হুমম এই মানুষ ছাড়া কেউ আছে নাকি এই পৃথিবীর BIG BOSS ??!! আমরাই তো একমাত্র ডারউইনের ছানা যারা সদর্পে বলতে পারি "মোরা হনু থেকে ম্যান হনু "!!!
অথচ ভাবুন কত শত পাখি, স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, মাছ স্রেফ টিকে থাকতে পারেনি বলে ওই 'ফরসা ' হয়ে গেল।  তা কী  করল তারা ? কী হল তাদের ? জটায়ু থাকলে বলতেন " ফেলুবাবু এটা কি মার্ডার না গুমখুন ? হাইলি সাসপিসাস ! " 
একটা তালিকা দিই আগে দেখুন তো এদের চেনেন কি ?
১) ওরিয়েন্টাল হোয়াইট ব্যাক্ড ভালচার
২) লং বিলড ভালচার
৩) স্লেন্ডার ভালচার
৪) ওয়েস্ট আফ্রিকান ব্ল্যাক রাইনোসরাস
৫) পাইরিনিয়ান আইবেক্স
৬) প্যাসেঞ্জার পিজন
৭) কোয়াগ্গা
৮) ক্যারিবিয়ান মংক সিল
৯) সি মিঙ্ক
১০) তাসমেনিয়ান টাইগার
১১) টিকোপা পাপফিস
১২) জাভান টাইগার
১৩) Great Auk
১৪) Bubal Hartbeest

 চেনেন ? তাসমেনিয়ান টাইগার নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি অনেকবার দেখিয়েছে ন্যাট জিও। একটু চেনা চেনা। বাকিদের চেনার কথা ছাড়ুন দেখার উপায় ও নেই। মানুষের অর্গানাইজড গুমখুনে ওরা কেউ নেই। মানে ওই যে বলে না গুষ্টি শুদ্ধ লোপাট ! সেই হয়েছে। পুরোপুরী নির্বংশঃ !!! আমার এই তালিকার একদম ওপরের তিন জন, তিনটি প্রজাতির শকুন, ছিল এই বাংলায়। ভাবুন ফেলুবাবু। কী পরিমান ফেলতে ফেলতে আমরা এগোচ্ছি ! আর একটু পিছনে যাব ? জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অভিজ্ঞ জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞ টি ,কে,পাল এই বাংলার  শুশুনিয়া পাহাড়ের দুটি গুহায় কিছু জীবাশ্ম পেয়েছিলেন। সেগুলি ছিল শিবালিক আন্টিলোপ ,শিবালিক নীলগাই, শিবালিক সজারু , শিবালিক গবাদি পশু , শিবালিক একুইড , শিবালিক হাতি , আফ্রিকান সিংহ ,জিরাফ আর স্পটেড হায়নার। ওরা কী সার্কাসে খেলা দেখাতে এসেছিল অত দূর থেকে ? তাই হবে। ঠিক। আচ্ছা দাঁড়ান দাঁড়ান। জীবাশ্ম গুলোর বয়স না ৪০০০০ থেকে ৫০০০০ বছর। কি হল? খেলেন তো বিষম নাকি চব্বনপ্রাস ! হ্যাঁ ওরা ঘুরত আমাদের রাঢ় বাংলায়। তারপর প্লেট মুভমেন্টে এশিয়া আফ্রিকা আলাদা হল। আফ্রিকায় ওরা বেঁচে বর্তে থাকল আর এখানে ? কী হল? দুষ্ট লোক হয়ে ভ্যানিশ হয়ে গেল।
আর একটা তালিকা দিই :-
১) ফল
২) চ্যাং
৩) ল্যাটা
৪) শোল
৫) চাঁদা
৬) কৈ
৭) মৌরলা
৮) কুচিয়া
৯) খলিসা
১০) বেলে
১১) ভ্যাদা
১২) পাঁকাল

এটা কোন রেস্তোরাঁর মেনু কার্ড নয়। বরং আপনার মেনু থেকে খুব শিগগির ভ্যানিশ হচ্ছে এরা। কী মুকুল সোনার কেল্লা দেখতে পাচ্ছ ? মগনলাল কে বা কারা বুঝলে চাঁদু ? হায়না তো চায়নায় থাকে মোহাই। ওগুলো শনি মনসা, শনি বারে শনি বারে ফুল ধরে। ধুধু মরুভুমি। ওয়াইড শট। ক্লাইম্যাক্স এ মুকুল কাঁদছে তুমি ময়ূরকে গুলি করলে কেন ? গুলি করলে কেন ?

এই তো সিনেমা সিনেমা মায়া। আর ওদিকে ছায়া ঘনাইছে বনে বনে। রেডিও সেট, সাইলেন্সার শটগান জড়ো হচ্ছে বনের বাফার এরিয়ায়, রাতের অন্ধকারে সেসব ঢুকছে কোর এরিয়ায়। ছাল, চামড়া, নখ, দাঁত , শৃঙ্গ উপড়ে চম্পট দস্যু। পড়ে থাকছে বন্য প্রাণ হাজারো তারাভরা কালো আকাশের নীচে রক্তাত, নিস্পন্দ, নিথর। পোচিং এর মোকাবিলা হচ্ছে অনেকদিন ধরে আসাম এ নিয়োগ হয়েছে ফরেস্ট কনস্টেবল,ম্যান এনিম্যাল কনফ্লিক্ট এ ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ করা হচ্ছে যুদ্ধ কালীন তৎপরতায়। সুন্দরবন আবার ঘটিয়ে ফেলেছে এক ঘটনা যা চোরাশিকারিদের সমাজে ফিরিয়ে আনার এক মাইলফলক। চোরাশিকারীদেরই বানানো হয়েছে বনরক্ষী। একই মডেলে কাজ হচ্ছে অন্য স্যাংচুয়ারি ও ন্যাশানাল পার্ক গুলোয়। কিন্তু যে সব বন্য প্রাণ অরণ্য এলাকার বাইরে অথচ তাদের প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে তাদের বেলা ? বাঘরোলের নাম সবার চেনা চেনা লাগছে ? ওই যে কিছু ফেবু বীর কিছুদিন আগে যাদের কষা কষা গরম মশলা দিয়ে রান্না করে সেলফি পোস্ট করেছিল। অত্যন্ত এনডেঞ্জার্ড স্পেসিস। ঘটনাটা চোখে পড়ে বন্যপ্রাণ কর্মী তিয়াসা আঢ্যর। ৪৮টি দেশের ৫০০০ এর ও বেশি মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তিয়াসা প্রশাসনকে বাধ্য করেন অপরাধীদের ৩ বছরের জেল ও ১০০০০ টাকা ফাইন করতে।  হয় তাহলে। কিছুটা হলেও হয়। হাওড়া হুগলির জলাভূমিতে মাছবাঘা বা বাঘরোলের সংরক্ষণে তৈরি হয়েছে জনসংগঠনও। আসলে মানুষ আর পশুর মধ্যে কনফ্লিক্ট বা সংঘর্ষ যুগ যুগ ধরে হয়ে এসেছে। বুদ্ধির জোরে জিতেছে মানুষ আর বলের জোরে পশু।

কাজিরাঙা শতবর্ষ উৎসবে এ নিয়ে হয়েছিল একটা সেমিনার। সম্ভবতঃ একমাত্র ভারতীয় মিডিয়া হয়ে সেই সেমিনার কভার করেছিলাম। আসামের বনমন্ত্রীর আমন্ত্রণে আমরা গিয়েছিলাম। জানলাম হাতি বা গন্ডারের আক্রমনে সারা বছর যত মানুষ মারা যায় তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় কুকুরের কামড়ে !!! ভাবা যায় ? সেমিনার, বিহু নাচ, ফুড ফেস্টিভ্যাল সারা দিন কেটে গেল। পরের দিন আমাদের বন্ধু ড্রাইভার রিংকু এসে বলল একটা হাতি নাকি বাচ্চা দিয়েছে জঙ্গলের পশ্চিম রেঞ্জে। ক্যামেরা নিয়ে ছুটলাম। বিকেলের সাফারি সবে শুরু হয়েছে। রিংকুর হুড খোলা জংলা রঙের মারুতি জিপসি একটা ছোট ঝোরা পার করে দাঁড়ালো।
-" ডাডা সামনে ডেকো"


দেখি ১০ ফিটের মত সরু বনপথের বাঁ দিক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে একটা পূর্ণবয়স্ক বুল রাইনো। মুখে হাত দিয়ে সবাইকে চুপ করতে বলল রিংকু। আমার ক্যামেরা রোল হচ্ছে।  দুজন বনকর্মীর রাইফেলের সেফটি লক খোলার আওয়াজটা পেলাম। সঙ্গে সঙ্গে পুরো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ৬ফুটের মধ্যে ওই ভয়ঙ্কর সুন্দর বিভীষিকা আমাদের গাড়ির দিকে ছুটে এল। রিংকুর হাত ততক্ষনে বাক গিয়ারে অনেকটা পিছনে সরে এলাম আমরা। এবার ও রাস্তার পুরো মাঝামাঝি সোজা আমাদের দিকে তাকিয়ে বনকর্মী দুজন অহমিয়াতে গণ্ডারটির উদ্দেশ্যে কিছু বলল। প্রায় ৩০-৪০ সেকেন্ড সব চুপচাপ। আচমকা আবার দৌড় এবার যেন ফেড়েই ফেলবে ! কানের পাশ দিয়ে দুটো ফায়ারিং এর শব্দ। একটা গুলি ওই পায়ের থেকে ২ফুট সামনে আর একটা গাছের ওপর। এবার রাস্তাটা ছেড়ে দিয়ে ডানপাশের জঙ্গল এ ঢুকে আমাদের ফলো করতে লাগল প্রায় ৭-৮ মিনিট পর কি মনে করে ঢুকে গেল জঙ্গলে। এত সামনে এতটা লো অ্যাঙ্গেল থেকে বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীটা দেখতে পাবো ভাবতে পারি নি। ওই ট্রিপে দুজন মানুষ শ্রীমতি পার্বতী বড়ুয়া আর মার্ক স্যান্ড এর সাথে অনেকটা সময় কেটেছিল। ঘুরে দেখেছিলাম জঙ্গল, হাতিদের কুনকি বানানোর ট্রেনিং নিয়ে অনেক গল্প হয়েছিল। মোদ্দা কথা একরোখা কিছু মানুষ যাঁদের চোখে প্রত্যয় নামানুষ দুনিয়া টা কে ভাল রাখার, বাঁচানোর। তাদের কাজ দেখলে মাথা নুয়ে আসে শ্রদ্ধায়। এর আগে ও পরে গরুমারা, জলদাপাড়ায় এক শৃঙ্গ গন্ডার অনেকবার মোলাকাত করেছি। কাজিরাঙার বন্ধু কিশোর হাজারিকার রিসোর্টের পাশের নালা পেরিয়ে গন্ডারের বিষ্ঠা ত্যাগের পাহাড় দেখে এসেছি ( গন্ডার এ বিষয়ে খুব পার্টিকুলার )  কিন্তু আজও কাজিরাঙা ওয়েস্টের ওই বুল ভুলতে পারিনি।
সম্প্রতি উত্তর কেনিয়ায় পৃথিবীর শেষ পুরুষ সাদা গন্ডার সুদানের  ইউথানেশিয়া হল। একটা অধ্যায় শেষ হল। পড়ে রইল তার কন্যা ফাতু আর নাতনি নাজিন। বিজ্ঞানী Thomas Hildebrandt এর প্রায় ২০ বছরের চেষ্টা কোথাও একটু ধাক্কা খেল। আগামী বলবে সুদানের স্পার্ম ব্যাঙ্কএ জমিয়ে রাখা  থেকে কোন স্পার্ম ওই দুই সাদা গন্ডারের ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে সাদা গন্ডারের নির্বংশ হওয়া আটকাতে পারবে কি না ? কিন্তু বিষয় যেটা কালের নিয়মে,প্রকৃতির নিয়মে, যোগ্যতমই টিকে থাকবে। ডারউইন এটা বলেছেন। কিন্তু মানুষের বাঁদরামি র কথা ডারউইন বা ল্যামার্ক সাহেব বলেন নি। মানুষের আসুরিক লোভে  কোনো Prodigality of Production ই যথেষ্ট নয় একটা প্রজাতির বেঁচে থাকার জন্য।

বনে বাঘ দেখা গেলে সুন্দরবনের মানুষেরা বলেন 'বন গরম ' । অরণ্য সম্ভ্রম দাবি করে। অরণ্যচারীর অরণ্যের অধিকার বলে গলার রগ ফুলিয়ে প্রকৃতি-লুঠ চালাব বন ও বন্যপ্রাণের দফারফা করব আর তারপর 'রেস্ট ইন পিস মাদার নেচার' বলে মুতে ঘুমোব। এটা নপুংশকের মনোবৃত্তি।
সুদান গেছে , ভিস্তিওয়ালা গেছে , বছরে এক দুবার 'দেশে ' ফেরা কাজের লোক মায়া পিসিরাও গেছে , চড়াই পাখি গেছে , অনেক ধানের ভ্যারাইটিরা গেছে। কিন্তু এখনো আছে অনেক কিছু। রাস্তায় অনেক কুকুর বেড়াল আছে তাদের দত্তক নেওয়া যায়। গরম এ ব্যালকনি তে একটু জল একটু দানা শস্য রাখা যায়। সেদিন দেখলাম ফেসবুকে একজন জিজ্ঞেস করেছেন জলে বরফ দিয়ে রাখব? ওদের তো গরম লাগে! না অত আদিখ্যেতা না করলেও হবে। কোনও ফিঙে বা টিয়াকে বাজাজ ফিন্যান্সে ইনস্টলমেন্টে ফ্রিজ কিনতে দেখা যায় নি। বাড়ির চারপাশে গাছ লাগান ,জোরে গান চালানোর অভ্যেস ছাড়ুন , পারলে অল্প খরচে পাখি পশুদের আশ্রয় বানান। বাড়িটায় প্রকৃতির ছোঁয়া বাড়ান। ছোটদের শেখান পরিবেশ , পশু পাখি জল গাছ মাটির প্রতি সহমর্মী হতে। ওদের নিয়ে নিয়মিত ,বছরে অন্তত এক বা দুবার জঙ্গলে বেড়াতে যান। সবুজ সংরক্ষণের গুরুত্ত্ব বোঝান ওদের। বাকিটা ওরাই বুঝে নেবে।


If you like it, comment below in the comment box and follow
Me in facebook ,twitter & youtube 



Friday, March 30, 2018

শুভ্রনীলের মধ্যে নীহারিকার বাস,ও যে খেলা করে ছায়াপথ জুড়ে | Subhranil A Wonder Kid | Artist of Bengal

ঈশানকে মনে আছে? ঈশান নন্দ কিশোর আওয়াস্তি। তারে জমিন পর এর আট বছরের সেই কিশোর বর্ণমালার অক্ষরগুলো যার চোখের সামনে এসে নাচত অবিরাম। অঙ্কের সংখ্যাদের কাল্পনিক নাচ যার উত্তর গুলিয়ে দিত। ডিসলেক্সিয়া ডিসঅর্ডারের আড়ালে চাপা পড়ে ছিল যার একটা পরিপূর্ণ শৈল্পিক সত্ত্বা। সবাই তাকে ভুল বুঝত। বাবা, মা, দাদা, স্কুলের টিচাররা, সব্বাই। কুঁড়ে অপদার্থ ভাবত । তাই শাস্তি হিসেবে তাকে পাঠানো হল বোর্ডিং স্কুলে। চেনা মানুষজন, চেনা পরিবেশ থেকে উপড়ে গিয়ে কুঁকড়ে গেল তার শিশু মন। তারপর কী হয়েছিল তা সবারই জানা। রাম শঙ্কর নিকুম্ভ স্যারের যাদুকাঠি বা তুলির ছোঁয়ায় বদলে গেল ঈশানের জীবনের গতিপথ। অমনোযোগী ঈশান ছবি আঁকার সাথে সাথে পড়াশোনাতেও ভাল করতে লাগল।
নক্ষত্ররা মাটিতেই থাকে শুধু তাদের খুঁজে বের করতে হয় 

তবে শুভ্রনীল দাসের নিকুম্ভ স্যার ছিল না। মা ছিল। শুধু ডিসলেক্সিয়াই ছিল না। ছিল সেন্সরি প্রসেসিং ইস্যু সম্পর্কিত হাইপারঅ্যাক্টিভিটির সমস্যা আর তারই কারণে অটিজিম ও ডিসলেক্সিয়া । কী এই সেন্সরি প্রসেসিং ইস্যু? কোন দৃশ্য, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শের প্রতি অতিরিক্ত রিঅ্যাকটিভ হয় এই শিশুরা। কখনও আবার কম রিঅ্যাকট্ভ ও হয়।  দৃশ্য,শব্দ,স্পর্শ, গন্ধ ও স্বাদ এই সব কটি অনুভূতি ওদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে এদিক ওদিক করে দিতে পারে। বর্তমান সময়ে অনেক শিশুরই হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার এর সমস্যা দেখা যায়। কিন্তু সেন্সরি প্রসেসিং ইস্যু র সাথে হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার। একটু বিরল। হয়নি এ সংক্রান্ত কোন বিস্তারিত রিসার্চ। এই রকম অবস্থায় শুভ্রনীলের লড়াইটা বেশ চ্যালেঞ্জের ছিল। ক্ষুদে শুভ্রনীল হাতে পেন্সিল ধরতে পারত না। তার সাথে ছিল হাইপারঅ্যাক্টিভিটির কারণে প্রচন্ড ছটফটানি। পেশায় চিকিৎসক মা তাই ছেলেকে ছবি আঁকিয়ে সুস্থির করতে চাইলেন। কিন্তু যে পেন্সিল ধরে থাকতে পারে না হাতে সে কি করে ছবি আঁকবে !!! নিজের পেশাগত অভিজ্ঞতা আর মায়ের মমতা মিশিয়ে কাজ শুরু করলেন ডা: জ্যোতিশুভ্রা দাস। প্রথমে ছেলের হাতে জল লাগিয়ে সেই হাত শুকনো দেওয়ালে আলতো চাপ দিলেন। ফুটে উঠল করতলের জলছবি ! পুঁচকে মনটা আনন্দে খিলখিল করে উঠল। এরপর জলে গুলে দিলেন রঙ। ছেলেকে বললেন ওই রং ভেজা হাতের ছাপ দেওয়ালে দিতে। একটা দিগন্ত খুলে গেল। এরপর ধীরে ধীরে অভ্যাস চলল। করতল , আঙ্গুল , হাতের তালু। রঙ পেয়ে শুভ্রনীলের শ্বেতশুভ্র শৈশবের ক্যানভাসেও আনন্দের লাল,গোলাপি,নীল অনুভূতিগুলো ডানা মেলল। বাড়িতেই পাড়ার এক আঁকার শিক্ষকের কাছে ছেলের ক্লাস শুরু করলেন জ্যোতিশুভ্রা। শুধু শিক্ষককে বলে দিলেন কী ধরণের ছবি আঁকাতে হবে তাঁর ক্ষুদেটিকে। এও এক থেরাপি।
এ এক নতুন আর্ট ফর্ম 
সেন্সরি প্রসেসিং ইস্যু সম্পর্কিত হাইপারঅ্যাক্টিভিটির মোকাবিলায় আর্ট থেরাপি। আশেপাশে অনেকেই হয়ত তখন বিশ্বাস করতে পারেনি কী চমক অপেক্ষা করছে ছেলেটির আগামী জীবনে।
এদিকে বাড়িতে রবীন্দ্রসংগীত শোনার চল ছিল। তাই কিভাবে,কোন অবচেতনে যেন ওই হুড়মুড় দুর্দ্দার কাঁচামনে পাকা আসন পেতে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। হয়ত ওর বাবার রোল খেতে রাস্তার দোকানে গেছে শুভ্রনীল, দোকানদার তখনও স্টোভ জ্বালেনি।
ব্যাস শুরু হয়ে গেল , " আগুন জ্বালো
আগুন জ্বালো ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো। একলা রাতের অন্ধকারে আমি চাই পথের আলো ॥ "
কিংবা স্কুলে রাখিবন্ধন চলছে। একা গুটিয়ে বসে আছে শুভ্রনীল। মায়ের সাথে বাড়ি ফিরতে ফিরতে মায়ের কানে ফিসফিস করে সুর আসছে , " মনে করে সখি বাঁধিয়া রাখিও আমার হাতের রাখি তোমার কনক কঙ্কনে। "
জ্যোতিশুভ্রা মনে মনে ভাবলেন ঠিকই চলছে।
মা , ডা: জ্যোতিশুভ্রা দাসের সাথে শুভ্রনীল  
কে বলবে এ ছেলে বাহ্যজ্ঞানরহিত। এর মধ্যে যে নীহারিকার বাস , এ যে খেলা করে ছায়াপথ জুড়ে।
ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে শুভ্রনীল। ও এখন পেন পেন্সিল ধরতে পারে।  এই কিশোর বয়েসেই ও নিজস্ব একটা ফর্ম তৈরী করে ফেলেছে। সম্প্রতি একাডেমি অফ ফাইন আর্টসে হয়ে গেল মমার্তের সামার শো। সেই প্রদর্শনীতে ছিল শুভ্রনীলের চারটি ছবি। সিরিয়ার শিশুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে নিজের শিল্পসৃষ্টিও করল সে। অনেক দূর যেতে হবে শুভ্রনীল। তোমার পরিচয় তুমি একজন শিল্পী। আর কে না জানে শিল্পীদের মন মাপার ক্ষমতা সাধারণ মানুষদের এক্তিয়ারের বাইরে। এগিয়ে চলো বন্ধু।  ছবি গুলো দেখুন। আর এই লেখাটা শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।  যাতে অনেক শুভ্রনীল যারা এখনো আলোর দিশা পায়নি তারা অন্তত জানতে পারে যে হয়।  চেষ্টা আর উদ্যম থাকলে অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করা যায়।
ডানদিকের ৪টি ছবি শুভ্রনীলের আঁকা 

Wednesday, March 28, 2018

Virat Kohli's figure to join other sporting greats at Madame Tussauds.


The Indian captain’s figure to join other sporting greats at Madame Tussauds.

Cricket icon Virat Kohli is set to be hottest attraction when his figure will be unveiled at Madame Tussauds Delhi. Kohli will join other cricketers and sports greats like Sachin Tendulkar, Kapil Dev, Cristiano Ronaldo etc who are featured in the popular and interactive sports zone. Visitors will be able to pose, click selfies and share a moment with the skipper of the Indian cricket team.  




Talking about his inclusion in Madame Tussauds Delhi, an excited Virat Kohli said: “It’s a great honour to be chosen as one of the figures at Madame Tussauds. All thanks to the Madame Tussauds team who were extremely patient during the sitting sessions and for giving me a lifetime memory“

Mr. Anshul Jain, General Manager, and Director, Merlin Entertainments India Pvt. Ltd. said, “We are thrilled to announce the Indian cricket team captain Virat Kohli’s figure as the 23rd attraction. He holds the heart and respect of every Indian and a perfect choice to have him as our next Figure.. We are confident that Virat’s wax figure will be a major draw for his fans not only from India but from around the world as he is one of the great cricketers that the world has seen.”  
Madame Tussauds Delhi is an attraction known for the beautiful portrayal of the fascinating world of glamour, sports, history, politics and history under one roof, through planned themed and interactive areas, by the skilful and innovative interpretation of renowned celebrities. The visitors are encouraged to interact with the life-like figures of the celebrities, which marks the uniqueness of the wax attraction.


Virat Kohli has had a phenomenal journey in cricket, from his first-class debut in 2006 to leading the Indian cricket team, to leading India to victory at the 2008 Under-19 World Cup in Malaysia. A few months later at the age of 19, he made his ODI debut for India against Sri Lanka. Currently, he plays for the Royal Challengers Bangalore in the Indian Premier League (IPL) and has been the team’s captain since 2013.

With his unbeatable performances, Kohli has won awards like Arjuna Award, ICC World Cricketer of the year in 2017, BCCI international cricketer of the year 2011-12, 2014-15, 2015-16 etc. Also, he was honoured with Padma Shree by the Govt of India, last year. The team of Madame Tussauds expert artists flew in from London to meet Virat Kohli for the sitting, where they took over 200 specific measurements and images to create an authentic figure.

Monday, March 26, 2018

Protest in Color, Paintbrush, for Syria | রঙে তুলিতে ক্যানভাসে সিরিয়ার প্রতিবাদ

TodayKolkata witnessed a different dusk. An evening where artisans replicated their protest with the stroke of their paintbrushes, charcoals,pastels, palates and canvas. Academy of fine arts, the hub of cultural minds of Bengal was hosting a Summer Show by Montmartre A group of cultural people in it's South Gallery. On the last day of the gala exhibition brush strokes crossed the frame of the canvas and got extended to the road. Watch Video

In protest of the atrocities going on in Syria artists held up their canvas and started painting under the open sky in front of Academy of Fine Arts Kolkata. Internationally acclaimed painter Sanatan Dinda brushed a painting where a child with blood all over his body is seen to be seating on a grenade is presenting a another grenade from which some green leaves are sprouting out.
Painting by Santan Dinda

Famous urban folk singer Mr. Pratul Mukherjee was also present to greet the painters with his musical voice.
Evening at Academy of Fine Ar
  More than 40 artists were present to portray their protest for the distressed children of Syria.
Artists like Deepsikha Das, Debasish Halder, Partha Joardar, Shiba De, Sinjan Mitra and may other famous and acclaimed artists showed their brilliance .










Might be this token cultural protest will have a little or no effect on the bloodshed and the brutal atrocities and mass killing happening out there in Syria. But it will convey a message that this city has not died till day. It has a heart and eyes that cries for the sufferers, for distressed and for  the innocents out there in the greater world. 













আকাদেমি অফ ফাইন আর্টসের সাউথ গ্যালারিতে মমার্ত এর সামার শো এর কিছু ছবি এগুলি। গত ২০ থেকে ২৬ শে মার্চ ২০১৮ চলা এই প্রদর্শনীর আজ ছিল শেষ দিন। আজ শেষের দিনটা প্রথিতযশা শিল্পীরা সেলিব্রেট করলেন একটু অন্য ভাবে। সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ায় শিশুদের ওপর ঘটে চলা নিপীড়ন, নির্যাতন , হত্যা ও ধ্বংসলীলার ছবি  স্বুস্থ স্বাভাবিক মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সংবেদনশীল শিল্পীমন কিভাবে দূরে থাকতে পারেন। তাই আজ  ৪০ এরও বেশি শিল্পী তাঁদের প্রতীকী প্রতিবাদ জানালেন সিরিয়ায় ঘটে চলা বর্বরতার বিরুদ্ধে। রং তুলি,পেন্সিল ,ইজেল প্যালেট ,ক্যানভাসে বোমা,গুলি, বারুদ, মিসাইলের মোকাবিলা হয়তো করতে পারবে না।  কিন্তু একটা বার্তা হয়তো পাঠানো গেল যে এ শহর রুখে দাঁড়াতে জানে, নিপীড়িত মানুষ ,অসহায় শিশু, বিপন্ন কৈশোরের অভিমানে অশ্রুসিক্ত হতে জানে। প্রসঙ্গতঃ এই প্রদর্শনী তে বিহেভরিয়াল আর্ট এর ওপর শিল্পী সনাতন দিন্দার ইনস্টলেশনটি আপনাকে নাড়া দেবে , অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাবে। 


Friday, March 23, 2018

পথেই হবে এ পাত চেনা

ত্যজিৎ রায়ের আত্মজীবনীমূলক লেখা যখন ছোট ছিলাম অনেকেরই পড়া। সত্যজিতের ছোট কাকা সম্ভবত সুবিনয় রায় ছিলেন ভোজন রসিক ও বিলাসী। মুখে খাবারের গ্রাস নিয়ে বত্রিশবার চিবোতেন। প্রতিটি খাবারের স্বাদ ডায়রিতে নোট রাখতেন। তো সেই বই তে তাঁর চা বিষয়ক একটি মজার লেখা আছে। মানে এক একরকম চা খেয়ে সেই চা দের চরিত্র বিশ্লেষণ। আগে সেটাই দেখি তারপর মূল লেখায় আসছি।
সত্যজিৎ বলছেন
" ছোটকাকা পেটুক না হলেও খেতেন খুব তৃপ্তি করে। রোজ এবারই ওবাড়ি গিয়ে চা খাওয়ার ব্যাপারটা  ছিল একটা বিশেষ ঘটনা। ডায়রিতে এর উল্লেখ থাকত , তবে মামুলিভাবে নয়। যে চা -টা খেলেন তার একটা বিশেষণ , আর ব্রাকেটের মধ্যে সেই বিশেষণের একটা ব্যাখ্যা চাই। 
একমাসের ডায়রি থেকে বারোটা উদাহরণ দিচ্ছি। ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে --

১) নৃসিংহভোগ্য চা (ভৈরবকান্তি-জনক ,হুহুঙ্কার প্রসাদক ,জোরালো চা )
২) বৈষ্ণবভোগ্য চা (নিরীহ , সুমিষ্ট , সুকোমল ,অহিংসক চা )
৩) বিবেকানন্দভোগ্য চা ( কর্মযোগস্পৃহাবর্ধক , বাগবিভূতিপ্রদ , তত্ত্বনিষ্ঠার অনুকূল উপাদেয় চা )
৪) ভট্টাচার্যভোগ্য চা ( বিজ্ঞতাবর্ধক ,গাম্ভীর্যপ্রদ , অনুগ্র ,হৃদ্য চা )
৫) ধন্বন্তরিভোগ্য চা ( আরোগ্যবর্ধক ,আয়ুষ্য ,রসায়নগুণ-সম্পন্ন চা )
৬) পাহারাদারভোগ্য চা (সতর্কতাবর্ধক , উত্তেজক , তন্দ্রনাশক চা )
৭) মজলিসী চা (মসগুল-মসগুল ভাবোদ্রেককারী চা )
৮) কেরাণিভোগ্য চা ( হিসাবের খাতা দেখায় উৎসাহবর্ধক , বাদামী স্বাদু চা )
৯) হাবিলদারভোগ্য চা  ( হিম্মতপ্রদ , হামবড়াভাবের প্রবর্তক চা )
১০) জনসাধারণভোগ্য চা ( বৈশিষ্টহীন ,চলনসই চা )
১১) নারদভোগ্য চা ( সঙ্গীতানুরাগবর্ধক , তত্ত্বজ্ঞানপ্রসাদক , ভক্তি-রসোদ্দীপক চা
১২) হনুমানভোগ্য চা ( বিশ্বাসযোগ্যতাবর্ধক , সমস্যা-সমুদ্রলঙ্ঘনের শক্তিদায়ক , বিক্রমপ্রদ চা ) "


ছোট থেকে যতবার যখন ছোট ছিলাম পড়েছি এই জায়গায় এসে হাসি চাপতে পারি নি। কী পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ !!! কাজেই চা নিয়ে কিছু বলতে গেলেই ওই লাইনগুলো আগে খেলে যায় মাথায়।
আজ আবার একটা পুরোনো প্রকাশিত লেখা দিচ্ছি। লেখাটা লিখে আরাম পেয়েছিলাম। হুবহু তুলে দিলাম

এক কাপ চায়ে আমি...
প্রকাশিত হয় হ্যাংলা হেঁশেল সংখ্যা ৩১
বিভাগ : পথেই হবে পাত চেনা
প্রকাশকাল : মে ২০১৫




কোন পথে যে পাত পাড়া আর কোন পথে পাতকুয়ো তার জরিপ করতে করতেই জিন্দেগি পার হয়ে যায়। হু হু করে উল্টো দিক থেকে ছুটে আসা হয় বিমের আলোয় সরে যায় সময় ,নড়ে যায় গন্তব্য। গতি কমিয়ে আমার লো বিম অফ দিই। আসুন সময় , মেপে নিন আমায়। আমার সবটা দিয়ে থামালাম চাকাগুলো। এটাই আমার গন্তব্য ! সত্যিই কি তাই ? আসলে এখন যেটা গন্তব্য বলে ভাবছি দুদিন বাদে সেটা পিছনে ফেলে এগিয়ে যাব অন্য আস্তানায়। এরই নাম জীবন , এটাই পথ। একটা পদক্ষেপ থেকে আর একটায় হেঁটে যাই , ভেসে যাই , উড়ে যাই। এ চলা অনন্ত অবিরাম। চলেছি , চলেছি চলেই চলেছি। চলতে চলতে চালাক হয়েছি কিনা জানি না চালু হয়েছি। ঠিক ওই রাস্তার পাশের অবহেলায় পড়ে থাকা চা-এর দোকানের মতো ভাঁড়ে মা ভবানী বা গরম চায়ের ছ্যাঁকা খেয়ে সূচের ছিদ্র খুঁজেছি। ছোটবেলায় বাড়িতে বাবা মা চা থেকে বহুদূরে হরলিক্স , ভিভা , বোর্নভিটা , মলটোভার কাপে কয়েদ করে রেখেছিল।  বোনকে তো এমন থ্রেট দেওয়া হয়েছিল যে ,'চা খেলে মা মরে যায় ' !! শৈশবের সেই শঙ্কা সারা জীবন আমার ছোট বোনকে নটি ( No Tea )-র দলে , মানে না-চা-র দলে রেখে দিল। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর কলেজ ক্যান্টিনের গোপালদার হাতে প্রথম স্বাদ পেলাম অমৃত পেয়ালার ! তারপর কত চলেছি আর ক্লান্তির প্রহরগুলোতে চার্জ আপ করেছে চা। এ এক অদ্ভুত পানীয়। শহর বা মফঃস্বলের তামাম আনন্দঘন মুহূর্ত থেকে স্বজনবিয়োগের অশ্রুসজল ব্যাথার প্রহর -- সবটা জুড়ে রয়েছে চা। কত শবের সঙ্গে শ্মশানযাত্রী হয়েছি। তার মধ্যে বেশিরভাগই পরিচিত বা আত্মীয়দের।  কিন্তু বিশ্বাস করুন ওই করুণ আবহতেও যখন দেখি বড় পিসেমশাই আর সেজ জ্যাঠার মধ্যে কে শ্মশানবন্ধুদের চা খাওয়াবে তাই নিয়ে হুড়োহুড়িটা রীতিমতো প্রতিযোগিতার পর্যায়ে চলে গেছে তখন অবাক হয়ে মৃত্যুর নির্মোক ছেড়ে জীবনমুখিতায় ফিরি। মৃতের ফুলমালা , খাট ,খৈ-এর দোকান গভীর রাতে খোলাতে হলেও বাজি ধরে বলতে পারি বারুইপুর থেকে বজবজ , বাটানগর থেকে ব্যারাকপুর বা আসানসোল থেকে আদ্দিস আবাবা শ্মশানের সামনের চায়ের দোকান খোলা থাকবেই। শুধু কলকাতা জুড়ে চা নিয়ে যে উন্মাদনা তা নিয়ে গোটা একটা বই লেখা হয়ে যেতে পারে। পার্ক স্ট্রিটে T3 ( The Tea Table) এখন নেই কিন্তু অক্সফোর্ড বুক স্টোরের ওপর চা-বার (CHA BAR) আর দক্ষিণাপনে প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ত্ব ডলি বসুর Doly's Tea চা বিলাসী কলকাতার পপুলার ডেস্টিনেশন।
ময়দানে অবসরের সান্ধ্য চা 

জলপাইগুড়ি থেকে জয়নগর কত হরিদা ,মানু ভাই , রায় জি ,পাঁড়ের হাতে যে চা খেয়েছি তার শেষ নেই। আর দোকানে যদি পুরুষের বদলে প্রৌঢ় মহিলা থাকেন তাহলে অনায়েসেই মাসির আপ্যায়নে প্রজাপতি ,লেড়ো বা মেরি বিস্কুটের সঙ্গে কাচের গ্লাসে বা মাটির ভাঁড়ে কত ঝোড়ো প্রহর ফুস করে উড়ে চলে যায়। বেকার বয়েসে আমাদের আড্ডা ছিল হরিদার দোকানে। অপরিসর, ম্লান আলোমাখা মফঃস্বল রেল শহরে চারটে বেঞ্চ অপেক্ষা করে থাকত আমাদের আড্ডার সাক্ষী হতে। শুক্রবার , শুক্রবার হাট বসত। আর হাট শেষ করে যখন হাটুরেরা বাড়ি ফিরত তখন ভাঁটিখানায় ভিড় বাড়ত। তারপর মাতালদের চিৎকারে কান পাতা দায় হত। একবার এক কপাল পর্যন্ত নেশা করা মাতাল কী কুক্ষণে যেন হাজির হল হরিদার দোকানে। আর যায় কোথায় !! সবাই মিলে সেই লোকটাকে সাত - আটটা ছানার জিলিপি আর চা বলে এক কাপ জিলিপির রস খাইয়ে ছাড়ল। ছাড়ল কোথায় ! চা ভেবে সেই রস খেয়ে সেই চাতালরূপী মাতাল মাঝরাত অবধি পড়ে রইল হরিদার দোকানের সামনে। পরে ভেবেছি এরকম প্রতারণা না করলেই বোধহয় ভাল হত। 
ক্যানিং স্ট্রিটের এক প্রাচীন টি বয়লার 
  ঘুম চোখে উঠে চা -এর চাহত এ আঁকুপাঁকু করত হো চি মিন সিটিতে। দুধ চা বিরল ভিয়েতনামে। চা বলতে যা পাওয়া যেত তা হলদেটে ঠান্ডা ট্যালটালে এক পানীয়। দিন ১৫র ভিয়েতনাম সফর শুধু ওই প-চা জিনিসটার জন্যই বিরস কেটেছিল। আমার চা নিয়ে আদিখ্যেতার জন্য আর এক চায়ের সঙ্গে পরিচয় হল লেহ শহরের বাইরে সে TSE তে ( এই সে তে 'দিল সে ' সিনেমার টাইটেল সং এর শুটিং হয়েছিল ) লবজুং নোমাঙ্গ এর বাড়িতে। শুধু চা এর জন্যই সে এক ঢালাও আয়োজন। গরম জল, নুন ,মাখন আর চা পাতার মিশ্রণ সুদৃশ্য বাঁশের খোলে পিস্টনের ওপর নিচ করে তৈরি হয় গুটিগুটি চায়ে বা গুড়গুড়ি চায়ে। পোর্সেলিনের নক্সা করা পেয়ালায় সুন্দর তিব্বতি টুলে রাখা টিকোজি ঢাকা পিরিচ থেকে সেই চা ঢালতে ঢালতে বাদশাহী মেজাজ চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারির নলেন গুড়ের দার্জিলিং চা 
 এরকমই চলার পথে একটা  ঘটনা বলার লোভ সংবরণ করতে পারছিনা। তখন আমি মেদিনীপুরে। একটি বেসরকারি ন্যাশনাল চ্যানেলের চিত্রগ্রাহক। ছোট আঙারিয়া কাণ্ডের সপ্তাহখানেকের মধ্যে নির্বাচনী আধিকারিকরা গ্রামে ঢুকছেন , সাথে আমরাও। লোকজন ক্যামেরা দেখে দৌড়ে পালাচ্ছে ঘরের ভিতর। পড়ে থাকছে ভাত ডাল মাখা থালা। এরকম অবস্থায় ছবি করে কাজ মিটিয়ে দেখি গ্রামের এক প্রান্তে একটা ছোট্ট ঝুপড়ি। তার বারান্দায় একটা মাটির উনোন। বুঝতে বাকি রইল না ওটাই গ্রামের রাজনৈতিক মত বিনিময় কেন্দ্র -- চায়ের দোকান। হাঁকডাক করতে ভয় ভয় চোখে একজন বেরিয়ে এল। অনেক অনুরোধ , উপরোধ , অনুনয়, বিনয় করে ছবি না তোলার প্রতিশ্রুতি দিতে সে গুড়ের চা খাওয়ানোর আশ্বাস দিয়ে বলল - ' একটু আসি পাঁচ মিনিটেই ফিরব। ' পনেরো কুড়ি মিনিট পরে পাশের ঝোপ থেকে শুকনো কাঠকুটো এনে মাটির উনুন এ আঁচ দিয়ে , জলে গুড় মিশিয়ে  চা জাতীয় কিছু একটা সেই মিশ্রনে ফুটিয়ে গ্লাসে ছেঁকে দিয়ে বলল - "বাবু কবে সব ঠিক হবে ?" উত্তরটা দিতে পারিনি। অনেক কিছুই করা হয় নি। জানা হয়নি। রাখা হয় নি অনেক প্রতিশ্রুতিই। কাপ আর ঠোঁটের ব্যবধানটা রয়েই গেছে চরাচর জুড়ে , জীবন জুড়ে।  তবে প্রাণের আরাম আনা ক্লান্ত শরীরকে চাঙ্গা করা চা পরিবেশনকারী অবহেলার সরাইখানাগুলো যেন বেঁচে বর্তে থাকে। বাঙালির  স্বাস্থ্যের আর প্রতিবাদের র(Raw) চা এর পাশে যেন সগর্বে বাঁচে দুধ চিনি মেশানো প-চা টাও।
সেদিনই একটা হাসপাতালের আউটডোরে বসে আছি দেখি একটা কিশোর বয়সী ছেলে চায়ের কেটলি হাতে হুঙ্কার দিচ্ছে - " উপরওয়ালানে শোনে কে লিয়ে জিন্দেগি দিয়ে হ্যায় ! দুনিয়াওয়ালোনে খাটনে কে লিয়ে মজবুর কিযে হ্যায়। " সবাই চনমন করে উঠল। এই মুন্না এদিকে এক কাপ লিকার দে !!

মন বলে চাই চাই চা ই গো 

Thursday, March 22, 2018

জল পাই কোথায় , বলতে পারেন !!!! World Water Day | A gentle reminder

খন সবে ট্রাভেল ট্যুরিজম জার্নালিজম শুরু করেছি। বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লো। প্রায় দেড় মাসের অ্যাসাইনমেন্ট পেলাম অমরনাথ যাত্রা আর লাদ্দাখ। অমরনাথ এর হিমশীতল জ্যোতির্লিঙ্গ কভার করে শ্রীনগর হয়ে মানালি ফিরে মানালি থেকে রোটাং পাস দিয়ে ঢুকলাম প্যারাডাইস ও আর্থ লাদাখে। ৩ দিনের কোয়ালিস সফর। দিনে গাড়ি চলবে থেমে থেমে। আর সন্ধ্যের মধ্যে ঢুকে পড়তে হবে দিনের গন্তব্যে। থেমে চলার কারণ শুট করতে যত বেশি সময় পাওয়া যায়। তার ফলে খুব ভোরে উঠে আমরা তৈরী হয়ে নিতাম। সূর্যোদয় কখনো চলন্ত গাড়ি থেকে কখনো রাস্তার মাঝে পেতাম। এখানে বৈচিত্রময় প্রকৃতি,মানুষ ও নানান রকম। মোরেই মালভূমি, দুপাশে ধু ধু করছে তৃণভূমি প্রায় ৩০ কিমি রাস্তা চোখের সামনে খোলা এমন সময় দূরে দেখা গেল ধুলো উড়িয়ে কালো কিছু এগিয়ে আসছে। একটা দল বা ঝুন্ড জাতীয় কিছু। ড্রাইভার গাড়ির গতি কমালেন। সাথে ছিলেন ভ্রমণ পত্রিকার ফোটোগ্রাফার কমলেশ কামিলা। কমলেশ দা বললেন ,"ভয় পেয় না ওরা চাংপা, পশমিনা উল তৈরী হয় যে ছাগল থেকে সেই ছাগল চরায়। যাযাবর ওরা, সব আছে কিন্তু এখানে জল নেই। তাই গাড়ি দেখলেই ছুটে আসে যদি কিছু জল পায় ট্যুরিস্টদের থেকে। " অবাক হয়ে ভিরমি খেয়ে সে এক যা তা অবস্থা আমার। ওরা এল। গাড়ির কাঁচ নামলো। শুকনো মুখ , ফাটা ঠোঁট , হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে জল চাইছে। আমরা গাড়ির দরজা খুলে নেমে যতটা সম্ভব জল ওদের দিলাম। হাত নাড়তে নাড়তে বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে ওরা মিলিয়ে গেল।


যদিও পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যেখানে জলের অস্তিত্ব রয়েছে। পৃথিবীর এক ভাগ স্থল তিন ভাগ জল আমরা জানি।  কিন্তু সেই জলের তিন চতুর্থাংশ মেরু বরফ হিসেবে বন্দী। বাকি জলের কেবল মাত্র ২.৫%   স্বচ্ছ , পেয়। এই জলের ওপর দখলদারি নিয়েই মধ্য প্রাচ্যে যত যুদ্ধ , যত অশান্তি সেই ১৯১৮ থেকে এক শতাব্দী কেটে গেল কিন্তু জল নিয়ে কেউ এক চুল ও মাটি ছাড়তে নারাজ। চীনের জনসংখ্যা মোট পৃথিবীর লোকসংখ্যার প্রায় ১/৪ ভাগ। সেই চীনেও প্রায় ৯০% জল ভয়ঙ্কর ভাবে দূষিত। তাই পৃথিবীর তাবড় অর্থনীতিবিদদের মতে আগামী ২০২৫ নাগাদ পেট্রো তেলের চেয়েও মহার্ঘ্য হবে পরিষ্কার পানীয় জল। যেহেতু মেরু বরফের তুষার রাজ্য সাইবেরিয়ার অধিকাংশ চীনে তাই আগামীতে H2O র লার্জেস্ট প্রোডিউসার হবে চীন। আর মেরু বরফের মধ্যে শীতঘুমে অতি প্রাচীন থাকা ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া সেক্ষেত্রে আবার সজীব হয়ে কী ধ্বংস লীলা দেখায় সেটা ভেবেও চিন্তার ভাঁজ পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কপালে। 



খাস কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০০ টি ওয়ার্ড বেশ অতি মাত্রায় আর্সেনিক আক্রান্ত। WHO র বেঁধে দেওয়া আর্সেনিকের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে শহরের জলে।  কল্লোলিনীর শরীরে ছড়াচ্ছে বিষ। উত্তর কলকাতার জলের গুনগত মান হ্রাস পাবার কারণ হিসেবে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা দুষছেন রাজারহাটের তীব্র নগরায়ানকে। এর সাথে দোসর হয়েছে মূল শহরের নতুন নির্মাণ। যদি একটি সাবেকি বাড়ি ভেঙে তৈরী হয় একটি বহুতল সেক্ষেত্রে ওই একই জায়গায় জলের চাহিদা হঠাৎ করে বেশ কয়েক গুন্ বেড়ে যায়। যেহেতু আগের থেকে বেশি মানুষ ওই একই জায়গায় থাকছেন তাই ভূগর্ভ থেকে চোঁ চোঁ করে তুলে আনা জলের পরিমাণও বাড়ছে। যতটা উঠছে সে তুলনায় ক্ষতিপূরণ হচ্ছে না। কারন নগর পরিবেশে বাড়ির চারপাশের অধিকাংশ অঞ্চলই কংক্রিটে ঢাকা। তার ফলে বৃষ্টির জল বা অন্য কাজে উদবৃত্ত জল মাটিতে মিশে মাটির গভীরে যাবার সুযোগ পাচ্ছে না। বরং কংক্রিট বেয়ে নালিতে মিশে চলে যাচ্ছে নদীতে, সেখান থেকে সাগরে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা একে জলের অপচয়ই বলছেন।


পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চল , বাঁকুড়া , পশ্চিম মেদিনীপুর , পুরুলিয়া ছাড়াও উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলা শুখা মরসুমে জলকস্টে ভোগে। পুরুলিয়া বাঁকুড়া র এমন জনপদও রয়েছে যেখানে জলের যোগান পেতে রোজ ৫-৬ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। তাই NABARD এর সহযোগিতায় শুরু হয়েছে এক লক্ষ গ্রামকে চিহ্নিতকরণের কাজ। যে গ্রামগুলিতে জলকষ্টের তীব্রতা মাত্রাতিরিক্ত। ২০১৬ এ  ৪০০০০ গ্রাম থেকে দারুন সাড়া পাওয়া গেছে।
তবে কী দায়িত্বটা শুধুই সরকারী সংস্থা গুলির , নাবার্ডের ,হু র। আমাদের কিছুই করার নেই !!
আমরা দেখেছি একটি নরম পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থা দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফরতাবাদে ভুগর্ভস্থ জল কী যথেচ্ছ ভাবে তুলে নিয়েছিল। ফলস্বরূপ আশপাশের চাষের জমি শুকিয়ে গিয়েছিলো। অঞ্চলের মানুষজন এর প্রতিরোধের তীব্রতায় নড়েচড়ে বসে বহুজাতিক কোম্পানিটি। এসব অতীত। অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

 কিন্তু আগামী দিন গুলো কেমন ? কিভাবে মোকাবিলা করা যাবে জলের অপচয়। কিছু সহজ উপায় বাতলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
১. অতিফলনশীল নয় স্থানীয় ফসল চাষ করুন যে ফসল এর ভ্যারাইটিগুলো প্রাকৃতিক ভাবেই কম জল টানে। মনে রাখবেন MORE CROP MORE DROP . বাগানের গাছের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। রাসায়নিক ছাড়া চাষ করুন। জৈব সার ব্যবহার করুন।
২. রোজকার বাড়ির কাজে যত কম পারেন রাসায়নিকের ব্যবহার করুন। আর যদি রাসায়নিক ব্যবহার করতেই হয় সেগুলো সঠিক স্থানে ফেলুন ,কখনই মাটিতে ফেলবেন না।
৩. খেয়াল রাখুন যাতে বাড়ির ব্যবহার্য রং , ওষুধ , মোটর অয়েল , ইঞ্জিন অয়েল সরাসরি মাটিতে না মেশে।
৪. ফ্রিজের ব্যবহার কমিয়ে মাটির জালা বা কুঁজো ব্যবহার করুন। জলের অপচয় কম করুন। ব্রাশ করতে করতে ,বা দাড়ি কাটতে কাটতে বেসিনের ট্যাপ বন্ধ রাখুন।
৫. বাড়ির ছাদে জলের ট্যাঙ্কে অটোকাট বাজার লাগান। যাতে জল ভরে গেলেই পাম্প বন্ধ হয়ে যায়।
 সারা বাড়ির জলের লাইনের নিয়মিত পরীক্ষা করান প্লাম্বারকে দিয়ে। কোন কল, সিস্টার্ন, ভালভ দিয়ে যেন জল নষ্ট না হয়ে যায়। যাঁরা বাস্তুশাস্ত্র বিশ্বাস করেন তারাও বলেন জল নষ্ট হওয়া খারাপ বাস্তুর লক্ষণ। আপনি আপনার আগামীর কথা ভেবে করুন। পারলে বৃষ্টির জল ধরে রাখার ও পরবর্তীতে সেই জল ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
৬. স্নান ,কাপড় কাচা প্রয়োজন। ওগুলোকে বিলাসিতা করে ফেলবেন না। ৫ মিনিটের বেশি স্নান মানে আপনি ক্ষতি করছেন ,এটা মাথায় রাখবেন।
৭. দিনের ঠান্ডা সময় গুলোতে অর্থাৎ ভোরে আর সূর্য ডোবার ঠিক পর বাগানের লনে আর গাছে জল দিন।
৮. কাগজ ,প্লাষ্টিক , কার্ডবোর্ড ,কাচ রিসাইকেল করুন। যে সব জিনিস তৈরিতে বেশি জল লাগে চেষ্টা করুন সেগুলো কম ব্যবহার করতে।
৯. লেবুর রস , বেকিং সোডা বা ভিনিগার দিয়ে কী দারুন ঘর পরিষ্কার হয় জানেন!! রাসায়নিক ক্লিনারের বদলে ওগুলো ব্যবহার করুন। রুম ফ্রেশনারের বদলে ধুপ , বডি স্প্রের বদলে আতর ব্যবহার করুন। আরও পরিবেশ ও জল বান্ধব বিকল্প খুঁজুন।  নিজে জানুন অপরকে জানান।
১০. GROUNDWATER RECHARGE, RAIN WATER HARVESTING বা  WATER DONATE এর ব্যাপারে জানুন ,বাড়ির শিশু ও মহিলাদের জানান , বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

শুধু মাত্র  HAPPY WATER DAY না বলে চলুন এই অঙ্গীকারগুলো আমরা সবাই আজ থেকে অভ্যাসে পরিণত করার শপথ নিই। তবে যদি আগামীকাল ভাল থাকে। অলরেডি অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। আর দেরি করব না আমরা।

Wednesday, March 21, 2018

আমার এই ছোট্ট ঝুড়ি, এতে রাম রাবণ আছে .......

পুতুল নাচ আমাদের বয়সী মানুষ জন অবশ্যই এক বার না এক বার দেখেছেন ছোটবেলায়। আমাদের দেশে পুতুল নাচের বিরাট এক ঐতিহ্য মন্ডিত ইতিহাস আছে। মধ্যযুগে অবিভক্ত বাংলা সাহিত্যে পুতুল নাচের উল্লেখ পাওয়া যায়। শুধু মাত্র শিশুদের খেলনা ছাড়াও সচেতনতা ও সামাজিক বার্তা প্রচারের মাধ্যম হিসেবে এবং রামকৃষ্ণের ভাষায় 'লোকশিক্ষা ' র হাতিয়ার হিসেবে পুতুল নাচের ভূমিকা চিরায়ত। মূলতঃ স্বল্প শিক্ষিত প্রান্তিক গ্রামীণ মানুষ জন, যাদের বাস মাটির খুব কাছে তাদের অবকাশ বিনোদনের হাত ধরে বেঁচে রয়েছে এই আর্ট ফর্মটি। নেই কোনো সামাজিক স্বীকৃতি , কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা। রয়েছেন  কিছু প্রান্তিক মানুষজন আর তাদের নেশাকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছে। এদিকে রয়েছে বর্তমান সময়ে বিনোদনের হাজারো মাধ্যম , আর তাদের চোখ ধাঁধানো উপস্থাপনার মোড়ক।  ধাক্কায় পিছোতে পিছোতে প্রায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে এই শিল্প মাধ্যমটির।

বাঙলার পুতুল নাচের আসর আর এখন বসে না মফঃস্বলে। অথচ কী গৌরবান্বিত এই সংস্কৃতি ! বেণী পুতুল, ডাঙের পুতুল, তারের পুতুল, চদর বদর , সুতো পুতুল ,বনরাকু, ছায়া দিয়ে পুতুল নাচ আরও কত কী।  সহজ সরল উপস্থাপনা সরাসরি সংযোগ করে দর্শকদের সাথে। ছোটদের সাথে সাথে তাজ্জব বনে যায় বড়রাও ! পুতুল কথা বলে! হ্যাঁ আমি ভেন্ট্রিলোকুইজম এর কথা বলছি।
ধূমকেতু পাপেট থিয়েটারের প্রাণ দিলীপ মন্ডল ও তাঁর কথাবলা পুতুল 


সৌনাভ সেনগুপ্ত র সাথে অনেক দিনের পরিচয়। মিরাক্কেল এ সবে তখন ও কাজ করেছে। খেল @ ১১ বলে একটা খেলার অনুষ্ঠানে Anchor করবে সৌনাভ। আমি ক্যামেরা র দায়িত্বে। সেই শুরু কাছ থেকে নারদ কে দেখা। নিজে দিনের খবর জেনে নিয়ে স্ক্রিপ্ট করত সৌনাভ।  নারদ (সৌনাভ র পুতুল - আমরা বলি অল্টার ইগো ) আর সৌনাভ করত উপস্থাপনা। ললিত মোদী কান্ড , গ্রেগ চ্যাপেল কান্ড , বি সি সি আই এর অন্দর মহল এর খবর। যে কথা গুলো কোনো নিউজ চ্যানেলে সৌনাভর মুখ দিয়ে বললে নির্ঘাত মানহানির মামলা হত সে গুলো নারদ এর মুখে পড়তেই পেটে খিল ধরানো হাসির রোল। রোল চলতে চলতে আমরা ফ্লোরে মুখ বন্ধ করে হাসতাম। এই হচ্ছে পাওয়ার অফ পাপেট। কখনও নারদ গাইত গাজীর গান কখনো সারে জাহাঁ সে আচ্ছা। বাংলা টেলিভিশনের ইতিহাসে নারদের মত এত ধারালো ক্রিকেট উপস্থাপক বোধহয় আসে নি। ভেন্ট্রিলোকুইজমকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে ওরা দুজন ! নাকি একজন ! না বোধহয় দুজনই।
নারদ ও সৌনাভ সেনগুপ্ত  Khel @11 এর সেটে 


পুতুল নিয়ে এতো কথা বলছি কারণ আজ বিশ্ব পুতুল দিবস। পুতুলদের জন্য আজকের দিনটা। ১৯৯৩ থেকে ২১শে মার্চ পালিত হয়ে আসছে পুতুল দিবস। প্রখ্যাত পুতুলিয়া সংগীত নাটক একাডেমি বিজয়ী  দাদি পুদুমজি র পরামর্শে UNESCO র পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০২ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে পুতুল দিবস।
আমাদের শহর কলকাতায় রবীন্দ্র ভারতী পশ্চিমবঙ্গ নৃত্য নাটক সংগীত ও দৃশ্যকলা আকাদেমি আজ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির দ্বারকানাথ মঞ্চে উদযাপন করল এই দিন। দুপুর ৩তে থেকে শুরু হল বিভিন্ন পুতুল নাটক। কোনোটায় বার্তা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ,কোথাও পরিবেশ সচেতনতা ,কোনোটায় আবার বন ও বন্য প্রাণী রা এগিয়ে এসে বলছে "কী করছো তোমরা ! বন বাঁচাও তবে তো তোমরা বাঁচবে "



পাখি পুতুল 

বাঘ বাঁচাও 

বাতাসে অক্সিজেন কমছে  

দড়ি ধরে টানলেই  তালপাতার সেপাইয়ের হাত পা নড়ে !!!

বগুলা থেকে পুতুল নিয়ে এসেছিলেন প্রবীণ শিল্পী রঞ্জন রায়। শ্রীমা পুতুল নাট্য সমাজ নাম একটি দল চালান রঞ্জন বাবু। সুতোর পুতুলের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ দেখলে চোখকে বিশ্বাস করা যায় না। পুতুল টিকে নিয়ে জিমন্যাস্টিক্স দেখানোর দৃশ্য মঞ্চে শেষ হতেই দর্শকদের করতালিতে ফেটে পড়লো দ্বারকানাথ মঞ্চ। বগুলার মুড়াগাছার এই অসামান্য শিল্পীর কিছু মুহূর্ত রইল। 
অভ্যাস করছেন রঞ্জন রায় 











                                                         জিমন্যাস্টিক্স করছে পুতুল



বাংলার পুতুলনাট্য কর্মীরা সমবেত হয়ে এক ছাতার তলায় এসে তৈরি করেছে 'পাপেট মঞ্চ' সেই সংস্থার উদ্যোগে এই আয়োজন কিছু কচি কাঁচা সজীব মনকে শেখাল জীবনটা আসলে পুতুল খেলারই আসর। আমরা সবাই এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা।কার সুতোয় কখন কে টান মারে কেউ জানে না!!!